Published : 09 Nov 2020, 02:13 AM
ফ্রান্স বয়কট ও ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচির ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে পুলিশের বাঁধার মুখে আন্দোলনকারীরা মোনাজাত শুরু করে, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও সেই মোনাজাতে শরিক হয়েছিলেন। সেই দোয়া বা মোনাজাত দেখে আরেকটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল।
বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে মাওলানা ভাসানীর এই রকম একটি ঘটনার উল্লেখ আছে। পুলিশের বাঁধার মুখে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রকারন্তরে তার পুরো বক্তব্য দিয়েছিলেন। সমবেত পুলিশ সদস্যরাও সেদিন ভাসানীসহ নেতা-কর্মীদের সাথে হাত তুলে দোয়াতে শরিক হয়েছিল।
ভাইরাল হওয়া হেফাজতের সমাবেশের মোনাজাতের ওই ছবিটি আসলে বর্তমান বাংলাদেশকেই উপস্থাপন করে। এখানকার মানুষের আবেগ কোনও যুক্তির ধার ধারে না। আর এর সুযোগ নিতে কুচক্রী মহল কখনও পিছপা হয় না।
যেমন কুমিল্লার মুরাদনগরে যে বাড়ি ঘরগুলো ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, ভিডিওগুলো দেখেছি, তাদের ক্ষোভ এবং উন্মত্ততার যে বহির্প্রকাশ সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিবেচ্য নয়। এই পরিবারটি সংখ্যালঘু না হয়ে সংখ্যাগুরু হলেও এই চিত্রের কোন ব্যতিক্রম হত না।
কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে পরিকল্পিত। মাইকে ঘোষণা দিয়ে এই গণজমায়েত করা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের বাড়িও সেই তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি, শুধু তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে। পত্রিকায় প্রকাশ চেয়ারম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী, এ প্রলয় তাণ্ডবে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের তিনি চেনেন না এবং এলাকায় কখনো দেখেছেন বলে মনে হয় না। একজন চেয়ারম্যান সাধারণত ইউনিয়নের সিংহভাগ মানুষকেই চেনার কথা। তাহলে এই বাহিনী কোথায় থেকে এলো? কিভাবে এলো এই প্রশ্নটি কিন্ত থেকে যায়।
প্রশ্ন থাকে, ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে কারা এ ধরনের সহিংস তৎপরতার পেছনে রয়েছে- সেটিও।
পাড়ায়-মহল্লায় গ্রামে গঞ্জে ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভ খুব করে চলছে। আর আমার মনে পড়ছে ছেলেবেলার কথা। কতোই বা বয়স তখন নয় বা দশ বছর হবে। ধর্ম, অধর্ম, আস্তিক কিংবা নাস্তিক কিছুই তো বুঝি না। হঠাৎ করেই একটি প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে শহরে ও মফস্বলে, সেটি ছিল- নাস্তিক সালমান রুশদীর ফাঁসি চাই। স্যাটেনিক ভার্সেস নিষিদ্ধ চাই।
এই শ্লোগানের অর্থ কী- তার কিছুই তখন বুঝিনি।
ওই সময়েই মিছিলে যোগ হয় আরেক শ্লোগান, 'নাস্তিক তসলিমা নাসরিনে'র ফাঁসি চাই। চারপাশে সভা, সমিতি, ওয়াজ, মাহফিল, শ্লোগান সব দেখে শুনে বুঝে গেলাম 'নাস্তিক' খুব খারাপ জিনিস।
মাঝে মাঝে মনে হতো এদের কল্লা যদি আমি আনতে পারতাম বহু টাকার মালিক হতে পারতাম! সারাদিন কোক, সেভেন আপ মিরিন্ডা খেলেও টাকা শেষ হতো না। আমার একটা ধারণা ছিল- তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদী মনে হয় সিলেট বা, ঢাকায় থাকে। আর ভারত সম্পর্কে সেই সময়ই মনটা বিষিয়ে উঠেছিল। এই একটা দেশ আমাদের দেশটারে ধ্বংস করে দিল!
সারাদিন এই তো শুনি চারদিকে।
পাশাপাশি সময়ে আফগান যোদ্ধারা ফিরে আসেন আমাদের তল্লাটে। তন্ময় হয়ে তাদের গল্পও শুনি লোকমুখে। আকাশ থেকে নেমে আসেন- বাপের ব্যাটা সাদ্দাম। কবিতায়, গানে, মেলার বায়োস্কোপে সেই জয়গান। সাদ্দাম বিস্কুট, সাদ্দাম কেক- সবকিছুই সাদ্দামময় হয়ে উঠে। এর মাঝেই আরেক দল ভেঙে দেয় বাবরী মসজিদ। অযোধ্যা থেকে সেই আগুন উড়ে আসে বাংলাদেশে। পবিত্র ইশ্বরের নামে পুড়ে-ছারখার হয় সবুজ জমিন।
মফস্বলের ছেলে তসলিমা নাসরিনের 'লজ্জা' পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও সালমান রুশদীর স্যাটেনিক ভার্সেস পর্যন্ত দৌঁড় যায়নি। দিনে দিনে 'স্যাটেনিক ভার্সেস' নামটাও ভুলে গিয়েছিলাম। পৃথিবীর কোটি মানুষ এই বইটি না পড়েই সে দিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।
বহু বছর পর 'স্যাটেনিক ভার্সেস' যে একটি উপন্যাস, যেখানে রূপকভাবে শুধু ইসলাম ধর্ম নয় হিন্দু ধর্মকেও নিয়ে আসা হয়েছে তা জানলাম। এই উপন্যাসটি বিশ্ব রাজনীতিকে নতুনভাবে দেখিয়েছিল ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তানসহ বহুদেশের রাজনীতিতে রেসের ঘোড়া হয়ে গিয়েছিল স্যাটানিক ভার্সেস বা শয়তানের ভাষ্য এই বইটি।
ভলতেয়ারের মতে, "অজ্ঞতা যেখানে যতো বেশি সেখানে অসহিষ্ণুতা এবং নিষ্ঠুরতা ততো বেশি।"
ভলতেয়ার তার সময়ে, খ্রিস্টান, ইসলামসহ প্রায় সব ধর্মেরই সমালোচনা করেছিলেন। তাই অনেকের কাছেই তিনি একজন 'নাস্তিক' হিসেবে পরিচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন চিন্তাই পারে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করতে।
অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিভিন্ন দুর্বলতার সমালোচনা করেছেন তিনি। তার মতে, জনগণকে শিক্ষিত করলে কেবল জনগণেরই উপকার হবে তা নয়, রাজার জন্যও এটা প্রয়োজন।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে তিনি নাগরিক স্বাধীনতা, বিশেষ করে, ধর্মের স্বাধীনতা নিয়ে ছিলেন সোচ্চার। গির্জাকে তিনি ফ্রান্সের সার্বিক বিকাশে বাধা হিসেবে দেখতেন। ভলতেয়ারের প্রয়াণের প্রায় আড়াই শ বছর পেরিয়ে গেলেও তার দর্শন এবং বক্তব্য এখনো সমানভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অন্তত শতভাগ প্রযোজ্য। গণতন্ত্র আর ভোটের রাজনীতিতে বাংলাদেশ ধর্মকে মাথায় তুলে নাচতে গিয়ে, তথাকথিত সেই ধর্মীয় নেতাদের ইচ্ছা এখন রাষ্ট্র এবং সরকারের ঘাড়ে চেপে বসছে। তাদের ইচ্ছেগুলো সরকারকে দিয়েই উদ্ধার করে নিচ্ছে। হাটহাজারী মাদ্রাসার রাজত্ব পেয়ে ফ্রান্স ইস্যুতে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন জুনাইদ বাবুনগরী। বাবুনগরীরা হয়তো ইরানের খোমেনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন প্রতিনিয়ত।
খামেনির উত্থানও ফ্রান্স থেকেই। তিনি দীর্ঘদিন প্যারিসে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। ইরানের আড়াই হাজার বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খামেনি। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ঠিক তেমনি বাংলার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভেঙে একটি 'তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার' দিকেই হাঁটছে বাংলাদেশ- এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এমনকি নাটক-সিনেমায় কী শব্দ ব্যবহার করা যাবে, বা যাবে না- সেটি নিয়েও ইদানিং তাদের সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে। নাটকে বা সিনেমায় 'কবুল' বলাকে ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন একজন! বলেছেন, এই কবুলে নাকি সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যায়।
নাটক সিনেমায় ধর্ষণ, খুন কিংবা মৃত্যু দেখালে সেক্ষেত্রে কী হয় সেটি অবশ্য বলেননি!
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে জুয়েলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো লাশ। সোশাল মিডিয়ায় আমাদের অনেক সেকুলার হিসেবে পরিচিত মানুষের লেখাতে এটা এসেছে- লোকটি ধার্মিক ছিল, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, এই লোকটাকে মেরে ফেললো…! ইত্যাদি ইত্যাদি। যেন অধার্মিক , বেনামাজি হলে মেরে ফেলা ঠিক ছিল!
ফ্রান্সের সেই শিক্ষক যাকে হত্যা করা হলো, কার্টুন তো তিনি আঁকেননি। কিংবা তিনি মহানবী সম্পর্কে কটূক্তিও করতে যাননি। তিনি কেবল ক্লাসের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দেখাতে গিয়েছিলেন- মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমারেখা কতটুকু! কিংবা তাত্ত্বিকভাবে আমরা এ ধরনের কার্টুন আঁকতে পারি কিনা!
তিনি হত্যার শিকার হলে, একদল কোনও ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই এ হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে নানা কথা বলতে লাগলো। এই যে সরলীকরণ কিংবা একটা ঘটনার প্রেক্ষিত না জেনেই, অর্ধেক জেনে আরেকটি ঘটনাকে বিচার করে করে ন্যায় এবং অন্যায়কে এক করে ফেলি আমরা। ভিন্ন দর্শন কিংবা ভিন্ন ধর্ম নয়, একই ধর্মের ভিন্ন মতকে পর্যন্ত ধারণ করতে পারছে না বাংলাদেশ।
সম্প্রতি দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ণের চিত্র তুলে ধরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে,লিখিত বক্তব্যে 'বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচ ও গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর সাত মাসের একটি 'সাম্প্রদায়িক চালচিত্র' তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, এই সময়ে দেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ১৭ জন হত্যা, ১০ জনকে হত্যাচেষ্টা, ১১ জনকে হত্যার হুমকি, ৩০ জন ধর্ষণ-গণধর্ষণ ও নির্যাতন, ছয় জন ধর্ষণচেষ্টা, তিনজন শ্লীলতাহানির কারণে আত্মহত্যা, ২৩ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।
পাশাপাশি ২৭টি প্রতিমা ভাঙচুর, ২৩টি মন্দিরে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, ২৬টি বসতবাড়ি, জমি ও শ্মশান উচ্ছেদের ঘটনা, পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা, ৭৩টি উচ্ছেদ চেষ্টা, ৩৪ জনকে দেশত্যাগের হুমকি, ৬০টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করা, চারজনকে ধর্মান্তরিত করতে হুমকি, সাতজনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণ, ৮৮টি বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট, ২৪৭ জনকে দৈহিক হামলা, ২০টি পরিবারকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানানো এবং মহানবীকে কটূক্তির মিথ্যা অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে।
তিথি সরকার নিখোঁজ সপ্তাহ দুয়েকের বেশি। তার পরিবার জানে না মেয়েটি কোথায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কার করেছে। কারণ ধর্ম নিয়ে কটূক্তি। বগুড়ায় এক মাদ্রাসা ছাত্রী, বয়সের হিসেবে শিশু- তাকে ধর্মীয় কটূক্তির দায়ে আটক করেছে পুলিশ। পুতুল নামে মেয়েটির পিতা সামছু ও মেয়ের শাস্তি দাবি করেছেন। নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একইভাবে ফ্রান্সের পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করায় বহিস্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। ধর্ম নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, ঘর-বাড়ি ভাংচুর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এই যে ভীতিকর একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরোনোর পথ কি খোলা থাকছে?
এই অবস্থায় বাংলাদেশের ভবিষ্যতে আসলে কী?
এই প্রশ্নটা অনেকেই করেন। আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িকতার আবরণ নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায়। কিন্তু সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগ কি এই অসাম্প্রদায়িকতা লালন করতে পারছে? সরাসরি উত্তর হচ্ছে না। দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এখনো কিছু মানুষ নীতি-আদর্শকে ধারণ করলেও তৃণমূল পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি আওয়ামী লীগে ঢুকে যাচ্ছে। এ শক্তি আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে সরে গিয়ে ধর্ম এবং রাজনীতিকে এক করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থনের আশায় ধর্ম নিয়েই রাজনীতি করতে শুরু করেছে। জামায়াতে ইসলামও এই কাজটি খুব সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশে যাই করো ধর্মের নামে করতে হবে।
৪ নভেম্বর ছিল 'সংবিধান দিবস'। ১৯৭২ সালের ওইদিনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণপরিষদে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র এই চার মূল নীতিতে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ (বিজয় দিবস) থেকে কার্যকর হয়েছিল ।
দীর্ঘ ৪৮ বছরে বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়েছে বাংলাদেশ। জাতির জনকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সংবিধানের ব্যবচ্ছেদ করেছে খুনিদের দল। যে স্বপ্ন নিয়ে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল সেই স্বপ্ন আজও অধরাই রয়ে গেছে।
টাকনুর উপরে কাপড়, হিজাব, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে, কিংবা শুধু মুসলিমদের জন্য বাসা ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি- এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আমরা হাসাহাসি সমালোচনা করে সেখানেই থেমে যাই। এই সব ঘটনার বিশ্লেষণ হয় না।
ঘটনাগুলো যদি এখানেই শেষ হয়ে যেত হয়তো ভাল ছিল।
১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিনে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে আমরা রাজনৈতিকভাবে সমালোচনা করি। কিন্তু আমরা জানিনা নিরবে-নিভৃতে সেই ১৫ অগাস্টে জামায়াত শিবির তাদের 'ইসলামী শিক্ষা দিবস' পালন করে বাংলাদেশে।
জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন-
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই – করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহত্ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।