Published : 19 Oct 2020, 03:14 AM
সোনার বাংলার সর্বনাশের সর্বশেষ,
ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ বাঙালির বাংলাদেশ।
ঋণ জালিয়াতি, লুটপাট, দুর্নীতি- দুর্বৃত্তায়ন,
আজকের বাঙালির যেন শ্রেষ্ঠ অবলম্বন!
ধর্ষণ এখন এখানকার সামাজিক ব্যধি!
তাই নিত্য ধর্ষণের চাপে চুপিচুপি কাঁদি!
স্বাধীনতার ঘোষণা হওয়ার সময় থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক শুধু নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেনি, বরং হত্যার পাশাপাশি বাঙালি নারীদের তারা তুলে নিয়ে ক্যাম্পে নিয়মিত ধর্ষণ করতো! আজকের বাঙালির স্বাধীনতাও কিন্তু সে সময়কার অগণিত নারীর সম্ভ্রমের ফসল। তবে স্বাধীনতার আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও থামছে না যেন সে ধর্ষণ। নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ষণ ও বলৎকার। যা একটি স্বাধীন, সভ্য জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার। আজ এদেশের নারী শাসনের সময়কাল ত্রিশ বছর চলছে। কিন্তু নারীদের সম্ভ্রম নিরাপত্তার নেই কোন প্রতিকার! যদিও এখন নেই সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তবুও নিত্য শুনতে হয় ধর্ষণ ও বলৎকারের কাহিনী। ধর্মীয় শাসন, অনুশাসন, বিধিবিধান কোন কিছুই যেন থামাতে পারছেনা ধর্ষণ ও বলৎকার! যা সভ্য যুগে একটি জাতির জন্য চরম লজ্জার এবং ঘৃণার।
পঞ্চাশ বছরের একটি রাষ্ট্র ধর্ষণ, দুর্নীতি, ঋণ জালিয়াতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, মাদকদ্রব্য সহজলভ্যতার মাধ্যমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে নিজেকে অসভ্য করেছে! এই চিত্র থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় যেন রাষ্ট্র খোঁজতে চায়না কিংবা খোঁজে পায়না। হেয়ালি বশত নাকি বুদ্ধিমত্তা সংকটের কারণে। তা আমার বোধগম্য নয়।
সম্প্রতি সিলেটে দলবেঁধে ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গণধর্ষণের পরে সবাইকে নাড়া দিয়েছে। ফলে ধর্ষণের ঘটনায় অনেকেই যথেষ্ট আবেগবশত দাবি জানিয়েছে যে, ধর্ষকদের ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করা হোক। তাতে মনে হয় ধর্ষণের বিচার সম্পন্ন হবে।
এ দাবির সাথে একমত হতে পারতাম, যদি পরবর্তীতে আর ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা পুনরায় না ঘটতো। ফেনীর নুসরাত হত্যা ও ধর্ষণের ভায়োলেন্সের বিচার থেকে শিক্ষা কী নিতে পেরেছি আমরা? মোটেও পারিনি। যার কারণে হাজার হাজার ক্রসফায়ারেও এ ধরনের মানসিক ব্যাধি নির্মূল করা সম্ভব নয়। কেননা ক্রসফায়ার দিয়ে তো ভ্রষ্ট মানসিকতাকে হত্যা করা যাবে না! তাই মানসিকতা উন্নয়নের জন্য নৈতিকতা শিক্ষা ছাড়া উপায় নেই। যদিও সরকার ইতোমধ্যে বহুল আলোচিত ধর্ষণের বিচারে মৃত্যুদণ্ড শাস্তি নির্ধারণ করেছে। তাতে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। আইন তার নিজস্ব গতিতে পথ চলবে, তাতে কারোরই আপত্তি নেই। তবে পৃথিবীতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত হওয়ার নজির খুব কমই দেখা গেছে। কারণ অপকর্মের ঘটনায় বিচারের ফাঁকফোকর দিয়ে বহু অপরাধী বেঁচে যায়। যার বহু নজির রয়েছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রেও। তাইতো বহু দার্শনিক আইনের থেকে নৈতিকতার প্রতি প্রচুর পরিমানে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। এমনকি দার্শনিক অ্যারিস্টটলকে দর্শন চর্চার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি উত্তর করেন যে, "তোমরা যা আইনের ভয়ে করে থাকো, আমি তা এমনিতেই করি।" অর্থাৎ নীতিশিক্ষার মাধ্যমে অনৈতিক, অন্যায় অপকর্ম করা থেকে নীতিশিক্ষায় শিক্ষিতরা বিরত থাকে সর্বদা। এখানে উল্লেখ্য যে, দর্শনের মূল প্রায়োগিক দিক হলো নৈতিকতার ব্যবহার।
লক্ষ্য করে দেখা যায় যে, নৈতিকতার শিক্ষা কেবল মানুষকেই মানুষ হতে হলে অর্জন করতে হয়। কিন্তু অন্যান্য কিছু প্রাণীও নীতির জ্ঞান অর্জন করে থাকে বলে আমার ধারণা। যেমন- পোষা কুকুরগুলো কখনো মনিবের সাথে খারাপ আচরণ করে না বলেই বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে মনিবের কাছে সমাদৃত। পোষা সাপও সাপুড়েকে ছোবল কাটে না! যদি উদাহরণ থাকে, সেটা বিরল। তবে প্রভুভক্ত নীতির মধ্যে পড়ে কিনা সেটা অবশ্য গভীর দার্শনিক আলোচনার বিষয়। কিন্তু কুকুর প্রভুভক্ত হয় নিশ্চিত। কিন্তু অনৈতিক হলে হয়তো প্রভুভক্তি লাটে উঠতো।
তবে যাইহোক- আমার আলোচনা নৈতিক সংকটের কারণে মানুষ দুশ্চরিত্র হয়ে থাকে। ফ্রেডরিক নিৎসে নৈতিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে বলেছেন- "যদি কেউ উচ্চমানের মানুষ হতে চায়, তবে নৈতিকতাকে নতুন পদ্ধতি দ্বারা সাঁজাতে হবে। এর উত্তর প্রভু বা দাস নৈতিকতার মধ্যে থাকে না। এদের অসংগতিগুলো দূর করতে হবে। যা নতুন, আত্ম-স্বীকৃতিকারী ও স্বতন্ত্র জীবন যাপন; মুক্ত স্পিরিটের জীবন যা তার ক্ষমতার বাসনাকে সন্তুষ্ট করে এবং স্বীকৃতি দেয়।"
একথা সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করে যে, নৈতিকতা বিহীন মানুষ যেকোন সময় যেকোন ধরনের অনৈতিক, অন্যায় অপকর্মে জড়িত হতে পারে।বাঙালির মাঝে নৈতিকতা চর্চা ও প্রয়োগ বিরলতম হওয়ায় ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট, ঋণ জালিয়াতি, দুর্নীতি করতে দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু একটি কুকুর এমনটি না করলেও আমরা হরহামেশাই 'কুকুরের বাচ্চা' সম্বোধন করে খিস্তি-খেউর করি। কিন্তু আজকে বাঙালির নীতিবিহীন অবস্থায় যেভাবে অন্যায় ও অরাজকতার উৎসবে মেতে উঠেছে, তাতে বলতেই হয় যদি পশুরা কথা বলতে পারতো- তাহলে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় গালি হতো 'মানুষ' নামক শব্দটি।