তুরস্কের হায়া সোফিয়া – ইসলামের বিজয়?

হাসান মাহমুদহাসান মাহমুদ
Published : 18 July 2020, 09:26 AM
Updated : 18 July 2020, 09:26 AM

প্রশ্নটা উঠেছে এবং সময়ই এর জবাব দেবে। বস্তুত; বহুদিন ধরে বিশ্ব-মানব তাদের সীমিত সম্পদের (সময়, জ্ঞান, অর্থ, চিন্তা, প্রচেষ্টা ইত্যাদি) বেশিরভাগই ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক সমস্যা সমাধানে নয় (দুর্ভিক্ষ, বন্যা, মহামারী, ভূমিকম্প, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা ইত্যাদি) বরং নিজেদেরই সৃষ্ট সমস্যার পেছনে (যুদ্ধ, সুইসাইড বম্বিং, পুঁজিবাদের শোষণ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি)। এ কেমন সেরা সৃষ্টি?

সংক্ষেপে পটভূমি:

৫৩৭ সালে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান কনস্টান্টিনোপলে তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইমারত এই 'হায়া সোফিয়া' গির্জা তৈরি করেন। দীর্ঘ ৯১৬ বছর ওখানে (বিভিন্ন সময়ে অর্থোডক্স ও ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের) উপাসনার পর ১৪৫৩ সালে অটোমান সুলতান মুহাম্মদ ফতেহ কনস্টান্টিনোপল দখল করে খ্রিস্টান প্রতিকৃতিগুলো কোরানের আয়াত দিয়ে ঢেকে ওটাকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গির্জাটা ব্যক্তিগত টাকায় কিনেছিলেন। বেচাকেনার সেই দলিল তুর্কি সরকারের কাছে আছে, ওটার কপি ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। ১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্ক খেলাফত উচ্ছেদ করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ ৪৮১ বছর ওখানে মুসলিমদের ইবাদতের পর ১৯৩৪ সালে তিনি ওটাকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন। তারপর ১০ জুলাই ২০২০, 'এই গির্জাকে জাদুঘর বানানো ভুল ছিল' সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এটিকে মসজিদ বানানোর আদেশে সই করেছেন। স্বভাবতই এ নিয়ে তুমুল আন্তর্জাতিক, ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া হয়েছে, পক্ষ-বিপক্ষের দলিলপত্র, যুক্তি ও স্কলারদের বক্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও ইন্টারনেটে ব্যাপক কুরুক্ষেত্র চলছে।

বিরোধী পক্ষের বক্তব্য:

"অটোমান সম্রাট যা করেছিল সেটা ছিল লজ্জাজনক, অপমানজনক এবং সুস্পষ্ট গুনাহ….. এখন তুরস্ক আবার সেটাই করল, লজ্জাজনক, অপমানজনক এবং সুস্পষ্ট গুনাহ" -প্রাক্তন কূটনীতিক বর্ষীয়ান ইমাম শেখ ইমরান হোসেন, যার কয়েক মিলিয়ন অনুসারী আছে।

যেহেতু বিষয়টা জরুরি ছিল না তাই বিশ্ব-মহামারীর দুঃসহ দুর্যোগের মধ্যে হঠাৎ এই নতুন বিতর্ক অনেককেই বিরক্ত করেছে। সব সমাজেই সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত আছে, তুরস্কের খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক ইয়ালদিরাই ওগুর বলেছেন "তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে পাশ্চাত্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে"। আমিরাতের যুব ও সংস্কৃতি মন্ত্রী এবং ন্যাশন্যাল কমিটি ফর এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স-এর চেয়ারপার্সন বিদুষী নারী নুরা বিনত মুহাম্মদ আল কাবি বলেছেন বিশ্বের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো বিশ্বমানবের সম্পদ, এগুলোকে সংরক্ষণ করা উচিত।

তুরস্কের বিপক্ষে সোচ্চার মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি গেজেট, আল আরাবিয়া, আরব নিউজ ইত্যাদি সংবাদপত্রের কিছু কলামে এরদোয়ানকে 'মুনাফেক', 'উগ্রপন্থী' বলা হয়েছে। তুরস্কের নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ওরহান পামুকসহ অনেক মুসলিমের মতে বিশ্বময় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উত্থানের এই বৈরীকালে তুরস্কের উচিত ছিল হযরত ওমরের (র) আদর্শ অনুসরণ করা। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা জেরুজালেম জয় করলে তিনি সেখানে যান। শহরের পাদ্রী সোফ্রোনিয়াস তাকে গির্জার ভেতর নামাজ পড়ার করার আমন্ত্রণ জানালে তিনি বলেন সেখানে নামাজ পড়লে ভবিষ্যতে মুসলিমরা এই অজুহাতে গির্জাকে মসজিদ বানিয়ে ফেলতে পারে। তিনি গির্জার বাইরে নামাজ আদায় করেন যেখানে পরে 'মসজিদে ওমর' নির্মিত হয়।

তুরস্কের বিপক্ষে রুশ অর্থোডক্স চার্চ-প্রধান ক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন, ভ্যাটিকানের পোপ 'ব্যথিত' হয়েছেন, ইউনেস্কো, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীসসহ বিভিন্ন দেশ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ ইউনেস্কো জানিয়েছে কোনো আলোচনা না করে তুরস্কের এই একতরফা সিদ্ধান্তে ইউনেস্কো গভীরভাবে মর্মাহত, তুরস্ক যেন "ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ লিস্ট"-এর আইনগুলো মেনে চলে ('হায়া সোফিয়া' ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ লিস্টের অন্তর্ভুক্ত)। জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, "আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা ইউনেস্কোকে জানাব। তুরস্কের সিদ্ধান্ত দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে। যেভাবেই হোক আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে অবশ্যই রক্ষা করব, তুরস্কের সার্বভৌমত্বকে লংঘন করে এমন মতামতকে আমরা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করব"।

সমর্থক পক্ষের বক্তব্য:

তুরস্ককে সমর্থন জানিয়েছেন ড. জাকির নায়েক, ড. ইয়াসির ক্বাধী'র মতো বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী স্কলারেরা যাদের অসংখ্য অনুসারী আছে। সমর্থন করেছে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর সিরাজুল হক, ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী সংগঠন 'মুহম্মদীয়াহ' ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠন 'নাহদাতুল উলামা' সহ আরো অনেকে। ইন্দোনেশিয়ার সাংসদ সুরাহমান হেদায়েত সহ সাইপ্রাস, ইরান ও রাশিয়া বলেছে এটি তুরস্কের 'আভ্যন্তরীণ বিষয়', বহু মুসলিম এটাকে 'ইসলামের বিজয়' হিসেবে উল্লাস করছেন, কেউ কেউ এটাকে বাবরি মসজিদের ব্যাপারে 'ভারতের ওপর সফল প্রতিশোধ' হিসেবেও দেখছেন, এরদোয়ানকে অনেকে মনে করছেন 'মুসলিম বিশ্বের নতুন সুলতান'। বিশ্ব-মুসলিমের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের আকাঙ্খায় এটা স্বাভাবিক।

তুরস্ক-সমর্থকদের যুক্তি হল,

  • বহু বছর ধরে তুরস্ক ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ দেবার চেষ্টা করছে। এই ঘটনায় সেটা বিঘ্নিত হল কিন্তু ইসলামের সেবার চেয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ দেয়া বেশি জরুরি নয়।
  • ড. ইয়াসির ক্বাধী দাবি করেছেন বিজয়ী সুলতানের অধিকার ছিল গির্জা নিয়ে যা খুশি করার। তার পরেও তিনি ওটা কিনে নিয়েছিলেন।
  • ড. জাকির নায়েকও একই দাবি করে বলছেন জেরুজালেমের ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাথে শান্তিচুক্তি ছিল যা কনস্টান্টিনোপলের ক্ষেত্রে ছিল না। কাজেই দুটোর তুলনা করা ঠিক নয়।
  • সম্প্রতি পশ্চিমা দেশে বহু গির্জা মসজিদ কমিটির কাছে বিক্রি করা হয়েছে,
  • জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া পুরনো মসজিদকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনা কেন অন্যায় হবে?
  • স্পেনসহ বহু দেশে অমুসলিমরা মুসলিমদেরকে পরাজিত করে বহু মসজিদকে গির্জা বানিয়েছে,
  • ইসরাইল ৭০০ বছরের পুরোন আল আহমার মসজিদকে নাইট ক্লাব বানাল তখন বিশ্ব-বিবেক কোথায় ছিল?
  • বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় ইউনেস্কো কী করছিল?

যুক্তিগুলো শক্তিশালী। তবে কিনা, শেষের উদাহরণগুলোও অপরাধ এবং এক অপরাধ দিয়ে অন্য অপরাধের বিচার করা যায় না। তাছাড়া, ইসরায়েল আল আহমার মসজিদকে নাইট ক্লাবে রূপান্তরিত করল, এই ন্যাক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে মুসলিম নেতারা কিছু করেননি কেন? ৫৬টা মুসলিম দেশের শক্তিশালী সংগঠন ও আই সি কিছু করেনি কেন? তাদের তো দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়ার কথা !

কালতামামি

১. কনস্টান্টিনোপলে বিজয়ী পক্ষ নিজেরই সম্পত্তি 'কিনে নিলেন', এটা ইতিহাসের এক মহা ব্যতিক্রম। কারণ আদিকাল থেকেই বিজয়ী রাজা পরাজিত অঞ্চলের জমি, বাড়িঘরসহ প্রতিটি জিনিস এমনকি পরাজিত জনগণেরও একচ্ছত্র মালিক হতো। নারী-সম্ভোগ ছিল রুটিন ব্যাপার এবং মুসলিম সৈন্যরাও এর ব্যতিক্রম নয়। (কেউ যদি একাত্তর ভুলে গিয়ে থাকেন গুগল-এ 'ব্যাটল অফ হাররা' দেখে নিতে পারেন)

২. গির্জা বিক্রিটা কে কী অধিকারে করল এটা যৌক্তিক প্রশ্ন, যদিও ভক্তিমার্গের যুক্তিগুলো বড়ই রহস্যময়। ওটা পাড়ার গির্জা ছিল না, ওটা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ কেন্দ্রীয় উপাসনালয়। যেমন আমাদের কাবা, পোপের ভ্যাটিক্যান, অমৃতসরে শিখদের স্বর্ণমন্দির, তেমনি। এগুলো কি বিক্রি করা যায়? এগুলো কি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে? তাছাড়া, পরাজয়ে লাঞ্ছিত অপমানিত ধর্মগুরু অপমানকারীর কাছে নিজেদের উপাসনালয় বিক্রি করে দেবেন, এ কেমন অঙ্ক?

৩. এখন পশ্চিমা দেশগুলোতে যে গির্জাগুলো কিনে মসজিদ হয়েছে সেগুলো প্রধানত ট্রাস্টের সম্পত্তি, অতীতের বিজয়ী রাজাদের সম্পত্তির মতো ব্যক্তিগত বা মুসলিমদের ক্ষেত্রে খেলাফতের সম্পত্তি নয়। এই কেনাবেচা রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, বিজয়ী রাজাদের মতো ইচ্ছাধীন নয়। আসলে উপাসনালয়ের ব্যাপারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবিশ্বাস্য উদাহরণ রেখে গেছেন শিখ গুরু অর্জুন দেব। ১৫৮৫ সালে অমৃতসরে শিখদের সর্বোচ্চ উপাসনালয় স্বর্ণমন্দির নির্মাণে তিনি সেটার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করিয়েছিলেন লাহোর থেকে মুসলিম দরবেশ শেখ মিয়া মীরকে ডেকে এনে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন চমৎকার উদাহরণটা কোথায় হারাল?

৪. তুর্কী পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মুখে 'সার্বভৌম' ও 'আভ্যন্তরীণ বিষয়' শুনে মনে পড়ে কিছু? গণতন্ত্রের স্বঘোষিত বিশ্ব-মোড়লেরা সার্বভৌম মিসরের গণতান্ত্রিক নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে শুধু ক্ষমতাচ্যুতই করেনি বরং বিচারের নামে খুন করেছে। আমেরিকার সৈন্যেরা 'সার্বভৌম' পাকিস্তানকে কিচ্ছু না জানিয়ে দেশের ভেতরে ঢুকে বিন লাদেনকে খুন করে লাশ এনে সাগরে ফেলেছে। কাশ্মীর গিলে খাবার পর জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি এরকম ঘোষণা করেছিলেন, "আমরা সার্বভৌম দেশ, কাশ্মীর আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়"। উগ্র নেতারা এরকম ঘোষণা দিয়েছিল, "লর্ড রামের জন্মস্থান সার্বভৌম ভারতের ধর্মীয় ঐতিহ্য, ওটা আমরা অবশ্যই উদ্ধার করব"। একাত্তরে পাকিস্তানও বলেছিল আমাদের ওপরে গণহত্যা গণধর্ষণ তার 'আভ্যন্তরীণ বিষয়', জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব উঠলে এই একই আপ্তবাক্য বলেছিল গোলাম আজমও, তথ্যসূত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দলিল।

না, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, মিসর, নাইজেরিয়া, সিরিয়ায় খ্রিস্টানরা, চীনে উইঘুর মুসলিম, পাকিস্তানে বেলুচদের ওপরে অত্যাচার, ইসরায়েলের ঐতিহ্যবাহী আল আহমার মসজিদকে নাইট ক্লাবে রূপান্তরিত করা, বাংলাদেশে এবং আরব স্প্রিং-এর সময় মিসরে অজস্র মন্দির ও গির্জা ধ্বংস, আফগানিস্তানে দুনিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস, একাত্তরে আমাদের ওপরে গণহত্যা গণধর্ষণ এগুলো কারো 'আভ্যন্তরীণ বিষয়' নয়। সারা দুনিয়ার অধিকার ও দায়িত্ব আছে এগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। কারণ "Injustice anywhere is threat to justice everywhere" -মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

৫. মুসলিম শুধু তুরস্কে বাস করে না। তুরস্কের পক্ষে যতই দলিল-যুক্তি, যত ইসলামী স্কলারেরাই থাকুন না কেন এটাতে বিশ্বমানবের অকল্পনীয় ক্ষতি হতে পারে। ইসরাইলের হাতে আছে আল আকসা মসজিদ। ছলের তো বাহানার অভাব হয় না, ইসলামের আগে ওটা তো ওদেরই উপাসনালয় ছিল! সেটা তারা সিনাগগ বানালে তা হবে তার 'আভ্যন্তরীণ" বিষয়', বিশ্ব মুসলিম চীৎকার করে হাত-পা ছুঁড়লে সে তুরস্কের এই উদাহরণ তাদের কপালে ছুঁড়ে সেখানে আলু তুলে দেবে। ভারতের বিজেপি-আর এস এস-এর লক্ষ লক্ষ উগ্র ধর্মান্ধের হাতে আছে মোগল আমলের তাজমহলসহ কয়েকশ' 'মন্দির ভেঙে মসজিদ'-এর তালিকা। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরসহ অতিকায় দিগগজ পণ্ডিতদের সুগভীর গবেষণায় 'সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত'। সেগুলোর ভিত্তিতে মোদী সরকার যদি বাবরি মসজিদের মতো ওই মসজিদগুলো মন্দির বানায়, বিশ্ব মুসলিম চীৎকার করে হাত-পা ছুঁড়লেই সে তাদের নাকের ডগায় তুরস্কের এই উদাহরণ তুলে ধরে মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে দেবে।

সভ্যতা এগিয়েছে সখ্যের শক্তিতে, সংঘাতের নয়। ইসলামের বিজয় জীবনে ও সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায়, সৈন্যবাহিনী দিয়ে দেশ দখলেও নয় কোর্ট-কাচারী করে ইমারত বিজয়েও নয়। অতীতে বিজয়ী রাজারা পরাজিতদের অজস্র উপাসনালয় ধ্বংস করেছে বা বদল করে নিজেদের করেছে। সেই প্রেতাত্মার বোঝা আমরা কেন বয়ে বেড়াব?