“যতই ষড়যন্ত্র হোক, কোনো বিদেশি শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করব না, এটা সবাই এক বাক্যে বলেছে।”
Published : 20 Jul 2023, 12:54 AM
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশিদের যে কোনো হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় নিজেদের জোটসঙ্গীদের পাশে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
নিজেদের প্রায় তিন দশকের জোট ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোটও করেছিল আওয়ামী লীগ। তবে এখন শুধু ১৪ দলীয় জোটই সক্রিয় রয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে যখন প্রতিপক্ষ বিএনপি সরকার পতনে এক দফার আন্দোলনে নেমে জোট বাদ দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কৌশল নিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের তৎপরতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, তখন দীর্ঘদিন পর নিজেদের জোটসঙ্গী দলগুলোর নেতাদের বৈঠকে ডাকলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বুধবার রাতে গণভবনে এই বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর শীর্ষনেতাদের পাশাপাশি জোটের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অংশ নেন।
সন্ধা ৭টায় বৈঠক শুরুর পর প্রারম্ভিক বক্তব্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা সামলাতে সরকার কী কী করছে, তা জোটসঙ্গীদের কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি জোটের নেতাদের কথা শোনেন। রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে এই বৈঠক।
পরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসীম সাহসিকতা, প্রজ্ঞা, সততা ও দক্ষতা নিয়ে যখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশকে তার সৃষ্টির মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত করার এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
“দেশবিরোধী চক্রান্তকারীরা অপশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপকে উৎসাহিত করছে। একটি চিহ্নিত মহল দেশের সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। পাশাপাশি চক্রান্তকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কেন্দ্রীয় ১৪ দল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো প্রকার অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট কখনও আপস করবে না।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে সবাই বলেছে, এই ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।”
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যতই ষড়যন্ত্র হোক, কোনো বিদেশি শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করব না, এটা সবাই এক বাক্যে বলেছে।”
বৈঠকে আর ছয় মাস পর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়।
এতে বলা হয়, “কেন্দ্রীয় ১৪ দল রাজপথে থেকে সকল প্রকার অপশক্তিকে মোকাবেলা করবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশকে বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোটগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।”
বাসদ নেতা রেজাউর বলেন, “আমাদের আজকের বৈঠকে ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
জাসদ নেতা শিরিন আক্তারও বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাচ্ছি। এই বিষয়টা আজকেও মিটিংয়ে উঠেছে, সিদ্ধান্ত হলো আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাব।”
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, পলিট ব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি জহির হাসান, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি আরশ আলী, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের সভাপতি আইভী আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুক, গণ আজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজাহার, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান অংশ নেন।
হিরো আলমকে নিয়ে আলোচনা
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ১৪ দলের নেতারা জানিয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বলেছেন, হিরো আলমকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন শেখ হাসিনা।
গণ আজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনে ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে মারধর করার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। সভাই বলেছে, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দলের কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হিরো আলমকে নিয়ে কী কথা হয়েছে- জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার বলেন, “হিরো আলমকে মারধর করার বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। সবাই বলেছে, নির্বাচন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তো নয়ই, তাকে কেন মারধর করতে হবে?
“প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, নিজের দলের কেউ থাকলেও আইনের আওতায় আনবেন।”
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় ছিলেন ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম (হিরো আলম)।
গত সোমবার ভোটগ্রহণ শেষ হওার ঘণ্টাখানেক আগে বনানী বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রে হিরো আলমের উপর হামলা হয়। তাকে ফেলে বেধড়ক পেটান হয়। এজন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের দায়ী করেছেন তিনি।
হিরো আলমের উপর হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের নজরেও পড়েছে। ঢাকায় ১২টি দেশের মিশন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসও।
১৪ দলের বৈঠক শেষে বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হিরো আলমকে কারা হিরো বানাচ্ছে, এটা দেখতে হবে। কারা আক্রমণ করেছে, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে।
“আমরা বলেছি, এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। যারা মারধর করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।”