Published : 15 Apr 2021, 07:11 AM
"টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্মের আগেই আমি কিন্তু টি টোয়েন্টি ব্যাটিং করেছি"- বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন কথা মানায় শুধু একজনের মুখেই। ব্যক্তিটি মোহাম্মদ রফিক।
রফিকের ব্যাটে ভর করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম জয়ের অবিস্মরণীয় স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের হায়দরাবাদে তিন দেশীয় সিরিজে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংস গোড়াপত্তন করতে নেমে মাত্র ৮৭ বলের ইনিংসে ৭৭ রান করে ম্যাচ সর্বোচ্চ ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন রফিক। বলা বাহুল্য, ম্যাচ সেরার দৌড়ে তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী-ই ছিল না। ওই ম্যাচে বল হাতেও সেরা পারফরমার ছিলেন রফিক। নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
দেশকে শুধু প্রথম জয়ই এনে দেননি, ওই সময় ক্রিকেটের নতুন দর্শন 'পিঞ্চ হিটিং'য়ের সার্থক রূপকারও ছিলেন রফিক। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রধান অস্ত্র ছিলেন এই বাঁহাতি। সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়েও তিনি হরহামেশাই মেটাতেন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট তখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। কিউই ওপেনার মার্ক গ্রেটব্যাচ নামের এক ভদ্রলোকের কল্যাণে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঘটে গেছে বিপ্লব। ১৯৯২ এর বিশ্বকাপে ক্লোজ ফিল্ডিংয়ের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বলগুলোকে ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে উড়িয়ে উড়িয়ে খেলতে লাগলেন গ্রেটব্যাচ। বদলে গেল ওয়ানডে ক্রিকেটের দর্শন। পরবর্তীতে এ 'পিঞ্চ হিটিং' ব্যাটিংকে আবশ্যকীয় অনুসরণীয় করে ছাড়লেন দুই লঙ্কান বিস্ফোরক ওপেনার সনাথ জয়াসুরিয়া ও রুমেশ কালুভিতরানা। ক্রিকেটের এমন একটা সময়ে দেশের মুল স্ট্রাইক বোলার রফিকের মারাকাটারি ব্যাটিং হয়ে উঠল বাংলাদেশ ক্রিকেটে 'পিঞ্চ হিটিং' এর বিজ্ঞাপন।
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনাল। বাংলাদেশ ও কেনিয়া দু দলের সামনেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে ২৫ ওভারে ১৬৬ রানের টার্গেট। ওভার পিছু পৌনে সাত রান তোলার কঠিন চ্যালেঞ্জ। ওই সময় ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয়ের ওপর টার্গেটে পৌঁছানো মানে প্রায় অসম্ভবের নাগাল পাওয়া।
দুরূহ এ চ্যালেঞ্জ জয়ের জন্য ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে ওপেনার হিসাবে রফিককে পাঠিয়ে দিলেন বাংলাদেশের ক্যারিবীয় কোচ গর্ডন গ্রিনিজ। সঙ্গী নাইমুর রহমান দুর্জয়। প্রথম বলেই বোল্ড আউট হয়ে গেলেন দুর্জয়। উইকেট পতনও করণীয় থেকে একবিন্দু টলাতে পারল না রফিককে। মাত্র ১৫ বলে ২৬ রানের একটা লাগসই ইনিংস খেললেন। স্ট্রাইক রেট ১৭৩ দশমিক ৩৩। রফিক যে গতি এনে দিলেন, সেটা আর থামেনি। শেষ বলের নাটকীয়তায় অপরাজিত থেকেই আইসিসি শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলারও ছিলেন রফিক।
আইসিসি শিরোপা জয়ের বছরই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেল বাংলাদেশ ও কেনিয়া। সহজ করে বললে মিলল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ততদিনে আইসিসির সুখস্মৃতিতে ধুলো জমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় প্রমাণের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠল প্রাণের দায়। এরই মধ্যে তিন জাতি প্রেসিডেন্ট'স কাপ খেলতে কেনিয়া গেল বাংলাদেশ। ওই সিরিজে স্বাগতিক কেনিয়া ছাড়া অপর দলটি জিম্বাবুয়ে। আন্তর্জাতিক লোগো সমৃদ্ধ হওয়ার পর কেনিয়ার সঙ্গে এটাই ছিল প্রথম দ্বৈরথ। এ মনস্তাত্বিক লড়াইয়ে মোটেও সুবিধা হলো না। হারের বিষাদ সঙ্গী হলো চার ম্যাচেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম জয়টি বাংলাদেশ কবে পাবে, বড় হয়ে উঠল এ প্রশ্ন। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে ও পরে মিলিয়ে টানা ২২ ম্যাচে হার! ভার হয়ে উঠেছে স্ট্যাটাস! অবশেষে রফিকের ব্যাটেই ভারমুক্তি!
দিনটি ছিল ১৯৯৮ সালের ১৭ মে। হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম। ত্রিদেশীয় কোকাকোলা সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কেনিয়া। টস জিতে ব্যাট করতে নামল কেনিয়া। স্কোরবোর্ডে জমা করল ২৩৬ রান। ওই সময়ের বাস্তবতায় যথেষ্টই সমৃদ্ধ ইনিংস। ২৩৭ রানের বড় চ্যালেঞ্জে জেতার জন্য আইসিসি চ্যাম্পিয়নের ফাইনালের মত যথারীতি ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠানো হল রফিককে।
এক প্রান্ত আগলে রাখলেন আতহার আলী খান। আর অন্যপ্রান্তে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেলেন রফিক। যতক্ষণে আউট হলেন, ততক্ষণে জয় চলে এসেছে নাগালের মধ্যে। ২৬ ওভারের শেষ বলে আউট হলেন রফিক। তার ইনিংসটি সাজানো ১১ বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কায়। স্কোরেবার্ডে ১৩৭/১। জয় থেকে দূরত্ব ১০০ রান। হাতে ২৪ ওভার আর ৯ উইকেট। আতহার ( ৯১ বলে ৪৭), আমিনুল ইসলাম (২০*), আকরাম খানের (৩৯) দৃঢ়তায় দুই ওভার হাতে রেখেই ৬ উইকেটের ব্যবধানে জয়ের আনন্দে ডানা মেলল বাংলাদেশ।
দেশের প্রথম ওয়ানডে জয়কে 'ঐতিহাসিক ঘটনা' বলেই মনে করেন রফিক। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সঙ্গে নিজের নামটি সেঁটে থাকায় অনুভব করে দারুণ গর্ব; তৃপ্তি, "আমি মনে করি আইসিসি জেতার মতই দেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ও ঐতিহাসিক ঘটনা। এই দুই জয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে।"
সচরাচর রফিক ব্যাট করতেন লোয়ার অর্ডারে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই দলের প্রয়োজনে তাকে পাঠানো হত টপ অর্ডারে। কোচ কেন মহাপ্রয়োজনের সময় এ দায়িত্ব কাঁধে চাপিয়ে দিতেন, তা বোঝাতে ছক্কা মারার প্র্যাকটিসের প্রসঙ্গও টানলেন রফিক, "সাধারণত আমি ৮/৯ নম্বরে ব্যাট করতাম। তবে দলের দ্রুত রান তোলার প্রয়োজন হলে আমাকে উপরে পাঠানো হত। পাওয়ার ব্যাটিং আমার পছন্দ। কোচ গর্ডন ( গ্রিনিজ) আমাকে পাওয়ার ব্যাটিংয়ে খুবই উৎসাহ দিতেন। আমাকে লম্বা শট প্র্যাকটিস করতে বলতেন। আমিও লম্বা শট প্র্যাকটিস করতাম। ছক্কা মারতে হলে বল কতদূর পাঠাতে হবে সে প্র্যাকটিস করতাম।"
আপনাদের সময় সেভাবে টি২০ ক্রিকেট ছিল না, এখনকার মত টি২০ ক্রিকেট থাকলে আপনার ক্যারিয়ার নিশ্চয় আরো সমৃদ্ধ হতে পারত?
এ প্রশ্নের জবাবে হার্ডহিটার রফিক অবশ্য খুবই রক্ষণাত্মক। বললেন, "আমাদের সময়ে টি২০ ক্র্রিকেট ছিল না, কিন্তু তাতে আফসোস থাকবে কেন? দেশের হয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেছি। মনে রাখতে হবে, টি২০ জন্মের আগেই আমি কিন্তু টি২০ ব্যাটিং করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের হয়ে খেলা। দেশের জন্য খেলেছি, সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। এই তো তৃপ্তি। প্রাপ্তি।"
ক্রিকেট থেকে নিজের প্রাপ্তি নিয়ে অতৃপ্তি না থাকলেও একটা জায়গায় আক্ষেপটা কিন্তু রয়েই গেছে রফিকের। আর সেই আক্ষেপ বেশি ম্যাচ খেলতে না পারার। বললেন, "কখন দেশের হয়ে মাঠে নামতে পারব, আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম। আমাদের সময়ে খুব কমই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতাম। আর এখন সাকিবরা ( সাকিব আল হাসান) দেশের খেলা থাকলেও যায় না। আমি মনে করি, দেশের হয়ে একটা ম্যাচ কম খেলা মানে, ইতিহাস থেকে এক ম্যাচ পিছিয়ে পড়া।"
আরও যোগ করেন, "আমি টেস্ট খেলেছি মাত্র ৩৩টি আর ওয়ানডে ১২৫টা। যদি এর ডাবল ম্যাচ খেলতে পারতাম তাহলে আমার উইকেট সংখ্যা ডাবল হত। ভাবেন তো আমার ক্যারিয়ার কত উঁচুতে থাকত!"
দেশের জন্য না খেলে ফ্রাঞ্চাইজিতে খেলতে যাওয়ার জন্য ক্রিকেটারদের চাইতে ক্রিকেট বোর্ডের দায় বেশি বলে মনে করেন রফিক, "বোর্ড যদি শক্ত হত তাহলে, ক্রিকেটাররা দেশের খেলা বাদ দিয়ে অন্য দেশের ঘরোয়া টি২০ টুর্নামেন্টে খেলার সাহস দেখাতে পারত না। যত কিছই বলা হোক না কেন, আমার বিবেচনায় সব কিছুর উপর দেশ।"
টেস্ট ও ওয়ানডে দু ঘরানার ক্রিকেটেই বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডবল (এক হাজার রান ও ১০০ উইকেট) অর্জনের কৃতিত্বের অধিকারী রফিক। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১২৫ ম্যাচে ১২৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি তার ব্যাট থেকে এসেছে ১ হাজার ১৯১ রান। আর ৩৩ টেস্টে ব্যাট হাতে ১,০৫৯ রানের পাশাপাশি বল হাতে শিকার ১০০ উইকেট।
দেশের বাইরে টেস্ট সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও দেখান এই বাঁহাতি। ২০০৪ সালে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ড্র করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে তার এ সেঞ্চুরি। ২৩০ মিনিট পিচ আঁকড়ে পড়ে ছিলেন। ১৫২ বলে ১১১ রানের ইনিংসটিও তিনি সাজিয়েছিলেন ১১টি চার ও ৩ ছক্কার বুননে। দ্বিতীয় ইনিংসের করেছিলেন কর্যকরী ২৯ রান। ওই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে রফিক উইকেটও নিয়েছিলেন তিনটি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে শুরুর দিকে বড় অর্জনে ব্যাট কিংবা বল হাতে কিছু না কিছু অবদান রাখেন রফিক। ২০০৩ সালে পাকিস্তান সফরে ক্রিকেট বিশ্বকে নতুন বার্তা দেয় বাংলাদেশ। তিন টেস্টের ওই সিরিজে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে লিডও নেয় বাংলাদেশ। ওই সিরিজে বল হাতে রফিক ছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের ত্রাস। সিরিজে নেন ১৭ উইকেট। মুলতান টেস্টে জয় জয় সুবাস ছড়িয়েও বাজে আম্পায়ারিং ও কিছুটা দূর্ভাগ্যের কারণে কাঙিক্ষত জয় আসেনি। মুলতান টেস্টটি আর একটা কারণে বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে আছে। রফিকের স্পোর্টসম্যানশিপের সাক্ষ্য বহন করছে ওই মুলতান টেস্ট।
ক্রিকেট মাঠ থেকে প্রায় হরিয়ে যেতে বসা 'স্পোর্টসম্যানশিপ' শব্দটা যেন মুলতান টেস্টে নতুন করে ফিরিয়ে আনেন রফিক। ম্যাচে একটা পর্যায়ে বাংলাদেশের জয়ের পথে দেয়াল তুলে দাঁড়ান পাকিস্তান অধিনায়ক ইনজামাম উল হক ও উমর গুল। ওদিকে নির্লজ্জতার চুড়ান্ত দেখাচ্ছেন আম্পায়াররাও । উমর গুল ও ইনজামামকে একাধিকবার লেগ বিফোর ও কটবিহাইন্ড আউট দিলেন না।
এরকম একটা দুঃসহ অবস্থায় খুব ভাল সুযোগ পেলেন রফিক। বল করার আগেই রান নেয়ার উদ্দেশ্যে ক্রিজ থেকে অনেকটা বেরিয়ে গেলেন গুল। রান আউট করার সহজ সুযোগ। আর ওই সময় রান আউট করলে নবম উইকেট হারাত পাকিস্তান। পূরণ হত টেস্ট জয়ের স্বপ্নও। কিন্তু অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আসা রফিক সহজ পথটা নিলেন না। রান আউট না করে বরং উইকেটে ফিরিয়ে আনলেন গুলকে। ক্রিকেট জিতলেও জেতেনি বাংলাদেশ।
বর্তমানে ৫১ ছুঁইছুঁই বয়স রফিকের। এখনও রফিক মনে করেন মুলতানে ঠিক কাজটিই করেছিলেন। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, "ভাই, ওই নোংরা কাজটা না করে ভাল করেছি। ওই রান আউটটা করলে কলঙ্কের দাগ জীবনেও উঠত না। উঠতে বসতে কথা শুনতে হত। আর তাছাড়া জানতাম, যেভাবে খেলছি, তাতে যে কোন সময়ই আমরা টেস্ট ম্যাচ জিতব।" মাঠের হার-জিত মানুষ এক সময় ভুলে গেলেও খারাপ বিষয়গুলো মানুষ কিন্তু ঠিকই মনে রাখে। এ পর্যায়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন ওই সময়ের পাকিস্তান অধিনায়ক রশিদ লতিফের কথাও।
ওই মুলতান টেস্টেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে মাটি থেকে বল কুড়িয়ে নিয়ে অলক কাপালিকে কট বিহাইন্ড আউট করেছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটে একটা সময় মিস্টার ক্লিনম্যান বিবেচিত রশিদ লতিফ। এ নিয়ে কম সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে! মুলতান টেস্টে কাপালিকাণ্ডের ছয় বছর পর এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিলের একটা প্রোগ্রামে ঢাকায় এসেছিলেন লতিফ। রাজধানীর একটি হোটেলে কাপালির কট বিহাইন্ড নিয়ে ছল চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া প্রসঙ্গে ওই সময় দেশ টিভির রিপোর্টার রঞ্জন সেনের প্রশ্নের জবাবে লতিফ বলেন যে, হেরে গেলে তাদের বিপক্ষে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠত। সেই অভিযোগ থেকে বাঁচতেই যে কোন মূল্যে তারা জিততে চেয়েছিলেন।
'তুমি লতিফ তাই বলিয়া আমি কেন রফিক হইব না'- ওই সময়টাতে এমন শিরোনামে ফিচারও লেখা হয়েছিল। ওই এক ঘটনায় লতিফ তার সারা জীবনের ভাবমূর্তি খুইয়েছেন, এমনটা দেশের তো বটেই, কোন ক্রিকেটারের জন্যই চান না রফিক। বললেন, "এই ঘটনা নিয়ে এখনও অনেকেই বলেন, রফিক তুমি প্রকৃত জেন্টলম্যানের কাজ করেছ , তখন মনে হয় সঠিক কাজটিই করেছিলাম।"
১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরার পর বিজয়ী ক্রিকেটারদের প্রত্যেককে সরকার থেকে একটি করে গাড়ি ও ৫ কাঠা জমি দেয়া হয়। ওই জমি স্কুল ও মসজিদ তৈরির জন্য দিয়েছিলেন রফিক। এখন কেরানীগঞ্জে একটা ক্রিকেট একাডেমি তৈরির জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
বললেন, "এখন জমির দাম অনেক বেশি। একাডেমি তৈরির কাজটা খুব সহজ নয়। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানেই খেলে আমি বড় হয়েছি। এই কেরানীগঞ্জের একাডেমি থেকে যদি কিছু ভাল ক্রিকেটার তৈরি করতে পারি, এখন এটাই আমার চাওয়া।"
এ চাওয়াটুকুও নিশ্চিয় একদিন পূরণ হবে রফিকের। দেশের প্রথম জয়ের তৃষ্ণা নিবারণ করেছিলেন যিনি, তার চাওয়াটা কি অপূর্ণ থাকতে পারে?