Published : 14 Aug 2021, 07:34 PM
সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিস্ময়কর বিজয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে অপ্রত্যাশিত এবং অভাবিত ছিল। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, এই তথ্য পাকিস্তানিদের কাছে থাকলে নির্বাচনটি নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের যথেষ্ট কারণ আছে। আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অনীহার বিষয়টি রাজনীতি সচেতন মহলে খুব অস্পষ্ট ছিল বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভালো করবে কিন্তু সেটা যে সরকার গঠনের মতো ভালো হবে, সেটা বুঝতে পারলে নির্বাচন ভণ্ডুল করার ব্যবস্থা হয়তো করা হতো।
আমরা যারা তখন তরুণ রাজনৈতিক কর্মী, কিন্তু আওয়ামী লীগ করিনি, তারা তো দূরের কথা, আমাদের নেতাদের কাছেও সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয়ের বিষয়টি খুব হিসাবে বা বিবেচনায় ছিল বলে আমার অন্তত মনে হয়নি। যারা আওয়ামী লীগ করতেন তারা হয়তো জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন, তবে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে মাত্র দুইটি আসন ছাড়া বাকি সব আসন আওয়ামী লীগের দখলে যাবে, এতটা হয়তো তারাও আশা করেননি। প্রসঙ্গত কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলা যেতে পারে। আমার নিজের নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ ছাড়াও একাধিক প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে অন্য প্রার্থীরা হয়তো অধিক যোগ্যতরও ছিলেন। আমরা ছিলাম ন্যাপের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম রহমানের পক্ষে। তিনি ছিলেন একজন ঝানু রাজনীতিবিদ। নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেননি। জিতেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। সেজন্য স্বাভাবিক ভাবে আমাদের কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। আমরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দিতে বলিনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও আমাদের এলাকায় ন্যাপের চেয়ে ভালো ছিল না। তবে নির্বাচনী প্রচারের সময়ই আমরা টের পেয়েছিলাম যে, নৌকার পক্ষে একটি স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ার তৈরি হয়েছে। মানুষ প্রার্থী দেখে নয়, মার্কা দেখে ভোট দিতে প্রস্তুত হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে নৌকা।
এখন আমার মনে হয়, কীভাবে সেসময় এটা সম্ভব হয়েছিল? প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের মানুষ কীভাবে, কার আহ্বানে অমন করে নৌকার পেছনে কাতারবন্দি হয়েছিল? তখন তো এখনকার মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা ছিল না। আমরা ন্যাপের পক্ষ থেকে কত পরিকল্পিতভাবে মানুষের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করেছি। উঠোন বৈঠক, পাড়া বৈঠক, হাটসভা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা ন্যাপের বক্তব্য মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগ এসবের কিছুই করেনি। তারপরও মানুষ ন্যাপের দিকে না ঝুঁকে আওয়ামী লীগের দিকেই ঝুঁকেছে।
এত বছর পরে সত্তরের নির্বাচনের ফল নিয়ে ভাবতে বসে মনে হচ্ছে, আমরা আওয়ামী লীগ না করলেও মনে মনে হয়তো আওয়ামী লীগের জয়ই প্রত্যাশা করেছিলাম। সেজন্যই আমাদের প্রার্থীর পরাজয় এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় আমাদের অনেককেই অখুশি না করে উৎফুল্ল করছিল। আমরা যেন মনে মনে চাইছিলাম, আমাদের এলাকায় আমাদের প্রার্থী জিতুক আর সারাদেশে জিতুক আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে গিয়েছিল। আমাদের প্রার্থীর ছোট ভাই মোহাম্মদ সুলতান, যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির কট্টর সমালোচক এবং ব্যক্তিগত ভাবে শেখ মুজিবের প্রতিও যার বীতরাগ গোপন ছিল না, তিনিও সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছিলেন এই বলে যে, শেখ মুজিব যদি ক্ষমতায় গিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন তাহলে কমিউনিস্টরা মুক্ত পরিবেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। কমিউনিস্ট বলতে তিনি তখন মস্কো এবং পিকিংপন্থি– দুই গ্রুপকেই বুঝিয়েছিলেন কি না সে প্রশ্ন তখন অবশ্য করা হয়নি। তবে তিনি ছিলেন পিকিংপন্থি এবং মস্কো লাইনের ঘোরতর বিরোধী। তবে আমাদের সামনে যেহেতু বলেছিলেন, তাই ধরে নেওয়া যায় মস্কোপন্থিদেরও তিনি বাদ দেননি।
মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন এদেশের ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি। ১৯৫২-এর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সময়ের দাবি পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখেই জন্ম হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের। এদেশে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের পাশাপাশি বাম-প্রগতিশীল চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে ছাত্র ইউনিয়নের অবদান একক সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি। আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু তাতে ইতিহাসের সত্য বদলাবে না। মোহাম্মদ সুলতানের আরেকটি বড় কীর্তি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশের প্রথম সংকলন 'একুশে ফেব্রুয়ারী'র প্রকাশক ছিলেন তিনি। এই সংকলনের রাজনৈতিক-সাহিত্যিক-সামাজিক গুরুত্ব এককথায় অপরিসীম। সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে, বিশেষ করে চীনপন্থার অনুসারী হয়ে মোহাম্মদ সুলতান তার মেধার অপচয় ঘটিয়েছেন বলে আমি মনে করি। প্রখর রাজনৈতিক জ্ঞানের অধিকারী হলেও সাধারণ মানুষের মন-মেজাজ বোঝার ক্ষেত্রে তার ঘাটতি ছিল বলেই তিনি রাজনীতির মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। মেধা অনুযায়ী রাজনীতিতে তার যে জায়গা হওয়ার কথা, সেটা হয়নি মূলত তার অবস্থানের জন্যই। বামপন্থিরা গাড়ির আগে ঘোড়া না জুড়ে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়তে গিয়ে সময় ব্যয় করেছেন, সুফল পাননি।
তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করব যা মোহাম্মদ সুলতানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা বোঝার জন্য সহায়ক হতে পারে।
ঘটনা এক
সত্তরের নির্বাচনী প্রচারে মোহাম্মদ সুলতানের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গ্রামে অনেকগুলো বাড়িতে আমি গিয়েছি। তিনি মানুষের সামনে ন্যাপের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পক্ষে যেসব যুক্তি তুলে ধরতেন, সেগুলো আমি মন দিয়ে শুনতাম এবং বোঝার চেষ্টা করতাম। ভোটে জেতার জন্য কোনো ফালতু প্রতিশ্রুতি নয়। মানুষকে রাজনীতি সচেতন করার পাঠ দিতেন যেন। তার কথা সাধারণ ভোটাররা খুব বুঝত বলেও মনে হয় না। বেশকিছু হিন্দু বাড়িতে আমি তাকে নিয়ে গেছি। এরমধ্যে দুটি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বাসায় তিনি অনেকক্ষণ ছিলেন, অনেক কথা বলেছিলেন। তারা দুইজনই কম কথা বলতেন। দুজনেই সজ্জন মানুষ ছিলেন। কোনো ভণিতা না করে তারা দু'জনেই অকপটে বলেছিলেন, প্রার্থী যোগ্য হলেও তারা ন্যাপের প্রার্থীকে ভোট দিতে অপারগ। তাদের পছন্দের তালিকায় আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কিছু নেই। তারা এবং তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত অন্যরাও নৌকায়ই ভোট দেবেন।
মোহাম্মদ সুলতান বলেছিলেন, ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত আপনাদের নিজস্ব। নিশ্চয়ই আপনাদের বিবেচনায় যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই ভোট দেবেন। কিন্তু একটি কথা আমি বলে যাচ্ছি, মনে রাখবেন। বামপন্থিরা ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হবে না। অন্যরা সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করবে, ভোটের জন্য তাদের ব্যবহার করবে, আবার সুযোগ পেলে তাদের সম্পদ লুন্ঠনেও কুণ্ঠিত হবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও হিন্দুদের জীবন-সম্পদ-পূজা-অর্চনার অধিকার নিরাপদ হবে বলে আমি মনে করি না।
১৯৭০ থেকে ২০২১। এই পঞ্চাশ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে রাজনীতিতে, সমাজে। কিন্তু মোহাম্মদ সুলতান যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, তা কি ভুল মনে হচ্ছে?
ঘটনা দুই
সত্তরের নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জানা গেল পাকিস্তানের পূর্ব অংশে মাত্র দু'টি আসন ছাড়া বাকি সব আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। মোহাম্মদ সুলতানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি একটু চিন্তিত হয়ে জবাব দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মনোভাব যতটুকু বুঝি, তাতে এটা জোর দিয়েই বলতে পারি যে তারা আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা ছাড়বে না। পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছে জুলফিকার আলী ভুট্টো। ভুট্টো খুব খারাপ মানুষ। ইয়াহিয়ার সঙ্গে মিলে তিনি শেষ পর্যন্ত কি করবেন বুঝতে পারছি না। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে, শেখ মুজিবকে ক্ষমতায় যেতে হলে সশস্ত্র পথেই যেতে হবে।
মোহাম্মদ সুলতানের কথা তখন আমার খুব পছন্দ হয়নি। ভোটে জেতা দলকে আবার ক্ষমতার বাইরে রাখা যায় নাকি? মোহাম্মদ সুলতান নিজে সশস্ত্র বিপ্লবের রাজনীতির পক্ষে বলেই হয়তো তার মাথায় সশস্ত্র উপায়ের কথা ঘুরছে। কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আমাদের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র পথে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার পথে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। যদিও বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন, যার যা আছে তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন, তবুও এটা এখন স্বীকার করতেই হবে যে, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার প্রস্তুতি আসলে কারোই ছিল না– না রাজনৈতিক নেতৃত্বের, না জনসাধারণের। সত্তরের নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগকে, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন তারাও সবাই পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে ছিলেন না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি ঠিকই, কিন্তু বিজয়ের ধারায় থাকতে পারিনি। এর বড় কারণ হয়তো এটাই যে, স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য যে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, সেটা আমাদের ছিল না।
ঘটনা তিন
১৯৭৩ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বেশ কয়েকবার মোহাম্মদ সুলতানের বাসায় গিয়েছি। দেখেছি তার দীনহীন অবস্থা। তখনও তার রাজনৈতিক অবস্থান মুজিববিরোধী। কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমাকে বলতেন, বাদলকে (বাদল হলো মোহাম্মদ ফরহাদের ডাকনাম, যিনি তখন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক) বলো মুজিব-সমর্থনের রাজনীতি পরিহার করতে। আমি মুজিবকে খুব ভালো করে জানি। শাসক হিসেবেও তাকে দেখছি। সাহস আর আবেগ হলো তার রাজনীতি। দেশ যে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে তা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। আবেগ দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না।
মোহাম্মদ সুলতানের কথা আমি ফরহাদ ভাইকে বলেছি। ফরহাদ ভাই বলেছিলেন, মুজিববিরোধিতা করে নয়, বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হবে মুজিবকে সঙ্গে নিয়েই।
সিপিবি-ন্যাপ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকেও তাকে রক্ষা করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর সিপিবি এবং ন্যাপ যদি প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করত তাহলে রাজনীতি কোন পথে চলত তা নিয়ে অনুমান-নির্ভর আলোচনা এখন অর্থহীন। তবে এটা ঠিক রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষার দিকটি তখন উপেক্ষিত হয়েছিল।
১৯৭৫ সাল। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ততদিনে বাকশাল গঠিত হয়েছে। রাজনীতিতে এক গুমোট হাওয়া। জনসভার প্রচারের জন্য ঘোড়ার গাড়িতে মাইক বেঁধে আমি বাংলাবাজারের দিকে গিয়েছিলাম। হঠাৎ মনে হলো সুলতান চাচার সঙ্গে একটু দেখা করে যাই। সকাল এগারোটার দিক। তার শরীরটা বেশি ভালো ছিল না। চা খাওয়ালেন। আর বললেন, এত টাকা খরচ করে, এত ঢাকঢোল পিটিয়ে জনসভা করে কি লাভ? তোমরা দেখছ দ্বিতীয় বিপ্লব, আমি দেখছি রক্ত। প্রতিবিপ্লবী শক্তি কোন বেশে আসছে আমি জানি না। তবে আসছে এটা নিশ্চিত। ফরহাদদের সাবধান থাকতে বলো।
মাত্র কয়েক মাস পরের কথা আমরা সবাই জানি। আমাদের সামনে এসেছিল নিষ্ঠুর ১৫ অগাস্ট, দুঃসহ ১৫ অগাস্ট, বেদনার ১৫ অগাস্ট, রাষ্ট্রপিতাকে হারানোর মর্মান্তিক কান্নার ১৫ অগাস্ট।
একাত্তরের দেশি-বিদেশি পরাজিত শক্তি যে একটি চরম প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তলে তলে তৈরি হচ্ছিল সে বিষয়টি নিয়ে কারো তেমন মাথা ব্যথা ছিল বলে মনে হয় না। বঙ্গবন্ধু নিজে মনে করতেন, কোনো বাঙালি তার বুকে বন্দুকের নল তাক করতে পারবে না। মানুষকে অতিরিক্ত ভালোবাসতেন বলেই তিনি কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন না। তিনি সবাইকে নিয়ে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিরজাফরের দল তার বুকের রক্ত কেড়ে নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণের পথে যে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে, সে কাঁটা অপসারণের কাজে আমরা এখনও সফল হতে পারিনি।