Published : 16 Sep 2020, 08:24 PM
১
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে জনহিতকর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ড এবং তারপর বিভিন্ন থানার ওসিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পর অভিযোগে সে ভাবমূর্তি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে আবার। কবে কোন থানার ওসি বা দারোগা কাকে কাকে ক্রসফায়ার দিয়েছে, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কতজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সেসব উঠে আসতে শুরু করেছে। 'বাংলাদেশের পুলিশ কখনও জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি' শুনতে ভাল না লাগলেও কথাটা সত্য।
এর জন্য যে শুধু এই বাহিনী দায়ী তা কিন্তু নয়। গলদটি ছিল গোড়ায়। ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে পুলিশ বাহিনী গঠন করেছিল শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে নয়, জনগণকে ঠেঙ্গিয়ে ক্ষমতার পথ মসৃণ করার লক্ষ্যেও। দেশভাগের ফলে ব্রিটিশরা চলে গেলেও তথাকথিত স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ পাকিস্তানের শাসকদের রক্ষায় নিয়োজিত হয়। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন নস্যাৎ করতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমনে উপমহাদেশে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছিল সেই একই ভূমিকা পালনে নিয়োজিত হয় পাকিস্তানের পুলিশ। জাতিতে এরা অধিকাংশ বাঙালি হলেও পাকিস্তান আমলের ২৩ বছর এই পুলিশ বাহিনী পাকিস্তান সরকারকে টিকিয়ে রাখার কাজই বেশি করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ সেই উপনিবেশবাদী মনোভাবের পুলিশের মানসিকতা পরিবর্তনে একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অসামান্য অবদান ও আত্মত্যাগের কারণে স্বাধীন দেশে সাধারণ মানুষের মনে পুলিশের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত হয়েছিল।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর অবৈধ ও সামরিক সরকারগুলো পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের রক্ষার কাজে যতটা ব্যবহার করেছে জনগণের স্বার্থে ততটা ব্যবহার করেনি। এরপর গণতান্ত্রিক সরকার এলেও পুলিশবাহিনীকে গণমুখী করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়নি। শেখ হাসিনা সরকার পুলিশের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলেও পুলিশ বাহিনীতে আশানুরূপ দুর্নীতি কমেনি। তবে আচরণগত দিক দিয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে থানায় গেলে বোঝা যায়। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই যে পরিবর্তন চান তা তাদের সঙ্গে আলাপকালে বোঝা যায়। তবে পুলিশ বিভাগের আমূল সংস্কারের যে প্রস্তাবটি ছিল সেটি বাস্তবায়নে কোনো সরকারই উদ্যোগী হয়নি।
২
রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল বিএনপি ২০০৪ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের মাধ্যমে। পরে সে সরকারের আমলে গঠিত হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন- র্যাব। এই বাহিনীর হাতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং পরে মাদকবিরোধী অভিযানে দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। প্রথম প্রথম র্যাবের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে'র কিছু কিছু ঘটনাকে মানুষ অভিনন্দিত করলেও একসময় তা সাধারণ মানুষের মনে সংশয় ও আতঙ্ক তৈরি করে। নিরপরাধ তরুণ লিমনকে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া ও নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের ঘটনায় এলিট বাহিনী বলে খ্যাত র্যাবের ভূমিকা গভীরভাবে সমালোচিত হয়।
'বন্দুকযুদ্ধ'-এর ঘটনা বৃদ্ধি পায় পরবর্তীতে পুলিশ বাহিনীকেও এমন দায়িত্ব দেওয়ার পর। তারপর থেকে পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে'-এর ঘটনা নিয়মিত ঘটতে থাকে দেশে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে বাহিনীর হাতে তাদেরকে আরও স্পষ্ট করে বললে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের হাতে 'বন্দুকযুদ্ধ' ঘটানোর মতো ক্ষমতা তুলে দিলে পরিণামে যা হওয়ার তাই হচ্ছে দেশে। এর ফলে একজন-দুজন ওসি প্রদীপ নয় আরও অনেক প্রদীপ (রূপক অর্থে) বেপরোয়া থেকে বেসামাল হয়ে ওঠে। যে কাউকে মেরে পকেটে কয়েকটি ইয়াবা ঢুকিয়ে আর লাশের পাশে একটি দেশি বন্দুক রেখে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলেই হলো।
মাদক নির্মূলের নামে অনেক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও সেসব মৃত্যু নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। তার কারণ দেশের সাধারণ মানুষ মাদকের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত একপ্রকার মেনেই নিয়েছিল। কয়েক বছর আগে টেকনাফ থানা যুবলীগ নেতা একরাম হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সে ভুল 'বন্দুকযুদ্ধ'-এর সঠিক বিচার এখনো হয়নি, ভবিষ্যতে হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এরপর শুধু টেকনাফ থানায় দু শতাধিক 'বন্দুকযুদ্ধ'-এর ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি। কিন্তু এবার একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে দেশে।
থানা-পুলিশের হাতে কারো জীবন-মৃত্যু নির্ভর করলে তার ফল কী হতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক আজাদীতে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ প্রকাশিত একটি খবর- নগরীতে বায়েজিদ আমিন জুট মিল এলাকায় একটি মারামারির মামলায় আসামি হিসেবে পরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া যুবক আরেক জয়নাল ছিলেন। নিহত সেই যুবক টেক্সটাইল ভোকেশনালের শিক্ষার্থী। সে ওই মামলার কোনো আসামি নয়। এক আসামির সাথে শুধু তার নামের মিলের কারণেই পরবর্তীতে পুলিশ তাকে বাসা থেকে ধরে নেয়ার পর বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বন্দুকযুদ্ধের পর তার নামও মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ওই মামলার প্রকৃত আসামি জয়নাল এখনো জীবিত রয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওসমান গণির আদালতে মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেখানো জয়নালের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্তি করার একটি আবেদন করা হয়। মামলার বাদী শাহ আলম উক্ত আবেদন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেই জীবিত জয়নাল। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌসুলী পত্রিকাকে বলেছেন, ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে একটি মারামারির মামলায় পরবর্তীতে এক আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেখিয়ে আদালতের চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। মূলত ওই আসামি জীবিত রয়েছে। ক'দিন আগে ওই আসামি আদালতে আসে। এসময় মামলার চার্জশিটে আসামি হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্তির একটি আবেদন করেছেন বাদী। আদালত আগামী ১৩ অক্টোবর শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।
তিনি জানান, যেহেতু মামলার মূল আসামি জীবিত রয়েছে, তাহলে বন্দুকযুদ্ধে অন্য কেউ মারা গেছে। আদালতে আগামী ১৩ অক্টোবর শুনানিতে এই বিষয়টি উত্থাপনের পাশাপাশি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি মূলত কি ছিল তা জুডিসিয়াল তদন্তের জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। আদালত সূত্র জানায়, মামলার অভিযোগপত্রে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি হিসেবে জয়নালের নাম রয়েছে। তার বাবার নাম আব্দুল জলিল। ঠিকানা রয়েছে বায়েজিদ থানাধীন আমিন জুট মিলস এলাকা সংলগ্ন রৌফাবাদ কলোনীতে। অন্যদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া জয়নাল বায়েজিদ থানাধীন আমিন জুট মিল সংলগ্ন আতুরার ডিপো এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। সে বায়েজিদ টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।'
'বন্দুকযুদ্ধ' করতে পুলিশ এতই আগ্রহী ছিল যে এক অপরাধীর পরিবর্তে তারা হত্যা করল এক নিরপরাধ তরুণকে। এই যে একজন নিরপরাধ তরুণ শুধু নামের মিল থাকার কারণে এত বড় রাষ্ট্রীয় অন্যায়ের শিকার হলো এখন রাষ্ট্র কিসের বিনিময়ে এই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবে?
একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুর পর টেকনাফ থানার ওসির বিরুদ্ধে আরও ডজন ডজন অভিযোগ আসতে থাকে। সে সঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এমনকি মামলাও হতে থাকে। তার মানে থানার ওসিদের ওপর মানুষ বিরক্ত হয়ে আছে বেশ আগে থেকে, ভয়ে ও সুযোগের অভাবে তা প্রকাশ করতে পারেননি। এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হলো, থানার ওসিরা কি জবাবদিহিতার বাইরে? ওদের অন্যায় কর্মকাণ্ড তদারকি করার কি কেউ নেই? কিংবা ওসি প্রদীপ গত ২২ মাস টেকনাফে কী করেছে তা কি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে ছিল না? প্রদীপ কি রাতারাতি এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল?
৩
এ বিষয়ে আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার বাসার পাশেই সিটি করপোরেশন পরিচালিত একটি স্কুল আছে। স্কুলটির দুটো শিফট। প্রভাতে প্রাথমিক এবং বেলা এগারোটা থেকে মাধ্যমিক। বাসায় থাকলে দিনে দুবার আমি সে স্কুলের শিক্ষার্থীদের গাওয়া জাতীয় সঙ্গীত শুনি। স্কুলের কার্যক্রমের শব্দ শুনতে শুনতে ভাবি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক চাইলে বাংলাদেশকে অনেকটা পাল্টে দিতে পারে। যেমন, একজন প্রধান শিক্ষক যদি সিদ্ধান্ত নেন তিনি প্রতিবছর অন্তত দশজন শিক্ষার্থী তৈরি করবেন যারা সততা, নিষ্ঠা, মানবতা ও দেশপ্রেমে আজীবন অবিচল থাকবে। বর্তমানে মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা যদি ২০ হাজার হয় তাহলে একটি স্কুল থেকে অন্তত যদি দশজন শিক্ষার্থী বের হয় তাহলে একবছরে তার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ। পাঁচ বছরে হবে দশ লাখ। দেশ ও সমাজ বদলের জন্য দশ লাখ সৎ কর্মী অনেক বড় শক্তি। অন্যদিকে পুলিশ বাহিনী হচ্ছে শাসন বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শাসনকার্য পরিচালনা এবং জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। সে বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে থানা আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন একজন ওসি। দেশের সব থানার ওসিরা চাইলে সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে মাত্র পাঁচ বছরেই দেশের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
একটি অনুষ্ঠানে আমি আমার এই মতামত তুলে ধরেছিলাম। অনুষ্ঠানে একজন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। আমার বক্তব্যের প্রথমাংশের সঙ্গে সহমত পোষণ করে ওসিদের বিষয়ে তিনি একান্তে আমাকে বললেন, এই বিভাগে আগে তৃণমূলে হাত দিলে হবে না। তাতে কোনোকিছুই বদলাবে না। ওপর মহল যদি না বদলায়। আমি তার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে নিশ্চুপ রইলাম।
৪
এরমধ্যে একটি ঘটনা কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে সাধারণ মানুষের মনে। দেশে পুলিশি নির্যাতন বা থানা হেফাজতে নির্যাতনের খবর জানেন না এমন কোনো ব্যক্তি নেই। এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিককর্মীদের অভিযোগ ও উদ্বেগের শেষ ছিল না। শেষ পর্যন্ত থানা হেফাজতে নির্যাতনের মামলার একটি রায় ঘোষিত হয়েছে। রায়ে ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এমন রায় বাংলাদেশে এই প্রথম।
ছয় বছর আগে রাজধানীর পল্লবীতে একটি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে ইশতিয়াক হোসেন (জনি) ও তার ভাই ইমতিয়াজ হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পল্লবী থানায় ইমতিয়াজকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে পুলিশ। তখন বড় ভাই ইশতিয়াক তাতে বাধা দিলে তাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ইশতিয়াকের বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরেন এসআই জাহিদুর রহমান। ইশতিয়াক একটু পানির জন্য আকুতি জানান। পানি না দিয়ে তার মুখে থুতু ছিটিয়ে দেন এসআই জাহিদ।
থানা হেফাজতে নির্যাতনে ইশতিয়াকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার রায় ঘোষণার সময় পানি চাইলে মুখে থুথু দেওয়ার কথা তুলে ধরেন বিচারক। তিনি থানা হেফাজতে পুলিশের এমন আচরণকে 'চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন' বলে মন্তব্য করেন। গত বুধবার মামলাটির রায় দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস।
মামলার রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ইসলাম ও এএসআই কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর দুই আসামি পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) সুমন ও রাসেলের সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এটি সাত বছর আগে পাস হওয়া নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে করা কোনো মামলার প্রথম রায়। ২০১৩ সালে আইনটি পাস হয়। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহত ইশতিয়াকের ছোট ভাই ও মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। যার কারণে তিনি মারা যান। ইশতিয়াক জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে করা এই মামলার বিচার পেতে তাদের অনেক বাধাবিপত্তি পেরোতে হয়েছে।
বেসামরিক ও গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় পুলিশের একটি বড় ভূমিকা আছে। করোনাকালেও এই পুলিশ বাহিনী প্রশংসনীয় বহু কাজ করেছে। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বাহিনীর ৭৬ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনীর অগ্রণী ভূমিকা আছে। আজ একের পর এক কেলেঙ্কারির কারণে এই বাহিনীর মনোবলও ভেঙে পড়ার কথা যা কখনো দেশের মঙ্গল বয়ে আনবে না। মনে রাখতে হবে গণতান্ত্রিক সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত হলে, তার ওপর জনগণের আস্থা উঠে গেলে তার সুযোগ নেবে কোনো অশুভ ও অগণতান্ত্রিক শক্তি। আমরা অতীতেও দেখেছি কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা গ্রহণের আগে আগে বেসামরিক সরকারকে বিব্রত ও বিতর্কিত করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। কাজেই গণতান্ত্রিক সরকারকে দেশ এবং একই সঙ্গে নিজেদের স্বার্থে অন্যায়, অন্যায্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে দল ও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। সেইসঙ্গে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে, পুলিশকে গণমুখী করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশের সমস্যা অন্তহীন। তার ওপর মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা নাজুক। এরমধ্যে চলছে ভ্যাকসিন রাজনীতি। ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সবকিছু দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হলে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির প্রয়োজন। এসময় বিশেষভাবে সরকারের সব বিভাগের মধ্যে সৌহার্দ্য ও পরস্পর বিশ্বাসপূর্ণ সম্পর্কের দরকার। তা না হলে যে কোনো সময় দুর্যোগ ঘনিয়ে আসতে পারে।