‘ভাগাভাগির’ পর বলছেন টাকা উদ্ধার হয়নি? ফখরুলের প্রশ্ন

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের লুট হওয়া অর্থ উদ্ধার নিয়ে পুলিশের দুরকম বক্তব্যের পর ফখরুল এই প্রশ্ন তুললেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 11:40 AM
Updated : 11 March 2023, 11:40 AM

বর্তমান সরকারের আমলে ‘দুর্নীতি’র নজির হিসেবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অর্থ লুট এবং তারপর কিছু অংশ উদ্ধারের ঘটনাটি দেখালেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “আজকে দুর্নীতি ভয়াবহ। এই যে, ১১ কোটি টাকা ব্যাংকের দিনে-দুপুরে হাইজ্যাক হল। কী সাজানো নাটক! সবাই মিলে ভাগ করে বলছেন, না না ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়নি, তিন কোটি উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় গেল, জবাব দেবে কে?”

বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের বুথে জমা দিতে যাওয়ার সময় সোয়া ১১ কোটি টাকা লুট হয়। সন্ধ্যায় লুট হওয়া সেই টাকার মধ্যে ‘বেশিরভাগ’ উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।

কিন্তু পরদিন জানায়, লুট হওয়া টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সরকার পতনের ১০ দফার যুগপৎ কর্মসূচিতে শনিবার নয়া পল্টনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে ব্যাংকের অর্থ লুটের প্রসঙ্গটি তোলেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “সরকার অনেক রকমের চক্রান্ত শুরু করেছে আবার। পঞ্চগড়ে একটা সাম্প্রদায়িক হামলা সৃষ্টি করার জন্য তারা অনুমতি দিয়েছে, তারা সেই নীরব ভূমিকা পালন করেছে।

“আর সেই ঘটনার পরে ১৮৩ জন বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা এই মুহূর্তে তাদের মুক্তি দিতে হবে।”

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে করা চুক্তিকে দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এদেশের মানুষ সোচ্চার হয়েছে, প্রতিবাদ করছে যে, ভারতের আদানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, যে চুক্তি বিদ্যুৎ ক্রয় করা। এটা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরোধী।

“আমরা প্রকাশ্যে বলেছি, এই চুক্তি কোনো মতেই বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে না। সেটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।”

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমরা প্রথম থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এই আন্দোলন দেখে আপনাদের গাত্রদাহ হয়েছে। উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন, বারবার উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন।

“জনগণ আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলনে তারা জয়ী হবে তারপরেই ঘরে ফিরে যাবে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের কাছে বিকল্প পথ নাই।”

‘১০ দফা মেনে নেন’

আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ‘নীল-নকশা’ নিয়ে আগামী নির্বাচন করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “২০১৪ সালে ১৫৪ আসন ডিক্লেয়ার করেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে। ২০১৮ তে নির্বাচন করেছে আগের রাত্রিতে সমস্ত ভোট তুলে নিয়ে চলে গেছে।

“এখন আবার খায়েশ হয়েছে যে, তারা একচল্লিশ সাল পর্যন্ত থাকতে হবে। সেই ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে তারা আবার ২০২৪- এ নির্বাচন করতে চায়, সেই নির্বাচন করতে চায় একই কায়দা।”

“পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, বিএনপি এই সরকারের অধীনে, হাসিনা সরকারের অধীনে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না,” ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করেন তিনি।

১০ দফা মেনে নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সংঘর্ষে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, আপনারা সেটা মেনে নেন, ১০ দফা মেনে নেন। ১০ দফা দাবি মেনে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।”

ফখরুল বলেন, “আজকে দেখুন, ঢাকা মহানগরে উত্তরা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। সমস্ত বাংলাদেশের জেলাগুলোতে মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। এভাবে সমাবেশের পর সমাবেশ, আরও মানববন্ধন এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করছি।

“এই আন্দোলন দিনে দিনে বাড়তে থাকবে, তীব্র থেকে তীব্র হবে, বেগবান হবে। এই রকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন কমিশনের অধীনে নতুন একটি সরকার, নতুন একটি সমাজ গড়ে তুলব-এই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।”