“ছাত্রলীগ এখন আইনত নিষিদ্ধ একটি সংগঠন। ছাত্রলীগের প্রচার প্রসার, এসব বিষয়ে আইনগত বাধা আছে, আপনারা এটা জানবেন”, বলেন মাহফুজ আলম।
Published : 24 Oct 2024, 10:49 PM
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে মন্তব্য করে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পরেও ছাত্র সংগঠনটি ‘সন্ত্রাসে’ লিপ্ত।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ব্রিফিংয়ে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ প্রচারে যেন ভূমিকা না রাখার বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
আগের দিন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যেখানে গত ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং ছাত্র-জনতা ’হত্যা’ ও অসংখ্য মানুষের ‘জীবন বিপন্ন‘ করা এবং বিভিন্ন সময় ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিষিদ্ধ করে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব কি না- এই প্রশ্নে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন,“নিষিদ্ধ করার মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে তার ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে’ লাগাম টানা।
“আগের অবস্থাতে তারাই থাকতে চেয়েছে, এমনকি ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন এর পরেও আচরণগত ‘পরিবর্তন আনেনি’। নিখোঁজ বলেন, পলাতক বলেন, বা প্রকাশ্য বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছে’- সংস্থাগুলোর এ রকম সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।’’
আরও কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “সংবাদপত্রে ছাত্রলীগকে নিয়ে অনেক নিউজ হয়েছে। নিরাপদ সড়ক রক্ষার আন্দোলন থেকে শুরু করে যে কয়টি ছাত্র আন্দোলন হয়েছে সব খানে আমরা ছাত্রলীগকে একটি ‘সন্ত্রাসী’ ভূমিকায় দেখেছি।
“তখন যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বলেছে, ‘এদেরকে ম্যানেজ করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট’। ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী কায়দায়’ আন্দোলন দমন করার জন্য ব্যবহার করার হয়েছে।”
তিনি বলেন, “তাদের নিষিদ্ধ করার আরেকটি কারণ হল, জুলাই ‘গণহত্যার’ পরে তারা থেমে গেছে তা নয়। আদালত থেকে তারা বেশ কয়েকবার দোসী সাব্যস্ত হয়েছে।
“বর্তমানের প্রাধিকার বিবেচনায় আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অন্য কোনো রাজনৈতিক সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার কোনো আলোচনা হয়নি। সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি আলোচনা হয়নি।”
পুলিশের ওপর এখনও হামলা হচ্ছে- এই বিষয়টিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিজওয়ানা বলেন, “তাদেরকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনী আমাদের লাগবে। অনেক জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দায়িত্ব পালন করছেন না। পুলিশের অনেকে কাজে নেমেছে কিন্তু অনেকের মধ্যে নির্লিপ্তিতা আছে। দোষী ছাড়া কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।”
ছাত্রলীগ নিয়ে সাংবাদিকদের মাহফুজের পরামর্শ
প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, “ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে নিষিদ্ধের বিষয়টা রাজনৈতিক ডিসশনের চেয়ে লিগ্যাল, জননিরাপত্তা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অখণ্ডতার প্রশ্নও বটে। ফলে আমরা এই জায়গায় সরকার খুব স্পিডি এবং প্রাধিকারভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে।“
ছাত্রলীগের প্রচার প্রসারে আইনি বাধার বিষয়টি স্মরণ করিয়েছেন তিনি।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ এখন আইনত নিষিদ্ধ একটি সংগঠন। ছাত্রলীগের প্রচার প্রসার, এসব বিষয়ে আইনগত বাধা আছে, আপনারা এটা জানবেন।
“আপনারা যারা এতদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে কাজ করছেন, আমরা মনে করি আপনারা আপনাদের এই দিকটা আপনারা খেয়াল রাখবেন যাতে সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রচারে আপনারা ভূমিকা না রাখেন।’’
মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ সরকার বরদাশত করবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
শুক্রবার কয়েকটি সংবাদপত্রে হামলার বিষয়ে আশঙ্কা আছে জানিয়ে মাহফুজ বলেন, “আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটু আগে শুনেছি। উনারা একটি বিবৃতি ইস্যু করেছেন এবং আমাদের দিক থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, “কোনো রকম সংবাদ মাধ্যমের উপর, মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ এই সরকার বরদাশত করবে না। যে কোনো পক্ষ থেকে যদি এ রকম কোনো আঘাত আসার সম্ভাবনা থাকে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
আওয়ামী লীগকেও কি নিষিদ্ধ করা হবে?
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা আমাদের উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা হয়নি।
“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে মাস খানেক আগে হাইকোর্টে একটা রিট পিটিশন হয়েছে। হাই কোর্ট সেটি খারিজ করে দিয়েছে। আন্দোলনের ভাষা আর আমাদের ভাষা এক হতে হবে বলে কথা নেই। আন্দোলনের ভাষা ভিন্ন হতেই পারে।”
প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো থেকে একটা প্রস্তাবনা এসেছে এবং সরকার এটা বিবেচনা করছে অ্যাজ আদার ইস্যুজ। অন্য সব ইস্যুর মধ্যে এটা বিবেচনা করছে সরকার। বিবেচনা করছে এটা করার জন্য নয়; বরং এটা ডায়ালগের বিষয়।
“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নটা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের বিধায় রাজনৈতিক ডিসিশন। সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে, তারা যেহেতু দাবি করছেন, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সরকার একটা ডিসিশন নেবে।”
ভারতের ভিসা প্রসঙ্গ
বাংলাদেশিদের ভিসা সীমিত করার বিষয়ে ভারতের নীতি নিয়ে এক প্রশ্নে রিজওয়ানা বলেন, ‘‘আমরা ভারতের সাথে ভালো এবং মজবুত সম্পর্ক চাই। কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরকে শোনা এবং বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি জনগণ ভারতের ভিসা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধ নীতির প্রতি অসন্তুষ্ট, এটা ভারতীয় সরকার অবশ্যই শুনেছে।
“আমি মনে করি না বাংলাদেশ সরকার এখনও ভারত সরকারের সাথে এই বিষয়ে পরিস্থিতি বদলানোর কোনো উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ এটি এখনও অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনার অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে ওঠেনি।”
তবে ভারতের সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন রিজওয়ানা। তিনি বলেন, “ভারত বলে আসছে যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবে না। আমি মনে করি না যে, বাংলাদেশের কোনো পরিস্থিতি আছে যার কারণে কোনো বিদেশি দেশ ভিসা সীমাবদ্ধ করতে পারে।
“কারণ অন্য কোনো দেশ এই ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। আমাদের জন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, যাদের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার ওপর নিপীড়নের অভিযোগ এবং রয়েছে, তাদের কেউ কেউ হয়ত ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, হয়ত এটিই ভারত সরকারের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বলতে বোঝানো হচ্ছে, আমরা নিশ্চিত নই।… হয়ত ভারত সরকার তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।’’
সরকারি অর্থে হজ নয়
এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “হজ ব্যবস্থাপনার জন্য যাদের যেতে হয়, তারা যাবে। তা ছাড়া সরকারি অর্থে হজে যাওয়া হবে না।”
হজের ব্যয় যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জাহাজে করে হজে পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সৌদি সরকার বলেছে আমরা এবার নৌপথে পাঠাতে চাইলে তাদের আপত্তি নেই। প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে হাজীদের আগ্রহের উপর নির্ভর করছে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি ও সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে
আরও পড়ুন:
রাষ্ট্রপতি: 'অস্বাভাবিক পরিবেশে' সংবিধান মানতে হবে কি না 'ভাবছে' সরকার
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ৩৫ প্রত্যাশীদের, উপদেষ্টা বললেন ‘সিদ্ধান্ত বদলাবে না’