মায়ের কবরেই সমাহিত হবেন ‘দাদা ভাই’

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেলে তার মৃত্যু হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2023, 01:47 PM
Updated : 9 June 2023, 01:47 PM

বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খানের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে সমাহিত করা হবে মায়ের কবরে। 

শনিবার ঢাকায় জানাজা শেষে ‘দাদা ভাই’য়ের মরদেহ নোয়াখালীতে মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের কবরে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ছোট ভাই ফখরুল আলম খান ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। 

মোহাম্মদপুরে আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতালে গোসল শেষে শুক্রবার রাতে সিরাজুল আলম খানের মৃতদেহ রাখা হবে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার দেহ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে নেওয়া হবে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমে জানাজা হবে।

জানাজা শেষে সিরাজুল আলম খানের মৃতদেহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে নেওয়া হবে। বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আছরের নামাজের পর আরেক দফা জানাজা শেষে আলীপুর গ্রামের সাহেব বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরেই তাকে সমাহিত করা হবে।

নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বেলা আড়াইটায় সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রামণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। 

সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। সরকারি চাকুরে বাবা খোরশেদ আলমের বদলিজনিত কারণে দাদা ভাইকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পড়াশোনা করতে হয়। 

১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন গণিতে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। 

সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। 

তিনি কখনও নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন। 

দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা চিরকুমার সিরাজুল আলম খান ঢাকার কলাবাগানে ভাইদের সঙ্গেই থাকতেন।