শোক ভুলে কর্মীদের ‘জেগে ওঠার’ আহ্বান ফখরুলের

নূর আলমের জানাজায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে আর কোনো রোদন নয়, আর কোনো ক্রন্দন নয়; এখন আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2022, 10:35 AM
Updated : 4 August 2022, 10:35 AM

পুলিশের গুলিতে দলের দুই নেতার মৃত্যুর ঘটনায় কর্মীদের কান্নাকাটি ছেড়ে ‘জেগে ওঠা’র আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ভোলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমের জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি এ আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আর কোনো রোদন নয়, আর কোনো ক্রন্দন নয়; এখন আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতনের হাত থেকে এই জাতিকে রক্ষা করতে হবে।

“আমাদের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে; আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে ৩৫ লক্ষ মামলার অবসান ঘটাতে হবে।”

‘আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের’ ডাক দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে প্রয়োজন সমস্ত জাতির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলন সৃষ্টি করে আমাদের এই সন্তান, আমাদের ভাই নূরে আলমের হত্যার প্রতিশোধ নেব ইনশাল্লাহ।

“আজকে আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা সবাই শান্ত হয়ে থাকবেন। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ইনশাল্লাহ আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।”

ভোলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমের জানাজা বুধবার সন্ধ্যায় হওয়ার কথা থাকলেও ময়নাতদন্তসহ অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য মরদেহ তখন নয়া পল্টনে নেওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থেকে বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে কফিন পৌঁছায় নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। এ সময় ছাত্রদলের অনেককে সেখানে কাঁদতে দেখা যায়।

ভারাক্রান্ত কণ্ঠে মির্জা ফখরুল বলেন, “পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। এর চেয়ে বড় বেদনার আর যন্ত্রণার কিছু নেই। আজকে আমাদের সামনে আমাদের ছেলে ভোলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম, তাকে গুলি করে হত্যা করেছে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনী।

“গুলি করেছে হত্যা করেছে ভোলা জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমকে। আরও ১৯ জন ঢাকায় ও বরিশাল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।”

ফখরুল বলেন, “এটা আজকে নতুন নয়। এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা একদলীয় সরকার পাকাপোক্ত করতে ১৫ বছর ধরে আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে খুন করেছে, ৩৫ লক্ষের বেশি আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।”

নুরে আলমের জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনের সড়কে অবস্থান নেয়। ফলে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শেষ শ্রদ্ধা

নূরে আলমের মরদেহ নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনা হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শীর্ষ নেতারা দলীয় পতাকায় কফিন ঢেকে দিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

লোড শেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন নূরে আলম। ঢাকায় নিয়ে আসা হলে কমফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার তার মৃত্যু হয়। আর স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম সেদিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

নূরে আলমে মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভোলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো। তবে ‘জন দুর্ভোগের কথা বিবেচনা’ করার কথা জানিয়ে দুপুরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

তিন দিনের শোক

ভোলার ঘটনায় তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “৫ থেকে ৭ অগাস্ট পর্যন্ত এই শোক পালন করবার জন্য সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে, কালো পতাকা উত্তোলন করবে। ৬ অগাস্ট ছাত্রদল ৭ অগাস্ট কৃষক দল ও ৮ অগাস্ট যুবদল সমাবেশ করবে।”

পরবর্তী কর্মসূচি পরে জানানো হবে বলে জানান মহাসচিব।

ছাত্রদলের কর্মসূচি

ছাত্রদলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নূরে আলম হত্যার প্রতিবাদে মহানগর জেলায় বিক্ষোভ ও মিছিল এবং ৬ অগাস্ট নয়া পল্টনে ছাত্র সমাবেশ হবে।

বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, আকরামুল হাসান, অঙ্গসংগঠনের ইশরাক হোসেন, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, সুলতান সালা্‌হউদ্দিন টুকু, মামুন হাসান, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনোয়ার হোসাইন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী নূরে আলমের জানাজায় অংশ নেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের নেতারা জানাজায় ছিলেন।

জানাজায় নূরে আলমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

জানাজা অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও নুরে আলমের বড় ভাই জাকির হোসেন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

জানাজা শেষে নূরে আলমের কফিন বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ভোলার উদ্দেশে রওনা হয়।