“যারা মারা গেছে, তাদের পরিবার বোঝে কি যন্ত্রণা,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
Published : 10 Aug 2023, 07:11 PM
বহু বছর ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপি এখন কেবল সরকারের পতন চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে আসা আহত নেতাকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, “দীর্ঘ এক যুগের উপরে আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি এই ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, নিপীড়ন-নির্যাতনকারী সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, সেই লক্ষ্য হচ্ছে- আমরা এই ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে মুক্তি চাই, দেশ মুক্তি চায়।
“এজন্য ইতোমধ্যে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন, সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, অনেক মানুষ গুম হয়ে গেছেন এবং সর্বশেষ এই ১৮ তারিখ (জুলাই) আপনারা (লক্ষ্মীপুরের নেতাকর্মীরা) শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলেন, সেই মিছিলে পুলিশ সরাসরি গুলি করে আমাদের ভাই- সজীব হোসেন, তিনি প্রাণ হারিয়েছেন; আপনাদের অনেকের চোখ বন্ধ (দৃষ্টিশক্তি হারানো) হয়ে গেছে। এখন একটাই চাওয়া, একটাই পথ বা রাস্তা- সেটা হচ্ছে যে- এদেরকে সরাতে হবে, এদের পতন ঘটাতে হবে।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ ‘নিরাপদ নয়’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা নিরাপদ না, আমরা কেউই নিরাপদ না। আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, আমাদের অস্তিত্ব ফিরে পাবার জন্য, এই যে শিশুটি (সামনের সারিতে বসা সজীব হোসেনের সন্তানের দিকে তাকিয়ে) এখানে দাঁড়িয়ে আছে, সে তার পিতাকে হারিয়েছে… যারা মারা গেছে, তাদের পরিবার বোঝে কি যন্ত্রণা! আপনাদের এই কষ্ট, এই ত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না।”
ফখরুল বলেন, ‘‘এই আন্দোলনে দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। দেশের মানুষ জীবন দিয়ে রাস্তায় নেমেছে। রাস্তায় নেমে এই সরকারকে সরানোর জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে।
“আমরা বিশ্বাস করি যে, এই সরকারকে এদেশের মানুষ- এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরাবে এবং জনগণের যে সরকার, সেই সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”
নিহত সজীব হোসেনের পরিবার ও আহত নেতাকর্মীদের পাশে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার দল ‘সবসময়’ পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপি মহাসচিব।
গত ১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ এবং কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেদিন কৃষক দলের সজীব হোসেন নিহত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন আহত হন, যাদের মধ্যে ছয়জন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে বলে বিএনপির দাবি।
লক্ষ্মীপুরের নেতাকর্মীদের সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সহমর্মিতা প্রকাশ করতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপে তাদের উদ্দেশ্যে দেন তারেক।
দলের পক্ষ থেকে নিহত সজীব হোসেনের পরিবার ও আহতদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সভাপতিত্বে ও শাহাবুদ্দিন সাবুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, পুলিশের গুলিতে দৃষ্টি শক্তি হারানো যুবদল কর্মী মোস্তফা কামাল, শ্রমিক দলের ইকবাল হোসেন, কৃষক দলের বোরহান উদ্দিন, নিহত সজীবের বাবা আবু তাহের।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, নিজান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আশরাফ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, লক্ষ্মীপুরের অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান ও বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম।
‘যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাদের সভা’
পরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন ও সাবেক নেতাদের নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানেও তারেক রহমান বক্তব্য দেন।
যু্বদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে সভায় যুবদলের সাবেক সভাপতি মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও বক্তব্য রাখেন।