Published : 08 May 2020, 03:53 PM
আজ পঁচিশে বৈশাখ। আজ তার জন্মদিন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি কবি। বিশ্বকবি। কবিগুরু। তিনি আমাদের বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দিয়েছেন। আমাদের আলোকিত করেছেন। তার কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই। আমাদের জন্য তার দান অশেষ। যা কিছু ভাল, মঙ্গল ও কল্যাণকর তার সবই আমরা তার কাছ থেকেই পেয়েছি। আনন্দ-বেদনা-মিলন-বিরহ-সঙ্কটে তিনি আমাদের সহায়, তিনি আমাদের গতি।
সেই বালকবেলায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'জল পড়ে, পাতা নড়ে'র প্রচণ্ড প্রভাব থেকে শুরু। আর যেন শেষ নেই। আমাদের দৃষ্টি থেকে কালো ঘুচিয়ে নবীন আলো ফুটিয়ে পথের ক্লান্তি ভুলে পথ চলতে শিখিয়েছেন তিনি। সঙ্কটের বিহ্বলতায় ম্রিয়মাণ না হয়ে নিশিদিন ভরসা রাখার তাগিদ দিয়ে অচেনাকে চিনে চিনে সামনে যাওয়ার পথও দেখিয়েছেন তিনি।
দুঃখ-বিপদ তুচ্ছ করার আহ্বান তার কাছেই পেয়েছি।
'এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি' এই চিরন্তন সত্য কত আনায়াসে তিনি উচ্চারণ করে আমাদের সতর্ক করে বলেছেন, 'রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি'।
তিনি আমাদের বোধ তৈরি করেছেন, আমাদের চেতনা তৈরি করেছেন। দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রেরণাও দিয়ে গেছেন এই বলে যে, 'যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর'।
সবাইকে নিয়ে চলা ভাল। কিন্তু কেউ না এলে একলা চলার আহ্বানও তারই। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে। থেমে থাকা নয়, বসে থাকা নয়। এগিয়ে যাওয়াই জীবনের ধর্ম। নিবিড়ঘন অন্ধকারে দিশেহারা না হওয়ার সাহসও তিনি দিয়েছেন।
বাংলাদেশের হৃদয় থেকে যাত্রা শুরু করে তিনি আমাদের মহামানবের সাগরতীরে নিয়ে দাঁড় করিয়েছেন। ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে তিনি পরিশুদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন।
তিনি আমাদের সোনার বাংলাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। তিনি আমাদের বরাভয় দিয়ে বলেছেন, 'নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই'। পথ ভোলা পথিকের মতো আমরা যেন বেপথু না হই সেটা তার ভাবনায় ছিলো। তাই অশ্রু দিয়ে নয়ন ধুয়ে সঙ্কোচের বিহ্বলতা কাটিয়ে শুভ কর্মপথে নির্ভয়গান তিনি শুনিয়েছেন। পঁচিশে বৈশাখে জন্ম নেওয়া বাঁধনহারা রবির ধারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতবিতানের পাতায় পাতায় হৃদয়ে কুসুম ফুটিয়ে আমাদের জন্য রেখে গেছেন আলোকের ঝরনাধারা। তাকে অবহেলা করা কিংবা তাকে এড়িয়ে যাওয়ার দুর্মতি কারো হতে পারে, তবে তার পরিণামে হবে আত্মঘাতী।
রবীন্দ্র পাঠ, রবীন্দ্র অধ্যয়ন, রবীন্দ্র চর্চা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কারো জীবন রবীন্দ্রময় হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু রবীন্দ্রবিমুখ জীবন বিষাদ-বিমূঢ়তারই অপর নাম। রবীন্দ্রনাথকে জানার চেষ্টা যতই করা যাক না কেন, তবু 'অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হইয়াও হইল না শেষ'।
'রাত্রি হলো ভোর।
আজি মোর
জন্মের স্মরণপূর্ণ বাণী,
প্রভাতের রৌদ্র-লেখা লিপিখানি
হাতে করি আনি
দ্বারে আসি দিল ডাক
পঁচিশে বৈশাখ'।
তিনি আমাদের নয়ন সমুখ থেকে সরে গিয়ে নয়নের মাঝখানে ঠাঁই নিয়েছেন।
তার প্রতি প্রণতি।