Published : 08 Feb 2012, 07:06 PM
'দর্শক হয়ে সাঁতার দেখছেন সাঁতারু মোশাররফ'-এই ধরনের একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল দৈনিক বাংলায়। লিখেছিলেন বাংলাদেশে ক্রীড়া সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কামরুজ্জামান। ৪৬ বছর আগের এই সংবাদ শিরোনামটি বলে দেয় অনেক কথাই। আমাদের ক্রীড়া নীতি নির্ধারকদের খামখেয়ালিপনা আর ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য একজন ক্রীড়াবিদকে কিভাবে চুকাতে হয় তারই দৃষ্টান্ত এটি।
পাঁচে পাঁচ, দশে দশ, পঁচিশে পঁচিশ, পঞ্চাশে পঞ্চাশ-এভাবে ছিয়ানব্বইতে ছিয়ানব্বই। কিন্তু সংখ্যাটা স্থির হয়ে আছে এরপর! একশতে একশ হয়নি! কেন হয়নি? যেহেতু দেশটা বাংলাদেশ, তাই প্রশ্নটা 'কেন হয়নি' না বলে 'কেন হয় না' হওয়াটাই বোধকরি যুক্তিযুক্ত। রাজনীতির প্যাঁচঘোঁচ কিংবা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এগুলো হিসাবের বাইরে রেখে এদেশে কোন কিছুরই ব্যাখ্যা দেওয়াটা কঠিন। আমাদের দেশে সম্ভাবনার জায়গাগুলো কেন শেষ পর্যন্ত 'সম্ভব না'তে রূপ নেয়, একজন সাঁতারের মোশাররফ হোসেন খানকে দিয়েই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায়।
সাঁতারু মোশাররফ ১৯৮৫ সালে ঢাকা সাফ গেমসে একাই জেতেন পাঁচ স্বর্ণ। সাফ গেমসের দ্বিতীয় ওই আসরে স্বাগতিক বাংলাদেশ সর্বমোট স্বর্ণপদক জিতেছিল নয়টি। যার অর্ধেকের বেশি স্বর্ণ একাই এনে দিয়েছিলেন মোশাররফ। সাউথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের হয়ে এক আসরে একজন অ্যাথলেটের পক্ষে পাঁচ স্বর্ণ জয় যে নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাবে না, এটা অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন পড়ে না বিশেষজ্ঞ হওয়ার।
জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি কখনও দ্বিতীয় হননি। তার নামের পাশে ৯৬ স্বর্ণ। জাতীয় সাঁতারে স্বর্ণের সেঞ্চুরি করতে না পারাটা এখনও পোড়ায় ৬৮ বছর বয়সী মোশাররফকে। এখন বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। মেসেঞ্জারে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় দেশের সর্বকালের সেরা এই সাঁতারুর সঙ্গে আড্ডা মেরে কাটালাম। এই দীর্ঘ আড্ডায় বেশ কয়েকবারই এসেছে তার স্বর্ণের সেঞ্চুরি না হওয়ার বিষয়টা। মোশাররফের ভাষায়, "১৯৭৫ সালে জাতীয় চ্যম্পিয়নশীপে আমাকে অংশ নিতে দেয়া হয়নি। খুবই তুচ্ছ কারণে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এটা করা হয়েছিল মূলত সেনাবাহিনীকে চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য। ১৫ অগাস্ট ট্র্যাজেডির পর দেশে তখন সামরিক শাসন চলছে। আমাকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো না। সেবার অংশ নিতে পারলে স্বাধীন দেশে একশ স্বর্ণপদক জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারতাম।"
কী সেই কারণ, যার জন্য দেশসেরা সাঁতারুর জায়গা হয়েছিল দর্শকের সারিতে? মোশাররফের ভাষ্যে, "অগাস্ট ট্যাজেডির কিছুদিন আগের ঘটনা। জাতীয় সাঁতারে আবাহনী দল নামানোর কথা আমাকে বললেন শেখ কামাল। রাজী হলাম। আমি ছাড়াও বিটিএমসির অনেকেরই যোগ দেওয়ার কথা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও সাঁতার ফেডারেশনে আবাহনীর নাম অনুমোদিত হয়নি। এরপর অগাস্ট ট্র্যাজেডি। পাল্টে গেল পরিস্থিতি। সবাই সুযোগ পেলেও আমাকে সুযোগ দেওয়া হলো না!"
ক্যারিয়ারের সেরা সময় তখন মোশাররফের। ১৯৭২ সালের প্রতিযোগিতায় চার ইভেন্টে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জেতেন সবগুলোতেই। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৬৯ সালে সর্বশেষ পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। ওই আসরে ৪ ইভেন্টে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জেতেন প্রতিটিতেই। এর মধ্যে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে অল পাকিস্তান রেকর্ড ভেঙ্গে গড়েন নতুন রেকর্ড। ১৯৭৮ সালে প্রথম বাংলাদেশ গেমসে ১০ ইভেন্টে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক পান সবগুলোতেই। তার সেরা সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার কেউ তাকে টপকে স্বর্ণ জয়ের সামর্থ্য রাখত না বলেও মনে করেন এই চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু, "আমার আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক প্রাপ্তির সংখ্যা ৪৪। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান থেকে অনেক স্বর্ণ জিতে দেশে ফিরেছি। একবার কলকাতা থেকে ছয়টি স্বর্ণপদক জিতেছিলাম। স্বর্ণ জিতেছিলাম ১৯৭৭ সালে কলম্বো থেকে।"
বৈশ্বিক মানদণ্ডে খেলাধুলায় পিছিয়ে পড়া জনপদগুলোর কাতারে আমরা। সাউথ এশিয়ান গেমসের মধ্যেই আমরা খুঁজে ফিরি অলিম্পিকের স্বাদ-গন্ধ। ১৯৮৫ সালের ঢাকা সাফ গেমসে মোশাররফের অর্জন তাই আমাদের জন্য আজও বড় প্রেরণার উৎস। যদিও দেশে পুলে নামলেই মোশাররফের স্বর্ণ, সাউথ এশিয়ান প্রতিযোগিতায় কিন্তু তেমনটা ঘটেনি। ১৯৮৪ সালে নেপালে সাফ গেমসের প্রথম আসরে পান ছয় রৌপ্য। একটিও স্বর্ণ পাননি। এর পরের ঢাকা আসর অবশ্য নিজের করে নেন। তবে দুটো ইভেন্টে (২০০ মিটার বাটারফ্লাই ও ২০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক) স্বর্ণ পাননি। সন্তুষ্ট থাকতে হয় রুপা নিয়েই। সাতে সাত না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, "মনে রাখতে হবে ওই সময় আমার বয়স ৩৩ বছর। ওই বয়সে ইয়াংদের সঙ্গে পাল্লা দেয়াটা ছিল ভীষণ কঠিন। তাছাড়াও সাঁতারের শেষ দিনে হিট আর ফাইনাল মিলিয়ে আমাকে পাঁচটি আলাদা আলাদা ইভেন্টে অংশ নিতে হয়েছিল। এক পর্যায়ে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমার বিশ্বাস, একদিনের গ্যাপ পেলে স্বর্ণ অবশ্যই বাড়ত।"
১৯৮৪ সালে সাফ গেমসের প্রথম আসরে স্বর্ণ না পাওয়াটাকে একটা সম্ভাবনার অপমৃত্যু হিসাবেই দেখেন মোশাররফ। সাঁতার থেকে সরে দাঁড়ানো আবার ফিরে আসা, এই ধরনের নাটকীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নেপাল গেমসে অংশ নেন। বিষয়টা খোলাসা করা যাক। ১৯৮৪-এর লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক গেমস-থেকে বাদ পড়ার কারণে সাঁতার ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। ঢাকা শহর থেকেও চলে গিয়েছিলেন। মোশররফের কথায়, "শুরুতে অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশ থেকে ছয় জনের যাওয়ার কথা ছিল। ইন্টারভিউ বোর্ড বসিয়ে আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ওই পরীক্ষায় ২০-এর মধ্যে ১৯.৫ পেয়ে আমি প্রথম হই। দ্বিতীয় স্থান পায় মুজিবুর রহমান। তৃতীয় স্থান পান সাইদুর রব। যতদুর মনে পড়ে ৯.৫ পয়েন্ট নিয়ে সাইদুর রহমান ডন লাভ করে চতুর্থ স্থান। সবমিলিয়ে অলিম্পিকে যাচ্ছি-এটা আমি নিশ্চিত ছিলাম। এর মধ্যে উচ্চতর প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তিন মাসের জন্য হংকংয়ে যাই। ফিরে এসে বিমানবন্দরেই দুঃসংবাদটা শুনলাম। বাংলাদেশ থেকে লসঅ্যাঞ্জেলসে শুধু ডনকেই (সাইদুর রহমান) পাঠানো হচ্ছে। পরে খোঁজখবর নিয়ে যা জানলাম, তাতে ভীষণভাবে মুষড়ে পড়লাম। আত্মীয়তার সূত্র ধরে শুধু ডনকেই মনোনীত করা হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই সাঁতার থেকে অবসরের ঘোষণা দিই। চলে যাই গ্রামের বাড়িতে। পরের তিন/ চার মাস আর পুলেই নামিনি।"
সাঁতার ছেড়ে দেওয়ার তার এই অভিমানের বরফ গলানোর কাজটি করেন ওই সময় সাঁতার ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। মোশররফ জানান, "বিটিএমসিতে চাকরি করার সময় গ্রুপ ক্যাপ্টেন মাহফুজ সাহেব ছিলেন আমার বস। উনি ছিলেন সাঁতার ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি আমাকে বারবার নেপালে যাওয়ার জন্য বলেন। এরপর আমাকে ডেকে পাঠান আসফদ্দৌল্লা। তিনিও একই কথা বলেন। উনাকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি। তাদের কথা ফেলতে পারলাম না। আমার আর সাঁতার ছাড়া হলো না। সম্ভবত গেমস শুরুর তিন দিন আগে নেপালে গিয়ে পৌছুলাম। দীর্ঘদিন সঁতারের বাইরে। অনুশীলন নাই, কিছু নাই। এভাব কি আর খুব ভাল ফল পাওয়া যায়? ছয়টা যে রৌপ্য পেয়েছি এটাই অনেক।"
১৯৮৭ সালে কলকাতা সাফ গেমসেও স্বর্ণ জিততে পারেননি মোশাররফ। পান তিনটি রৌপ্য পদক। ক্যারিয়ারের প্রান্ত বেলায় সাফ গেমসে অংশ নেওয়ায় প্রত্যাশিত স্বর্ণ আসেনি বল মনে করেন মোশাররফ। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও সাঁতারের প্রতি আসক্তিই তাকে টিকিয়ে রেখেছিল বলে মনে করেন মোশাররফ, "১৯৮২ সালে বিমান বাহিনী থেকে অবসর নিই। ফ্লাইং অফিসার ছিলাম। এরপর আমাকে পুলিশের এডিশনাল এসপি হিসাবে সমন্বয় করার কথা বলা হয়। সাঁতারের কথা ভেবেই পুলিশ অফিসারের চাকরিতে যোগ দিইনি। পরে বিটিএমসির জিএম হিসাবে যোগদান করি।"
সাঁতারের প্রতি এই প্রবল টানের সর্বোচ্চ প্রকাশ ১৯৮৫ এর ঢাকা সাফ গেমস। একটা অনুকূল পরিবেশের কারণে ওই গেমসে সাফল্য এসেছিল জানিয়ে বলেন, "এইচ এম এরশাদ তখন প্রেসিডেন্ট। আমাকে তার বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমাকে বলতেন তুই করে। বাড়িতে ডাকার পর বললেন, জাতি তোর দিকে তাকিয়ে আছে। তুই জাতিকে কিছু দে, জাতিও তোকে ফেরত দেবে। রাষ্ট্রপতির এই কথাতে ভীষণভাবি উজ্জীবিত হই। সব বাদ দিয়ে সাঁতার নিয়ে পড়ে থাকি। সাফ শুরুর আগের চার মাস আমার রুটিন ছিল শুধু সুইমিং পুলে যাওয়া-আসা আর পোশাক ছিল শুধু ট্র্যাক স্যুট। আমার ওয়াইফ (অনিলা মোশাররফ) আমাকে সোনারগাঁওয়ে ড্রপ করে আসে আর অনুশীলন শেষে বাসায় নিয়ে আসে।" এই কঠোর পরিশ্রম বৃথা যায়নি। ১৯৮৫-এর সাফ গেমসের পর সাংবাদিকদের ভোটে 'বেস্ট স্পোর্টসম্যান অব সাউথ এশিয়া' পুরস্কারে ভূষিত হন। পরের বছর (১৯৮৬) পান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদক। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাঁতারু হিসাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন ১৯৮৮ সালে। প্রথম বাঙালি হিসাবে ইংলিশ চ্যানেল জয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রজেন দাসের নাম। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম সাঁতারু হিসাবে এই কৃতিত্ব দেখান মোশাররফ।
বর্ণাঢ্য জীবন কাটানো মোশাররফ হোসেন বিরিয়ানির দোকান দিয়েছিলেন একবার! সেই গল্প শোনা যাক এই সাঁতারুর কণ্ঠেই, "গেমস শেষ হওয়ার ৯/১০ দিন পর ডেকে পাঠান এরশাদ সাহেব। আমাকে বললেন তুই দ্রুত এনএসসির চেয়াম্যানের সঙ্গে দেখা কর। দেখা করলাম। একটা ম্যাপ দেখিয়ে উনি বললেন, এই দোকানগুলোর মধ্য থেকে যে কোন একটি পছন্দ কর। ওটা ছিল আউটার স্টেডিয়ামের ম্যাপ। তখন দোকান বরাদ্দ চলছিল। সম্ভবত ৩৯ নম্বর দোকানটা আমার পছন্দ হল। এক টাকার বিনিময়ে আমাকে দোকানটা বরাদ্দ দেওয়া হল। ওখানে বিরিয়ানির দোকান করেছিলাম। নাম দিয়েছিলাম ডলফিন। তবে একটা পর্যায়ে দোকানটি বিক্রি করে দিই।"
এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে তাকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বলেন, "একদিন শাহ মোয়াজ্জেম আমাকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠালেন। ওই সময় জাতীয় পার্টির ডাকসাইটে নেতা শাহ মোয়াজ্জেম। গিয়ে দেখি ওখানে উপস্থিত আছেন শেখ শহীদুল ইসলাম। যাই হোক, আমাকে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য বলা হল। নমিনেশন পেপারও দেওয়া হল। বলা হল নির্বাচনের পর আমাকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে। কিছু না বলে চলে আসলাম। বাড়িতে সব ঘটনা জানালাম। আমার বাবা (বারি খান) বললেন, আমরা সারাজীবন আওয়ামী লীগ করে এসেছি। আমরা সবসময়ই বঙ্গবন্ধুর লোক। এই পারিবারিক লিগ্যাসি বহন করে চলেছি। আমি সবসময়ই বঙ্গবন্ধুর লোক। আর তাই অন্য কোন রাজনৈতিক দলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।"
মোশাররফ যে বঙ্গবন্ধুর দলের লোক এই একনিষ্ঠতার প্রমাণ দেখা যায় ১৯৯৬ সালের উত্তাল সময়ে। একমাত্র ক্রীড়াবিদ হিসেবে যোগ দেন জনতার মঞ্চে। বক্তৃতাও দেন। এর ফল হিসাবে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই পড়েন বিড়ম্বনায়। বাধ্য হন দেশত্যাগে। তার কথায়, "জনতার মঞ্চে আমি বক্তৃতাও করেছি। সমস্যাটা বাঁধল ২০০১ সালের নির্বাচনের পর। নতুন সরকার গঠিত হল। আমি তখনও সাঁতার ফেডারেশনের সেক্রেটারি। পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম। ওই সময় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সাদেক হোসেন খোকা আমাকে পদত্যাগ করতে দেননি। বললেন, বাংলাদেশ সাঁতারে আপনাকে দরকার আছে। কিন্তু পরিবেশ অসহনীয় উঠল। ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিপুল আমি টেন্ডারের মাধ্যমে লিজ নিয়েছিলাম। ওখানে বাচ্চাদের সাঁতার শেখাতাম। আর উপরে একটা মিউজিয়াম করেছিলাম। আমার ক্যারিয়ারের যাবতীয় মেডেল, ট্রফি, সনদ সব এখানে রেখেছিলাম। একদিন ফেডারেশনে গিয়ে দেখলাম সব পুড়ে ছাই। ভীষণ কেঁদেছিলাম। টেলিফোনে প্রাণনাশের হুমকিও আসছিল। শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়লাম।"
ক্যালিফোর্নিয়াতে থিতু হয়েছেন। স্ত্রী আর দুই মেয়ে মুশায়রা মোশাররফ কেকা ও শায়লা মোশাররফকে নিয়ে তার সংসার। এই মার্কিন মুলুকেই ২০১৬ সালে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েন। কোমায় চলে যান। লম্বা সময় চিকিৎসার পর ফেরেন। মেরুদণ্ডের জটিল অপারেশন হয়। এই চিকিৎসা ছিল খুবই ব্যয়বহুল। আট ঘন্টার ওই অপারেশনেই খরচ হয় বাংলাদেশি টাকায় তিন কোটিরও বেশি। এখন শারীরীকভাবে মোটামুটি ভাল আছেন। তবে ওই দুর্ঘটনার কারণে লম্বায় দেড় ইঞ্চির মত খাটো হয়ে গিয়েছেন, হাসতে হাসতে জানালেন তা-ও।
লম্বায় খাটো হয়েছেন মোশাররফ। বাংলাদেশ সাঁতারের সঙ্গে এই জায়গাটিতে বেশ মিল এই চাম্পিয়ন সাঁতারুর। বাংলাদেশ সাঁতারও যে খাটো হয়ে গেছে! সাঁতারে আর একজন মোশাররফ কি আর কখনো আসবে এদেশে, এ প্রশ্নটাই সামনে এসে দাঁড়ায় বার বার।