রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ‘কিংস পার্টি’ গঠনের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
Published : 26 Dec 2024, 08:30 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক নথি চাওয়ার পরই সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “গতকালই (বুধবার) আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি যে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি চাওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই নথি চাওয়ার পরেই গভীর রাতে (সচিবালয়ে) এই আগুন।…এটা জনগণের মধ্যে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
উচ্চ পর্যায়ের ‘নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে’ আগুনের ঘটনা তদন্তের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “কারণ গতকাল (বুধবার) শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের কিছু নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে অনেক নথি পুড়ে যাওয়া এবং সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
“মধ্য রাতের যে আগুন…কোনো মুখরোচক কথা বলতে চাই না। এই আগুনে অনেক নথিপত্র পুড়ে গেল।”
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের এক দিন আগে শেখ হাসিনার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নথি চাওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনাকে সন্দেহ তৈরি করে। চারিদিকের বিভিন্ন ঘটনায় আমরা শঙ্কিত, আমরা ভয়ার্ত। ব্যক্তিগত ভয়ের কিছু নয়, রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের ভয়।
“আমরা এর আগে দেখেছি, যখন কোনো সচিব বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসে, তখনই সচিবালয়ে ফাইল গায়েব হয়ে যায়, সচিবালয়ের ভেতরে আগুন ধরে।”
বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় দশ ঘণ্টা পর সেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
দশ তলা ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।
রাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় দশ তলা ওই ভবনের উপরের দিকের একটি ফ্লোর এমাথা-ওমাথা জ্বলতে দেখা যায়। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে নিয়ে অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সন্দেহ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার সকালে এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন, “স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।
“আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি। আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।”
‘কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা’
রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে আলোচনাসভায় রিজভীর অভিযোগ করেছেন, গোয়েন্দারা একটি ‘রাজকীয় দল’ গঠনের চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, “আপনারা কোন পথে যেতে চান। আমরা শুনছি যে, একটা রাজকীয় দল করার নাকি চেষ্টা করা হচ্ছে, ‘কিংস পার্টি’ যেটাকে বলা হয়…। তো একই তো। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা যে চেষ্টা করেছেন, শেখ হাসিনা গোয়েন্দাদেরকে দিয়ে যে কাজ করেছেন…এখনও তো আমরা সেটা শুনছি।
“যে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে বলছে যে, অমুক অমুক লোকের সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করুন। এটা তো করতে পারে না। এটা হলে তো মানুষের যে এত আত্মদান, সেটা তো করত না। এই পরিস্থিতি যদি আবার ফিরে আসে যে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কারা কারা নির্বাচিত হবেন, কারা কোন রাজনৈতিক দল করবেন এটা নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আর কী সার্থকতা থাকল?”
রিজভীর অভিযোগ, “শেখ হাসিনাও একই কাজ করেছেন। উনি তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তিনি বিরোধীদলের লোকজনকে ধমক দিতেন, চেষ্টা করাতেন বিএনপি থেকে যেন তাদেরকে যেন সরিয়ে দেওয়া যায়, তারা যেন আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে, তারা যেন বিএনপিকে ভাঙে। এই কাজটাই তো ১৬/১৭ বছর শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে করেছেন।
“এখন আবার আমরা শুনছি, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা নাকি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য, কাউকে কাউকে সমর্থন দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। এই ঘটনা কিন্তু এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।”
তিনি বলেন, “যে মানুষ যে রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করে তাকে তারা ভোট দেবে, যে মানুষ যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় তারা সেভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করবে, এখানে কোনো নির্দেশনা, কোনো হুমকি, রাষ্ট্রের কোনো খবরদারি থাকবে না…এটাই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ, এটাই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
‘সেটা না করে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের মত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মত এবং শেখ হাসিনার মত একই কালচার, একই সংস্কৃতি যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তো মানুষ মনে করবে আরেকটি ফ্যাসিবাদ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, এটা হতে দেওয়া যেতে পারে না।”
‘রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের’ এ আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সংগঠনটির সভাপতি অ্যাডভোকেট বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবীরের সঞ্চালনায় হাবিবুর রহমান হাবিব, মীর সরাফত আলী সপু, সৈয়দ শাহীন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, রমেশ দত্ত বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন-
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: বিদ্যুৎ নেই অনেক ভবনে, দাপ্তরিক কাজও বন্ধ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: বিদ্যুৎ নেই অনেক ভবনে, দাপ্তরিক কাজও বন্ধ
সচিবালয়ে আগুন: যা বললেন স্থানীয়রা
সচিবালয়ের আগুন পুরোপুরি নিভল ১০ ঘণ্টা পর
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড 'রহস্যজনক' ও 'আশ্চর্যজনক': নুর
শেখ হাসিনার 'দুর্নীতি' অনুসন্ধানে নথি চেয়েছে দুদক
হাসিনা ও তার পরিবারের 'দুর্নীতির' তদন্ত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: প্রেস সচিব
হাসিনা, রেহানা, জয়, টিউলিপের 'দুর্নীতি' অনুসন্ধানে দুদকের ৫ কর্মকর্তা