Published : 24 Mar 2014, 08:11 AM
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার নতুনভাবে গঠিত হওয়ার পর তার মধ্যে দুটি প্রবণতা স্পষ্ট। এক, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল ও জোটকে তুচ্ছ করে বক্তব্য প্রদান। চলমান উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী দল-সমর্থিতরা ভালো করার পরও সেটি বন্ধ হতে দেখা যাচ্ছে না। দুই, বিরোধী দল তো বটেই, সুশীল সমাজ বা নিজেদের সমর্থক বলে বিবেচিতদের সমালোচনাও অগ্রাহ্য করা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে তীব্র ভাষায় বক্তব্য রাখার বিষয়টি লক্ষণীয়।
রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা চালু আছে যে, আওয়ামী লীগ সমর্থক চায়; সমালোচক নয়। আমরা যারা কিঞ্চিত লেখালেখি করি, তারাও কেবল প্রশংসা শুনতে চাই বলে সমালোচনা রয়েছে। তবে কোনো দল বা গোষ্ঠী, বিশেষত ক্ষমতাসীনরা সমালোচনা শুনতে না চাইলে মুশকিল। সে ক্ষেত্রে তাদের স্তাবক পরিবেষ্টিত হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। স্তাবকরা তাদের ঘিরে রাখবে এবং রূঢ় বাস্তবতার সংস্পর্শে আসতে দেবে না। এতে ক্ষমতাসীনদের অন্তত কল্যাণ হবে না।
ক্ষমতাসীনদের কল্যাণ না হলে না হোক। দেশের কল্যাণ যেন হয়। মুশকিল হল, ক্ষমতাসীনরা সমালোচনা শুনতে না চাইলে তারা একের পর এক ভুল করবেন আর এতে অকল্যাণ হবে দেশের। দেশের অকল্যাণ হলে বিরোধী দল আর তার সমর্থকরাও এর বাইরে থাকেন কি?
তারা অবশ্য সরকারের ভুলের ওপর ভরসা করে থাকবেন। সরকার বেশি বেশি ভুল করলে তার জনসমর্থন কমবে। সরকারের জনসমর্থন কতটা রয়েছে, তার প্রমাণ হয়ে যাবে এ মুহূর্তে একটা জাতীয় নির্বাচন হলে। দলীয় সরকারের অধীনে এটা হলেও আর তাতে বিরোধী দল যোগ দিলে সেটি এক রকম বোঝা যাবে। সরকার স্বভাবতই তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাবে না।
খালেদা জিয়া ও তার দুই পুত্রের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো বরং সচল হয়ে উঠেছে সম্প্রতি। এতে সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনা নেই বলা যাবে না। উল্লিখিতদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছিল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক শাসনামলে। সেগুলোও তাদের মাথার ওপর ঝুলছে। কোনো কোনো মামলায় জেল-জরিমানাও হয়ে আছে এর মধ্যে। এতে জনমত প্রভাবিত হচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে বিএনপি এসব মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এখন। আন্দোলন প্রয়াস শিকেয় তোলা থাকবে আপাতত। এতে তাদের সমালোচনা কিন্তু কমবে না। বিরোধী দলের সমালোচনায় অবশ্য ধার নেই। এসব ভারেও কাটছে না। সরকার এর জবাবও দিচ্ছে কম।
কোনো নাগরিক সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা, এমনকি সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি সরকারের সমালোচনা করলে অবশ্য তারা ছেড়ে কথা বলছেন না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চুপচাপ বলে তাকে নিয়ে নাড়াচাড়া হচ্ছে কম। তবে খুব সম্প্রতি দুটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের ভেতর থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এমন অভিযোগও করা হল যে, সংস্থাগুলো 'এখতিয়ার' বা রীতিবহির্ভূতভাবে এসব করছে। দাবি জানানো হয়েছে তাদের 'অর্থের উৎস' খতিয়ে দেখার।
একটি সংস্থার পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তারা খোদ জাতীয় সংসদের অনুমতি নিয়ে সংসদ অধিবেশন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের কাজ তারা স্বভাবতই অব্যাহত রাখবেন বলেও জানানো হয়েছে। আর এসব কার্যক্রম পরিচালনায় 'অর্থের উৎস' তো সরকারের জানা থাকারই কথা। নইলে লোকে বলবে, তারা 'হাওয়ার ওপর' দেশ চালাচ্ছেন।
এদিকে ২৬ মার্চ 'লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা' গাওয়ার কাজে কোন কোন উৎস থেকে অর্থকড়ি নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল ক্ষমতাসীনদের ভেতর থেকেই। একজন মন্ত্রী বললেন, ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়া দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে কিন্তু অস্বীকারই করা হচ্ছিল তাদের কাছ থেকে অর্থকড়ি নেওয়ার বিষয়টি। পরে এমনটিও বলা হল, ইসলামী ব্যাংক তো অবৈধ নয়।
তা তো বটেই। ইসলামী ব্যাংক হল দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। সবচেয়ে বেশি শাখা তাদের আর সবচেয়ে বেশি আমানত তারা নাড়াচাড়া করেন। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে 'জঙ্গী অর্থায়নের' কিছু অভিযোগ অবশ্য উঠেছিল। কিছু সাজাও হয়েছে তাদের। কিন্তু ব্যাংকটি বন্ধ বা একে অন্য কোনো রূপে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
ইসলামী ব্যাংক প্রদত্ত অর্থ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধে ওঠার পর সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে এর এক ধরনের নিষ্পত্তি করেছে। বলেছে, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য গৃহীত ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে এটি বিশ্বকাপ ক্রিকেট বা অন্য কোনো কাজে লাগানো যায়। তারা এটি ফেরতও নিতে পারেন।
এমন একটা পরিস্থিতিতে সরকারপক্ষের এক সিনিয়র এমপি যখন নিবন্ধিত কোনো বেসরকারি সংস্থার 'অর্থের উৎস' নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সেটি কি আদৌ কোনো গুরুত্ব বহন করে? সরকারের কথা ও কাজে অসঙ্গতি তথা অস্বচ্ছতার দিকেই বরং বেশি করে দৃষ্টি যায়।
আসল কথা হল, ওই সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনের বক্তব্য ভালো লাগেনি সরকারপক্ষের। কিন্তু কথা হল, সংসদ কার্যকরভাবে চলছে না, এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে বেশি– অনুসন্ধানে এসব তো সব আমলেই বেরিয়ে আসছে। তবে দিনকে দিন বোধহয় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বেশি। অবনতি হলে সেটি বলা যাবে না? এটি রোধে কিছু সুপারিশও তো করা হচ্ছে। সরকার বরং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। তাতে মিলবে সদিচ্ছার পরিচয়।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে ধরনের সংসদ গঠিত হয়েছে, তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও কমেছে বৈকি। এ সংসদে দাঁড়িয়ে তাই খুব যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখা আরও বেশি করে প্রয়োজন। এমন কোনো বক্তব্য রাখা কি ঠিক, পাল্টা বক্তব্য আসার পর যা নিয়ে আর কিছু বলার থাকে না?
সরকারপক্ষের কারও অসহিষ্ণু বক্তব্যে অবশ্য আক্রান্ত সংস্থার খুশি হওয়া উচিত। এ অবস্থায় লোকে আরও বেশি করে জানতে চায়, সংস্থাটি আসলে কী বলেছিল। পরপর কয়েকদিন এ নিয়ে খবর প্রচারিত হয়। এতে ওই প্রতিবেদনের কার্যকারিতা বরং বাড়ে। বিরোধী দলও তখন নিজেদের অতীত ভূমিকা ভুলে ওই রকম প্রতিবেদনের পক্ষে অবস্থান নেয়।
এটা চক্রাকারে চলছে। তাতে কোনো পক্ষই কিছু মনে করছে না। তবে সরকারপক্ষের অসহিষ্ণুতা বাড়ছে বলেই মনে হয়। নইলে কি কোনো বেসরকারি সংস্থাকে কেউ বিরোধী দলে যোগ দিতে বলেন? এমনটি ইতোপূর্বে শোনা যায়নি। আর কোনো প্রতিবেদন বা কারও বক্তব্য পছন্দ না হলেই বলে দেওয়া হচ্ছে, এসব করা হচ্ছে 'অগণতান্ত্রিক শক্তি' ডেকে আনার জন্য!
এদেশে কারা কতটা গণতান্ত্রিক– তার বদলে এটা দেখা বোধহয় সহজ যে, কারা কতটা অগণতান্ত্রিক। গণতান্ত্রিক হওয়ার প্রতিযোগিতা কি লক্ষ করা যাচ্ছে? তবে নির্বাচিত হয়ে আসা ও না আসার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে নিশ্চয়ই। সে ক্ষেত্রে আবার মানসম্মত নির্বাচনের প্রশ্ন ওঠে। দুর্ভাগ্য, মোটামুটি মানসম্মত নির্বাচনের মধ্য দিয়েও আমরা গণতান্ত্রিক শাসন পাইনি। গণতান্ত্রিক রাজনীতিও পাইনি। পাইনি সে ধরনের সংস্কৃতি।
এরকম প্রেক্ষাপটে কিন্তু 'ওয়ান-ইলেভেনের' মতো ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। সুশাসন বা জবাবদিহিতা নিয়ে গবেষণাকাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো সেজন্য দায়ী ছিল না। তাদের অত ক্ষমতা কোথায়? ভুলে গেলে চলে না, ওয়ান-ইলেভেনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন আজকের ক্ষমতাসীনরা। যে জন্য বিএনপি তাদের শাসনামলকে বলে থাকে 'ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিকতা'।
জরিপ বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে বিরাট গুরুত্ব দেওয়ারও প্রয়োজন আছে কি? যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা তো দেশে জরিপ চালিয়ে বলেছিল, বিরোধী দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন হলেও ক্ষমতাসীনরা জিততেন। সেটি ক'জন বিশ্বাস করেছেন? চলমান উপজেলা নির্বাচন কী নির্দেশ করছে?
জনগণের ওপর বিপুলভাবে যা কার্যকর রয়েছে, তা হল প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রভাব। ঘুরেফিরে নিজেদের বাঁধা ভোট কিন্তু তাদের সঙ্গেই থাকছে। বাকি ভোটারের ওপরও কি প্রভাব রাখতে পারছে বেসরকারি সংস্থার কাজ? নাকি তারা ক্ষমতাসীনদের সুশাসন প্রদানে ব্যর্থতা দিয়েই মূলত প্রভাবিত হচ্ছেন?
সরকারের 'ব্যর্থতা' নিয়েও কিছু বলা যাবে না! খোদ মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানকে যেভাবে ধুলেন দুই সিনিয়র মন্ত্রী, তাতে অনেকে অবাক হবেন। ভদ্রলোক কেন বললেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে দেশের নানা স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর যা হল, সেটা সরকারের ব্যর্থতা! এগুলো নিয়ে যেভাবে মামলা চলছে, তাতে দায়িত্বহীনতা ও পুলিশের 'বাণিজ্যের সুযোগ' সৃষ্টি হচ্ছে– এটাই-বা তিনি বললেন কেন!
সুতরাং প্রশ্ন তোলো খোদ মানবাধিকার কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে। কারা সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী, কারা সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ উস্কে দিয়েছে, কেন তাদের কথা বললেন না? না বলে তিনি নাকি ওদের প্রশ্রয় দিলেন! জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কি ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতার মতো করে বক্তব্য রাখবেন? তার কিন্তু উচিত হবে না রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মতো করেও বক্তব্য রাখা। সে ক্ষেত্রে তার পদের যেটুকু ওজন বা কার্যকারিতা রয়েছে, সেটিও বিনষ্ট হবে।
এতে কি ক্ষমতাসীনদের কোনো লাভ হবে? মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান সংখ্যালঘুদের রক্ষায় ব্যর্থতার কথা না তুলে তাদের আস্থাভাজন হয়ে থাকলে কি আক্রান্তরা সরকারের ভূমিকায় আশ্বস্ত হয়ে যাবেন? আর তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলরা?
হ্যাঁ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশের অনেক এলাকায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণ সেভাবে ছিল না। এ সুযোগেই হয়তো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ঘটে গেছে। কিন্তু সরকার নতুনভাবে গঠিত হওয়ার পর মামলা ও এর তদন্ত কি সঠিক ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে?
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের কাজই তো এসব নজরদারি করা। প্রশ্ন তোলাও একটা কাজ। কিছু করার ক্ষমতা যখন নেই, তখন কি তিনি প্রশ্নও তুলবেন না? বিগত মেয়াদে শান্ত সময়েও কিন্তু সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন অংশে। সেগুলোরই বা কী নিষ্পত্তি হয়েছে?
জিয়াউর রহমান কীসের উদগাতা ছিলেন, তা বলে নিজেরা কী করেছেন, সে দায় এড়ানো যাবে না। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে থাকাকালে এরশাদ কী করেছিলেন, সে প্রশ্নও লোকে তুলবে। দুই মেয়াদে দেশপরিচালনার সময় আওয়ামী লীগ ওই ধারাকে পরাস্ত করতে সুনির্দিষ্টভাবে কী করেছে, সেটি বলুন দয়া করে।
নিবন্ধটি লেখার আগের দিন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত লোকবক্তৃতায় ড. আবুল বারকাত যা বলেছেন, তাতেও সরকারের অখুশি হওয়ার কথা। তিনি এ সরকারের আমলে দ্বিতীয় বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বক্তৃতায় ড. বারকাত বললেন, দেশে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। তিনি কিন্তু বলেননি, দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতি উধাও বা এমনকি দুর্বল হয়ে পড়েছে বর্তমান শাসনামলে।
আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে যেটি চলে আসছে, সে বিষয়েই তত্ত্বায়নে প্রয়াসী হয়েছেন আবুল বারকাত। সেটি বুঝতে না চেয়ে তাকেও কিন্তু অভিযুক্ত করা যাবে সরকারের সমালোচক বলে। সমালোচনা করাটাই দোষের বলে বিবেচিত হলে তো মুশকিল।
সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা কি ভেতরে ভেতরে নার্ভাস? ঠিকমতো নির্বাচন করে জিতে আসতে পারেননি বলেই কি তারা সমালোচনা নিতে পারছেন না? ঠিকমতো জিতে এলেও এটা গ্রহণ করতে পারেন না তারা। তখন সমালোচনাকে মনে করা হয় ধৃষ্টতা। মনোভাবটা এমন– 'এত বিপুলভাবে জিতে এসেছি কি সমালোচনা শুনতে'! তখন কিছুদিন তাদের 'হানিমুন পিরিয়ড'ও চলে নির্বাচকমণ্ডলীর সঙ্গে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কিন্তু তেমন কোনো পর্ব নেই। নির্বাচনটাই তো প্রশ্নবিদ্ধ দেশে-বিদেশে। এখনও সরকারকে হিসাব কষে বলতে হচ্ছে যে কয়টি দেশ অভিনন্দন জানাল। এদিকে ভোটারের অর্ধেকই যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারল না, তার কী হবে? নজিরবিহীন সহিংস আন্দোলনের মুখেই এমনটি ঘটেছে, তা অবশ্য স্বীকার্য। এখন মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে দেরি করলেও সুশাসন তো দেবেন। সমালোচনাকে স্বাগত জানানো এর অপরিহার্য অংশ বৈকি।
আমরা দেখেছি, সমালোচনা শুনে সুশাসনে ব্রতী হয়েছিল ওয়ান-ইলেভেন সরকার। তারা ছিলেন অনির্বাচিত। কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না তাদের। বর্তমান সরকার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলটি কিন্তু থাকবে। গণতান্ত্রিক ধারায়ই পথ চলতে হবে তাদের। সেজন্য সমালোচনা শোনার সংস্কৃতি তার মধ্যে গড়ে তোলা চাই।
সমর্থন তো রয়েছে তাদের। সমালোচনা ভালোভাবে নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংস্কার আনতে পারলে এর ভিত্তি কিছুটা বিস্তৃতও হতে পারে। পারে না কি?
হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট।