Published : 03 Jan 2021, 02:24 AM
Story-1 Dec 12, 2020
"কম নম্বরের পরীক্ষায় খাতায় সই করার বাবা"
নিচের সিঁড়ি থেকে গুনগুন করে একটা গান উপরের দিকে উঠে আসত। গানটা খুবই পরিচিত "আকাশ মেঘে ঢাকা শাওন ধারা ঝরে"। বাবার খুব প্রিয় একটা গান। বাবা নিজের অজান্তেই গুনগুন করে গানটা গাইত এবং দিনশেষে কাজ থেকে ফেরত আসার সময় এই গানটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে শার্টের ওপরের বাটন দুইটা খুলতে খুলতেই কলিংবেল টিপ দিত।
রাজারবাগ পুলিশ লাইন-এর অপজিটে, পুলিশ হসপিটাল কমপ্লেক্সে আমাদের বাসস্থান তখন চার তলায়। প্রায় আট বছর ছিলাম ওখানে। কত মজা, কত হাসিখুশি, কত সুখ-দুঃখ মিশ্রিত নানান প্রকারের স্মৃতি। নিশ্চয়ই লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম অথবা পড়ার বাহানা করে অন্য কিছু করা হচ্ছিল, কিন্তু যখনই বাবার এই গুনগুন গানটা উপরের দিকে উঠে আসতে থাকত তখনই দৌড়ে চলে যেতাম দরজার কাছে। যেন দরজাটা আমি খুলতে পারি।
বেশিরভাগ সময়েই আমার দরজা খোলা হতো না কারণ আমাদের আরদালি কবির ভাই আগেই দরজা খুলে ফেলত, সে দরজার সংলগ্ন রুমে অবস্থান করত। তবু সামনে আসতাম, দরজা খুলেই বাবা সুন্দর একটা হাসিমাখা মুখে জিজ্ঞাসা করে "তিনা কি খবর আজকে?"
বললাম, "বাবা সব ঠিক আছে শুধু দশে আট পেয়েছি আজকে, আর বাবা পাল্টা বলল "মা মন খারাপ করেনি তো?"
পরীক্ষার খারাপ নম্বরগুলি অবলীলায় বাবার সাথে শেয়ার করতে পারতাম, পারতাম না মার সাথে ভয়ে। হলিক্রস স্কুলের অনেকগুলি কঠিন নিয়মের মধ্যে একটা নিয়ম হলো খাতা পিতা-মাতাদেরকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে জমা দেওয়া। যতগুলি পরীক্ষায় খারাপ করেছিলাম আমার মনে আছে ওই সময়কার ওই পরীক্ষার খাতাগুলিতে বাবার স্বাক্ষর ছিল। আমার শিক্ষক-শিক্ষিকারা কিন্তু আমার বাবার স্বাক্ষর চিনতেন না। কেউ কেউ যে সন্দেহ করতেন তাও বুঝতাম।
প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সবকটা পরীক্ষার খাতা এবং রিপোর্ট কার্ড সবকিছুতে স্বাক্ষর ছিল আমার মায়ের। যমের মত ভয় পাই মাকে, আজ চল্লিশ বছর বয়সে, আজও ঠিক এমন করেই ভয় পাই আমি আমার মাকে।
আমার জীবনের অনেক পরে এসেও অনেক ছোট-বড় সমস্যা, মন খারাপ এবং তার বিচার করার কথা আমার বাবার কাছে অবলীলায় বলতে পারতাম। সেই পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া খাতা সই করার মতো। এমন একজন মানুষ যে নাকি নালিশের বদলে বিরাট একটা বালিশ দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। এরকমই হচ্ছে আমার বাবা।
এখন থেকে আমার নালিশ শোনার কোন সুষ্ঠু বিচারক থাকল না। আমার কোন নালিশ শুনে আমার কোন পূর্বের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার অভিজ্ঞতা মনে না করিয়ে দিয়ে, দুঃখ বাড়িয়ে না দিয়ে, যে নিঃস্বার্থভাবে সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়ে বলত, আমার বাবা, আজ আর নেই।
১৭ বছর হলো আমার বিয়ের, আজ এত বছর পরে বাবা ফাইনাল কিস্তিটা পরিশোধ করে চিরদিনের জন্য মেয়ে বিদেয় করল। কিস্তি বললাম বলে অন্য কিছু মনে করবেন না যেন। যারা জানেন, তারা খুব ভালো করেই জানেন কিস্তিতে তিন্নির বিয়ের কাহিনি কী? সময় হলে আরেকদিন বলব কিস্তিতে তিন্নির বিয়ের কাহিনী।
আজ দুই সপ্তাহ একদিন, বাবা তুমি কাছে নেই। গত সতের বছরেও সবসময় কাছে থাকতে না, কিন্তু এতটা ফাঁকা ফাঁকা আর কখনো লেগেছে কিনা সন্দেহ। দিনের বেলায় বাচ্চাদের কোলাহল, ঘর সংসার, অফিস, খাওয়া-দাওয়া, রান্না-বান্না, লন্ড্রি, নামাজ কোরআন সব মিলিয়ে হুলুস্থুল থাকতে হয়। কিন্তু যখনই অন্ধকার হয় তখনই একটা ভার বুকের ওপর উড়ে এসে জুড়ে বসে। তোমার বুকের ওপরে যেভাবে একদলা মাটি চেপে ধরে বসে আছে, তোমার ওই ভারটা যেন আমিও বুঝতে পারি রাতের আধারে। তোমার যেমন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তেমনটা আমারও হচ্ছে।
একটু জোরে কাঁদতেও পারি না কারণ বাচ্চাগুলো যদি ঘুম থেকে উঠে যায়? আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য একজন বড় আপু বললেন "নিজের প্রিয় মানুষের কাছ থেকে ফেরেশতারা তার প্রিয় মানুষকে নিয়ে যেতে পারে না", তাই বুঝি সর্বশেষ নীলনকশায় তোমার পাশে আমার থাকার কোনো পরিকল্পনা মহান সৃষ্টিকর্তার ছিল না, কারণ হয়তো আমার সামনে দিয়ে তোমাকে কেউ নিয়ে যেতে পারত না।
বিয়ের পরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুকরণে অনেক মেয়েরাই তাদের পরিবারের বা বাবার নামটি বদলিয়ে স্বামীর নাম গ্রহণ করে। ইসলামে এইটা বারণ। আমি কিন্তু এই কথাটা না জেনেই আমার বাবার নাম আমার সাথেই জুড়ে রেখেছি। হয়তোবা এজন্য আমাকে অনেকেই সেকেলে এবং not so classy মনে করত। কিন্তু আমার বাবা আমার সর্বকালের সর্ববৃহৎ গর্ব, তার নামকে সরিয়ে আমি অন্য কোন মানুষের নাম আমার সাথে জুড়ে দেব, একথা আমি কখনো ভাবতেই পারি না।
আমার সকল শক্তির, সকল আত্মবিশ্বাসের উৎস আমার বাবা। বাবার মতো এত সম্মান এবং সফলতা অর্জন করতে পারিনি অথবা বাবার পছন্দের মানুষদের মতো বড় বড় ডিগ্রিও আমার নাই। তবুও আমার ছোট ছোট সফলতাগুলোকে অনেক বড় করে দেখার মত বৃহৎ হৃদয় একমাত্র আমার বাবারই ছিল। এখন থেকে আমার এই ছোট ছোট সফলতাগুলি অন্যদের বড় বড় সফলতার ভিড়ে হয়তো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে। কে জানে হয়ত আমার আত্মবিশ্বাসের মধ্যেও ধীরে ধীরে ঘুণ ধরবে।
বাবা তুমি শুধু আমার পিতাই নও, অনেক মানুষের অভিভাবক, ওপারে যেয়ে এত অসংখ্য মানুষের ভিড়ে আমি যখন ডাকব, তুমি আমাকে চিনতে পারবে তো? তুমি যদি একবার আমাকে ডাকতে, "তিনা তুমি কোথায়?" বিশ্বাস করো বাবা আমি তোমারই দেয়া দুটো ডানায় ভর করে সবকিছু ছেড়ে উড়ে চলে আসতাম। তোমারও আর আসা হলো না।
Story-2 Dec 16, 2020
"একটি সরল নরম তুলতুলে লাড্ডুর গল্প"
দিন অথবা তারিখ ঠিকমতো আমার মনে নেই। তবে এটুকু বলতে পারি এই ঘটনার স্থান রাজারবাগ পুলিশ হসপিটাল কমপ্লেক্সে। ১৯৯৬-৯৭ এর ঘটনা হবে। বাবা আর আমি দুজনেই মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করি। বাবার পছন্দ একদম দেশি স্বাদের, দেশি রকমের মিষ্টি আর আমার পছন্দ দেশি-বিদেশি সব রকমের মিষ্টি। কপালগুণে সচ্ছল পরিবারে জন্ম আমার। আত্মীয়স্বজনেরা অনেকেই বিদেশে থাকে, সেই সুবাদে দেশি মিষ্টির পাশাপাশি বিদেশি চকলেট খাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।
তবে আমাদের মিষ্টি খাওয়াটা কিন্তু একটু ভিন্ন রকমের। অনেকেই মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বাসায় বানিয়ে রেফ্রিজারেটরে ঠান্ডা করে তারপর আয়েশ করে খেতে পছন্দ করে, কিন্তু বাবা আর আমি দুজনেই গরম মিষ্টি অর্থাৎ সদ্য বানানো মিষ্টি খেতে পছন্দ করি।
বাবার পছন্দের মিষ্টিগুলোর নামের তালিকা অনেক লম্বা তবুও গল্পের জন্য কয়েকটি নাম বলতেই হয়। টাঙ্গাইলের চমচম, মাওয়া দেয়া। টাঙ্গাইলের সেরা চমচম কে না চেনে? কিন্তু টাঙ্গাইলের চমচমেরই সাদা ভাইয়ের নাম হচ্ছে নেত্রকোনার বালিশ। দুটো মিষ্টি দু'রকমের মজা। একটা একটু শুষ্ক আরেকটা একটু ভেজা। চমচম একটু লালচে, আর বালিশ একেবারেই সাদা। বাবা যখন টাঙ্গাইলে চাকরি করতেন পুলিশ সুপার হিসেবে তখন স্পেশাল করে বানানো এক পোয়া এবং আধা কেজি ওজনের একেকটি চমচমের স্বাদ এবং চেহারা দুটোই এখনো মনে আছে। কী যে স্বর্গীয় মজা আছে ওই মিষ্টিতে! কিন্তু ঐ স্বর্গীয় মজা আসে তখনই যখন নাকি মিষ্টিগুলোকে হালকা গরম করা হতো। আরেক রকম মিষ্টি হলো রসমালাই। বাবা যখন বগুড়ায় ব্যাটেলিয়ান প্রধান, তখন রসমালাই কতটা মজা হতে পারে সেটা জানলাম। অবশ্যই পুলিশ হওয়ার অনেক সুবিধা, মিষ্টি বানানোর কারিগর জানে কোন বাসায় মিষ্টি যাবে সুতরাং ভালো না বানিয়ে যাবে কই? আর সেই সুবাদে সেই রসমালাইয়ের স্বাদ জিহবার কোন এক কোণে এখনো লেগে আছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে আমার বাবার জন্য। উনি যদি মিষ্টি পছন্দ না করতেন আর আমাকে কিনে এনে না খাওয়াতেন তাহলে এমন আভিজ্ঞতা হয়তো আমার হতো না। এরপর আছে পায়েস, ক্ষীর, সুজি এবং সেমাই। মার হাতে বানানো এই সুস্বাদু মিষ্টি জাতীয় খাওয়াগুলি ঈদের দিনের প্রধান আকর্ষণ। আর বাবার ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও অবলীলায় সেগুলো খেয়ে যাওয়া, আর অন্যদিকে মিষ্টি না খাওয়ার জন্য বাবার দিকে উড়ে আসা আমার মায়ের চেঁচামেচির সূক্ষ্ম বাণবর্ষণ। মা খুব ভালো করেই জানে বাবার এসব খাওয়া বারণ, তবুও আমার মা, বাবার চোখেমুখে 'মিষ্টি খাওয়ার' তৃপ্তি দেখার সুপ্ত লোভে বারবার ওইসব বারণ করা মিষ্টিগুলো বানাত। এটা একটি অন্যরকমের ভালোবাসা।
এখন আসি মতিচুরের লাড্ডুতে। এ আরেক স্বর্গীয় মিষ্টি। তবে মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে কিনে নিয়ে আসা লাড্ডুগুলি বেশ শক্ত থাকে, আর যদি এক দুদিনের পুরানো হয় তাহলে ওইটা দিয়ে আঘাত করলে রক্ত বের হলেও হতে পারে। বাড়িতে একটা নতুন মাইক্রোওয়েভ এলো, ব্যাস শুরু হয়ে গেল নানা রকমের এক্সপেরিমেন্ট। একদিন রান্নাঘর নামক ল্যাবরেটরিতে একটি লাড্ডু ১০ সেকেন্ড গরম করলাম, বাহ কী অভূতপূর্ব আবিষ্কার আমার! লাড্ডুটা এমন নরম তুলতুলে হল, মনে হচ্ছিল যেন সদ্যই বানিয়ে পরিবেশন করা মিষ্টি। ঠিক ওই সময়ে সেই সিঁড়ি দিয়ে গুনগুন করে গানটা উপরের দিকে উঠে আসছিল, ব্যাস যেমন ভাবা তেমনই কাজ। আমিও একটা বাটিতে আরেকটা লাড্ডু গরম করে বাবার সামনে হাজির। বাবা তুলতুলে লাড্ডু খেলো আর বলল "কে বানিয়েছে তিনা! তুমি?" আমি অসাধারণ নাটকীয় চেহারায় খুবই বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলে দিলাম, "হ্যাঁ বাবা আমি লাড্ডু বানাতে শিখে গেছি, কেমন হলো?" আমি তখন হয়তো নবম শ্রেণির ছাত্রী আমার বয়সের, আমার মতো পরিবারের মেয়েরা তখনো রান্নাঘরে যায় কিনা সন্দেহ। তবে নিজের পছন্দ এবং বাবা-মার ইচ্ছায় রান্নাঘরে আমার যাতায়াত ছিল অবাধ। কিন্তু তাই বলে লাড্ডুর মতো কঠিন মিষ্টি বানানোর কৌশল শেখা আমার বয়সে অবাস্তব। তবুও বাবা বিশ্বাস করল। এই মিথ্যায় বাবা যে কী খুশি, এটা দেখে আমি আরো বেশি খুশি। মা অন্যদিকে মুখ চেপে মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে।
আমি যদি ভুল না করে থাকি, ওই সময়টায় বাবা প্রধান তদন্তকারী অফিসার হিসেবে সিআইডিতে চাকরিরত। সেই সময় বাবার হাতে জেল হত্যা মামলা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মতো কঠিন কঠিন মামলা পরিণতি পেতে যাচ্ছিল। আমার বাবা এত বড় মাপের তদন্তকারী কর্মকর্তা হয়েও মেয়ের একটি তুচ্ছ মিথ্যা ধরতে পারল না? নাকি বাবা সত্যিটা জেনেই আমার কাছে গোপন করেছিল আমাকে খুশি করার জন্য?
এদিকে এবার আমার মিথ্যা ধরা পড়ার পালা। খুব বেশিদিন লাগেনি ধরা পড়তে। কন্যার হাতে বানানো এরকম অসাধারণ লাড্ডু খাওয়াতে কোন বাবা না চাইবে? একজন গর্বিত বাবাই পারে এমনটা করতে। আমাদের পরিবারের খুব কাছের আর একটি পরিবার, বাবার একজন বন্ধু হলেন সানাউল আঙ্কেল। উনি আর বাবার সাথে উনার বিবাহিত জীবনের শুরু থেকে, বাবার শেষ কর্মস্থল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক সাথে কাজ করেছেন এখনও কর্মরত আছেন। বাবা এবং উনি দুজনেই একসাথে বিকাল বেলায় উপরে উঠে আসলেন। বাবা আঙ্কেলকে তুমি করে সম্বোধন করে। বাবা বলেই ফেলল "এই সানাউল একটা লাড্ডু খাও, তিন্নির হাতে বানানো।" আংকেলের হয়ত কিছু মনে নেই, তবে যার উপর দিয়ে যায় তারই মনে থাকে বেশি। বাবার আতিথেয়তায় আমার অবস্থা শোচনীয়। আমার হাত পা ভয়ে ঠাণ্ডা। এখন কি হবে? কোথায় পাব সেই নরম তুলতুলে সদ্য বানানো লাড্ডু? আমি একটু দ্বিধা করে বললাম "আজ সেটা হবে না"। বাবা জিজ্ঞাসা করল "কেন? তুমি না ১০ সেকেন্ডে লাড্ডু বানাতে পারো?" আমি কান্নাপ্রায় মুখে বললাম "১০ সেকেন্ডে লাড্ডুর জন্য আগে বাজার থেকে লাড্ডু কিনে আনতে হয়, আজকে তা বাসায় নাই।" বাবা তো আকাশ থেকে পড়ল! "মানে? ওটা তোমার বানানো লাড্ডু ছিল না? তিনা, এটা কি রকম কথা?" বাবার অনুযোগ। আঙ্কেল অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লেন। আমার মতো কিশোরী এই অভিজ্ঞতা কোনদিন ভুলবে না। লজ্জা, সংকোচ এবং কান্না সবকিছু মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল স্মৃতি।
আমার কান্না কান্না চেহারা দেখে বাবা হেসে দিলো আর সমস্ত অভিজ্ঞতাটাকে খুবই হালকা করে উড়িয়ে দিলো যেন আঙ্কেল এর সামনে নিজেকে অসহায় এবং অপদস্ত মনে না করি।
এমনই সোজা, সরল, ১০ সেকেন্ডের গরম করা একটি নরম তুলতুলে লাড্ডু, আমার বাবা।
আমি লাড্ডু খুবই পছন্দ করি সেজন্য, আমার বড় ভাই সমিক (দাদা) প্রায়ই ম্যানহাটনের একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি দোকান থেকে, অনেক দাম দিয়ে প্রায়ই নরম তুলতুলে লাড্ডু কিনে নিয়ে আসে। ওই অভিজ্ঞতার পর থেকে যতবার লাড্ডু খেয়েছি ততবার সেই ১০ সেকেন্ডের লাড্ডুর কথা মনে পড়েছে। মনে মনে এখনো লজ্জা পাই এবং হাসি।
যেমন করে তুমি আমার লজ্জা, সংকোচ এবং দ্বিধাকে ঢেকে; আমার দুর্বলতাকে যেভাবে সবল করে দিয়েছ, আমি সেই বল দিয়েই আজ এই অভিজ্ঞতার কথা নিঃসংকোচে বলতে পারছি।
সেদিনের সেই কিশোরীর মন যদি একবার সংকোচ আর লজ্জা দখল করে নিত তাহলে সেই কিশোরী ২০ বছর পরে একজন সাহসী, আত্মনির্ভরশীল কন্যা, রমণী, স্ত্রী, মা হতে পারত না। আমি আজ যা কিছু সবই তাদের দান। বাবা, তুমি আমার আত্মবিশ্বাস এবং সকল শক্তির উৎস। To me you are never LATE, you are always with me. Love you Baba.