রাশিয়ানদের যখন বলছি, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তখন তাঁরা ঠিক ধরতে পারছেন না, এই দেশ কোথায়, পৃথিবীর মানচিত্রের কোন প্রান্তে এর অবস্থান। কিন্তু, যখন বলছি আমি শেখ মুজিবের দেশ থেকে এসেছি, আমি শেখ মুজিবের প্রতিনিধি, তখন ঠিকই তারা বুঝতে পারছেন।
Published : 17 Mar 2023, 02:09 PM
সময়টা ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর হবে। বিজয়ের মাসের এক ভোরবেলায় আমার স্ত্রী মণিকা স্বপ্ন দেখলেন, বঙ্গবন্ধু এসে তাকে বলছেন, ‘বঊমা আমাকে দুধ দিয়ে কয়টা ভাত দিবি?’ আমার স্ত্রী স্বপ্নের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে দুধ-ভাত খাওয়ালেন। জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মণিকার কখনও দেখা হয়নি। একবার বঙ্গবন্ধুকে দেখবেন বলে সংসদেও গিয়েছিলেন। সেই দিন কোনো এক বিদেশী সাংবাদিক এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে সাক্ষাৎকার নিতে। তাই তিনি সংসদে আসতে পারেননি।
জীবদ্দশায় যে মানুষটিকে একবারের জন্যও মুখোমুখি দেখতে পাননি আমার স্ত্রী, তিনিই স্বপ্নে এসে তাঁর কাছে দুধ-ভাত খেতে চাইলেন। তারপরের দিন মণিকা মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েন। আমাদের তখন চারটি ছেলেমেয়ে নিয়ে নাজুক পরিস্থিতি। আমি রামকৃষ্ণ মিশনে দৈনিক আট টাকা মজুরিতে কাজ করছি। তবু মণিকার স্বস্তির জন্য দুধ-ভাতের ব্যবস্থা করি। তিনি বয়স্ক অসহায় এক লোককে ওই দুধ-ভাত খাইয়ে নিজের মন শান্ত করেন।
গল্পটা বলছি এই জন্য যে, জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর জীবদ্দশায় আমারও উল্লেখ করবার মতো অন্তরঙ্গ স্মৃতি খুব বেশি নেই। তিনি আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠেন অন্তর্ধানের পর। সেটা তাঁর রাজনৈতিক দর্শন দিয়ে, যে দর্শনে মুগ্ধ হয়ে আমি ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিলাম, তার বহু বিস্তৃতি আমি অনুভব করতে শুরু করলাম বঙ্গবন্ধুকে হারাবার পর।
বামনের দেশে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনেক বেশি উঁচু স্তরের মানুষ। তাঁর রাজনৈতিক বিকাশে যেমন উচ্চতা আছে, তেমনি শারীরিক উচ্চতায়ও তিনি ছিলেন সাধারণের ওপরে। বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি যেতে পারার আমার অবশ্য আরেকটা টিকিট ছিল এই উচ্চতা। বঙ্গবন্ধু সুঠাম, উঁচা-লম্বা এক মানুষ ছিলেন। আমিও লম্বা মানুষ। আমার কাঁধে হাত রাখতে হলে তাঁকে অন্তত বাঁকা হওয়া লাগত না। প্রায়ই তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে হাঁটতেন। শেখ কামালের বৌভাতে গেলাম নিমন্ত্রিত হয়ে। সব নেতারা, এমপিরাও আসলেন। আমাদের মধ্যে শুরু হলো আড্ডা-আলোচনা। এর মাঝে বঙ্গবন্ধু এসে যোগ দিলেন। সেই আড্ডায় খুঁজে খুঁজে বঙ্গবন্ধু আমার কাঁধেই হাতটা রেখে আলাপ চালিয়েছিলেন বেশ খানিকক্ষণ।
বঙ্গবন্ধুর সেই আশীর্বাদের হাত কাঁধে নিয়েই সংসদ সদস্য হিসেবে আমি কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে। তবে বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছি খুব অল্পসময়। তিয়াত্তর থেকে পঁচাত্তর। মাত্র দু-বছর। আমার নিজের বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে। তাই আমি চাইতাম যেন কেশবপুরের উন্নয়নটা বেশি হয়, আগে হয়। তখন যশোরের ওই আসনটি ছিল মণিরামপুর ও কেশবপুর মিলিয়ে। সেজন্য যখনই বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছি, চেয়েছি, তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সামান্য ভাণ্ডার থেকে কিছু না কিছু আমার এলাকার উন্নয়নে দিয়েছেন এবং আমি সেটা কেশবপুরেই কাজে লাগিয়েছি বেশি। মণিরামপুরে শুধু টেলিফোন সংযোগ নেওয়ার মতো একটা বড় কাজ করেছিলাম।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ নেতার মোহনীয় নেতৃত্বের জন্যই আমরা যাঁরা তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতাম তাঁরা এত বেশি মানসিকভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। এই জাতির জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড। তাঁর নেতৃত্ব থেকে শিশু বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়া।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আমার জীবন, আমার পারিবারিক জীবন ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। তাঁর রাজনৈতিক অনুসারী হওয়ার কারণে আত্মগোপনে যেতে হয় আমাদের। ১৫ অগাস্টের মর্মন্তুদ হত্যাযজ্ঞের পর আমার পরিবারকে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে আগে ভারতে পাঠাই। আমি তখনও দেশেই ছিলাম। সে এক ভয়াবহ সময়। যশোরের সব এমপি-নেতাই আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক একে একে সবাইকে ডেকে পাঠাতে লাগলেন। আমি ছোটভাই অরুণকে আমার স্ত্রী আর ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দিয়ে বলি তাদের সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দিয়ে আসতে। ভাই ফিরে এসে আমাকে বলল, ‘দাদা বউদিকে সীতার বনবাস দিয়ে আসলাম।’
তখনও আমি দেশেই থাকতে চেয়েছিলাম। পরে যখন জানলাম মোশতাক আমাকেও খুঁজতে যশোরের ডিসিকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তখন অন্য এক বর্ডার দিয়ে নিজেও গেলাম কলকাতায়। আগেই বলেছি রামকৃষ্ণ মিশনে একটা চাকরি পেয়েছিলাম। সেখানকার দৈনিক আট টাকা বেতনের চাকরিটা হারালাম, কাদের সিদ্দিকী এসেছিলেন বলে। আমিও ভেবেছিলাম প্রতিরোধ যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার কথা। সেই খবরও কীভাবে যেন পৌঁছে যায় জিয়াউর রহমানের কাছে। তারপর কূটনৈতিক চাপ দিয়ে সেই চাকরি থেকেও বরখাস্ত করা হয় আমাকে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার অনেক আগেই আমি তাঁর গুণে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। স্কুলে আমি ছাত্র ইউনিয়ন করেছি। কলেজেও তা-ই ছিলাম। বঙ্গবন্ধু যখন ছেষট্টিতে ছয় দফা ঘোষণা করলেন আমি তখনও ছাত্র। যশোরের মনিরামপুরেই থাকছি। ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আমাকে ওই ছয় দফা দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করি। বঙ্গবন্ধুকে অবশ্য এর কিছুদিন পরেই কারাগারে আটক করা হয়। তিনি ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন ৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি বঙ্গবন্ধু লাহোরে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। পরের দিন ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের পত্রপত্রিকাগুলোয় তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর বেশি দিন তিনি মুক্ত থাকতে পারেননি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারা ভোগ করেছিলেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। ছয় দফা দেওয়ার পর জাতির পিতা যেখানে সমাবেশ করতে গেছেন, সেখানেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। ওই সময়ে তিনি ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ৬৬ সালের ৮ মে আবারও গ্রেপ্তার হন এবং মুক্তি পান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এ সময় তিনি ১ হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। আমার স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে ১৯৬৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু একবার মণিরামপুর এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ওই অনুষ্ঠান আমি সঞ্চালনা করার দায়িত্ব পেয়েছিলাম। তখন আমি মণিরামপুর কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলাম এবং তারও অনেক আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়ে পড়েছি।
বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণার পর এ নিয়ে যতই আমরা ভেবেছি, আলোচনা করেছি, ততই তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে বিস্মিত হয়েছি। ছয় দফা এমন এক সনদ, যে সনদের রাজনৈতিক ব্যাপকতা ও দূরদর্শিতা অনুভব করেছি মুক্তিযুদ্ধের সময়। ওই সনদের মধ্য দিয়েই মূলত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রথম বীজটা বুনেছিলেন। ছয় দফার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন। ছয় দফা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি, তাঁর রাজনীতিতে যোগ দেই। ছাত্রলীগ করা শুরু করি।
স্মৃতি বলছে, এর কিছুদিন পরেই আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চলে যাই। সেখানে নানা পরিক্রমায় অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হই। দেখতে দেখতে ঊনসত্তর সাল চলে আসে। দেশের অবস্থা তখন টালমাটাল। ওই টালমাটাল সময়ে যশোরের মনিরামপুরে এক জনসভায় বক্তৃতা করতে আসেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু আসলেন দারুণ, মোহনীয় এক বক্তৃতা দিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানিদের নানা শোষণ, নিপীড়নের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর এসব বক্তৃতা তখন নিপীড়িত মানুষের কাছে ছিল একেকটা স্বপ্ন দেখার বিদ্রোহী কবিতা।
সেবার বঙ্গবন্ধু আমার সঞ্চালনা পছন্দ করেছিলেন। সেই প্রথম আমার বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি আসা। আমাকে ডেকে আলাপ করলেন। ঢাকায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। বলে গেলেন, ‘তোমাকে আমার লাগবে।’ সেই একবার তুমি করে ডেকেছিলেন। পরে আমাকে তিনি তুই বলে সম্বোধন করতেন। এভাবে আদুরে-শাসনে গলায় তুই করে বলা, তাঁর এই আপন করে নেওয়ার ক্ষমতাটাই তাঁকে সবার কাছে এত গ্রহণযোগ্য এক নেতা করে তুলেছিল।
তারপর থেকে আমি পুরোদমে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। সেজন্য নানা নিগ্রহের শিকারও হয়েছি। পুলিশ বাড়ি এসেছে, মামলা হয়েছে, ধরে নিয়ে গেছে, পালিয়ে-পালিয়ে বেড়িয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার-পরিজনসহ ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তাজউদ্দিন সাহেবসহ মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীরা সবাই ক্যাম্পে আসতেন, আলোচনা করতেন, যুদ্ধের রাজনৈতিক পরিকল্পনা সাজাতেন। আমার ইচ্ছে ছিল সম্মুখসমরে যোগ দেওয়ার। সবাই বলল, ‘মাস্টার মানুষ, তুমি শিক্ষার জন্য লড়াই কর।’ তখন ওই শরণার্থী শিবিরে স্কুল করে দেওয়া হয়েছিল দুটো, দুটোতেই পড়াতাম আমি।
দেশ স্বাধীনের পর দেশে ফিরলাম, নিজ গ্রামে গেলাম। আমি তখন মনিরামপুর কলেজে ফুলটাইম আর কেশবপুর কলেজে পার্টটাইম শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছি, সঙ্গে রাজনীতিও করছি। স্বাধীন দেশের প্রথম নির্বাচন হলো ১৯৭৩ সালে। সেই যে ঊনসত্তর সালে বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে লাগবে’ সেটা বুঝলাম যখন ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বঙ্গবন্ধু আমাকে নমিনেশন দিলেন, পাসও করলাম, এমপি হয়ে পার্লামেন্ট গেলাম। তখন থেকে বঙ্গবন্ধুর আরেকটু সাহচর্যে যাওয়ার সুযোগ শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু আমাকে শিক্ষা বিষয়ে জ্ঞানার্জনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন অদূর ভবিষ্যতে আমাকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী করবেন। সেই রকমটা আমাকে বলেছিলেনও, রাশিয়া পাঠাবার আগে, ‘তোকে নিয়ে আমার কিন্তু অনেক পরিকল্পনা আছে। ভালো করে সব কিছু দেখেশুনে আসবি।’
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে দুই মেরুতে চলে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া। তখন অবশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। দুই পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ ছাড়াই ওই দুই দেশের মধ্যে তখন তুমুল বিরোধ চলছে। এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে আর ভারতকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।
ডিসেম্বরে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যখন নাস্তানাবুদ তখন তাদের পক্ষে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজকে বঙ্গোপসাগরে পাঠানো হলে তা ঠেকানো গিয়েছিল কেবল এই সোভিয়েত রাশিয়ার জন্যেই। বাকি গল্প সবার জানা।
এরপর তো দেশ স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন, সরকার গঠন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের হাল ধরলেন। সম্পদহীন এক দেশকে নিয়ে তিনি দেখলেন সোনার বাংলার স্বপ্ন। তখন একবার বঙ্গবন্ধু কয়েকজন পার্লামেন্ট মেম্বারের সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ায় পাঠালেন আমাকে।
বাংলাদেশ তখন স্বাধীন এক দেশের নাম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়ার অবদান অনেক। সেই রাশিয়াতে আমি যখন গেলাম তখন দেখলাম তাঁরা বাংলাদেশ চেনে না, চেনে শেখ মুজিবকে। বাংলাদেশ বলতে সোভিয়েত রাশিয়ায় তখনও শেখ মুজিবের দেশ। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমি রাশিয়ানদের যখন বলছি, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তখন তাঁরা ঠিক ধরতে পারছেন না, এই দেশ কোথায়, পৃথিবীর মানচিত্রের কোন প্রান্তে এর অবস্থান। কিন্তু, আমি যখন বলছি আমি শেখ মুজিবের দেশ থেকে এসেছি, আমি শেখ মুজিবের প্রতিনিধি, তখন ঠিকই তারা বুঝতে পারছেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক, বাংলাদেশের স্থপতি এমনই এক নেতা ছিলেন। আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখনও বাংলাদেশের ডাক নাম ছিল শেখ মুজিব। বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে চিনত শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ হিসেবে। তাঁর কন্যা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার এসেছে বাংলাদেশের প্রাণ। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন সুপরিচিত।