Published : 27 Apr 2021, 09:07 PM
ফেইসবুক, টুইটার, লিংকডইন, হোয়াটসঅ্যাপসহ বেশ কিছু অ্যাপ এ সময়ের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বেশ সহজতর করে তুলেছে। যার কারণে এখন প্রিয়জন কিংবা প্রয়োজন কোনওটাই টেলিফোনের হাজার টাকার বিলে নয় বরং ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমেই হয়ে চলেছে। জনপ্রিয় এ মাধ্যমগুলো সময়ের চাহিদা বুঝে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বিনোদন সুবিধাও যুক্ত করেছে। যা মাধ্যমগুলোর নানা ঐচ্ছিক অংশ বা পরিচ্ছেদে ছোট ছোট ভিডিও ফ্লিপস, ছবি, কার্টুন ও বিজ্ঞাপন আকারে সংযোজিত।
বর্তমানে এ ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে এতটাই যুক্ত বা সরব যে মুহূর্তেই যেকোনো বিষয় দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পরে। সম্প্রতি এ দ্রুতগতির ছড়িয়ে পরা বিষয়কে ভাইরাল বলা হয়। এতে অনেকে উপকৃত হচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু এও সত্য, কিছু ক্ষেত্রে কিছু মিথ্যা, বানোয়াট কন্টেন্টও ছড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ রাতারাতি জনপ্রিয় হবার প্রতিযোগিতা এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক চ্যানেল থেকে উপার্জন চেষ্টা।
২০১৭ সালের পরিসংখ্যানে ইউটিউবে প্রতি মিনিটে প্রায় ৪০০ মিনিট ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। শুধু তাই নয় এখানে ব্যক্তিগত চ্যানেল সংখ্যাও মিনিটে কয়েক লক্ষাধিক। যদিও বিষয়টিকে মাথাপিছু হিসেব ভাবলে ভুল হবে। কারণ এটি যদি সত্যি হত তবে অনলাইনের নানা পেইজ, আইডি, ইউটিউব চ্যানেল হিসেবে- পৃথিবী তলিয়ে যেত।
আসলে এটি এখন ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অনলাইনের বিভিন্ন কন্টেন্ট জনপ্রিয়তার হিসেবে বিজ্ঞাপন এবং অর্থ পায়। একারণে টেলিভিশন চ্যানেলের মত কার কন্টেন্ট কত বেশি আনন্দদায়ক, হাস্যকর, উপভোগ্য এবং সৃজনশীল সেরকম একটা প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান। যদিও এ কাচা পয়সার লোভে ইদানিং 'ভাইরালে ভাইরাস' ঢুকে পরেছে। অর্থাৎ মিথ্যা, বানোয়াট এবং গোঁজামিল সর্বস্ব কন্টেন্টও ছড়িয়ে পরছে। ফলে আমাদের সহজিয়া সংস্কৃতি দিনে দিনে ঝুঁকিতে পরছে।
তবে বেদনার বিষয় হল, জনগণ এসব গিলছে গোগ্রাসে। আর এর কারণ সময়ের সাংস্কৃতিক শূন্যতা। এখানে সময়ের সাথে নিজেদের ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে যুগোপযোগী করে পরিবেশনার পরিকল্পনা গড়ে উঠেনি। ফলাফল সাংস্কৃতিক উগ্রবাদ, ফ্যাসাদ এবং সস্তা জনপ্রিয়তার গুজবে বাজার ভরে উঠছে। এর এক সদ্য উদাহরণ লিচু গাছে সুপার গ্লু দিয়ে আম লাগিয়ে অনলাইন নিউজ এবং ভিডিও ভাইরাল করা।
শুধু তাই নয়, ধর্মের নামে কটূক্তি করেছে এমন জানিয়ে রাষ্ট্র, পরিবার এবং জানমাল ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু এ ফেইসবুক, টুইটার আইডি যে যেকেউ যেকারও নামে খুলে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করতে পারে সেবিষয়টি কি শতভাগ মানুষ জানেন? তাছাড়া বিষয়গুলো কি এতই হালকা যে, অন্যের আচরণে নিজের আচরণ নষ্ট হয়ে যাবে ?
যদিও এও সত্য এই মাধ্যমগুলোর কারণে অনেকে উপকৃত, বিরক্ত, বিকৃত, বিক্রিতও হচ্ছেন। যেমন একজন রিকশাচালকের কষ্টের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সকলে তাকে সাহায্যের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছিলেন। বিষয়টি এমন যেন তিনিই পৃথিবীর শেষ খেটে খাওয়া মানুষ ! এতে যে তিনিও বিরক্ত তার প্রমাণ ২২-০৪-২০২১ তারিখে শ্যামলী রিং রোডে কয়েকজনের আচরণের বিপরীতে তার আচরণ। তারা বারবার নিজেদের সেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য ভিডিও রিটেক নিচ্ছিলেন!
অন্যদিকে একজন ছাত্রসংগঠন কর্মী লোকলজ্জার ভয়ে নিজের এলাকা ছেড়ে দূরে গিয়ে রিকশা চালাতে গিয়ে আইনের আওতায় পড়লে সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। সাথে সাথে 'সর্বোচ্চ থেকে সর্ব নিকৃষ্ট' সকলে তাকে সহযোগিতার জন্যে লাইন ধরে বসেন। কিন্তু প্রশ্ন হল সেই ব্যক্তি যে সংগঠনের যে নেতার অধীনে কর্মী তিনি কোথায়? তিনি কি শুধু মিছিলের মাথা গোনার সময়ই দেখা দেন? সকল পর্যায়ের কর্মীদের অবস্থা কি এমনই ?
আবার কিছু লোক তো ওই কর্মীর জন্যে চাকরি নিয়েও হাজির! কিন্তু দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে যোগ্যতার হিসেবে কী চাকরি করবেন? এরকম তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা এড়িয়ে বরং দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। 'শিক্ষার্থী-কর্মীদের' জন্য যৌথচিন্তার 'পড়াশোনা এবং উদ্যোক্তা' তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল না হলেও যে সমস্যা সমাধান হয় তেমন উদাহরণ সৃষ্টিও আবশ্যক। নইলে আগামীতে সকল সংগঠনকে ভাইরাল প্রতিযোগিতার অসুস্থ জ্বরে ভুগতে হবে।
আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যেন অসুস্থ আচরণ না করে, সেজন্যে আইনের পাশাপাশি কমিউনিটি মনিটরিং জরুরি। কারণ দেশে এখন পরিবার থেকে যৌনপল্লী কোনওস্থানই আজ 'সমিতি-কমিটি'র বাইরে নয়। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের পরিমিতবোধ সম্পর্কে অনলাইন ক্যাম্পেইনের সাথে সমিতি-কমিটির কমিউনিটিগুলোকেও কাজে লাগাতে হবে। এতে করে সন্তানেরা ডিজিটাল অপরাধ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে এবং পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র পরিমিতিবোধের ভেতর থাকবে।