এই মুহূর্তে কৃচ্ছ্রতা সাধনের বিকল্প নেই

“আজ বাংলাদেশ যেসব ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করেছে, শ্রীলঙ্কা যদি ৪ বছর আগে তা গ্রহণ করত, তাহলে আজ শ্রীলঙ্কাকে হয়তো দেউলিয়া হতে হতো না।” –লিখেছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকশামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
Published : 1 August 2022, 12:45 PM
Updated : 1 August 2022, 12:45 PM

সরকার দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ বেশ কিছু পন্থা অবলম্বন করায় কিছু স্বার্থান্বেষী লোক নাখোশ হয়ে পড়েছেন। তারা যে বিশ্ব পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না তা নয় বরং তাদের উদ্দেশ্য একটাই, দেশ যেন শ্রীলঙ্কায় পরিণত হয়, তাহলে তারা সহজে ক্ষমতা দখল করতে পারবেন। আজ বিশ্বব্যাপী চলছে এক চরম অশান্তকর পরিস্থিতি। এটি আংশিক প্রাকৃতিক– কোভিড-১৯ রোগের কারণে, আর খানিকটা মানবসৃষ্ট– ইউক্রেইন যুদ্ধের বিষাক্ত পরিণতিতে। দুটিই বিশ্ব জনগণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কোভিড থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়ার পরই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ। এই মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের জন্য কে বা কারা দায়ী সেটি ব্যাপকভাবে বিতর্কিত বিষয় বিধায়, ওই বিষয়ে মতামত না দিয়ে বলতে হচ্ছে যে করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী এই যুদ্ধ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে গোটা পৃথিবীকে এমন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে যার কথা ভেবে স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিব সেদিন বললেন, পৃথিবীর মানুষ স্বেচ্ছামৃত্যুর দিকেই এগুচ্ছে। বিশ্বময় বিশেষজ্ঞগণ মত প্রকাশ করেছেন অনাগত দিনগুলো হবে আরো বিভীষিকাময়। কোটি কোটি মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাবে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষি ইত্যাদিতে ধস নামবে। যুদ্ধ মানব সভ্যতাকে কীভাবে ধ্বংস করতে পারে সে কথা স্পষ্ট করে বুঝিয়েছিলেন বিখ্যাত রুশ উপন্যাসিক লিও টলস্টয় তার অতীব জনপ্রিয় উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর মাধ্যমে। অতীতের মতো প্রথম এবং দ্বিতীয় মহাসমরের পরেও মানবকূল ভেসে গিয়েছিল অসহনীয় পরিস্থিতিতে। ১৯৪৩ সালে অবিভক্ত বাংলায় এক কোটির ওপর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল অনাহারে, অবশ্য তার জন্য দায়ী ছিল আধুনিক যুগে বিশ্বের অন্যতম হৃদয়হীন, অমানুষ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভারতের প্রতি ঘৃণাসূলভ নীতি।

এমন নিয়ন্ত্রণ অযোগ্য পরিস্থিতিতে প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রনায়কদের ওপর কঠোর দায়িত্ব পড়েছে নিজ নিজ দেশের বিপদ ঠেকানোর জন্য অত্যন্ত সুচিন্তিত, গবেষণাপ্রসূত এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা– তা অত্যন্ত কঠোর এবং অজনপ্রিয় হলেও। কোনো কোনো দেশ তাদের প্রজ্ঞা এবং দূরদৃষ্টি দিয়ে সফলতা অর্জন করলেও, অনেক দেশই তা পারেনি।

চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি এ ধরনের সুচিন্তিত এবং সতর্ক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার কারণে এক কালের সমৃদ্ধ শ্রীলঙ্কা আজ দেউলিয়াত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়েছে। যে সরকারই এখন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করুক না কেন, এ দেশটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ এবং দ্রুত হবে না, যে কথা স্বয়ং নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রধানরাই স্বীকার করেছেন।

পাকিস্তানের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং সে দেশের ক্ষমতা থেকে সদ্য অপসারিত ইমরান খান। বিশ্ব অর্থনীতি বিশারদগণও তাই বলছেন। জ্বালানি, খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ঊর্ধ্বমুখী অভাব দেখে পরিস্কার বোঝা যায়, শ্রীলঙ্কায় পরিণত হওয়া এ দেশটির জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে পাকিস্তানের বর্তমান বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৪৩ লক্ষ কোটি টাকা, যার ২০% নেয়া হয়েছে চীন থেকে। খুব শিগগিরই ঋণ পরিশোধের সময় এসে যাবে বলে শ্রীলঙ্কার অনুসরণে চীনের কাছে পাকিস্তান তার দেশের ভূমি বিকিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বিদেশি রাষ্ট্রের নিকট পাকিস্তানের ভূমি এবং সম্পদ বিক্রির অধিকার এবং ক্ষমতা গ্রহণ করে সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সম্প্রতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে এই সম্ভাবনা নিশ্চিত করেছেন যে তারা অচিরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য ভূমি এবং সম্পদ বিদেশিদের, বিশেষ করে চীন এবং সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাকিস্তানের মন্ত্রিপরিষদও এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোপূর্বে পাকিস্তান তাদের গোয়াদর বন্দরের কিছু অংশ চীনকে দিতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও চাপের মুখে চীনা ঋণ পরিশোধের জন্য ইসলামাবাদের একটি বিশালাকায় পার্ক সৌদি আরবের কাছে মর্টগেজ রেখে ঋণ নিয়েছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে আর প্রতি ডলারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৩০ টাকায়। সেখানেও শ্রীলঙ্কার মতো জ্বালানি, খাদ্য ও বিদ্যুৎ ঘাটতি বিরাজমান। শেষ রক্ষার চেষ্টায় দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে ধর্ণা দিচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে অভিজ্ঞজনদের মতে পাকিস্তান ছাড়াও আরও অন্তত ১২টি দেশ শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, ঘানা, ইউক্রেইন, বেলারুশ, তিউনেশিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া প্রভৃতি। এরই মধ্যে জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে, শিগগিরই বিশ্বব্যাপী দেখা দেবে চরম খাদ্যাভাব এবং ব্যাপক দুর্ভিক্ষ, অনাহারে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটবে। যে চীনের উন্নয়নের তালিকা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল, ওই চীনেই আগামীতে প্রবৃদ্ধির হার ৪.০০-এ নেমে আসবে। সেখানেও এখনই অশনি সংকেত দৃশ্যমান। ভারতের অবস্থাও অভিন্ন, তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও কমেছে।

সম্প্রতি বিলেতে গিয়ে মনে হচ্ছিল এটি ওই বিলেত নয় যেখানে আমি জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছি। মুদ্রাস্ফীতি গত কয়েক দশকে রেকর্ড ভঙ্গ করে এখন ১০%-এ দাঁড়িয়েছে। ভোজ্য তেল এবং এমনকি যানবাহনের জন্য ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মূল্য শুধু আকাশচুম্বিই হয়নি এসবের ওপর রেশনিং ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। মর্টগেজ পেমেন্টের অংক হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে, এর ফলে যারা মর্টগেজ নিয়ে বাড়ি কিনেছে, তাদের অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন। ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকার আইন করেছে সাময়িকভাবে ভাড়া দিতে অক্ষম ব্যক্তিদের উচ্ছেদ করা যাবে না। মর্টগেজের পয়সা পরিশোধ করার ব্যর্থতার কারণে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলো অনেকের বাড়ি দখল করে নিচ্ছে। ভোজ্য তেল, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি এবং বাস, ট্রেন, টিউবসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দেখে বিশ্বাসই করতে পারিনি আমি কয়েক বছর আগেও এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছি। গোটা ইউরোপে একই অবস্থা। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আরও অন্ধকারময় হতে পারে বলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রতিদিনই বলছেন। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৫ শতাংশ জ্বালানি ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান অলৌকিকভাবেই বেশ ভালো। শ্রীলঙ্কার পথে যে ১২টি দেশ এগুচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গবেষকগণ বলছেন, তাদের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতির অতি রক্ষণশীল এবং অনেকটা নেতিবাচক গবেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বেশ কয়েকটি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেও সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলেছেন, বাংলাদেশ যেসব বিদেশি ঋণ নিয়েছে তার অনেকগুলোই সাশ্রয়ী প্রকল্পের জন্য। ডলারের রিজার্ভ অনেক নেমেছে বটে কিন্তু অন্যদিকে সুসংবাদ হলো আমাদের রপ্তানি বেড়েছে আর তদুপরি বিদেশে কর্মরত বাঙালিদের পাঠানো মুদ্রা বহুলাংশেই স্থিতাবস্থায় রয়েছে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বহুবিধ পণ্য রপ্তানি তালিকাভুক্ত করেছে, যা আগে রপ্তানির চিন্তায় আসেনি। এছাড়া বিদেশে বাঙালিদের কর্মসংস্থানের বাজার বিস্তৃত করায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তেমন জটিলতা ভোগ করতে হচ্ছে না। বেশ পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন জাতিসংঘের মিশনসমূহে পদায়িত আমাদের সামরিক এবং পুলিশ বাহিনীর লোকেরা। কিন্তু তারপরও অপ্রতিরোধ্য বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এমন বহু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন যা সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য অবশ্যম্ভাবী। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় লোডশেডিং অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর ৮ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে মন্ত্রী-আমলাদের বিদেশ সফরে লাগাম টানা, সরকারি কর্মস্থলসমূহে বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং সরকারি গাড়ি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি ব্যবহারে বিধি-নিষেধ, জরুরি নয় এমন আমদানি বন্ধ করা ইত্যাদি। লোডশেডিং দেশের সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কিন্তু বৃহত্তর স্থায়ী বিপদ এড়াতে যদি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতর সাময়িক বিপদযুক্ত পন্থা গ্রহণ করতে হয়, সেটাই কি শ্রেয় নয়? আজ বাংলাদেশ যেসব ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করেছে, শ্রীলঙ্কা যদি ৪ বছর আগে তা গ্রহণ করত, তাহলে আজ শ্রীলঙ্কাকে হয়তো দেউলিয়া হতে হতো না। আজ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আবির্ভুত হয়েছে রাশিয়া থেকে জ্বালানি ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা। জ্বালানি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের অন্যতম উৎস হচ্ছে রাশিয়া যা ইউরোপসহ বহু দেশকে তেল-গ্যাস সরবরাহ করে আসছিল। রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানির ওপর অবরোধ আরোপের ফলে বাংলাদেশসহ অনেক দেশই জ্বালানি শূন্যতার অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হওয়ার পথে। ভারত অবশ্য নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয় করছে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে ভারত এমন একটি শক্তি যে এ ধরনের অবরোধ উপেক্ষা করে টিকে থাকতে পারে। কিন্তু ওই সক্ষমতা আমাদের নেই বিধায় রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয় এখন আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় আর জ্বালানি তেল-গ্যাস ছাড়া বিদ্যুতের অবাধ প্রবাহ অসম্ভব। অবশ্য সৌভাগ্যবশত বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যাপকভাবে সৌর বিদ্যুতের প্রকল্প গ্রহণের ফলে বহু জায়গাই সৌর বিদ্যুৎ দ্বারা আলোকিত রয়েছে। বিদ্যুতের অভাব যে কত কষ্টকর এবং অসহনীয় তা আমি এবং আমার দুই মেয়ে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছিলাম বহু বছর বিলেতে প্রবাস জীবন শেষ করে ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরার পর। জামায়াত-বিএনপি সরকারের শাসন আমলে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকত না, থাকত না পানিও। হঠাৎ বিলেতের আয়েশী জীবন ছেড়ে দেশে বিদ্যুতহীন এবং পানিহীন অবস্থায় পড়ে আমার দু-মেয়ে চাপ দিচ্ছিল আবার বিলেতে ফিরে যেতে। সৌভাগ্যবশত বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে আমরা নিষ্কৃতি পেয়েছি।

দেবপ্রিয় বাবু এই মর্মে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন যে, ২০২৪ সাল থেকেই আমাদের বিদেশি ঋণ পরিশোধের দায় শুরু হবে, আর প্রথম চাপটি আসবে চীন থেকে। তবে একই সাথে একথাও বলেছেন, চীন থেকে নেয়া আমাদের ঋণের অংশ ২০ শতাংশ, আর বাকিগুলো রাশিয়া এবং জাপানের। চীনের ঋণ কম হওয়াটা নিশ্চিতভাবে স্বস্তির খবর কেননা ঋণদাতা হিসাবে চীন পুরোনো যুগের অত্যাচারী জমিদার এবং কাবুলিওয়ালাদের চেয়েও নিষ্ঠুর। শ্রীলঙ্কায় আর্থিক অনটন শুরু হওয়ার সাথে সাথে, যার জন্য বহুলাংশে চীনই দায়ী বলে বিশ্বের সকল বিশেষজ্ঞই বলছেন, দেশটি চীনের সাহায্য চাইলেও চীন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। চীনের সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ পাকিস্তান পুরানো ঋণ পরিশোধ না করে নতুনভাবে ঋণ দিতে বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করলে চীন তা নাকচ করে পাকিস্তানের সমস্যা প্রকট করে দিয়েছে, যার ফলে পাকিস্তান চীনের কাছে ভূমি এবং সম্পদ বিক্রির পথ খুঁজছে। অতীতে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় শ্রীলঙ্কাকে বাধ্য করেছে তার হাম্বানটোটা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য চীনের লিজ মালিকানায় প্রদান করতে, যার ফলে ওই এলাকার একক মালিক এখন চীন। সেখানে এমনকি শ্রীলঙ্কার মানুষদেরও যাতায়াত বা বসবাসের অধিকার নেই। শ্রীলঙ্কার কৃষি ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সারের ব্যর্থতার পর রাসায়নিক সার আমদানির জন্য দেশটি চীনের দ্বারস্থ হয়ে খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হয়েছিল। আমাদের সরকার সুবিবেচকের মতো চীনের ঋণের ফাঁদে পা না দিয়ে, চীনের দেখানো টাকার বস্তার লোভ সামলিয়ে যা করেছে তা নিশ্চিতভাবে প্রশংসার দাবিদার। পদ্মা সেতুসহ গত কয়েক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে, তা বিশ্বময় বিরাজমান বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে নিশ্চয়ই আমাদের সাহায্য করবে। কিন্তু এজন্য আমাদের সাময়িক কিছু কষ্ট অবশ্যই মেনে নিতে হবে, আমার বিশ্বাস জনগণ তা বুঝতে পারছেন। একটি মহল অবশ্য মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ যেন শ্রীলঙ্কা হয়ে যায়। জনগণের দুর্ভোগ বা দেশের উন্নতির ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ক্ষমতায় যাওয়াই হলো তাদের একমাত্র ধ্যান-ধারণা। ওই কারণেই প্রধানমন্ত্রী যেসব মঙ্গলকর পন্থাসমূহ গ্রহণ করছেন তা তাদের পছন্দ নয়। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে জনগণ ভালো করেই বুঝতে পারছে সব ব্যাপারে কৃচ্ছ্রতা সাধন এখন অপরিহার্য, তাই তারা সেই দেশবিরোধী মহলের কুমতলব ঠিকই বুঝতে পারছেন। এই পরিস্থিতিতে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সেই উক্তিটি, ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ যে সকল দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে এগুচ্ছে, তাদের নেতৃবৃন্দ কবির এই লেখা আগে থেকে অনুসরণ করলে আজ তাদের পরিস্থিতি এত সংকটময় হতো না।