সরকারের মুখপাত্র, হুম্মামের বক্তব্য এবং আওয়ামী লীগের হালহকিকত

বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি কথা বলেন। তাদের কথার গড়মিল জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করে। বৈশ্বিক এই কঠিন পরিস্থিতিতে যা সরকারের জন্য বিপজ্জনক।

কামরুল হাসান বাদলকামরুল হাসান বাদল
Published : 31 Oct 2022, 01:42 PM
Updated : 31 Oct 2022, 01:42 PM

শিল্পখাতে জ্বালানি সংকটের প্রভাব কমিয়ে আনা নিয়ে অক্টোবরের ২৩ তারিখে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “দেশের কৃষি ও শিল্প খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এই দুই খাতের সুরক্ষা দিতে যা যা দরকার হয়, সরকার তা করবে।” এ জন্য প্রয়োজনে দিনের বেলায় বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এ সভার আয়োজন করে। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শিল্পখাতের ব্যবসায়ীরা।

এর একদিন পর তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেনি। সচিবালয়ে সাংবাদিকরা জ্বালানি উপদেষ্টার এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “তৌফিক-ই-ইলাহী সাহেব যেটি বলেছেন, সেটি তার ব্যক্তিগত কথা এবং তিনিই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন; সরকারের এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।”

কয়েকমাস আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চট্টগ্রামে জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার, ভারত যেন তা করে সেজন্য তিনি ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।”

এর পরপরই সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, এই বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত। দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ওই বক্তব্য সরকার বা আওয়ামী লীগের নয়, এটি মোমেন সাহেবের ব্যক্তিগত বক্তব্য।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারাও সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এ ধরনের বক্তব্য তাদেরকে বিব্রত করেছে। পরে নিজের বক্তব্যের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু এই ব্যাখ্যার পরও তার বক্তব্যের দায়িত্ব সরকার এবং আওয়ামী লীগ নিতে রাজি নয় বলে দল ও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়া গত ১২ অগাস্ট সিলেটে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক মন্দায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছেন, বেহেশতে আছেন।” নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখীর সময়ে চাপে থাকা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের মধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ মানুষ মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে কঠিন পরিহাস বলে ধরে নিয়েছিল।

টানা চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার একজন মুখপাত্র নির্বাচন করতে পারল না যিনি বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেবেন। ফলে এত বছর ধরে দেখছি একটি সমস্যা বা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী-এমপি এমনকি সচিব পর্যন্ত যার যার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে বক্তব্যগুলো পরস্পরবিরোধীও হয়ে পড়ছে। এক মন্ত্রী অন্যের মন্ত্রণালয় নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে দু মন্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। জনগণও বিভ্রান্তিতে পড়ছে।

সচরাচর সরকারের এক বা একাধিক মুখপাত্র থাকে তা তিনি মন্ত্রীও হতে পারেন, উপদেষ্টাও হতে পারেন। অথবা এ বিষয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কেউ হতে পারেন। জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যখন কিছু বলার প্রয়োজন হবে তখন তারা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের গৃহীত মত বা সিদ্ধান্ত জানাবেন। অবশ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বা উপদেষ্টাও বলতে পারেন তবে তা যেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়।

বর্তমান সময়টি সরকারের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণও বটে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলছেন, সামনে ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। তিনি সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন। এবং এ বিষয়ে  মানুষকে সচেতন ও সতর্ক  হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন অনবরত। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক থেকে স্পষ্ট বলা হচ্ছে মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ২০২৩ সালে অন্তত ৪৫টি দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। সে তালিকায় বাংলাদেশের নামও আছে। মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার আগে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কয়েকহাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও মন্দার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিছু কিছু পণ্যকে দুষ্প্রাপ্য করে তোলা হচ্ছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। খাদ্য গুদামজাত করে সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। অনেকে মনেপ্রাণে চায় বাংলাদেশের অবস্থা যেন শ্রীলঙ্কার মতো হয়! বছর শেষে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেবে তা আন্দাজ করাও যাচ্ছে না। অন্যদিকে আগামী বছরের শেষে সাধারণ নির্বাচন। সে নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা সমীকরণ। আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক শক্তিগুলো সর্বশক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগ ঠেকাতে একজোট হয়েছে। বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর সমাবেশে লোকসমাগম বাড়ছে। দেশের কিছু পত্রিকা, টেলিভিশন এবং ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে অনবরত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জনগণকে বোঝানো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে তাড়িয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সকল মুশকিল আসান হবে। এভাবে একটি পরিবর্তনের পক্ষে জনমতও তৈরি হচ্ছে।

সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। সে সঙ্গে বাড়ছে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক চালও। এই যখন পরিস্থিতি তখন কোথায় সরকার ও দলে থাকবে ঐক্য, সংহতি, সমন্বয়, পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতা- তা না উল্টো একেকজনের একেককথা। একেক সিদ্ধান্ত। নিজের মতো পথ চলা।

গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার খবর হয়েছে, অধিকাংশ সংসদ সদস্যের নিজের এলাকায় দলের মধ্যে ঐক্য নেই। কিছু কিছু সংসদ সদস্য নিজেই দলের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এলাকায় নিজেই আলাদা আওয়ামী লীগ গঠন করে তার একক নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জেলা বা উপজেলা কমিটির সঙ্গে তার ন্যূনতম যোগাযোগ তো নেই-ই উল্টো অনেক স্থানে আছে পাল্টাপাল্টি অবস্থান। মাঝেমধ্যে তাদের মধ্যে সংঘাতের খবরও পাওয়া যায়।

দুর্যোগে যে শুধু বাংলাদেশ পড়েছে তা নয়। ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। ইউরোপের প্রায় দেশসহ চীন, কানাডায় মূল্যস্ফীতি দিনদিন বাড়ছেই। আরও বাড়বে বলে শঙ্কার কথা শোনাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা। দেশে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছে যে ২০২৩ সালে বিশ্বের ৪৫টি দেশে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে এসময় ২০ কোটি মানুষের জন্য জরুরি সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। এ দু সংস্থার যৌথ রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষের আশংকা প্রবল। এরমধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এবং সাউথ সুদান। এছাড়া ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানেরও একই অবস্থা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জিনিসপত্রের দাম যে শুধু বাংলাদেশে বেড়েছে তা-ও নয়। যেমন,  ইংল্যান্ডে গত এপ্রিল মাস থেকে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে গেছে প্রথমে ৫৪ শতাংশ এবং ১ অক্টোবর থেকে তা বেড়েছে ৮০ শতাংশ। গ্যাস বিল ১৯৭০ সালের পর রেকর্ড পরিমান বেড়েছে।  গড়পড়তা হিসেবে ৪৫০ পাউন্ডের বিদ্যুৎ বিল এখন ৭৬০ পাউন্ড। সকল প্রকার খাদ্য ও ভোগ্য পণ্য ১২ শতাংশ বৃদ্ধির কথা ছিল। কিন্তু বাজারে তা অনেক বেশি। একটি সিঙ্গেল ফ্যামিলি ফ্লাট আগে যার ভাড়া ছিল ১০০০ পাউন্ড এখন তা ১৬০০ পাউন্ড।

যুক্তরাষ্ট্রে আগে যে গ্যাসোলিন কিনতে খরচ হতো ২ ডলার ৯৯ সেন্ট, এখন তা কিনতে হয় ৪ ডলার ৯৬ সেন্ট।

বাংলাদেশের জনগণকে সে কথা বোঝানোর দায়িত্ব তো কেউ পালন করছেন না। জনপ্রতিনিধিদের ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বোঝানো উচিত ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনামূলক অবস্থান, অনেক ধনী দেশ থেকেও যে বাংলাদেশের অবস্থা এখনো ভালো তা তারা যৌক্তিকভাবে বোঝাতে পারছেন না। তারা জনগণের কাছে প্রকৃত সত্যটি তুলে ধরছেন না। তাতে জনগণের মধ্যে একপ্রকার নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে, মানুষ হতাশ হচ্ছে এবং সরকারের ওপর আস্থা হারাচ্ছে। এতে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে তার সুফল ঘরে তুলবে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি।

কাজেই দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে তৎপর হওয়া উচিত। সামনের কঠিন সময়কে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার। পরিস্থিতিকে লেজেগোবরে করে ফেললে আম-ছালা দুটোই হারাতে হবে। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে হুম্মাম কাদের যা বলেছে তা নিয়ে লাফালাফি করার কিছু নেই। সে রাজনীতিতে নতুন বলে প্রকৃত সত্য অকপটে বলে ফেলেছে। বিএনপির রাজনীতি আলবদর ও শিবিরের 'নারায়ে তাকবির'- এর হত্যা ও রগকাটার রাজনীতিই, আলাদা কিছু নয়। আর সে বিএনপি জিতলে বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে তার সামান্য ইঙ্গিত হুম্মাম কাদের দিয়েছে। কাজেই হুম্মামকে গালি না দিয়ে নিজেরা সংশোধন হোন, ঐক্যবদ্ধ হোন। আওয়ামী লীগের নীতি যা, আদর্শ যা, লক্ষ্য যা- তা স্পষ্ট করে সেই মতে চলুন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি ও সরকার পরিচালিত করুন। একটি কথা মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ যাই করুক, যতটুকু করুক দিনশেষে তারা বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টিকে বেছে নেবে, আওয়ামী লীগকে নয়। বাংলাদেশকে যারা পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চায়, যারা বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তারা এবং তাদের সমর্থকরা নতুন করে আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করতে যাবে না। তারা তাদের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বিএনপি-জামায়াত শক্তিকেই বেছে নেবে। অথচ সে শক্তিকে তোষামোদ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রগতিশীলদের বিমুখ করছে। দু পক্ষের কোনো পক্ষই যখন আর বিশ্বাস করবে না তখন বড় বিপর্যয় নেমে আসবে দেশের প্রাচীন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটিতে।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যারা করে তারা পরাজিত শক্তি। শুধু একাত্তরে নয়, এদেশে তারা বারবারই পরাজিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। রাজপথে এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারে না বলেই তারা বারবার হত্যা ও ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। এবারও তারা একই কাজ করবে। জনগণকে ভালোমন্দ বোঝানোর দায়িত্ব রাজনীতিকদের। এদেশের মুসলমানরা 'লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান'  আন্দোলন করেছিল। তারা পাকিস্তান, আইউব খানে সন্তুষ্ট ছিল। ভাষা আন্দোলন না হলে এদের অনেকেরই বোধোদয় ঘটতো না। পাকিস্তানিরা তাদের কীভাবে শোষণ করে, কতটুকু করে তা-ও তুলে ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই জাতির যে স্বাধীনতা দরকার, মুক্তি দরকার সেটাও বুঝিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। শুধু তাই নয় স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জন কীভাবে সম্ভব তার পথও বাতলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং 'রাষ্ট্রের মালিক হইবে জনগণ' এই অসাধারণ প্রত্যয়টিও সন্নিবেশিত করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা, অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতিকে আলোর পথে, অপরিণত একটি জাতিকে পরিণতের পথে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু।  আর দল হিসেবে আওয়ামী লীগ। জনগণ কী চায়- সেভাবে চললে এ দেশকে কখনো স্বাধীন করতে পারতেন না বঙ্গবন্ধু। অধিকাংশ মানুষ অধিকাংশ সময়ে তার ভালো-মন্দ বোঝে না। একজন দেশপ্রেমিক, সৎ, যোগ্য ও দূরদর্শী নেতাকেই জনগণকে বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হয়।

কাজেই এবারও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে যে ভাষায় বললে বুঝবে সে ভাষা প্রয়োগ করতে হবে।

তবে সবকিছুর আগে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য সরকারের মুখপাত্র কে- তা স্থির করতে হবে। কারণ সামনে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক কথা বলতে হবে।