বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কর্মসূচির পরে যে যার জায়গায় চলে যাবে এবং পরবর্তী কর্মসূচির জন্য তারা অপেক্ষা করবে।”
Published : 22 Oct 2023, 03:28 PM
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির ‘মহাসমাবেশ’ থেকে ‘সড়কে বসে পড়ার’ মতো কোনো কর্মসূচি আসছে না বলে আগেভাগেই জানিয়ে দিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেদিন আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরুর ঘোষণা দেওয়ার চার দিন পর তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হবে। এরপর যার যার মতো করে চলে যাবেন। সেদিন ‘বড়’ কোনো কর্মসূচিও আসছে না। তা ঘোষণা হবে পরে।
রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
আগামী ২৮ অক্টোবর ‘মহাসমাবেশ’ সফল করতে দলের অঙ্গসংগঠন এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর নেতাদের নিয়ে এই যৌথ সভা হয়।
আগামী শনিবারের সেই সমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ‘রাস্তায় বসে পড়বে’ বলে ক্ষমতাসীনরা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। নো নো, এটা একেবারেই একটা অপপ্রচার।
‘‘আমরা আমাদের দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলিইনি। আমরা বলেছি, ২৮ তারিখের কর্মসূচির পরে যে যার জায়গায় চলে যাবে এবং পরবর্তী কর্মসূচির জন্য তারা অপেক্ষা করবে।”
“ইট ইজ ক্লিয়ার? আমরা ২৮ তারিখে এমন কোনো কর্মসূচি দেব না যে, তারা ঢাকায় বসে থাকবে”, সাংবাদিকদের আবার বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল এও বলেন, ‘‘পালাবার কোনো পথ নাই তো। সময় শেষ।”
পরক্ষণেই তিনি বলেন, “এই পার্লামেন্ট শেষ অধিবেশন… আসলে শেষ অধিবেশন।”
‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিশ্চয়তা দিচ্ছি’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই, ২৮ অক্টোবরে আমাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে। এর নিরাপত্তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নিজস্ব সিকিউরিটি ব্যবস্থা যেটা প্রয়োজন, সেগুলো আমরা নিয়েছি।”
২৮ অক্টোবরের সমাবেশে ‘সড়কে বসে পড়তে’ সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনা হচ্ছে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ভাই, শোনেন, উনাদের কথায় কান দিয়েন না। কথা হচ্ছে যে, উনাদের তো আসলে কোনো উপায় নেই… চিৎকার-চেচামেচি করে, ভয়-টয় দেখিয়ে যে কোনো উপায়ে ঠেকানো যায়, সেই চেষ্টা করছে।”
ফখরুলের বক্তব্যে আলোচনায় ‘মহাযাত্রা’
গত ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের ঘোষণা আসে। সেদিন মির্জা ফখরুল যে বক্তব্য রাখেন, তা রাজনীতিতে একটি শব্দের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিএনপি নেতা সেদিন বলেন, “আগামী ২৮ তারিখ শনিবার আমরা ঢাকায় মহাসমাবেশ করব। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের ‘মহাযাত্রা’ শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।”
পরদিন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বিএনপিকে ‘জবাব’ দেওয়া হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবর তারাও সমাবেশ করবেন এবং সেটি হবে তাদের ‘মহাযাত্রা’।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিএনপিকে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বরের ঘটনাপ্রবাহও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তখনও ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশের আগে আগে রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়ায় বিএনপির কয়েকজন নেতার বক্তব্যে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ চলবে’ বলে বক্তব্য আসে। এরপর পাল্টা বক্তব্য দিতে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
বিএনপি সেই সমাবেশটি করতে চেয়েছিল নয়া পল্টনে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মসূচির তিন দিন আগে ‘অনুমতি ছাড়াই’ নয়া পল্টনে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিলে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। গ্রেপ্তার হন মির্জা ফখরুলসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
শেষ পর্যন্ত সমাবেশটি হয় নয়া পল্টন থেকে কিলোমিটার পাঁচেক দূরে শহরের এক প্রান্তে সায়েদাবাদের কাছে গোলাপবাগ মাঠে। সেই মাঠে গরুর হাট বসে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির আন্দোলন ‘গরুর হাটে মারা পড়েছে’।
এবারও বিএনপি নয়া পল্টনেই জড়ো হতে চায়। শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে এ কথা জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে তারা। তবে পুলিশ এখনও কিছু জানায়নি। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “(বিএনপি) কর্মীরা যখন দেখবে ২৮ অক্টোবরের পরিণতি ১০ ডিসেম্বরের মতো অশ্বডিম্ব হবে। তখন বিএনপি নেতাদের কাঠগড়ায় দাড় করাবে সেই কর্মীরাই।”
বিএনপি ঢাকা অবরোধ করতে চাইলে নিজেরাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে বলেও ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতা।
‘১০ ডিসেম্বরে’ নিয়ে বক্তব্যের জবাব
২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পরিণতি ১০ ডিসেম্বরের মতো হবে বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এটাতেই বুঝা যায় যে, সরকারের উদ্দেশ্য খুব খারাপ।
“আপনাদের মনে আছে নিশ্চয় ১০ ডিসেম্বরের আগে ৭ ডিসেম্বর ‘বিনা প্ররোচনায়’, ‘বিনা উসকানিতে’ আমাদের অফিসে আক্রমণ করেছে, আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, আমাদের ৪৫০-৫০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। এগুলো তারা করেছে আমাদের সমাবেশকে পণ্ড করে দেয়ার জন্য। কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। আমরা ১০ ডিসেম্বর আমাদের সমাবেশ করেছি। এখানে না হলেও অন্য জায়গায় করেছি, শান্তিপূর্ণভাবে করেছি।
‘‘এবারও আমরা আমাদের সমাবেশ পার্টি অফিসের সামনেই চেয়েছি। নিয়মের মধ্য দিয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি, বিষয়টি ডিএমপিকে আমরা অবগত করেছি। আমি মনে করি অবগত করা হচ্ছে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়… আইনসঙ্গতভাবে সেটা আমরা করেছি।”
সরকার ও পুলিশ কোনো ধরনের বাধা দেবে না আশা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা কোথাও অহেতুক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করবেন না। আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।
‘‘সারা দেশ থেকে আমাদের শান্তিপ্রিয় মানুষ আসবেন। তারা এসে এখানে তাদের দাবি সোচ্চার কণ্ঠে দিয়ে যাবেন… সেজন্য আমাদের অনুরোধ থাকবে সবাই সহযোগিতা করবেন।… এখন পর্যন্ত কোথাও অশান্তি আমাদের দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। যা কিছু করছে এই সরকার, তার পেটুয়া বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”
'দেশ অস্থিতিশীল হলে দায় সরকারের'
এই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশপ্রেম থাকলে, দেশের মানুষকে ভালোবাসলে, গণতন্ত্রের প্রতি যদি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে, তাহলে আমি আহ্বান জানাব আওয়ামী লীগকে যে, তারা পার্লামেন্টের এই অধিবেশনে এই ব্যবস্থাটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) সংবিধানে সন্নিবেশিত করে একটা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।”
বিরোধী দল নির্বাচনে আসুক-এটা সরকার চায় না অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কারণ, তারা তো পরিষ্কার করে জানে যে, জনগণ যদি একবার সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এই যে ১৫ বছর ধরে যে দুঃশাসন চালিয়েছে, এখানে তাদেরকে চলে যেতে হবে।”
‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ’
বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে শনিবার প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা তিনি পারেন না বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
তার অভিযোগ, “সরাসরি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন, হস্তক্ষেপ করছেন যে, সব মামলায় সাক্ষী আনতে হবে…সব মামলায় সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
“তার বক্তব্যে এটা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, সরকার আদেশ দিয়ে বিচার বিভাগকে তারা প্রভাবিত করছে এবং সেইভাবে ফরমায়েশি রায় দিচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আবদুস সালাম, লিটন মাহমুদ, ইউনুস মৃধা, উত্তরের আবদুল হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবে রহমান শামীম, শামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের মজিবুর রহমান, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েলও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার আশ-পাশের জেলাসমূহের মধ্যে মানিকগঞ্জের আফরোজা খানম রীতা, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, মুন্সীগঞ্জের কামুরুজ্জামান রতন, ঢাকার আবু আশফাক খন্দকার, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, শাহ রিয়াজুল হান্নান, নারায়নগঞ্জের গিয়াস উদ্দিন, শাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ই্উসুফ খান টিপু, ও টাঙ্গাইলে ফরহাদ ইকবাল যৌথ সভায় অংশ নেন।