সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে আদৌ কোনো চৌর্যবৃত্তি হয়েছে?

চৌর্যবৃত্তিতে অভিযুক্ত সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে অন্যের সৃষ্ট বিশেষ জ্ঞানকে নিজ বলে চালিয়ে দেয়া হয়নি, হুবহুসহ যা উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা মূল লেখার মালিকের সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত অনুমতি সাপেক্ষেই করা হয়েছে এবং তাতে তথ্যসূত্র উল্লেখের সুযোগ এবং প্রয়োজন নেই।

সৈয়দ আশরাফউদ্দিন আহমেদসৈয়দ আশরাফউদ্দিন আহমেদ
Published : 5 Feb 2023, 12:10 PM
Updated : 5 Feb 2023, 12:10 PM

আলোচনার শুরুতেই পরিষ্কার করে নিতে চাই যে, লেখালেখির জগতে, বিশেষ করে গবেষণা ও শিক্ষাঙ্গনে অন্যের লেখা, ডাটা, মতবাদ, বা ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া একটি গুরুতর অপরাধ, যা সব পরিস্থিতিতেই নিন্দনীয় এবং পরিত্যাজ্য। সব লেখাই মৌলিক হওয়া উচিৎ। অন্যথায় লেখার কোন অংশটি কোথা থেকে নেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে।

গত ১৫ই জানুয়ারি প্রথম আলোর মতামত বিভাগে জনৈক নাদিম মাহমুদ লিখিত ‘সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই : হুবহু চুরি আর গুগোলের অনুবাদে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হবার পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদপত্র, সোশ্যাল মিডিয়া এবং টকশোতে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে আমজনতার কাছে এ কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে উল্লিখিত বইটিতে আসলেই চুরি করে কিছু লেখা হয়েছে। নতুন কোনো বই লেখা হলে তা স্বকীয় হওয়া বাঞ্চনীয় কিন্তু উপরোক্ত অভিযোগটি পড়ে আমার মনে হয়নি যে বইটিতে ‘চুরি’ অথবা ‘হুবহু চুরি’ করা বা কিছু ‘হুবহু মেরে দেওয়া’ হয়েছে। অভিযোগটিতে বাংলা ভার্সন থেকে ইংরেজি ভার্সনে গুগোলের সাহায্যে অনুবাদ সম্পর্কে এবং সংযোজিত ছবি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে আমি সে সম্পর্কে কিছুই বলছি না, কারণ সেগুলো ভিন্ন বিষয়।

আধুনিক জীবনযাত্রার প্রায় সবকিছুর ন্যায় প্লেজারিজম বা লেখালেখি ও গবেষণাকার্যে চৌর্যবৃত্তির ধারণাটিও আমরা পাশ্চাত্য থেকেই নিয়েছি। তবুও বাংলাদেশে এ সম্পর্কে নীতিমালা এখনও সহজলভ্য নয়। ফলে গুগোলে অনুসন্ধান করে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র পাইনি। পাশ্চাত্যে এটি নৈতিক অপরাধ বলে বহুল স্বীকৃত। গুগোলের অনুসন্ধানে পাওয়া পাশ্চাত্যের বেশ কয়টি ওয়েবসাইট থেকে আপাত-নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তিনটি তথ্য নিয়ে আলোচনা করছি। আশাকরি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।

প্লেজারিজম বা বুদ্ধিবৃত্তিক চুরি: যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ওয়েবসাইটে প্লেজারিজম বা বুদ্ধিবৃত্তিক চুরির সংজ্ঞা দেয়া আছে এইভাবে– ‘অনুমতি নিয়ে বা না নিয়ে (এবং) পুরোপুরি কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে (বা স্বীকৃতি না দিয়ে) অন্য কারও কাজকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া’ (Plagiarism is presenting someone else’s work or ideas as your own, with or without their consent, by incorporating it into your work without full acknowledgement. Plagiarism | University of Oxford)। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞা অনুযায়ী প্লেজারিজম হচ্ছে ‘অন্য কারও ধারণা (বা ভাব) এবং কাজ চুরি। এটি হচ্ছে তথ্যসূত্র উল্লেখ না করেই সাধারণ জ্ঞানের বাইরে অন্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য, ধারণা অথবা বিশেষ প্রকাশ নিজের লেখায় জুড়ে দেয়া’। (Plagiarism is the theft of someone else’s ideas and work. It is the incorporation of facts, ideas, or specific language that are not common knowledge, are taken from another source, and are not properly cited Academic Integrity | Harvard Extension School.

আর কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের লিগাল ইনফরমেশন ইন্সটিটিউটের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘অন্যের মূল রচনা থেকে কিছু গ্রহণ করে তা নিজের বলে চালিয়ে দেয়াকে বুদ্ধিবৃত্তিক চুরি বলা হয় (Plagiarism is the act of taking a person’s original work and presenting it as if it was one’s own. plagiarism | Wex | US Law | LII / Legal Information Institute (cornell.edu))।

পাঠক লক্ষ করুন, বাংলায় আমার অনুবাদ করা সংজ্ঞাগুলো ইংরেজি থেকে হুবহু অনুবাদ না হয়ে ভাবানুবাদ হয়েছে।

এই তিনটি সংজ্ঞা অনুযায়ী প্লেজারিজম বা বুদ্ধিবৃত্তিক চুরির তিনটি বিশেষত্ব থাকা অপরিহার্য। তা হলো ১) সাধারণ জ্ঞানের বাইরে ২) অন্যের ভাব, বক্তব্য বা বর্ণনা লেখায় সন্নিবেসিত করে তা নিজের বলে চালিয়ে দেয়া এবং তা করতে গিয়ে ৩) অনুমতি বা তথ্যসূত্র উল্লেখ না করা। এই তিনটি বিশেষত্বের অভাব থাকলে তাকে প্লেজারিজম বলা যায় কিনা তা আমাদের বিচার করতে হবে। এখন সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের যে অংশগুলোকে ‘হুবহু চুরি’ বা প্লেজারিজম বলা হচ্ছে, তা এই তিনটি অপরিহার্যতার আলোকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

সাধারণ জ্ঞান: ‘আমি ভাত খাই’, ‘মানুষ সৃষ্টির সেরা’, ‘সদা সত্য কথা বলিবে’, এই ধরনের আরো অজস্র বাক্য বিভিন্ন লেখায় আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ না করেই। এই বাক্য বা ফ্রেইজগুলো কেউ না কেউ সর্বপ্রথম লিখিত আকারে প্রকাশ করেছিলেন। কেউ এ নিয়ে কেউ আমাদের চোর বলে না বা আমি কারও থেকে চুরি করে লিখছি বলেও অভিযোগ শুনি না। তবুও তথ্যসূত্রের উল্লেখ আমরা করি না কারণ এগুলো এক সময়ে কারও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি হলেও এখন তা আমাদের প্রাত্যহিক ও সাধারণ জ্ঞান বলেই বিবেচিত হয়, কারও চিন্তা বা গবেষণা-প্রসূত বিশেষ জ্ঞান বা মতবাদ হিসেবে নয়।

এখন সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটিতে তৃতীয় পৃষ্ঠার প্লেজারিজমে অভিযুক্ত প্রথম অংশটির দিকে তাকানো যাক। ‘জীববৈচিত্র্য বা Biodiversity শব্দ দ্বারা পৃথিবীতে জীবনের বিপুল বৈচিত্র্য বর্ণনা করা হয়। জীববৈচিত্র্য বলতে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবসহ সকল জীবের মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্র্যকে বোঝায়। পৃথিবীতে ঠিক কত সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন জীব আছে, তা নিশ্চিত করে এখনো আমাদের জানা নেই। তবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে, প্রায় ৮-১৪ মিলিয়ন (৮০ থেকে ১৪০ লক্ষ) বিভিন্ন প্রজাতির জীব এই পৃথিবীতে রয়েছে। কারও কারও ধারণা মতে, সংখ্যাটা আরও বেশি। তবে সংখ্যা যা–ই হোক না কেন, এসব জীবের বেশির ভাগই আমাদের অজানা।এখন পর্যন্ত মাত্র ১.২ মিলিয়ন (১২ লক্ষ) প্রজাতি শনাক্ত এবং বর্ণনা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অবশ্য পোকামাকড়। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, কোটি কোটি অন্যান্য জীব এখনো আমাদের কাছে রহস্যময়, অজানা’

ধরুন কেউ লিখেছে ‘সুন্দরবনে বাঘ, হরিণ, মহিষ, বানর, কুমীর, সাপ, বেজি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পোকামাকড়সহ সহস্রাধিক প্রাণির বাস’। অথবা লিখেছে ‘বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৪ লক্ষ’ অথবা ‘পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা ৭.৯ বিলিয়ন’। এই তথ্যগুলো স্কুলের বিজ্ঞান বইতে লিখতে গেলে কি তথ্যসূত্রের উল্লেখ করতে হয়েছে, হয়, বা হবে? এই তথ্যটি জানার জন্য আমাকে কি পিএইচডি বা পোস্ট-ডক্টরাল জ্ঞান থাকতে হবে? উত্তর হচ্ছে, না। স্কুলে যাবার সুযোগ বঞ্চিত ও অক্ষরজ্ঞানহীন এক মৌয়ালি, জেলে বা কাঠুরের কাছেও সুন্দরবন সম্পর্কিত তথ্যটি একটি সাধারণ জ্ঞান। একই বিচারে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটিতে যা লেখা হয়েছে তা আমাদের সাধারণ জ্ঞান, যা কখনো গভীর গবেষণা করে কারও দ্বারা অর্জিত এবং মেধাস্বত্ব হয়ে থাকলেও আজ আমাদের সাধারণ জ্ঞান। তাহলে তথ্যসূত্র উল্লেখ না করেও প্লেজারিজমের সংজ্ঞা অনুযায়ী অভিযোগে উদ্ধৃত অংশগুলো চৌর্যবৃত্তি হতে পারে না।

নিজ নামে চালিয়ে দেয়া: প্লেজারিজমের দ্বিতীয় বিশেষত্ব হচ্ছে অন্যের লেখা বা বক্তব্য নিজ নামে চালিয়ে দেয়া। আলোচ্য বইটিতে কেউ কি কোনো তথ্য নিজ নামে চালিয়ে দিয়েছেন? পাঁচজন লেখকের যেই লিখে থাকুন, তিনি কি বইয়ের অভিযুক্ত অংশগুলোর সাথে নিজ নাম জুড়ে দিয়েছেন? একটি পৃষ্ঠায় পাঁচজন লেখকের নাম মুদ্রিত ছাড়া আমি আর কোথাও আলাদাভাবে কারও নামোল্লেখ দেখিনি। তাহলে কেউ যদি অন্যের লেখাকে নিজের বলে দাবি না-ই করলেন তবে কি কাজটিকে প্লেজারিজম বলা যায়?

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম এই পাঁচজনই অন্যের লেখা খুব সাধারণ কয়েকটি বাক্য চুরি করে নিজ নামে চালিয়ে দিয়েছেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত কারও পক্ষে খুব সাধারণ কয়েকটি বাক্য চুরি করতে যাওয়া কি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য? এই পাঁচজন একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখে যদি তা কোনো গবেষণা জার্নালে প্রকাশের জন্য পাঠাতেন, তবে সম্পাদকের কাছে উদ্ধৃত অংশগুলো সাধারণ জ্ঞান বলেই প্রতীয়মান হতো। ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা জার্নালের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক থাকার অভিজ্ঞতা থেকেই তা বলছি। অত্যুৎসাহী কোনো সম্পাদক তাতে তথ্যসূত্র উল্লেখ করার পরামর্শ দিলেও দিতে পারতেন। কিন্তু আমি নিশ্চিন্ত যে লেখাটিকে চৌর্যবৃত্তির ফসল বলতেন না।

সপ্তম শ্রেণির বাংলা বিজ্ঞান বই থেকে অভিযুক্ত এবং ওপরে উদ্ধৃত অংশটুকুর পর অভিযোগটিতে বলা হয়েছে ‘আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরা হলে, এটি যেখান থেকে লেখকেরা তুলে এনেছেন, তার সূত্র মূল লেখায় উল্লেখ না করা হলেও, কয়েক মিনিটে গুগোলে বলে দিচ্ছে, এই কয়েকটি বাক্য হুবহু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি ((https://education. nationalgeographic. org/resource/biodiversity) থেকে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজিতে সেখানে লেখা রয়েছে, Biodiversity refers to every living thing, including plants, bacteria, animals, and humans. Scientists have estimated that there are around 8.7 million species of plants and animals in existence. However, only around 1.2 million species have been identified and described so far, most of which are insects. This means that millions of other organisms remain a complete mystery’.

পাঠকরা আপতত অভিযোগকারীর ‘হুবহু’ শব্দটিকে গুরুত্ব না দিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর ওয়েবসাইট থেকে উদ্ধৃত ইংরেজি বাক্যগুলোর দিকে লক্ষ করুন। প্রথম এবং শেষ বাক্য দুটি ছাড়া সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে অভিযোগকারীর উপরোক্ত উদ্ধৃত অংশ এবং ওপরে একই ব্যক্তির উদ্ধৃত ইংরেজি বাক্য বিন্যাসের মাঝে যে যথেষ্ট মিল রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিজ্ঞান বইটির কিয়দংশ রচনায় লেখকরা যে এই ওয়েবসাইটটিই ব্যবহার করেছেন তাও অতি স্পষ্ট। তাই বলে কি বাংলা বইয়ের উদ্ধৃত বিজ্ঞান (তর্কের খাতিরে) অংশটিকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ইংরেজি উদ্ধৃতিগুলোর ‘হুবহ মেরে দেওয়া’ বা অনুবাদ বলা যায়?

আমার বক্তব্যকে পরিষ্কার করার জন্য অভিযোগে আলোচ্য যে প্যারাগ্রাফটিকে ‘হুবহু চুরি’ বলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর (ক) ও (খ) ব্যতীত) ইংরেজি বাক্যগুলো উদ্ধৃত করা হয়েছে, সেগুলোকে আলাদা আলাদা করে বাংলা উদ্ধৃতির পরে ইংরেজি উদ্ধৃতিগুলো সাজিয়েছি।

(ক)     জীববৈচিত্র্য বা Biodiversity শব্দ দ্বারা পৃথিবীতে জীবনের বিপুল বৈচিত্র্য বর্ণনা করা হয়। Biodiversity is a term used to describe the enormous variety of life on Earth. (ইংরেজি এই বাক্যটি প্রথম আলোতে উদ্ধৃত না থাকলেও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইটে আছে।)

(খ)     জীববৈচিত্র্য বলতে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবসহ সকল জীবের মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্র্যকে বোঝায়। It can be used more specifically to refer to all of the species in one region or ecosystem. (আগেরটির মতো ইংরেজি এই বাক্যটিও প্রথম আলোতে উদ্ধৃত নেই, কিন্তু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইটে আছে।)

(গ)     পৃথিবীতে ঠিক কত সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন জীব আছে, তা নিশ্চিত করে এখনো আমাদের জানা নেই। Biodiversity refers to every living thing, including plants, bacteria, animals, and humans.

(ঘ)     তবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে, প্রায় ৮-১৪ মিলিয়ন (৮০ থেকে ১৪০ লক্ষ) বিভিন্ন প্রজাতির জীব এই পৃথিবীতে রয়েছে। Scientists have estimated that there are around 8.7 million species of plants and animals in existence.

(ঙ)     কারও কারও ধারণা মতে, সংখ্যাটা আরও বেশি।

(চ)     তবে সংখ্যা যা–ই হোক না কেন, এসব জীবের বেশির ভাগই আমাদের অজানা। এখন পর্যন্ত মাত্র ১.২ মিলিয়ন (১২ লক্ষ) প্রজাতি শনাক্ত এবং বর্ণনা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অবশ্য পোকামাকড়। However, only around 1.2 million species have been identified and described so far, most of which are insects.

(ছ)     এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, কোটি কোটি অন্যান্য জীব এখনো আমাদের কাছে রহস্যময়, অজানা’। This means that millions of other organisms remain a complete mystery.

দেখা যাচ্ছে, এই আলোচনার শুরুর দিকে প্লেজারিজমের ইংরেজি সংজ্ঞাকে বাংলায় আমার রূপান্তরগুলো যেমন হুবহু হয়নি, শুধু ভাবটিই অনুদিত হয়েছে, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইতে উপরে (ক) এবং (ছ) ছাড়া বাকি বাক্যগুলোর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলা উদ্ধৃতি (ঙ) এর সমকক্ষ অভিযুক্ত ইংরেজি উদ্ধৃতিতে নেই।

যারা ভাষা অনুবাদের কাজে নিয়োজিত তারা নিশ্চয়ই হুবহু অনুবাদ এবং ভাবানুবাদের পার্থক্য সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, বাংলায় উদ্ধৃত প্রথম (ক) (অভিযোগকারী ইংরেজি বাক্যটি দেননি) এবং শেষ (ছ), অতি সাধারণ দুটি বাক্য, ইংরেজির হুবহু অনুবাদ বলা গেলেও তাকে কি ‘মেরে দেয়া’ বা ‘চুরি’র অপবাদ দেয়া সমীচীন? সাধারণ বিজ্ঞানে যাদের সম্যক জ্ঞান আছে তারা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না যে এই বাক্যগুলো পূর্বে উল্লিখিত ‘আমি ভাত খাই’ বা ‘মানুষ মরণশীল’ এর মতোই সাধারণ জ্ঞান। তাই 'হবহু চুরি'র বদলে 'হুবহু অনুবাদ' লিখলে তা অধিক অর্থবহ হতো, যদিও সত্যিকার অর্থে অভিযুক্ত অধিকাংশ উদ্ধৃতাংশ ভাবান্তর বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। হুবহু অনুবাদ, আক্ষরিক অনুবাদ বা ভাবান্তর, কোনটির মূল্য কি, তার কিছুটা ধারণা অনুবাদ সাহিত্য সৃষ্টিতে নিয়োজিত ‘যুক্তস্বর’ নামের সম্প্রতিক সাময়িকীতে পাওয়া যেতে পারে।

আর যদি ধরে নেই বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যাগুলো মেরে দেয়া হয়েছে, তবে আপনি গুগোলে ইংরেজিতে ‘পৃথিবীতে জীবিত প্রজাতির সংখ্যা কত’ লিখে অনুসন্ধান দিন, যা আমি করেছিলাম। পাঁচজন গবেষকের ফলাফল ২০১১ সালে ‘প্লোস বায়োলজি’ নামের জার্নালে (PLoSBiology9:e1001727 (2011)) প্রকাশিত হবার পর পর পৃথিবীর প্রায় সবকয়টি বিজ্ঞান এবং সংবাদ সংস্থা সংবাদ আকারে প্রজাতির উল্লিখিত সংখ্যা ও বিবরণগুলো প্রকাশ করে। এরপর থেকে এই তথ্যগুলো আর বিশেষ জ্ঞান না থেকে সাধারণ জ্ঞানে পরিণত হয়। এর প্রায় ১১ বছর পর, ২০২২ সালে, তথ্যসূত্র উল্লেখ না করেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি সংখ্যাগুলোকে তাদের ওয়েবসাইটে প্রবন্ধের মাঝে জুড়ে দেয়। অর্থাৎ এই সংখ্যাগুলোও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর নয়! অর্থাৎ সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইতেও মেরে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একই সাথে, একই তথ্য সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের সংশ্লিষ্ট লেখক যদি এমনভাবে পরিবেশন করতেন যে তা যেন পৃথিবীতে পূর্বপ্রকাশিত কোনো রচনার সাথেই মিল না থাকে, তবে সেটিই সবচেয়ে ভাল, আদর্শ হতো, এই কথাও সত্য। তাতে অভিযোগকারীরা বিভ্রান্ত হতেন না। অভিসন্ধর্ভ রচনায় বা গবেষণায় প্লেজারিজমে সম্প্রতি অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সাথে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই রচয়িতাদের মূল পার্থক্য হচ্ছে উক্ত শিক্ষক অন্যের লেখা নিজ নামে প্রকাশ করেছিলেন।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত অভিযোগে বিজ্ঞান বইটির আরও কয়েকটি স্থানে ‘চুরি’ করা অংশ উদ্ধৃত করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি মিলগুলো আরও প্রকট! সেগুলোকেও ওপরে দেয়া যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। শুধু কলেবরই বৃদ্ধি হবে বলে আমি আর বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। বইটির কিছু কিছু অংশ অন্য বইয়ের ভাষান্তরিত রূপ হলেও তাকে চুরি করা বলা যে সমীচীন নয়, তা পরবর্তী আলোচনায় আরও স্পষ্ট হবে।

তথ্যসূত্রের উল্লেখ: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইটের প্রবন্ধ শুরুর প্রথমেই লেখা আছে ‘পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি বিষয় বায়োলজি ও ইকোলজি’ (GRADES 5 – 8 SUBJECTS Biology, Ecology) Biodiversity | National Geographic Society। অর্থাৎ লেখাটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যেই রচিত হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের অষ্টম পৃষ্ঠার একটি বাক্যের দিকে লক্ষ করুন। ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৭৮ প্রজাতির পাখি, ১৫৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৯প্রজাতির উভচর জীব শনাক্ত করা হয়েছে’। এই বাক্যটি কারও সাধারণ জ্ঞান নয়, আমার তো নয়ই। পুরো বই জুড়ে এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। বাক্যটিতে চারটি বিশেষ তথ্য রয়েছে যা কোনো এক ব্যক্তি বা দল দীর্ঘদিনের গবেষণা করে পেয়েছেন। ব্যক্তিগত জ্ঞান থেকে এবং অন্তর্জাল খুঁজে যা পেয়েছি, তাতে ধারণা করি সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের লেখকদের কেউই এই চার প্রজাতি প্রাণির বিশেষজ্ঞ নন। অথচ এই বাক্যটি অথবা বাক্যের তথ্যগুলো কোথা থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, বইতে তার উল্লেখ নেই! আমরা কি একে প্লেজারিজম বলব?

একে আমরা প্লেজারিজম বলব না, বলিও না। কারণ প্রতিটি তথ্যসূত্রের উল্লেখ থাকলে কোমল বয়সের শিক্ষার্থীদের ওপর অযথা বোঝা চাপানো হবে, অবিচার করা হবে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, আমেরিকাতে আমার ছেলেদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বইতে এ ধরনের তথ্যসূত্রের উল্লেখ ছিল বলে মনে পড়ছে না। একই ভাবে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইতে কোনো তথ্যসূত্রের সংযোজন না থাকাতে তা ব্যবহারিক দুনিয়ায় কোনোভাবেই প্লেজারিজমের আওতায় পড়তে পারে না। বাংলাদেশে রচিত বইয়ের কথা জানি না, কিন্তু পাশ্চাত্যের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ানো অধিকাংশ বইতেই তথ্যসূত্র থাকাটা বাধ্যতামূলক না হলেও বহুল প্রচলিত একটি চাওয়া।

সর্বোপরি যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইটের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে সেই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রদের উদ্দেশ্যে লেখা প্রবন্ধটিতেই তো কোনো তথ্যের সূত্র উল্লেখ নেই! তদুপরি প্রথম আলোতে প্রকাশিত অভিযোগে বলা হয়েছে ‘এমনকি যে ওয়েবসাইট থেকে আমাদের পাঠ্যপুস্তকের অংশগুলো নেওয়া হয়েছে, সেই ওয়েবসাইটই বলেছে, তা ব্যবহার করার জন্য অনুমতি এবং উপযুক্ত ক্রেডিট দিতে’। উদ্ধৃত শব্দগুলোর পর অসাবধানতাবসত সেই পেইজের ‘যদি না তা শিক্ষার প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়’ জাতীয় শব্দগুলো (unless such use is an Educational Use of Content as specified in these Terms) অভিযোগে উল্লেখ করা হয়নি! এ সংক্রান্ত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর পুরো বাক্যটি ছিল ‘Not to reproduce, distribute, modify, re-post on another Service (regardless of the server on which the Content is stored), or sell any Content without specific written authorization from the Society, unless such use is an Educational Use of Content as specified in these Terms’.

অর্থাৎ, প্রবন্ধটি শিক্ষার উদ্দেশ্যে পুরো বা আংশিক, বিনা অনুমতিতেই ব্যবহার করতে সুস্পষ্টভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বিশ্বে জ্ঞান ও শিক্ষা প্রসারে নিয়োজিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির মতো উঁচুমানের ও নন্দিত প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংযোজন করে আমাদের সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের লেখকগণ খুব অন্যায় করেছেন বলে মনে হয় না। শুধু নিজের জানা বা জ্ঞানের ওপর ভরসা না করে এ ধরনের পুস্তক রচনায় অন্য প্রকাশিত বই বা সূত্র ব্যবহার করাই উচিৎ।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত অভিযোগে ‘হ্যাঁ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি যে টপিকটি লিখেছে, তারা বিভিন্ন জার্নাল, পত্রপত্রিকা থেকে কেবল তথ্য নিয়ে নিজের ভাষায় লিখেছে এবং ক্রেডিটও দিয়েছে’ বক্তব্যটির পক্ষে আমি কোনো প্রমাণ পাইনি। ২০২২ সালের ২০ মে নবায়ন বা আপডেট করা ক্রেডিট শিরোনামে যাদের নাম বা কথা উল্লেখ আছে তারা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটিরই লোক, তারা কোন জার্নাল বা কোন পত্রপত্রিকা থেকে তথ্য নিয়েছে তার কোনো উল্লেখ নেই।

গেল শতাব্দীর সত্তর দশকে এনআইএইচ (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ), যেখানে তখন আমি পোস্টডক্টরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলাম, সেখানকার দুই বিজ্ঞানী গবেষণায় প্লেজারিজম শনাক্ত করতে একটি অ্যালগোরিদম বানিয়েছিলেন। যে গবেষণাপত্রটিই তারা হাতে নেন, দেখতে পেলেন অ্যালগোরিদমটি অনেকগুলো অপরের থেকে নকল করা বাক্যকে প্ল্যাজিয়ারিজম বলে শনাক্ত করত। এভাবে গবেষণায় চুনোপুঁটি থেকে রথী-মহারথী, কেউই প্লেজারিজম থেকে মুক্তি পাচ্ছিলেন না। পরে বোঝা গেল, বিজ্ঞানের যে কোনো শাখা বা তস্য শাখায় বহুল প্রচলিত সাধারণ জ্ঞান বলে বিবেচিত বাক্য বা বাক্যাংশগুলোকে অ্যালগোরিদমটি চৌর্যবৃত্তির ফল বলে বিবেচনা করছিল। তা ধরা পড়ার আগেই অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে চৌর্যবৃত্তির আপবাদটি সইতে হয়েছিল।

প্লেজারিজম এর শাস্তি: যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী প্লেজারিজম কোনো ক্রিমিনাল বা সিভিল অপরাধ নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে, লেখালেখি এবং গবেষণা জগত, যেখানে সমাজের সর্বগ্রাহ্য লোকদের আনাগোনা, সেখানে এটি একটি নৈতিক অপরাধ। কেউ জেনেশুনে এই অপরাধ করে থাকে, কেউ করে থাকেন নিজের অজান্তে। যে কারণেই হোক প্লেজারিজমকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচণ্ডভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। একসময় আমি আমেরিকার যে মেডিকেল স্কুলে শিক্ষকতা করতাম, আমারই বিভাগের পিএইচডি পর্যায়ের এক গবেষক ছাত্রকে এই অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল। একই ভাগ্য ঘটেছিল ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার ৪৮ জন ছাত্রের। অন্যান্য স্থানে শিক্ষকের চাকুরি হারানোর ঘটনাও ঘটেছে বলে পড়েছি।

অন্যদিকে দূরবর্তী ভিন দেশে বাস করেও অপরিচিত দুই ব্যক্তি একই দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে তা লিখিতভাবে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন আগে বা পরে। কোনো অবস্থাতেই তা দোষণীয় না হলেও লিখিত সেই সিদ্ধান্তটির ব্যবসায়িক, আর্থিক বা বৈষয়িক কোনো মূল্য থাকলেই তা প্লেজারিজমের অভিযোগ রূপে দেখা দেয়। এই ধরনের প্লেজারিজম বা চৌর্যবৃত্তি একটি ধূসর প্রাঙ্গণে বা গ্রে এরিয়াতে বিচরণ করে, যার সত্যতা বিচার হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না। অনেক দিন যাবৎ মামলা-মোকদ্দমা হয়ে সেগুলো কখনো কখনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়। আমি এনআইএইচ-এ কাজ করার সময় সেখানে এইডস রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত একটি আবিষ্কার নিয়ে ফ্রান্সের বিজ্ঞানীদের সাথে এ জাতীয় একটি বিবাদে দুই দেশের প্রেসিডেন্টদের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়েছিল। অন্তর্জাল থেকে আরও জানতে পারি যে আধুনিক সঙ্গীতশিল্পী ম্যাডোনা, কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-খ্যাত বিটলস শিল্পী জর্জ হ্যারিসন, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট হেলেন কেলার, সিভিল রাইটস নেতা রেভারেন্ড মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার এবং আরও অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি, সবাই চৌর্যবৃত্তিতে অভিযুক্ত হয়েছিলেন (Plagiarism: What is it, Exactly? | LegalZoom)। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত হলেও মানুষ বিশ্বে তাদের পাহাড়সম অবদানের কথাই স্মরণে রেখেছে। আমাদের রবীন্দনাথ ঠাকুর এবং জীবনানন্দ দাসের কোনো কোনো রচনাকেও বিদেশি কারও লেখার অনুকরণ বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

উপরোল্লিখিত ধূসর প্রাঙ্গণে বিচরণ করা উদাহরণগুলোর বিপরীতে চৌর্যবৃত্তিতে অভিযুক্ত সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের অংশগুলো অতি পরিষ্কার। এখানে অন্যের সৃষ্ট বিশেষ জ্ঞানকে নিজ বলে চালিয়ে দেয়া হয়নি, হুবহুসহ যা উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা মূল লেখার মালিকের সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত অনুমতি সাপেক্ষেই করা হয়েছে এবং তাতে তথ্যসূত্র উল্লেখের সুযোগ এবং প্রয়োজন নেই।