আজকাল পৃথিবীর অনেক দেশে তরুণরা রাজনীতিতেও সফল নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। সাম্প্রতিক এক উদাহরণ হতে পারে ফ্রান্স। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতালের বর্তমান বয়স মাত্র ৩৫ বছর। ওদিকে, নিউজিল্যান্ডে জেসিন্ডা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে।
Published : 13 Aug 2024, 04:59 PM
ছাত্রজনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে রাজনীতির পট পরিবর্তন হয়েছে। অনেক হত্যাযজ্ঞের পর বাস্তবতা মেনে নিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন; সেই সঙ্গে পতন হয়েছে তার সরকারেরও। সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সে সরকারে আছেন দুজন শিক্ষার্থীও, যারা বয়সে খুবই তরুণ। সরকারের সিনিয়র আমলাদের একাংশ এ ধরণের তরুণ নেতৃত্বের অধীনে কিভাবে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন তা নিয়ে দ্বিধায়।
দুদিন আগে আমার এক আমলা বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এই পরিবর্তন নিয়ে। বন্ধুটি অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার সরকারি কর্মকর্তা। কথায় কথায় তিনি আক্ষেপের সুরে প্রশ্ন করলেন, “এই যে দুই শিক্ষার্থী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা পদ পেলো, ওদের কাছে সিনিয়র আমলারা নথি নিয়ে যাবেন কি করে ভেবেছেন?”
খুব কিছু না ভেবেই বন্ধুকে উত্তর দিলাম, “কেন, নথি নিয়ে তাদের কাছে যেতে মন না চাইলে আমলারা তো চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন? সিনিয়র, জুনিয়র কোনো আমলাই তো সরকারি চাকরি চালিয়ে যেতে বাধ্য নন।” আমার উত্তর বন্ধুর পছন্দ হলো না; তাই, তিনি দ্রুতই প্রসঙ্গান্তর ঘটালেন।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে বসবাস করি আমি। প্রায় দু যুগ হতে চললো কানাডায়। কানাডা যাওয়ার আগে নেদারল্যান্ডে ছিলাম পড়াশোনার প্রয়োজনে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায়ও গবেষণার প্রয়োজনে থাকতে হয়েছে কিছুদিন। দেশে বুয়েট থেকে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক কোম্পানি মিলিয়ে প্রায় নয় বছর চাকরিও করেছি। কানাডায়ও টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দীর্ঘ সময় চাকরি করেছি। স্বভাবতই, বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের নানাদেশের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ-সংস্কৃতি (ওয়ার্ক কালচার) দেখার পর্যাপ্ত সুযোগ আমার হয়েছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকেই বন্ধুকে উপরের উত্তর দিয়েছি। অন্যদিকে, আমার সে বন্ধুর দেশের বাইরের কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি নিয়ে অভিজ্ঞতা নেই বলা চলে। ফলে, আমার উত্তরের ব্যাপ্তি ও গভীরতা যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে না পারাই তার পক্ষে স্বাভাবিক।
এমন প্রশ্ন শুধু আমার এ বন্ধুর নয়– এ উদ্বেগ তার মতো শত আমলার যদিও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তাদের বয়সের প্রায় অর্ধেক বা তারও কম বয়সী একপ্রকার অভিজ্ঞতাহীন টিম লিডার, সুপারভাইজার বা বসের অধীনে চাকরি করা আসলেই খুব সহজ নয় তাদের পক্ষে। কারণ, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র এতে অভ্যস্ত নয়। তবে, আমাদের দেশে এ চর্চা নতুন হলেও পৃথিবীর উন্নতদেশগুলোতে তরুণদের অধীনে বয়স্কদের চাকরি করা নতুন ঘটনা নয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এমন দৃষ্টান্ত অহরহ। সেসব দেশে কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি সিনিয়রিটি তথা বয়সের ভিত্তিতেই হতে হবে এমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তাছাড়া বাড়তি কাজের ঝামেলা এড়াতে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা পদোন্নতি নিতেও চান না। এমন একাধিক দৃষ্টান্ত আমি কর্মক্ষেত্রে দেখেছি।
কেবল চাকরিক্ষেত্রে নয়, আজকাল পৃথিবীর অনেক দেশে তরুণরা রাজনীতিতেও সফল নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। সাম্প্রতিক এক উদাহরণ হতে পারে ফ্রান্স। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতালের বর্তমান বয়স মাত্র ৩৫ বছর। ওদিকে, নিউজিল্যান্ডে জেসিন্ডা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে। এমন নজির এক বা দুটি নয়, অনেক। এসব তরুণ রাষ্ট্র প্রধানদের অধীনে সেদেশের আমলাদের দায়িত্বপালনে বিশেষ সমস্যা হয়েছে বলে আমরা কখনো শুনিনি।
তবে এও সত্য, দীর্ঘকাল ধরে যারা কর্মরত, তাদের কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যাদির মুখোমুখি হওয়া ও তার সমাধান খুঁজে বের করার অভিজ্ঞতাও তুলনামূলকভাবে বেশি। অন্যদিকে, তরুণরা আধুনিক ধ্যানধারণা, কর্মক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানের নবতর পন্থা ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে পুরোনোদের চেয়ে বহুগুণে বেশি এগিয়ে। এ দুয়ের মেলবন্ধন ঘটানোর উপযোগী পরিবেশ তৈরি সম্ভব হলে বয়সে প্রবীণ কর্মচারীরাও বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীনদের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
উন্নতদেশগুলোতে কিভাবে অফিস আদালতে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় তা থেকে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা সহভাগ করার প্রয়াস পেয়েছি এ নিবন্ধে। ছোটখাট অথচ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সচেতনতা এনে দিতে পারে কর্মক্ষেত্রে আপনার সাফল্য। পরিবর্তিত কর্মপরিবেশে যারা অপেক্ষাকৃত তরুণদের অধীনে অফিস আদালতে দায়িত্বপালন করবেন নিচের আলোচনা কিছুমাত্র হলেও তাদের কাজে লাগবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
এক. বয়সে তরুণ বলেই আপনার সুপারভাইজার বা বসকে অনভিজ্ঞ ধরে নেবেন না। কেননা, বয়স সবসময় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাপকাঠি নয়। বয়স্ক ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী বা অভিজ্ঞ হলে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি হতেন এ মুহূর্তে বেঁচে থাকা সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটি। বাস্তবতা কিন্তু তা নয়। আপনাকে নতুন ধারণা ও জ্ঞান অর্জনের বিষয়টি ওপেন মাইন্ড বা খোলা মনে গ্রহণ করতে হবে। বয়সে আপনার চেয়ে তরুণ কেউও যে কর্মক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল হতে পারেন তা আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে, এবং নির্দ্বিধায় তাদের পরামর্শ গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
দুই. আপনার তরুণ সুপারভাইজারের সঙ্গে আপনার কোনপ্রকার কম্যুনিকেশন গ্যাপ বা যোগাযোগের ফারাক তৈরি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সফল হতে টিম লিডারের সঙ্গে ইফেক্টিভ কম্যুনিকেশন বা কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন অত্যাবশ্যক। অন্যথায়, অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে সফলতালাভ সম্ভব নয়। আপনি যেমন আপনার বসের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য, ঠিক তেমনই, আপনার বসও তার উপরের পর্যায়ে জবাবদিহি করতে বাধ্য। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়লে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সুপারভাইজার তরুণ বলে যাতে চেইন অব কমান্ডে এর কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনে আপনাকে আপনার সুপারভাইজারের সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসে আপনার বিশেষ কোন প্রশ্ন থাকলে তার উত্তর জেনে নিতে হবে। সেলক্ষ্যে বয়সের ব্যবধান ভুলে গিয়ে তার পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনে তা পুরোপুরি অনুধাবনের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে আপনাকে।
তিন. প্রথম সাক্ষাতেই আপনার তরুণ সুপারভাইজারকে আপনার জীবনে অর্জিত বিপুল অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে নিজেকে সুপিরিয়র বা শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ভুলেও নেবেন না। এতে বুমেরাং হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ অধঃস্তন হিসেবে আপনি অবশ্যই আপনার মূল্যবান অভিজ্ঞতা সুপারভাইজারের সঙ্গে শেয়ার করবেন; তবে, তা হতে হবে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনে। সুপারভাইজারের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা বা তার দোষত্রুটি ধরে তা শোধরে দেবার বিষয়টি যেন অন্য কলিগদের সম্মুখে দৃষ্টিকটুভাবে না করেন। তাতে তিনি বিব্রতবোধ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ তাকে বিষয়টি জানাতে পারেন এভাবে: “অমুক বিষয়ে আমার একটু ভিন্নমত আছে, যা আপনি অনুমতি দিলে শেয়ার করতে পারি।” অথবা বলতে পারেন, “অমুক সমস্যা আমি হলে এভাবে সমাধান করতাম।” কখনোই বলবেন না, “অমুক বিষয়ে আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নিচ্ছেন।” এভাবে, বসের সঙ্গে সম্মানজনক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে তাকে সরাসরি আঘাত না করেও আপনি আপনার মূল্যবান অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কর্মক্ষেত্রের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
চার. তরুণরা কারিগরি ও প্রযুক্তিজ্ঞানে প্রবীণদের চেয়ে বহুগুণে এগিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সী সন্তান ট্যাবলেট, আইফোন বা কম্পিউটার যেভাবে ব্যবহার করতে জানে আপনি সম্ভবত তার সিকিভাগও জানেন না। আপনার সুপারভাইজার বয়সে তরুণ হলে এমন কথা তার ক্ষেত্রেও খাটে। এমন অবস্থার উন্নয়ন করতে হলে আপনাকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে আপনাকে পেশাগত উন্নয়নের (প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট) ট্রেনিং নিতে হতে পারে। আজকাল ইন্টারনেটের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেও অনেক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়। নিজের পেশাগত উন্নয়নের পদক্ষেপ না নিয়ে আপনি পুরোনো ধ্যানধারণা বা পন্থা আঁকড়ে ধরতে চাইলে আজকের যুগের প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বেন। কেবল তথ্য প্রযুক্তি বলে কথা নয়, প্রকল্প ব্যবস্থাপনায়ও বর্তমান সময়ের নতুন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তির সঙ্গে আপনার জ্ঞান হালনাগাদ করতে হবে। অন্যথায়, আপনার তরুণ সুপারভাইজারের কাছে আপনি গুরুত্ব হারাবেন।
পাঁচ. বয়সে তরুণ সুপারভাইজারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। হতে পারে অভিজ্ঞতার অভাবে তিনি সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্তটি নিতে বা দিতে পারেননি। সেক্ষেত্রে, তিনি যাতে বিব্রতবোধ না করেন এমন উপায়ে আপনার পরামর্শ বা বিকল্প চিন্তা তার সঙ্গে শেয়ার করুন। পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার ধরন ভিন্ন হতে পারে। স্থান-কাল-পাত্র উপযোগী যুৎসই পদক্ষেপ আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। আপনার মনে নতুন কোন আউডিয়া বা ধারণা থাকলে তা সরাসরি আপনার সুপারভাইজারকে বলুন। তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে এ জাতীয় বক্তব্য বা ম্যাসেজ বসের কানে দিলে তিনি তা পছন্দ নাও করতে পারেন। তাছাড়া, আপনি যেভাবে একটা বিষয় তার কাছে তুলে ধরবেন তৃতীয় পক্ষের উপস্থাপনা হুবহু তা নাও হতে পারে। তাই, বসকে যা বলার সুযোগ বুঝে আপনি নিজেই বলুন। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন আপনার সুপারভাইজার বুঝতে পারেন আপনি স্রেফ পাণ্ডিত্য জাহির করতে চাইছেন না, বা তার ভুল ধরতে চাইছেন না; বরং, তাকে একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো কার্যকরভাবে সহায়তা দিতে চাইছেন।
ছয়. আপনার তরুণ সুপারভাইজার কোন পদ্ধতিতে বা কিভাবে আপনার সঙ্গে কাজের ব্যাপারে যোগাযোগে আগ্রহী তা ভালোমতো জেনে নিন। যেমন, অনেকে টেলিফোনে আলোচনার চেয়ে ইমেইল যোগাযোগ, বা সরাসরি সাক্ষাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তেমনক্ষেত্রে, আপনার পছন্দও তার সঙ্গে মেলানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ইমেইল যোগাযোগে খুব বেশি অভ্যস্ত না হলে আপনি তা শিখে নেবার প্রয়াস চালাতে পারেন। তা না করে আপনি আপনার পুরোনো দিনের যোগাযোগের প্রক্রিয়া আঁকড়ে ধরতে চাইলে আপনার সুপারভাইজার তা পছন্দ নাও করতে পারেন। মোটকথা, তার সঙ্গে কম্যুনিকেশনের ব্যাপারে আপনাকে যথাসম্ভব নমনীয় হতে হবে যাতে তিনি কাঠখড় না পুড়িয়ে আপনার সঙ্গে দাপ্তরিক বিষয়ে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।
সাত. বয়সে প্রবীণরা নিজেদের প্রশংসা শুনে যতটা মজা পান এ যুগের তরুণরা ততটা না। ইন্টারনেট, তথ্য প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রভাবে তারা ভিত্তিহীন প্রশংসার চেয়েও যোগ্যতাকে বেশি মূল্য দিয়ে থাকেন। তাই, তরুণদের অযাচিত প্রশংসা করে মন জয়ের চেষ্টায় না যাওয়াই উত্তম। হুজুরের কথা মনে পড়ায় পুকুরের প্রথম ইলিশ মাছটি তার কাছে নিয়ে গেছেন অধঃস্তন কর্মচারী, এমন আজগুবি গল্প আজকের তরুণরা শুনতে চায় না; তারা কাজে বিশ্বাসী। ক্ষেত্রবিশেষে, আপনি আপনার তরুণ বসের আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, প্রযুক্তিজ্ঞান, নেতৃত্বগুণ বা অন্যান্য দক্ষতার পরিমিত প্রশংসা করতে পারেন, তবে তা যেন কোনভাবেই মান্ধাতার আমলের তৈলমর্দন বিবেচিত না হয়।
আট. আপনি যখন আপনার তরুণ সুপারভাইজারের সঙ্গে কাজ করবেন তখন তার বয়স বা অভিজ্ঞতার বিষয়টি ভুলে গিয়ে কাজে মনোযোগ দেবেন শতভাগ। তা না করে আপনি সুপারভাইজারের বয়স বিবেচনায় মনোনিবেশ করলে আপনার কাজের পারফরমেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে, আপনার সর্বোত্তমটি আপনি কর্মক্ষেত্রে দিতে পারবেন না। আপনাকে মনে রাখতে হবে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ বিবেচনা করেই তরুণ সুপারভাইজারকে আপনার নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, অকারণে নয়। কাজেই, বয়সে তরুণ হওয়ায় কারণে অকারণে তাকে চ্যালেঞ্জ করার মানসিকতা আপনাকে পরিহার করতে হবে।
উন্নতদেশের কর্মক্ষেত্রে সিনিয়র কর্মকর্তারদেরও জুনিয়রদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে দেখেছি। বাংলাদেশে এ ধারা সচরাচর লক্ষ্য করা যায় না। এমনও দেখা যায়, জুনিয়র কেউ সিনিয়রকে সালাম দিলে তিনি তার জবাবও যথাযথভাবে দেন না, বা ক্ষেত্রবিশেষে, সিনিয়ররা সিনিয়রিটি দেখাতে গিয়ে জুনিয়রদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দুর্ব্যবহার করেন। এ ব্যবধানটি ঘোচানো একান্ত প্রয়োজন। কেননা, সিনিয়র-জুনিয়রের মাঝে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় থাকলে কর্মদক্ষতাগুণে বা ভিন্ন কারণে কোন জুনিয়র পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র হয়ে গেলে তার অধীনে কাজ করতে অস্বস্তিতে পড়তে হয় না।
সবশেষে বলবো, প্রজন্মগত পার্থক্য বা বয়সের ফারাক ভুলে গিয়ে আপনার তরুণ সুপারভাইজারের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ, বা কর্মক্ষেত্রের উপযোগী সম্পর্ক স্থাপনে সচেষ্ট হন। উপযুক্ত পরিবেশে আপনি আপনার তরুণ সুপারভাইজারের আগ্রহ ও শখ সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন, এবং তার বয়সে আপনার কি পছন্দ-অপছন্দ ছিল তাও শেয়ার করতে পারেন। সুযোগমতো আপনার অতীত কাজের অভিজ্ঞতা, ছাত্রজীবন, ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে, কেবল বক্তা নয়, মনোযোগী শ্রোতাও হতে হবে আপনাকে। তার কোন অভিজ্ঞতা বা ঘটনা শেয়ার করতে চাইলে তাও গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। নতুন প্রজন্মের ঢালাও সমালোচনাও আপনাকে পরিহার করতে হবে। অন্যথায়, আপনার বস ধরে নিতে পারেন আপনি প্রকারান্তরে তাঁরই সমালোচনা করছেন। বয়সে তরুণ সুপারভাইজারের অধীনে কাজ করা বয়স্কদের জন্য আসলেই কঠিন। সেক্ষেত্রে, হাল ছেড়ে না দিয়ে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার উপায় খুঁজে বের করাই বুদ্ধির পরিচয়। তাতে আপনি এবং আপনার প্রতিষ্ঠান, দুই-ই লাভবান হবে।