আগের দিন ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে ‘শেষ বার্তা দিয়ে বলেন’, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনে জিতে তিনিই আবার সরকার প্রধান হবেন।
Published : 19 Oct 2023, 04:08 PM
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ‘শেষ বার্তা পেয়ে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তাহলে নির্বাচনের আর দরকার নেই।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন, উনি আমাদেরকে ‘শেষ বার্তা’ দিয়ে দিয়েছেন যে, নির্বাচনকালীন সময়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আসবেন।”
‘‘সেটাই যদি মনে করেন, তাহলে তো নির্বাচনের প্রয়োজনই নাই… কোনো দরকার নেই তো। এটাই উনারা চাচ্ছেন কিন্তু।”
আগের দিন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি এবং বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ পরস্পরকে ‘বার্তা’ পৌঁছে দেয়।
বিএনপির সমাবেশ থেকে মির্জা ফখরুল জানান, আগামী ২৮ অক্টোবর তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করবেন।
তিনি বলেন, “এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।”
বিএনপির দাবি, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে ভোট হতে হবে।
পরে আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমিও বার্তা দিয়ে দিচ্ছি, শেষ বার্তা। আপনি শেষ বার্তা দিয়েছেন ক্ষমতা ছেড়ে দিতে, আমি আপনাকে শেষ বার্তা দিচ্ছি, আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনী সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।
"বার্তা দিয়ে দিচ্ছি, নির্বাচনের পর আল্লাহর রহমতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসবেন। এটাই আমাদের বার্তা। অন্যথা হবে না।”
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাই ‘আবার প্রধানমন্ত্রী’, বিএনপিকে কাদেরের ‘শেষ বার্তা’
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, সরকার বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে ‘আসতে দিতে চাচ্ছে না’। তিনি বলেন, “তার একটাই কারণ, তারা চান যে, খালি মাঠকে আমরা যেটা বলি, ‘ওয়াকওভার পেয়ে যাওয়া’।
‘‘সেজন্যে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা প্রাণপন চিৎকার করে একটাই কথা বলতে শুরু করেছেন যে, এটা থাকবে ‘শেষ বার্তা’।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, উনি (ওবায়দুল কাদের) যে কথাটা বলছেন এটা কি জনগণের কথা? জনগণের কথা নয়। জনগণের ভাষাও উনারা বুঝতে চান না।
“আওয়ামী লীগ একটা দল যারা সব সময় জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এটা একটা প্রতারক দল, জনগণের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই।
‘‘এরা নির্বাচনের আগে সুন্দর সুন্দর কথা বলে, মানুষ একেবারে আকৃষ্ট হয়ে যায় এবং তারপরে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, নির্বাচনের পরে ওই মানুষগুলোই আবার গান গায়… ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না’।
“আজকে যে অবস্থাটা দাঁড়িয়েছে, সাধারণ মানুষ…. তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখেন, তাদের কথা একটাই যে, ‘আমরা আর পারছি না। এই সরকার যদি আরো টিকে থাকে, শেখ হাসিনা যদি আবার প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে তো আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব’।”
‘এই সরকারই বেআইনি’
২০১১ সালে নির্বাচিত অধীনে নির্বাচনের বিধান ফিরিয়ে এনে সংবিধানে সংশোধনকে ‘একতরফা’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব শর্ট ভারডিক্ট (সংক্ষিপ্ত রায়) দিয়ে বললেন যে, তবে এটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কিন্তু এটাকে আরো দুই টার্ম করা যেতে পারে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে।
“১৬ মাস পরে অবসরে গিয়ে খায়রুল হক সাহেব যে পূর্ণাঙ্গ ভার্ডিক্ট দিয়েছেন, সেখানে শর্ট ভার্ডিক্টটা চেঞ্জ করে দিয়েছেন। বিষয়টা হচ্ছে যে, শর্ট ভার্ডিক্ট, সেটাকে অমান্য করে আওয়ামী লীগ সংসদ একতরফাভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থা পাস করিয়ে নেয়।”
‘অসাংবিধানিকভাবে’ এই সংশোধনী পাস করা হয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “এটার ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছে। ফলে এটা সম্পূর্ণ বেআইনি সরকার। তাহলে বেআইনি সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে কী করে? আইনের মধ্যেই তো পড়ে না।
“সে জন্য আমরা এক দফা দাবি দিয়েছি, তার প্রধান দাবি হচ্ছে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।”
‘‘আমরা বলেছি, সময় আছে এখনো… সেইফ এক্সিট নেন, চলে যান পদত্যাগ করে, এটা হচ্ছে জনগণের দাবি”, বলেন বিএনপি নেতা।
আলোচনা সভাটি হয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে।
শরিক দল ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) এর সদ্য প্রয়াত সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির স্মরণে এই সভায় জোটের চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ও জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্প ধারার একাংশের নুরুল আমিন ব্যাপারী, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএর শাওন সাদেকী, মাইনোরিটি পার্টির সুকৃতি মণ্ডল, এনডিপির আবু তাহেরও বক্তব্য রাখেন।