বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, কেবল শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনের আহ্বান নিয়ে তারা জনগণের সামনে দাঁড়িয়েছেন।
Published : 05 Jan 2024, 04:34 PM
সরকারের সব ধরনের হুমকিধমকি উপেক্ষা করে জনগণের কাছে সার্বজনীনভাবে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
পাশাপাশি ভোটারদের যারা কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করবে তাদের চিহ্নিত করে নামধাম সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
শুক্রবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনিধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে মঈন খান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
গুলশানে মঈন খানের বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।
মঈন খান বলেন, “আমরা বলতে চাই, এই একদলীয় বাকশালী সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই তাদের অন্যায় ও অবৈধ হুমকিকে পরোয়া করার আর কোনো কারণ নেই। আমরা আজকে গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি এই আহ্বান জানাব, আপনারা এই জনপ্রিতিনিধিত্ববিহীন সরকারের কোনো হুমকিধমকি অথবা তাদের কোনো ভয়ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। আপনারা সাহসিকতার সঙ্গে ভোট বর্জন করুন। তাদের দেখানো ভয়ভীতির মোকাবিলা করুন, যে বা যারা আপনাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করতে চায় তাদের চিহ্নিত করুন।
“আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই, ভাতা কার্ড জব্দ করে কিংবা ভাতা বন্ধ করে দিয়ে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্য করে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত হবেন বা হচ্ছেন ভবিষ্যতে তাদের আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
দশম সংসদ নির্বাচনের মতই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ভোট ঘিরে শনিবার ও ভোটের দিন ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে দলটি।
সম্মলনে 'সার্বজনীন ভোট বর্জনের আহ্বান' ছাড়াও, ভোট কারচুপি করতে সরকার ও সরকারির দলের বিভিন্ন নীল-নকশার পরিকল্পান তুলে ধরেন মঈন খান।
‘বিএনপির অবস্থান’
বিএনপিকে একটি 'উদারনৈতিক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দল' দাবি করে মঈন খান বলেছেন, সরকার গেল কয়েকমাসে অনেক মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় 'বিএনপির ওপর চাপিয়েছে।"
তিনি বলেন, “সরকার নতুন করে সেই ২০১৪ সালের ফর্মূলা অ্যাপ্লাই করতে চায়। বিএনপিকে নিয়ে যে মিথ্যা ভাবমূর্তি দেশে বা বিদেশে প্রচার করতে চায় বা চাইছে, সেই প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়ে গেছে। বিশ্বের মিডিয়া ও বিশ্বের গণতন্ত্রীকামী মানুষ তারা বাংলাদেশের আজকে কোন চিত্রে দেখেছে সেটা কিন্তু ইতিমধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছে। একজন মানুষের ইচ্ছায় আজকে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের ইচ্ছা নির্ধারিত হবে… এটা কোনোদিন হতে পারে না।”
‘সরকার দায় চাপাচ্ছে’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের অভিযোগ করেন, সরকার বরবার তাদের আন্দোলনকে বিপথগামী করতে নানা ধরনের বিভ্রান্তির তথ্য ছড়িয়েছে।
তিনি বলেন, “এখনো সেই অপচেষ্টা চলছে। আপনারা ক’দিন আগে দেখেছেন যে, কেউ কিছু জানে না কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হল যে, হাসপাতালগুলোতে একটা নির্দিষ্ট দিনে রেডি রাখার জন্য যাতে তারা চিকিৎসা করতে পারে। ঠিক ওইদিন একেবারে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে বেশকিছু গাড়িতে আগুন ধরে গেল এবং বেশকিছু লোক সেখানে মারা গেল।”
“এবং কোনো তদন্ত ছাড়াই সেদিন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো যে, এটা করেছে যারা অবরোধ করেছে তারা। গোটা ব্যাপারটা একটা অপরাধের কথা, একটা অনুমান নির্ভর একটা কথা বলা …। বহু বছর ধরে সরকার নাশকতা করে আমাদের ওপরে দায় চাপানোর এই অপকৌশল চালিয়ে আসছে।”
৭ তারিখে ‘খেলা হবে’ বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য রেখেছেন, তার সমালোচনা করে নজরুল বলেন, “বিএনপি রাজনীতিকে খেলা বলে মনে করে না। বিএনপি মনে করে রাজনীতি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, খেলার বিষয় না। আমরা এই খেলায় অংশগ্রহণ করি নাই, এই খেলায় অংশ নিতে রাজি না। যারা নির্বাচনটাকে খেলা মনে করে তারা এটাকে নিয়ে খেলা করছে। তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা করছে, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খেলাধুলা করছে।”
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “দেখুন হরতাল মানে কি? আমাদের প্রতিবাদ। আমাদের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে যতখানি সম্ভব তারা করবে।
"আমরা জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছি, আপনারা হরতাল পালন করুন, এই নির্বাচন বর্জন করুন। সেজন্য আমাদের নেতা-কর্মীরা সেইভাবে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবে। আমাদের প্রতিবাদটা জাতির কাছে জানালাম, বিশ্বের কাছে জানালাম এবং জাতিও আজকে এর প্রতিবাদ করছে।”