Published : 06 May 2025, 06:21 PM
সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
তাদের প্রস্তাব হল, কোনো নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, তাদের বিষয়ে তদন্ত বা অপসারণের ক্ষমতা থাকবে একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে, সরকার বা সংসদের হাতে নয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল এনসিপি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে নিজেদের তৈরি করা একটি ‘রূপরেখা’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দিয়েছে। সেখানেই এসেছে এ প্রস্তাব।
দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজের কাছে এ সংস্কার প্রস্তাব হস্তান্তর করেন।
পরে দুপুরের বিরতিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, “অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যেহেতু সংসদীয় কমিটির ক্ষেত্রে আপত্তি উঠেছে, আমরা এটাকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে বলেছি। কমিশনের ব্যাপারে যে কোনো ধরনের অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে (কাউন্সিল)।”
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মেয়াদ পরবর্তী সময়ে কোনো অভিযোগ উঠলে তা তদন্তের ক্ষমতা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে।
তাদের দাবি, এ ধরনের সুযোগ রাখা হলে সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে পারে।
সেই প্রেক্ষাপটে নতুন প্রস্তাব সামনে এনেছে এনসিপি বলছে, নির্বাচন কমিশনকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে বিরোধী দলীয় সদস্যদের রাখার পক্ষে একমত এনসিপি। তারা সরকারি হিসাব সম্পর্কিত, জনপ্রশাসন, পরিকল্পনা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদে বিরোধী দলীয় সদস্যদের সভাপতি করার পক্ষে মত দেওয়ার কথা বলেছে।
সারোয়ার তুষার বলেন, “সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। নিম্নকক্ষ এবং উচ্চ কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের পরে গণভোটে বিধান থাকতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হবে।
“প্রশ্ন উঠেছে ছোটখাটো সংশোধন যদি হয়, সেক্ষেত্রে গণভোটে যেতে হবে কিনা। আমরা স্পেসিফিক কয়েকটা ধারা বলে দিয়েছি যে, এই সমস্ত বিষয় সংশোধনের জন্য অবশ্যই গণভোটে যেতে হবে। পাওয়ার স্ট্রাকচার বা (সংবিধানের) প্রস্তাবনার মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বা মূলনীতি সংশোধনের জন্য গণভোটে যেতে হবে। রুটিন সংশোধনের জন্য দুই- তৃতীয়াংশই যথেষ্ট।”
এনসিপি বলছে, একটি সাংবিধানিক বিধান প্রবর্তনের মাধ্যমে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম চালু করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির পক্ষে মত দেওয়ার কথা জানিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, “দুই পক্ষের সংসদ সদস্যদের বাইরে জেলা কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কাউন্সিল রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করবে। আরো স্থানীয় প্রতিনিধি যোগ করার জন্য আমরা বলেছি।”
এনসিপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংসদে নারীদের জন্য ন্যূনতম ১০০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে এবং সেসব আসনে প্রার্থী নির্বাচন হবে সরাসরি ভোটে।
তুষার বলেন, “১০০ জন নারী পার্লামেন্টে যাবে। এটাকে আমরা সমর্থন করছি। উচ্চ আসনে ১০০ জনের ২৫ শতংশ নারী রাখার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।”
তবে প্রাদেশিক সরকারের প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করছে এনসিপি।
তিনি বলেন, “এটা এই মুহূর্তে দরকার নাই।আমরা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে পারি। এর বাইরে দুটি নতুন বিভাগের প্রস্তাব তারা (সংস্কার কমিশন) করেছিলেন। ফরিদপুর এবং কুমিল্লা। আমরা এটার সাথে একমত হয়েছি।”
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলা গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাতে এনসিপি দ্বিমত প্রকাশ করেছে।
তুষার বলেন, “বিচারিক ক্ষমতা বিচার বিভাগে থাকার জন্য আমরা বলেছি।”
তিনি বলেন, জেলা পরিষদ বাতিলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন তারা। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্তির প্রস্তাবেও তারা একমত নন।
সংস্কার কমিশন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। এর সঙ্গে এনসিপি দ্বিমত প্রকাশ করেছে জানিয়ে তুষার বলেন, “চেয়ারম্যান সরাসরি ভোটে জনগণের নির্বাচিত হবেন। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক যেন না থাকে। এটার কারণে আমাদের সমাজে সহিংসতা একেবারে গভীর পর্যন্ত পৌঁছেছে।
“আমাদের ভয়ংকর একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী কাণ্ড থেকে মুক্ত করতে হবে দেশকে।”
তবে স্বতন্ত্র ভূমি আদালতের যে প্রস্তাব কমিশন করেছে, তাতে ইতিবাচক অবস্থানের কথা তুলে ধরে তুষার বলেন, “কাঠামোটা কী ধরনের হবে এটা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।”
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এদিন সংলাপে অংশ নেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দাররের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।