শনিবার দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই মহাসমাবেশের কার্য্ক্রম শুরু হবে, সকালে থেকে নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টনে আসতে শুরু করেন ছোট ছোট মিছিল নিয়ে।
Published : 28 Oct 2023, 11:41 AM
রাজধানীর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়টি বড় ট্রাক পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে তৈরি হয়েছে বিএনপির মহাসামাবেশের মঞ্চ। তাতে বিছানো হয়েছে কার্পেট, পেছনে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ছবি সংবলিত বিশাল ব্যানার।
উত্তরমুখী এই মঞ্চে নেতাদের জন্য রয়েছে শতাধিক চেয়ার। আন্দোলনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশের জন্য প্রস্তুত নয়া পল্টন, যেখান থেকে 'মহাযাত্রা' ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে দলটির।
শনিবার দুপুর ২টায় এই মহাসমাবেশের মূল কার্য্ক্রম শুরু হবে। সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মহাসামবেশে যোগ দিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাকরাইল থেকে পায়ে হেঁটে ভিড় ঠেলে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন মির্জা ফখরুল।
পুলিশ যে ২০ শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে, সেখানে ২টা থেকে ৫টার মধ্যে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। তবে জাসাস শিল্পীদের পরিবেশনায় দেশাত্মকবোধক গান দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টাতেই শুরু হয় মহাসামবেশের আনুষ্ঠানিকতা। ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টনে আসতে শুরু করেন সকাল থেকেই।
এ কর্মসূচি 'শান্তিপূর্ণ' হবে জানিয়ে মহানগর দক্ষিণের আহ্ববায়ক আবদুস সালাম বলেন, “এই মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এই জনস্রোতকে কোনো সীমানাই দিয়ে রোখা যাবে না। নয়া পল্টনে তার প্রমাণ দিয়েছে অধিকারহারা মানুষেরা।
“এখন যে মানুষজন দেখছেন এদের বেশিভাগই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। পল্টন সড়কে দাঁড়ানোর তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। ঢাকার ওয়ার্ডগুলো থেকে মানুষজন আসা শুরু করলে এই জনস্রোত মতিঝিল, শান্তিনগর, বিজয়নগর ছাড়িয়ে যাবে।”
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল ভরে ওঠে কানায় কানায়। সাদা, নীল, লাল, সবুজ ও হলুদ টুপি মাথায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিতি মঞ্চের আশেপাশ এলাকায় আর তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তাদের হাতের আছে জাতীয় ও দলীয় পতাকা। অনেকে মাথাতেও জাতীয় পতাকা জড়িয়ে এসেছেন।
নেতা-কর্মীরা করতালির সঙ্গে স্লোগান দিচ্ছেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’, ‘ফয়সালা হবে কোন পথে. রাজপথে রাজপথে’।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বেঁধে দেওয়া সীমানা পেরিয়ে শান্তিনগর মোড় থেকে কাকরাইল, আরামবাগ পুলিশ বক্স থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত সড়কে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছে।
মানুষের ভিড় থাকায় কাকরাইল থেকে বিজয়নগরমুখী ও ফকিরাপুল থেকে দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এরইমধ্যে নয়াপল্টন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, তারা সতর্ক অবস্থানে আছে।
মহাসমাবেশ ঘিরে আগের রাতেই সরগরম হয়ে উঠেছিল নয়া পল্টন। রাত বাড়লে বিএনপি অফিসের কাছে ভিক্টোরিয়া হোটেলের কাছেই মাদুর বিছিয়ে ঘুমিয়ে যান নেতা-কর্মীরা।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিক দল কর্মী আবদুল হাকিম বলেন, “পুরো রাতই এখানে ঘুমিয়েছি। আমার সাথে ১২ জন ভাই এসেছেন। তারাও আছে। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাইনি। কারণ সেখানে পুলিশ হানা দেবে, বিরক্ত হবেন তারা, সেজন্য তাদের বাসায় যাইনি। পুলিশ গ্রেপ্তার করলে এখান থেকে করুক। গ্রেপ্তারের ভয় নাই আমাদের।”
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও সমমনারা।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং সরকারের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৮ অক্টোবর ‘মহাসমাবেশের’ প্রথম ঘোষণাটি দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসমাবেশের ঘোষণার পরে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে সমাবেশের কর্মসূচি দেয়। পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় জনমনে তৈরি হয় উদ্বেগ।
শুক্রবারও সম্মেলনের প্রস্তুতি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, "আমরা নয়া পল্টনে সমাবেশ করতে চাই। তাদের (ডিএমপি) চিঠির মধ্য দিয়ে এটা আমরা বলেও দিয়েছি। আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এই মহাসমাবেশ করব।"
শুরু থেকে সমাবেশের জন্য নয়া পল্টন চেয়েছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের ভাষ্য ছিল তারাও থাকবেন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে।
এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর পুলিশ বিকল্প দুটি জায়গার নাম চায় দল দুটির কাছ থেকে। তাতে রাজি না হওয়ায় পরে শুক্রবার ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে যে ২০ শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ। ওই শর্ত আদালতে সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বক্তব্য প্রচারে নিষেধ করা হয়েছে।