জনগণের জন্য রাজনীতির ধুয়া তুলে যারা ভোটের তাওয়া গরম করেন, তাদের ভেবে দেখা দরকার, এই গরমে যেন কোনো নিরীহ মানুষের হাত না পোড়ে।
Published : 20 Jul 2023, 05:53 PM
সমাবেশ, শান্তি সমাবেশ, পদযাত্রা, শান্তি শোভাযাত্রা, এক দফা। এরকম অনেক শব্দ এখন গণমাধ্যমের নিয়মিত শিরোনাম। তার মানে এগিয়ে আসছে ভোটের দিন।
বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত পারস্পরিক অবিশ্বাস, অনাস্থা ও সংঘাতের ইতিহাস। এখানে ক্ষমতায় থাকা মানে বাঘের পিঠে সওয়ার। পিঠ থেকে নামলেই সেই বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সমূহ শঙ্কা। ফলে কেউ একবার বাঘের পিঠে সওয়ার হলে আর নামতে চায় না বা নামতে ভয় পায়।
রাজনীতি হঠাৎ কেন সংঘাতপূর্ণ?
গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে রাজনীতির নামে জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল, সহিংসতা, পেট্রোলবোমা, গাড়িতে আগুন ইত্যাদি নেই। কিন্তু রাজনীতি ও ভোটের তাওয়া যেভাবে গরম হচ্ছে, তাতে রাজনীতির সেই চিরচেনা সংঘাতের রূপটিই ফিরে আসবে কি না—সেই শঙ্কাই এখন কড়া নাড়ছে। বাংলাদেশর রাজনীতি মূলত ঘুরপাক খায় ক্ষমতার দড়ি টানাটানির এক দুষ্টুচক্রে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচি পালন করলেও তা বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। কোথাও বড় কোনো হামলা বা সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু গত ১২ জুলাই সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণার পরে বিএনপির দুদিনের পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিনে ১৮ জুলাই রাজধানীর মিরপুর বাংলা কলেজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।
বিএনপি তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ১৮ জুলাই তাদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলায় একজন নিহত, প্রায় দুই হাজার আহত এবং এক হাজারের বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুরে পদযাত্রা চলাকালে কৃষক দলের নেতা সজীব হোসেনকে পদযাত্রার পেছন থেকে টেনে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে বলে তাদের অভিযোগ। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালালে তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। খাগড়াছড়িতে পদযাত্রা চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে অন্তত দুইশ নেতাকর্মী এবং ফেনীতে প্রায় দেড়শ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বিএনপির দাবি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বগুড়ায় পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ গুলি চালালে প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এর বাইরে কিশোরগঞ্জে, জয়পুরহাট, পিরোজপুর, নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও বিএনপির পদযাত্রা শেষে আওয়ামী লীগের শান্তি শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। যদিও এই সহিংসতার পেছনে বিএনপিকেই দায়ী করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি সুযোগ পেলেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় তার উদাহরণ এই পদযাত্রা কর্মসূচি। পদযাত্রার নামে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, হাসপাতাল-ব্যাংকে ভাঙচুর করেছে, মানুষের যানবাহন নষ্ট করেছে। তারা ক্ষমতায় থাকার সময় আবার বিরোধী দলে থাকার সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এখন তারা সেই দোষের দায়ভার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের উপর। এসব কারণে এখন জনমনে প্রশ্ন, দেশের রাজনীতি কি তাহলে ২০১৪ সালের নির্বাচন-পূর্ববর্তী পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে?
বিএনপি এরইমধ্যে এটি স্পষ্ট করেছে যে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না এবং এই এক দফা দাবিতে তারা মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। দাবি আদায়ে তারা যা করার করবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে পরিস্থিতি যদি দুই দলেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে পরিস্থিতি যে অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করবে—সেটি চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। কেননা নির্বাচন ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা হবে, আপাতত তার কোনো লক্ষণ নেই। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চাইবে। কিন্তু অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কম। সুতরাং বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলো যদি সরকার যেভাবে নির্বাচন করতে চায়, সেই নির্বাচন মেনে না নেয় বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনঢ় থাকে, তাহলে এই ধরনের সংঘাত আরও বাড়বে।
যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তারা জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতির সমালোচনা করে। তারাই আবার যখন বিরোধী দলে থাকে তখন জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতিই করে। যেমন ক্ষমতায় থাকলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার খারাপ। আর বিরোধী দলে থাকলে এটাই ভালো। রাজনীতিবিদদের এই দ্বিচারিতার সঙ্গে দেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই পরিচিত।
কার আন্দোলনের মধু কে খাবে?
বিরোধী দলগুলো সবসময়ই চেষ্টা করে তাদের নিজেদের দল ও জোটের বাইরে অন্যান্য আরও অনেক গোষ্ঠী এমনকি সাধারণ মানুষকে তাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে। যে কারণে পেশাজীবীদের বিভিন্ন আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে তারা সচেষ্ট থাকে।
এ মুহূর্তে রাজধানীতে একাধিক পেশাজীবী আন্দোলন চলমান রয়েছে। বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে এই কর্মসূচি চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে এই আন্দোলনে চলছে। আন্দোলনে অংশ নিতে সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকায় এসেছেন।
আন্দোলনে আছেন চিকিৎসকরাও। পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন বহাল রেখেছেন পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়িয়ে তাদের সঙ্গে উপহাস করা হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা মাসিক ভাতার দাবিতে আন্দোলন করছেন বেসরকারি রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্ট পোস্টগ্র্যাজুয়েটরা। বর্তমানে তারা পান ২০ হাজার টাকা। আন্দোলনের মুখে ৫ হাজার টাকা বাড়ানো হলেও তারা এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রাজধানীর গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশে ব্যক্তিগত চেম্বার ও অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তবে ১৮ জুলাই ওই দুই চিকিৎসক জামিনে মুক্তি পাওয়ায় আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
শিক্ষক ও চিকিৎসকদের পাশাপাশি আন্দোলনে আছেন রেল শ্রমিকরাও। তাদের কর্মসূচিতে গত ১৬ জুলাই সারা দেশে রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। রেল শ্রমিকরা প্রথমে কাওরান বাজারের সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি শুরু করেন। পরে তারা রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা ৩টার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। ততক্ষণে ২৫টি ট্রেনের শিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে রেলের প্রায় ৮ হাজার অস্থায়ী শ্রমিকের এই আন্দোলন।
কথা হচ্ছে, কার আন্দোলনের মধু কে খাবে বা খেতে পারবে সেটি সবসময় আগেভাগে ধারণা করা যায় না। তবে যেকোনো আন্দোলন, সেটি যদি সরাসরি সরকারের কোনো নীতি-পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষেরও আন্দোলন হয়, সরকার সেটিকে নিজের ‘গ্রিপে’ রাখতে চায়। আর সরকারের বিরোধী দলসমূহ চায় যেকোনো আন্দোলনে বাতাস দিয়ে সেটিকে সরকারবিরোধী জনমত বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে। ফলে ছোটখাটো আন্দোলন গড়ে উঠলেও সরকারবিরোধী শক্তিসমূহ প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষাভাবে সেইসব আন্দোলনে সমর্থন জোগায়।
সরকার ও সরকারবিরোধী শক্তি কীভাবে কোনো একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকেও নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায় বা লাগাতে চায়, সাম্প্রতিক ইতিহাসে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ এবং এই মঞ্চের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন এবং এরপরে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সুতরাং বিভিন্ন দাবিতে পেশাজীবীদের আন্দোলন থেকে সরকার নাকি বিরোধীরা মধু খাবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যে প্রশ্নটি সামনে আসছে তা হলো, সামনের দিনগুলোয় দেশের রাজনীতি কি আরও বেশি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠবে নাকি সরকার তার দলীয় এবং প্রশাসনিক শক্তি কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের আন্দোলন দমন করবে।
গরম তাওয়ায় পুড়বে কে?
দিন যত যাবে, অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে রাজনীতির মাঠ তথা ভোটের তাওয়া তত বেশি গরম হবে। প্রশ্ন হলো সেই গরম তাওয়ায় কে পুড়বে? শুধু কী রাজনৈতিক কর্মী নাকি দেশ ও দেশের মানুষ? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ভোটের গরম তাওয়ায় মূলত দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষই বেশি পোড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে স্যান্ডউইচ হয় সাধারণ মানুষ—যে মানুষদের জন্যই নাকি তারা রাজনীতি করেন। যে মানুষদের জন্য তারা রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন, তারাই রাজনৈতিক সমাবেশ ও মিছিল মিটিংয়ের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকেন। দুপক্ষ ইটপাটকেল ছুঁড়লে তাতে সাধারণ নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষেরও মাথা ফাটে। পুলিশ যখন গণগ্রেপ্তার ও গণআটক চালায়, তাদের জালে শুধু রাজনৈতিক কর্মী নন, অরাজনৈতিক সাধারণ মানুষও আটকা পড়েন। অনেকে মাসের পর মাস বিনা বিচারে জেলে আটকে থাকেন। অর্থাৎ ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার এই রাজনীতির নিরীহ শিকার হন নিরীহ মানুষেরা—যারা দিন শেষে কোনো ক্ষতিপূরণও পান না। বরং বিনা বিচারে দীর্ঘদিন জেল খাটতে গিয়ে তাদের জীবনের যে মূল্যবান সময়, জীবিকা, অর্থ ও সামাজিক সম্মানের হানি হলো, সেটি পুনরুদ্ধারেরও কোনো সুযোগ নেই। অতএব জনগণের জন্য রাজনীতির ধুয়া তুলে যারা ভোটের তাওয়া গরম করেন, তাদের ভেবে দেখা দরকার, এই গরমে যেন কোনো নিরীহ মানুষের হাত না পোড়ে। প্রাণসংশয় না হয় নিরীহদের।
বলা হয়, আন্দোলনের মাঠ যার দখলে ভোটের মাঠও তার দখলে। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মাঠ দখলে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। বলা হয় সেই কারণেই নির্বাচনের মাঠেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি, ২০১৪ সালে বর্জন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আরও ভরাডুবি; দুর্নীতি মামলায় দলের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার জেল এবং আরও একাধিক মামলায় দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানে কারাদণ্ড; হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়; জেল ও নির্যাতন; ব্যবসা-বাণিজ্য দখলসহ নানা কারণে বিএনপি অনেক বছর ধরেই কোণঠাসা। তারা কি এবার সেই সবকিছু পুনরুদ্ধারের জন্য মরণকামড় দেয়ার জন্য মাঠে নামছে? তারা যে বলছে আগের দুটি নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচন হবে না বা হতে দেয়া হবে না—তার মধ্য দিয়ে তারা কি সংঘাতের রাজনীতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে? উপরন্তু সরকারি দলও যেখানে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করার এক দফায় অনড়—সেটিও কি ওই সংঘাতকে উসকে দেবে? এসব প্রশ্নই এখন মুখ্য।
বিএনপির তরফে বলা হচ্ছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তাদের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। অন্যদিকে ক্ষমাতাসীন দলের তরফে বলা হচ্ছে, তারাও রাজপথ দখলে রাখবে। যে কারণে দেখা যায়, যখনই বিএনপি কোথাও কর্মসূচি দেয়, সেখানেই আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি থাকে। বিএনপি যেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে, আওয়ামী লীগ তার কাছাকাছি কোনো জায়গায় করে শান্তি সমাবেশ। বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগের শান্তি শোভাযাত্রা। ফলে বড় দুই দলের এই বিপরীতমুখী অবস্থান যদি প্রলম্বিত হতে থাকে তাহলে ভোটের তাওয়া যে আরও গরম হবে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে সেই তাওয়ায় যাতে দেশ ও দেশের মানুষ না পোড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব সরকারের যেমন, বিরোধীদেরও তেমন।
মোদ্দা কথা, রাজনৈতিক সংকটের সমাধান রাজনৈতিকভাবেই হতে হয়। কিন্তু রাজনীতিবিদরা যখন নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হন; তারা যখন রাজনৈতিক সংকটের সমাধান অরাজনৈতিক উপায়ে খোঁজেন, তখন অরাজনৈতিক কোনো শক্তি এসে তাদের ‘মাইনাস’ করে দেয়। রাজনীতিবিদরা যখন রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দিতে ব্যর্থ হন, তখন দেশ সংকটে পড়ে এবং রাজনীতিবিদরাই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হন, দেশে-বিদেশে যার উদাহরণ ভুরি ভুরি। সুতরাং দেশ তো বটেই, রাজনীতিবিদদেরই নিজেদের স্বার্থেই রাজনীতির মধ্যে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান খোঁজা উচিত। না হলে তারা নিজেরা বিপদে পড়বেন, সেই সঙ্গে দেশ ও দেশের মানুষও।