খালেদার চিকিৎসা বাসাতেই

তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তেই এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2024, 07:34 PM
Updated : 27 March 2024, 07:34 PM

দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে । 

তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তেই এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। 

বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়ার এই ব্যক্তিগত চিকিৎসক গুলশানে ফিরোজার সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ম্যাডামের অবস্থা স্থিতিশীল। মেডিকেল বোর্ড আপাতত উনাকে বাসায় রেখে সার্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে। 

‘‘দুপুরের দিকে ম্যাডাম অসুস্থ বোধ করছিলেন। এখন দুপুরের চেয়ে, সন্ধ্যার চেয়ে অনেকটাই সুস্থ বোধ করছেন।”

এদিন দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসনের সাজা স্থগিত রেখে তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন করে সরকার।

তবে মুক্তির এই মেয়াদেও চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার আবেদনে সাড়া মেলেনি সরকারের কাছ থেকে।  

বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

এই নিয়ে আট দফায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়ল। 

এর আগে বিকালে খালেদার অবস্থার অবনতি হয়েছে জানিয়ে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত চিঠি দেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। 

পরে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা গুলশানের বাসায় কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে হাসপাতালে নেওয়ার পরিকল্পনা বদলান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা খারাপ জেনে দ্রুত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফিরোজায় আসেন এবং চিকিসকদের সঙ্গে কথা বলেন।

রাতে অসুস্থতার বিষয়ে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি পরীক্ষা করানো হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় চিকিৎসকরা মনে করেছেন উনাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। সেজন্য আপাতত বাসাতে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পর্যবেক্ষণে থাকবেন। 

‘‘যদি কোনো কারণে প্রয়োজন হয় তাহলে যেকোনো সময়ে হসপিটালে স্থানান্তর করতে হতে পারে।“

Also Read: পুরনো শর্তেই খালেদার মুক্তির মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস

Also Read: খালেদার মুক্তির মেয়াদ ফের বাড়ছে, বিদেশযাত্রায় ‘না’

তিনি বলেন, এদিন ইফতারের পরে মেডিকেল বোর্ডের অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরুউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শাসমুল আরেফিন, অধ্যাপক জাফর ইকবালসহ চিকিসকরা তাকে দেখেছেন। 

এছাড়া ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমান প্রায় বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

এর আগে গত ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ভর্তি হয়ে এক দিন পরই বাসায় ফেরেন। 

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস ও হৃদ্‌রোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড গতবছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত ‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে’ তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

কিন্তু সরকার তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিদেশ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ঢাকায় এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করা হয়।