গত এক বছরে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে আগের রাতেই অবস্থান দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রথমবার একই কাজ করতে দেখা গেল।
Published : 27 Oct 2023, 10:21 PM
‘মহাযাত্রা’র ঘোষণা দিয়ে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশে আগের রাত থেকেই ভিড় করছেন নেতা-কর্মীরা।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হচ্ছেন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনের মঞ্চকে ঘিরে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে।
শনিবার ‘লাখো মানুষের’ জমায়াতের ঘোষণা আছে দুটি দলেরই।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আসতে শুরু করেন ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
গত এক বছর ধরে বিএনপির বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশে নেতা-কর্মীদের আগের রাতেই অবস্থানের বিষয়টি চোখে পড়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রথমবার একই কাজ করতে দেখা গেল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আগামী কালকের শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আজকের সন্ধ্যায় এখানে এসেছি।"
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, "ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমরা যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করেত প্রস্তুত। বিএনপি জামায়াতের যে কোনো অপচেষ্টা রুখে দেওয়া হবে।"
তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগেরও একাধিক মিছিল এসে জড়ো হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
একই চিত্র নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। তবে সেখানে মিছিল নয়, নেতা-কর্মীরা আসছেন বিচ্ছিন্নভাবে।
সেখানে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হ্যান্ড মাইকে করে বক্তব্য রাখছেন। সেই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন নানা স্লোগান।
সেখানে বিএনপির নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীকে নেতা-কর্মীদের মধ্যে খিচুরি বিতরণ করতেও দেখা যায়। তিনি একটি কভার্ড ভ্যানে করে বড় বড় পাতিলে ভরে খাবার নিয়ে আসেন।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা মনে করেছি আমাদের এই ভাইয়েরা যারা এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। এটি মনে করে আমরা এই আয়োজন করেছি।
“আমাদের নেতা-কর্মীরাও জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তাদের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।”
জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনাও করেন বিএনপির এই নেত্রী।
নেতা-কর্মীদের এই অবস্থানের মধ্যেও রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল করতে দেখা যায়।
রাত ৮টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছ থেকে সমাবেশের সম্মতি আসার খবর মাইকে ঘোষণা করা হয়।
এরপর সমাবেশ স্থলে থাকা আমিন মিয়া বলেন, ‘‘এই সরকার একটা সাক্কার দেখাইল যাতে মানুষজন কম হয়, আতঙ্কে থাকে। এই জন্য শেষ মুহূর্তে কয় কিনা পল্টনে সমাবেশ করা যাবে। শেষ মুহূর্তে অনুমতি দিয়ে মানুষের ঢল কমানো যাবে? যাবে না।”
ময়মনসিংহের থেকে আসা সোহরাব উদ্দিন বলেন, “কি যে ভালা লাগতাছে! বহু কষ্টে ঢাকায় ঢুকছি। পথে পথে পুলিশ বাস থামাইয়া চেকিং করছে। মোবাইল দেখে ওইখানে বিএনপির কথা লেখা আছে কি না। এতো চিন্তা মাথায় নিয়া ঢাকায় আসছি মহাসমাবেশে যোগ দিতে।”
তার সঙ্গে ২৭ জন নেতা-কর্মী এসেছেন বলে জানালেন সোহরাব উদ্দিন।
কুমিল্লার ব্রাক্ষণপাড়া থেকে দুপুরে ঢাকায় আসা জোনাব আলী বলেন, ‘‘মহাসমাবেশে আওয়াজ আমাগো গ্রামের বেকাগ মানুষজনরে নাড়া দিচ্ছে। আমি মোবাইলে টেলিফোন আমার মারেও বলেছি, কত মানুষ আম্মাগো। তুমি দেখলে তুমারও আইতে ইচ্ছা করব। দোয়া কইরো কালকে রাতেই ফিরমু।”
ভোলা থেকে আসা করীম মোল্লা বলেন, ‘‘বাড়িতে থাকতে পারি না, আত্মীয় স্বজনের লগে দেখা করতে পারি না, শান্তিতে ঘুমানোর আশ্রয়টাও এখন নেই। দুই বার অ্যারেস্ট হয়া জেলে গেছি। ৬/৭ মাস পরে আবার মুক্তি পাইয়া এইখানে আইসি। এইভাবে আর থাকতে চাই না। এখন এই সরকারের পতন দেখতে চাই।”
বিএনপির মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘‘খোলা ট্রাকের ওপর মঞ্চ করতে হবে। আশা করছি রাত ১১টার মধ্যে এই কাজ শুরু করা যাবে।”
বিএনপির কার্যালয়ের পাশে ভিক্টেরিয়া হোটেলের কাছেই অবস্থান করছে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামান। রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশের দল।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং সরকারের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৮ অক্টোবর ‘মহাসমাবেশের’ প্রথম ঘোষণাটি দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেদিন তার অন্য একটি বাক্য রাজনীতিতে তোলে আলোড়ন। তিনি বলেন, “ই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।”
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির বড় কর্মসূচির দিন রাজপথে থাকছে আওয়ামী লীগও। ক্ষমতাসীন দলও জানায়, তারাও ‘মহাযাত্রা’ করতে জড়ো হবে রাজধানীতে।
সমাবেশস্থল কোথায় হবে, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে শেষ মুহূর্তে। দুই দলই পেয়েছে তাদের পছন্দের জায়গা। বিএনপির ঘোষণা, এক লাখ থেকে সোয়া এক লাখ মানুষকে জড়ো করবে তারা, আওয়ামী লীগ বলেছে, তারা আনবে দুই লাখ।
পুলিশ শুরুতে চেয়েছিল দুই পক্ষই সড়কের বদলে জড়ো হোক ময়দানে, তবে রাজি ছিল না কেউ। পরে তাদের পাল্টা চিঠি পর্যালোচনা করে শুক্রবার সন্ধ্যায় ২০ শর্তে দেওয়া হয় সমাবেশের অনুমতি।
আওয়ামী লীগ জানিয়েছে তাদের সমাবেশ চলবে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত, বিএনপির ঘোষণা বেলা দুইটা থেকে মাগরিবের আজানের আগ পর্যন্ত।
পুলিশের ‘অনুমতি’ আসার আগে বিকাল থেকেই দুই দলের নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ অবস্থানে জড়ো হতে থাকেন। মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু করে দেয় আওয়ামী লীগ। পরে পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে তা।
এর মধ্যে আসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্য। একটি জাতীয় দৈনিককে তিনি জানান, দুই দলকেই পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এরপর থেকে কেটে যায় সব অনিশ্চয়তা। পরে দুই দলই পায় ‘অনুমতির চিঠি’। তবে জামায়াতে ইসলামী মতিঝিলে সমাবেশের অনুমতি পায়নি।