“হত্যাকারীরা কখনও গণতন্ত্র দিতে পারে না। এটা জনগণকে বুঝতে হবে,” বলেন তিনি।
Published : 14 Dec 2023, 07:05 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জ্বালাওপোড়াও করে, রেললাইন তুলে ফেলে মানুষ হত্যা করে তারা একাত্তরের ‘পরাজিত শক্তির দালাল’।
এদের বর্জন করতে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এদের বাংলাদেশের রাজনীতি করারই কোনো অধিকার নেই। এরা জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “হত্যাকারীরা কখনও গণতন্ত্র দিতে পারে না। এটা জনগণকে বুঝতে হবে। রেললাইন কেটে মানুষ হত্যা করে তারা কোনো গণতন্ত্র দেবে? যারা জ্বালাওপোড়াও করে, রেললাইন তুলে ফেলে এরা পরাজিত শক্তির দালাল। পরাজিত শক্তির দোসর। এদেরকে না বলুন।”
বিএনপির হত্যা আর সন্ত্রাসের রাজনীতি দলটির প্রতিষ্ঠা থেকেই চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান হাজার হাজার সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে, ফাঁসি দিয়েছে। অনেকের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অকথ্য নির্যাতন করেছে।
“২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল খালেদা জিয়া। হত্যা-নির্যাতন শুরু করেছিল পাকিস্তিানি হানাদার বাহিনীর মতো। সারাদেশে গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা, আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা, ধরে নিয়ে টর্চার করা নির্যাতন চালিয়েছিল। বাংলাদেশে হয়েছিলে সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মানি লন্ডারিং-অস্ত্র চোরাকারবারির একটা খোলা জায়গা। এমন কোনো অপকর্ম নেই তারা করত না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছে তার ছেলে (তারেক রহমান)। জিয়া, খালেদার পর তার ছেলেও একই কাজ করছে। একটা অমানুষ পয়দা করেছে। যে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। এখন বিদেশে বসে হুকুম দিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
“গত পরশু ভোর রাতে রেললাইনের লাইন কেটে ফেলেছে। দুর্ঘটনা ঘটেছে। একজন মানুষ মারাও গেছে। আরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারত। এর আগেও অনেক জায়গায় রেললাইন কেটেছে। এর আগে যাত্রীসহ বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানিদের মতো তারেকের হুকুমে খাদ্যসহ ট্রাক পুড়িয়ে দিচ্ছে।”
আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি কোন গণতন্ত্র দেবে-সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হরতাল-অবরোধে তাদের দেখা নাই, ধ্বংস করে পুড়িয়ে এটাই তাদের আন্দোলন। গণতন্ত্র তারা শিখেছে? ওর বাপ (জিয়াউর রহমান) কি গণতন্ত্র দিয়েছিল? সারারাত থাকত কারফিউ। সেই এখন দূরে বসে হুকুম দেয় আর এখানে মানুষ মারার পরিকল্পনা করে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তারা কোন গণতন্ত্র দেবে। নিশ্চয় বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারে। এজন্য তাদের আন্দোলনে মানুষ সাড়া দেয় না।”
এ সময় বিএনপি-আন্দোলনে কয়েকটি বাম দলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “অতি বামরাও নেমে পড়েছে, কি অদ্ভুত! একপাশে জামায়াত আরেকপাশে বাম। কোথায় তাদের আদর্শ? তারা বলে বাংলাদেশ নাকি ভালো নেই। যে দেশে দারিদ্রের হার ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। সারাদেশে মানুষ ভালো আছে। উন্নয়ন হচ্ছে। আজকে বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলছে।
“আওয়ামী লীগ থাকলে এদেশের মানুষ সেবা পায়। এখন মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি। আজকে মানুষ বিদেশে গেলে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পায়। আর এ সম্মান দিতে পারে না দেশের কিছু কুলাঙ্গার। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা হয়ে মানুষকে হত্যা করে যাচ্ছে।”
মানুষকে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থেকে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানে রেললাইন আছে এই ধরনের ঘটনা ঘটনার আগে মাঠে নামলে তারা হালে পানি পাবে না। এরা ধ্বংস করতে পারে, গড়তে পারে না। মানুষের জীবন উন্নয়ন করতে পারে না ধ্বংস করতে পারে না। রেল লাইন তুলে ফেলা, আগুন দিলে সাথে সাথে তাদের ধরতে হবে।”
বাংলাদেশকে আর কখনও পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যায়নি, যাবে না। আজকে উন্নয়নশীলের মর্যাদা পেয়েছি। জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। এদেশের মানুষ হাত পেতে না, মাথা উঁচু করে চলবে।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করে জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে এবং জাতিতে বিকৃত ইতিহাস থেকে সত্যের ইতিহাস জানাতে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “পঁচাত্তরের পর যে গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল, সেই অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে, দেশ জাতির পিতার আদর্শে গড়ে উঠবে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে হেয় চোখে দেখা হতো, যে বাংলাদেশকে পাকিস্তানিরা মনে করতো বোঝা; আজকে তারা বলছে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও।
“সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার করা যাবে না। ইনডেমনিটি জারি করে জিয়াউর রহমান তাদের পুরস্কৃত করেছিল। যে স্বাধীনতা বিরোধীরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, বাঙালি জাতিকে মেধা শূন্য করার চক্রান্ত করেছিল, যাদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, সেই সমস্ত অপরাধীদের ১৫ অগাস্টের পর বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। অপরাধী বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। সংবিধানে লেখা ছিল ৩৮ অনুচ্ছেদে ছিল যুদ্ধাপরাধীরা কখনও ভোটার হতে পারবে না। সেটি পরিবর্তন করে যুদ্ধপরাধীদের দল, রাজনীতি ও ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল জিয়া।”
জিয়ার পর খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়-প্রশয় এবং তাদের সাংসদ বানানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া তো আরও একধাপ এগিয়ে। ’৯৫তে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে, ভোট চুরি করে খুনিদের সংসদে বসাল। ঘোষণা দিল তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। খুনিদের যখন সংসদে বসিয়েছে সেই সংসদে খালেদা জিয়া বেশিদিন বসতে পারেনি।
“জনগণের রুদ্ররোষে খালেদা জিয়াকে নাকে খত দিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। এইটা বিএনপি নেতাদের মনে রাখা উচিত। ভোট চুরির অপরাধে দুই দুইবার খালেদা জিয়ার বিদায় নিতে হয়েছিল।”
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।