“আর ওদের ভিত্তি আছে কি না, সেটাও নির্বাচন না হলে বোঝা যাবে না। নির্বাচনেই বোঝা যাবে তাদের ভিত্তি শক্ত নাকি আমাদের ভিত্তি শক্ত।”
Published : 02 Nov 2024, 10:00 PM
‘যাদের জনসম্পৃক্ততা নাই, তারা নিজেদের দাম বাড়াতে’ জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
চুন্নু বলেন, “যাদের জনসম্পৃক্ততা নাই, একলা এক পার্টি… এ রকম লোকেরাই এগুলো বলে নিজেদের দাম বাড়ানোর জন্য। আমরা এগুলোকে হিসেবে আনি না, কিছু মনে করি না। আমরা মনে করি- আমাদের রাজনীতি যদি জনগণ ভালো মনে করে, জনগণ গ্রহণ করে তাহলে আমরা টিকে থাকব, আর গ্রহণ না করলে আস্তে করে চলে যাব।”
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি বিএনপি বা জামায়াত চাইতে পারত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জামায়াত বা বিএনপির কোনো কর্মীও এখন পর্যন্ত বলে নাই যে জাতীয় পার্টিকে বাতিল কর।”
২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি মোট চারটি নির্বাচন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অতীতের এই সিদ্ধান্তের কারণে এখন তারা চাপে আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দুই দিন পর খুলনা মহানগরের কার্যালয়ে হামলা করে আগুন দেওয়া হয়েছে।
চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে, তাদের জনগণের কাছে কতটুকু ভিত্তি আছে দেখুক। আমাদের যদি বিচার করতে হয় জনগণ করুক। সেটা নির্বাচনের সময় তারা (জনগণ) করতে পারে।
“আর ওদের ভিত্তি আছে কি না, সেটাও নির্বাচন না হলে বোঝা যাবে না। নির্বাচনেই বোঝা যাবে তাদের ভিত্তি শক্ত নাকি আমাদের ভিত্তি শক্ত।”
জাতীয় পার্টির নেতাদের নামে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে শনিবার ঢাকার বিজয়নগরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ এবং বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেই কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এরপরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেইসবুকে পোস্টে বলেন, “জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।”
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ওই কার্যালয়ের সামনে শনিবার তাদের যে সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে, তা চালু থাকবে। কিন্তু ওই সমাবেশ ‘করতে দেওয়া হবে না’ বলে পরে হুঁশিয়ারি দেয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএমপি ওই এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে।
চলমান উত্তেজনা এবং পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার রাতে জাপা ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে’ শনিবারের কর্মসূচি স্থগিত করে।
তবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে উপস্থিত হতে শুক্রবারেই কেউ কেউ ঢাকা চলে আসেন এবং সমাবেশ স্থগিতের সিদ্ধান্তের আগে দূরের জেলাগুলোকে থেকে রওনা হয়েছিল বলে জানান চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী।
তিনি বলেন, “পরে সবাই বনানীর অফিসে জড়ো হয়।”
বনানীর কার্যালয়ের সামনে শনিবার দুপুরে শতাধিক লোকের একটি মিছিলও হয়। পরে তারা বিকেল পর্যন্ত সেই এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকে। সন্ধ্যা হওয়ার পর সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে থাকেন।
ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে রংপুরেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন
জাতীয় পার্টির কর্মসূচি নেই, তবু পুলিশের 'সতর্ক' অবস্থান
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন
মিছিল নিয়ে খুলনায় জাপা কার্যালয়ে হামলা-আগুন, থমথমে পরিস্থিতি
জাতীয় পার্টি কার্যালয়ের সামনে 'গণপ্রতিরোধ কর্মসূচি'
উত্তেজনা ও পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জাতীয় পার্টির সমাবেশ স্থগিত