২৮ অক্টোবর থেকে আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’: ফখরুল

নয়াপল্টনের সমাবেশে মির্জা ফখরুল শ্লোগান ধরে বলেন, “ফয়সালা হবে কোথায়?” নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, “রাজপথে, রাজপথে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2023, 12:05 PM
Updated : 18 Oct 2023, 12:05 PM

আবার তারিখ ঘোষণা করে সেদিন থেকে সরকার পতনের ‘চূড়ান্ত আন্দোলন’ শুরুর কথা জানিয়েছে বিএনপি।

আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের ডাক দিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সেদিন থেকে আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা শুরু হবে।’

সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজনে বুধবার নয়াপল্টনে এক সমাবেশ থেকে এ কথা বলেন তিনি।

এই জমায়েতে নেতা-কর্মীদের ভিড় ফকিরাপুল থেকে শুরু করে কাকরাইল ছাড়িয়ে যায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আগামী ২৮ তারিখ শনিবার আমরা ঢাকায় মহাসমাবেশ করব। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।

“অনেক বাধা আসবে… অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে। সমস্ত বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে আমাদের জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে গত ১২ জুলাই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ডাক দেয়। পরে অক্টোবরেই আন্দোলন ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন নেতারা।

পরে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর দুর্গা পূজার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পূজা শেষে ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনে নামার কথা জানায় বিএনপি ও সমমনারা।

তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে বিএনপির এটা দ্বিতীয় দফা আন্দোলন। ২০১১ সালে উচ্চ আদালত এই সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর সংসদ নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফেরায়। সেটি মেনে না নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনে নামে বিএনপি ও তার জোট। শুরু হয় সহিংসতা। তবে ভোট ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আবার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে আসে এই জোট। সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে বিএনপি ও সমমনারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই ‘অশান্তি সৃষ্টিকারী, এই ‘সন্ত্রাসী’ আওয়ামী লীগের পতন ঘটাব ইনশাআল্লাহ।”

এ সময় তিনি শ্লোগান ধরে বলেন, “ফয়সালা হবে কোথায়?”

নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, “রাজপথে, রাজপথে।”

প্রধানমন্ত্রীকে ‘বার্তা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই জনসমাবেশের থেকে ঘোষণা, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এই মেসেজ নিয়ে যান। মানে মানে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

“আমাদের নেতৃবৃন্দ আজকে এখান থেকে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, সামনে যে কয়েকটা দিন সময় আছে… এই পূজার ছুটি, এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নিন আপনারা কী করবেন। পদত্যাগ করে সসম্মানে ‘সেইফ এক্সিট’ নেবেন নাকি জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হবেন?

‘‘আবার আমি তাদেরকে আহ্বান জানাই, জনগণের ভাবনা বুঝতে পেরে, জনগণের আওয়াজ বুঝতে পেরে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের স্বার্থে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, যেটা সম্পূর্ণভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে।”

সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার আগে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে না যাওয়ায় সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সংবিধানে আছে যে, প্রেসিডেন্ট যদি বাইরে ‍যান, তাহলে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা। আজকে এখন পর্যন্ত দেয় নাই, দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ এখানেও তারা (সরকার) সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ করছে, অসাংবিধানিক কাজ করছে, পুরোপুরিভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।”

‘ভয়ে কাঁপছে সরকার’

আগের রাতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বলেন, “গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত আমরা যে খবর পেয়েছি, ২৫০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, সরকার ভয় পেয়েছে, ভীত হয়েছে এবং তারা কাঁপছে।

“এত মামলা, এত গ্রেপ্তার, এত নির্যাতন, এত অত্যাচার, তারপরেও কি… আপনাদেরকে দমাতে পেরেছে? নেতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে তাতে কি ভয় পেয়েছেন? মামলা দিয়ে হামলা করে, রেইড করে গ্রেপ্তার করে আর বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না… এটাই হচ্ছে মূল কথা।”

দলের ৯৬ জন নেতাকে সাজা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনিল বলেন, ‘‘তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, যারা আমরা নির্বাচন করতে পারি, এই ধরনের নেতাদের যদি সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা যায়, তাহলে তাদের মাঠ পরিষ্কার। সেই আগের মতোই সেইভাবে তারা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে।”

‘অর্থনীতি রসাতলে যাবে’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে অর্থনীতি ‘একেবারে রসাতলে যাবে’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গত কয়েকদিনে অর্থনীতির কী অবস্থা হয়েছে? রিজার্ভের কী অবস্থা হয়েছে? মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করে, লুটপাট করে তারা বিদেশে বাড়ি-ঘর তৈরি করেছে।

“নতুন নতুন করে উদ্বোধন করে আর একটা করে প্রস্তর খণ্ড লাগায়। এই প্রস্তর খণ্ডগুলো টিকবে না। ওটা দিয়ে কোনো লাভ হবে না… জনগণ আর আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।”

‘আমরা কি বলেছি বসে যাব?’

বিএনপি ঢাকা অবরোধ করলে শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মের চেয়ে কঠিন পরিণতি হবে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, “আরে ভাই, আমরা কি বলেছি বসে যাব? আমি বলতে চাই, আমাদের বসাবসির কর্মসূচি নাই, আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আছে।

“শাপলা চত্বরে নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে আপনারা যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। মনে রাখবেন কাদের সাহেব, শাপলা চত্বরের লোকজন আর আমরা এক না।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় , আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, রাকিবুল ইসলাম বকুল প্রমূখ বক্তব্য দেন।

যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ছাত্রদলের নেতারাও এতে বক্তব্য রাখেন।