কাগজের টাকা, ফিয়াট মানি এবং সরকারের ছাপাবাজি

কাগজের টাকা স্বর্ণের চেয়ে হালকা বলে এর বহনযোগ্যতা বেশি, কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা কম। কারণ, কাগজের টাকা সহজেই এবং ইচ্ছেমতো ছাপানো যায়।

শিশির ভট্টাচার্য্যশিশির ভট্টাচার্য্য
Published : 26 Oct 2022, 10:32 AM
Updated : 26 Oct 2022, 10:32 AM

মার্কো পোলোর চীন ভ্রমণকাহিনীতে কুবলাই খানের টাকার গল্প আছে। একটি বিশেষ গাছের ছালের ওপর ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকা লিখে তার ওপর খানের টাকশালের একাধিক কর্মকর্তার কালো রঙের সিল এবং সবার শেষে লাল কালিতে টাকশাল-প্রধানের সিল থাকলেই টাকা তৈরির কাজ শেষ। খানের সুবিশাল মোঙ্গল সাম্রাজ্যজুড়ে এই টাকা চলত। বাইরের কেউ, ধরা যাক, ভারত থেকে কোনো ব্যবসায়ী মণিমুক্তা বিক্রি করতে এলেন চীনে– সেই মণিমুক্তা খান ছাড়া অন্য কারও কেনার অনুমতি ছিল না। অন্য কারও কাছে বিক্রি করা লাভজনকও ছিল না, কারণ খানের মতো দাম কেউই দিত না।

মণিমুক্তার বিনিময়ে পাওয়া খানের গাছের ছালের টাকা দিয়ে চীনের পণ্য কিনে দেশে ফিরতেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। কারও টাকা যদি ছিঁড়ে যেত, তবে খানের টাকশালে গিয়ে নতুন নোট সংগ্রহ করা যেত, অল্প কিছু ভর্তুকি দিয়ে। ভালোই চলছিল অর্থনীতি, কিন্তু টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়াতে কিংবা হয়তো টাকা দেদার নকল হওয়াতে খানের টাকার দাম কমে গিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ শুরু হতে দেরি হয়নি। হারারি তার ‘সাপিয়েন্স’ পুস্তকে লিখেছেন, চীনের ইতিহাসে নাকি অনুরূপ ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে।

সরকারগুলো একেবারে প্রথম যখন কাগজের মুদ্রা চালু করেছিল, তখন তার বিপরীতে স্বর্ণ মজুত রেখেই তা চালু করেছিল। কাগজের মুদ্রার বিপরীতে যদি স্বর্ণ মজুত থাকে, তবে মুদ্রার মাধ্যম স্বর্ণ থাকল, রৌপ্য থাকল, নাকি কাগজ, তাতে বিশেষ কিছু যায় আসে না। কাগজের মুদ্রার পরিমাণ যদি সীমাতিরিক্ত না হয়, সেক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতি হবে না। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন মুদ্রা অতিরিক্ত ‘মুদ্রিত’ হয়ে যায়। কী পরিমাণ মুদ্রা বাজারে থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে, তা হিসাব করা সহজ নয়, তবে অর্থনীতিতে Q(uantity) x P(rice) = M(oney) x V(elocity)– হাজার দুই বছরের পুরনো একটা সূত্র আছে। চীনারাই নাকি এর আবিষ্কারক। এখানে Q আর P হচ্ছে যথাক্রমে পণ্যের পরিমাণ এবং মূল্য, M আর V হচ্ছে যথাক্রমে মুদ্রার পরিমাণ এবং হাত বদলের সংখ্যা।

পুনর্জাগরণের যুগে স্বর্ণের সরবরাহ কম ছিল, কারণ অর্থনীতি যেভাবে বাড়ছিল, স্বর্ণের সরবরাহ সেভাবে বাড়ছিল না। যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের (Q x P) তুলনায় টাকার সরবরাহ কম থাকে, সেক্ষেত্রেও টাকার দাম অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের তথা অর্থনীতির ক্ষতি হয়। ইতালির মেডিচি ও অন্যান্য ব্যাবসায়ীরা এর সমাধান করেছিলেন ব্যাংক নোটের মাধ্যমে। ‘চাহিবামাত্র বাহককে ৫০,০০০ ফ্লোরিন প্রদান করিব’ লিখে তার নিচে মেডিচির স্বাক্ষর দেওয়া কাগজ এবং কোনো টাকার থলিতে নগদ পঞ্চাশ হাজার ফ্লোরিনের দাম সমান। এই কাগজ বার বার হাত বদল হয়ে মুদ্রার হাতবদল, আবর্তনযোগ্যতা বা ভেলোসিটি বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

এক সময় পুনর্জাগরণ যুগের অর্থনীতির বর্ধনশীলতার সঙ্গে স্বর্ণমুদ্রার সরবরাহ তাল মেলাতে পারছিল না। অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল, কারণ, ওপরে যেমনটা বলেছি, প্রয়োজনের চেয়ে কম মুদ্রা বাজারে থাকাও অর্থনীতির জন্যে ভালো নয়। এদিকে ইউরোপের স্বর্ণমুদ্রার একটা বড় অংশ সিল্করোড হয়ে চলে যাচ্ছিল এশিয়ায়– মশলা, সিল্ক ইত্যাদি কিনে আনতে। উজানে বলা হয়েছে, মুশকিল আসান করতে কলম্বাস প্রমুখ নাবিকেরা আমেরিকায় গিয়ে জাহাজ ভরে স্বর্ণ নিয়ে আসলেন (আমরা জানি, তাদেরকে মূলত পাঠানো হয়েছিল ভারতবর্ষে, উদ্দেশ্য অবশ্য একই ছিল– স্বর্ণসংগ্রহ)। যাই হোক, এত স্বর্ণ তারা নিয়ে এসেছিলন যে বাজারে স্বর্ণমুদ্রার পরিমাণ বেড়ে গেল প্রায় দশগুণ। পরিমাণ বেড়ে গেলে টাকার ক্রয়ক্ষমতা যেহেতু কমে যায়, সেহেতু কিছু দিন পর মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়েছিল পুনর্জাগরণ যুগের ইউরোপে।

টাকার পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে টাকার মূল্যহ্রাসের এই অমোঘ সম্পর্কের কথা বিংশ শতকের সরকারগুলো জানত, কিন্তু মানত না, কারণ, ইচ্ছেমতো টাকা ছাপানোর ক্ষমতা মানে বাড়ির উঠানে একটা টাকার গাছ থাকা। এমন একটা গাছের লোভ ব্যক্তি বা সরকার কে-ইবা সামলাতে পারে! সরকারের আয় বলতে তো জনগণের কাছ থেকে আসা আয়কর। ওই আয়কর ঠিকঠাকমতো আদায় করা আমাদের যুগেও কঠিন, আগের যুগে কঠিনতর ছিল। তার চেয়ে প্রয়োজন হলেই কিছু টাকা ছাপিয়ে নেওয়া অনেক সহজ নয় কি?

পৃথিবীর সব দেশে এখন কাগজের টাকা। এক সময় ১০০ টাকা বাজারে ছাড়লে ত্রিশ টাকার সমমানের স্বর্ণ বা বৈদেশিক মুদ্রা সরকারের তহবিলে জমা রাখার নিয়ম ছিল। ১৯৭১ সালে ওই নিয়ম বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং স্যাম চাচাকে অনুসরণ করে ধীরে ধীরে পৃথিবীর বাকি সব সরকার। এই নতুন মুদ্রার নাম ‘ফিয়াট মানি’। ‘ফিয়াট’ শব্দের সঙ্গে ফরাসি ক্রিয়া ‘ফ্যার’ অর্থাৎ ‘করা’ বা ‘বানানো’ এবং সংস্কৃত ‘ভূ’ অর্থাৎ ‘হও’ ধাতুর ব্যুৎপত্তিগত সম্পর্ক আছে। এর মানে হচ্ছে, স্রেফ সরকার সৃষ্টি করছে, বানাচ্ছে বলেই এগুলো মুদ্রা।

ব্যাংকনোট একটি কাগজমাত্র এবং যে কোনো ব্যাংক ইচ্ছা করলেই ব্যাংকনোট দিতে পারে। ধরা যাক, একটি ব্যাংক শ খানেক খদ্দেরের প্রত্যেককে ১ লক্ষ পাউন্ড-স্টার্লিং মূল্যমানের ব্যাংকনোট দিয়ে দিল, নির্দিষ্ট ফি নিয়ে। ব্যাংকের ভল্টে এক কোটি পাউন্ড-স্টার্লিং মূল্যের স্বর্ণ আছে কি নেই, কে দেখতে যাবে! খদ্দেরদের কেউ ওই পরিমাণ স্বর্ণ নিতেও আসবে না, তার দরকার ঋণ পরিশোধ করার, সেটা ব্যাংকনোট দিয়েই হোক কিংবা অন্য যেভাবেই হোক। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে বাজারে যে পরিমাণ কাগুজে পাউন্ড-স্টার্লিং চলমান ছিল, তার অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ ছিল মজুত স্বর্ণ। এক্ষেত্রে পাউন্ড স্টার্লিং-এর অবস্থা দাঁড়িয়েছিল অনেকটা এখনকার সরকারের ফিয়াট মানির মতোই।

সরকারের ছাপানো প্রতিটি নোট মূলত একেকটি ঋণপত্র, যার প্রমাণ প্রতিটি নোটের ওপর লেখা থাকে, ‘চাহিবামাত্র বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে!’ কী দিতে বাধ্য থাকিবে, স্বর্ণ, রৌপ্য নাকি বৈদেশিক মুদ্রা– তা কিন্তু খোলসা করে বলা হয় না। এক সময় কথাটা সত্য ছিল বটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গেলে টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য পাওয়া যেত বটে। কিন্তু এখন এটা ডাহা মিথ্যা কথা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষার প্রয়াত অধ্যাপক ও কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের কাছে শোনা একটি গল্প বলি। একদিন সকালে দেখা গেল, শত শত ভিখিরি এক বাবুর বাড়ির সামনে সানকি হাতে বসে আছে। ‘কী ব্যাপার!’ জিগ্যেস করাতে এক ভিখিরি বাড়ির নেমপ্লেটের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করল– ‘দেবেন বোস’। ‘বাবু দেবেন বলেছেন, বোসতে বলেছেন। কিছু পাবার আশায় সকাল থেকে বসে আছি!’ পৃথিবীর প্রতিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন দেবেন বোসের বাড়ি। ওই বাড়ির সামনে নোটের গোছা নিয়ে যতদিন খুশি বসে থাকতে পারেন, বাবু কখনও টাকার মূল্য পরিশোধ করতে দরজা খুলে দেখা দেবেন না।

একটি শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক সমাজ এবং সচেতন মিডিয়া হয়তো ব্যাংক এবং সরকার কী পরিমাণ টাকা ‘সৃষ্টি’ করছে, তার ওপর নজর রাখলেও রাখতে পারে। কিন্তু কোনো সরকার জনগণ ও মিডিয়াকে এ কাজটি করতে দেবে না। নজরদারির সেই গরজ কিংবা সামষ্টিক অর্থনীতির সেই শিক্ষাও মিডিয়ার লোকজনের আছে কিনা, সেটাও প্রশ্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যখন হ্যাকাররা লোপাট করে দিল, কারা এর জন্য আসলেই দায়ী, সেটা আজ পর্যন্ত মিডিয়া জানাতে পারেনি বা সরকার মিডিয়াকে জানাতে দেয়নি। অন্যদিকে কী পরিমাণ টাকা আসলেই ছাপানো হচ্ছে, সেই তথ্য গোপনই থেকে যায়, সেটা বাংলাদেশেই হোক কিংবা আমেরিকায়। কাগজের টাকা যেহেতু কারও পরিশ্রমের ফসলও নয়, এ টাকা বানানোও তেমন কঠিন নয়, অন্ততপক্ষে রূপা বা সোনার তুলনায় তো বটেই, সেহেতু এর পরিমাণ সরকার কিংবা জালিয়াতেরা ইচ্ছে করলেই বাড়াতে পারে।

১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের প্রতিটি যুদ্ধমান সরকার স্বর্ণমুদ্রামান বাতিল করে ফিয়াট মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছিল। যুদ্ধের সময় সরকারগুলো ফিয়াট মানি পছন্দ করে, কারণ স্বর্ণমুদ্রা ইচ্ছেমতো ঢালাই করা যায় না, কাগজের টাকা যুদ্ধের সময় হুটহাট দরকার হলেই ইচ্ছেমতো ছাপানো যায়। কিন্তু যুদ্ধের সময়েই ফিয়াট মানি দুইভাবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে। একদিকে অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, অন্যদিকে টাকা ছাপানোর এই ক্ষমতা থাকার কারণেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়। তুচ্ছ কারণে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চার বছর স্থায়ী হয়েছিল, কারণ সরকারগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যাবার মতো টাকা ছাপিয়ে নিতে পারছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবার কারণও ওই একটাই– মুদ্রার সহজলভ্যতা। স্বর্ণমুদ্রার যুগে যুদ্ধ স্থায়ী হতো কয়েক সপ্তাহ বা খুব বেশি হলে কয়েক মাস, কারণ বেশিদিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, ওই অর্থ সরকারগুলোর কাছে থাকত না।

যুদ্ধ চলাকালীন মানুষ অর্থনীতির ব্যাপারটা খুব একটা খেয়াল করে না, কারণ পৈত্রিক প্রাণ বাঁচাতে তারা ব্যস্ত থাকে। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোল থেমে যাবার পর মন্দার প্রভাব বেশ কড়াভাবেই অনুভূত হতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে টাকার প্রয়োজন হচ্ছিল নির্মাণকাজ চালিয়ে যাবার জন্যে। শিল্পকারখানা-কৃষিপণ্য ধ্বংস হয়ে Q-এর পরিমাণ কম ছিল বলে P বেশি ছিল, এদিকে মানুষ পণ্য কিনতে পারছিল না বলে V কম ছিল। অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে যা হবার তাই হয়েছিল, M-এর পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে টাকার মূল্য শূন্যের পর্যায়ে নেমে এসেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের টাকার বিন্দুমাত্র দাম ছিল না। মার্কের পরিবর্তে জার্মানিতে তখন সিগারেট মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন!’ ১৯৭১ সালের পর থেকে সরকারগুলো চাইলেই টাকা ছাপাতে পারে এবং তাই ছাপাচ্ছে তারা। একদিকে মার্কিন সরকার তার ইচ্ছেমতো ডলার ছাপিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া এমন চমৎকারভাবে মার্কিন ডলার নকল করছে যে তাদের ডলারকে বলা হচ্ছে ‘সুপার ডলার’। এর মানে, আসল হোক কিংবা নকল, ডলারের পরিমাণ মানুষের ইচ্ছেমতো বাড়ানো হচ্ছে।

সরবরাহ যদি বাড়ানো হয়, তবে কি ডলারের দাম বা ক্রয়ক্ষমতা কমে না? কমারই কথা– যত বেশি টাকা ছাপানো হবে, ততই কমবে টাকার ক্রয়ক্ষমতা বা টাকার দাম। বাংলাদেশের মতো দেশ যাদের সঞ্চিত অর্থসম্পদ বা রিজার্ভের বৃহত্তম অংশ সম্ভবত রাখা আছে আমেরিকায়, মার্কিন ডলারে, তারা তাদের টাকা হারাচ্ছে তিন ভাবে। কিছুদিন আগে ফিলিপাইনের হ্যাকাররা বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে কয়েক লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছিল। এভাবে চুরি যাওয়ার ভয় তো রয়েছেই, কিন্তু এ ছাড়া আরও কমপক্ষে দুই কারণে আমাদের টাকার দাম কমছে। প্রথমত, টাকার নিশ্চয়তা প্রদানকারী রিজার্ভমুদ্রা ডলারের দাম কমে যাচ্ছে মার্কিন সরকার এবং জালিয়াতদের কারণে এবং দ্বিতীয়ত, দেদার টাকা ছাপানোর কারণে বাংলাদেশের নিজস্ব টাকার দামও কমছে।

কাগজের টাকা স্বর্ণের চেয়ে হালকা বলে এর বহনযোগ্যতা বেশি, কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা কম। কারণ, কাগজের টাকা সহজেই এবং ইচ্ছেমতো ছাপানো যায়। কোনো জিনিসের দাম বেশি হতে হলে এর চাহিদা বেশি এবং সরবরাহ কম থাকতে হবে। উজানেও বলেছি, আপনার উঠানে যদি টাকার গাছ থাকে, তবে সে টাকার দাম থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং ‘নেপোয় মারে দৈ!’ ‘কোম্পানিকা মাল দরিয়ামে ঢাল!’ যে টাকা ব্যাংকে জমা আছে ভেবে আপনি নিশ্চিত হয়ে আছেন, তার দাম কমছে প্রতিনিয়ত, যার মানে হচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে আপনি গরীব হচ্ছেন, যখন ঘুমিয়ে আছেন তখনও।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের কয়েক দশকের তুলনায় ৩৫০ গুণ বেশি ডলার ছাপিয়েছে– ১৮ ট্রিলিয়ন। অতিরিক্ত ডলারের কারণে সারা পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। ইউক্রেইন যুদ্ধ বাঁধিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার আভ্যন্তরীণ বাজারের মুদ্রাস্ফীতি রপ্তানি করেছে বিদেশে। গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এসেছিল কোভিড বিপর্যয়। মন্দার কারণে গরীব দেশগুলোর রপ্তানি ও আয় কমে গিয়ে তাদের আভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। মন্দা শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে এবং এই মন্দা সামাল কোনোমতেই দেওয়া যাবে না। সব মিলিয়ে এমন একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেইন যুদ্ধ তো আছেই, আরও বেশ কিছু যুদ্ধ ছাড়া হয়তো মানুষের মনোযোগ মন্দা থেকে অন্যদিকে নেবার উপায় নেই। এই কঠিন সময়ে ব্যক্তি এবং সরকার উভয়কেই সতর্ক, অতি সতর্ক থাকতে হবে!