Published : 30 Jun 2020, 12:23 AM
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বেঈমান মীর জাফর আর তার মোনাফেক সাঙ্গপাঙ্গদের ষড়যন্ত্রে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা হরণ করেছিল সাম্রাজ্যেবাদী বৃটিশ বেনিয়া। তারও দুইশ বছর পর এ বাংলার মাটিতে ঢাকার রোজ গার্ডেনে একই দিন ১৯৪৯ সালের ২৩ জুনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আজকের ৭১ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ- অপহৃত স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধারের মহান লক্ষ্যে, দৃপ্ত শপথে।
উপমহাদেশে কংগ্রেস, মুসলিম লীগের পরেই আওয়ামী লীগ তৃতীয় প্রবীণ রাজনৈতিক দল। কর্মী-সমর্থকের দিক দিয়েও আওয়ামী লীগ সম্ভবত উপমহাদেশে কংগ্রেস, বিজেপির পরে আওয়ামী লীগ তৃতীয় বৃহত্তম দল।
সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি শাসন আমলে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের বীজটি বপন করেছিলেন মাওলানা ভাসানী, সার দিয়েছিলেন শামশুল হক, পানি দিয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী। কিন্তু আওয়ামী লীগের চারা গাছটি সুদীর্ঘ বছর পরিচর্যা করে মহীরুহ বট বৃক্ষে পরিণত করেছিলেন বাঙালির হাজার বছরের কাংক্ষিত প্রাণপুরুষ ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক রাষ্ট্রপিতা শেখ মুজিব।
এই আওয়ামী লীগের ছায়াতলে ধীরে ধীরে সমবেত হয়েছিল হাজার বছরের পরাধীন, বঞ্চিত, লাঞ্চিত, শোষিত বাঙালি জাতি, মুক্তির সোনালী সূর্যের প্রত্যাশায়। এই আওয়ামী লীগের মুক্তির কাফেলা সুদীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলন, রক্ত ও আত্মদানের মধ্যে দিয়ে স্বাধিকারের পথ ধরে স্বাধীনতার স্বর্ণ দুয়ারে উপনীত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবের কালজয়ী নেতৃত্বে।
আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ইতিহাস
জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের পথচলা গণমানুষের সার্বিক অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামের কণ্টকাকীর্ণ পথে। উপমহাদেশে আওয়ামী লীগের মত এত সংগ্রাম, আন্দোলন, রক্ত ও আত্মদান অন্য কোন রাজনৈতিক দল দেয়নি, করেনি। আওয়ামী লীগের মত অন্যকোন দলের উপর এত নির্যাতন, জেল জুলুমও নেমে আসেনি। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য স্বাধীনতাপূর্বে মুসলিম লীগ, ইস্কান্দার মির্জা, আইউব, ইয়াহিয়া, টিক্কা, নিয়াজীর মত হার্মাদরা আওয়ামী লীগের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হিংস্রতা নিয়ে, কিন্তু কোথায় আজ তারা? পরাজিত দানবেরা আজ ইতিহাসের অন্ধকূপে তলিয়ে গেছে ।
স্বাধীনতাত্তোরকালে জাসদ, গণবাহিনী, সর্বহারা পার্টি, চরমপন্থি বিভ্রান্ত কমিউনিস্ট, ন্যাপ ভাসানী, ইতিহাসের দ্বিতীয় মীর জাফর মোশতাক ও তার লেলিয়ে দেওয়া ফারুক, রশীদ, হুদা,পাশা প্রমূখ নরপিশাচরা, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জিয়া, এরশাদ,খালেদা, জামাত, হেফাজত, জঙ্গি, কত শক্তি, কত গোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। আঘাত করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ পাল্টা আঘাতে তাদের প্রত্যেককে একে, একে ধরাশায়ী করেছে। একে একে সবাই বিলীন হয়ে গেছে। খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে কোন কোন দল আওয়ামী লীগের বি-টিম হয়ে অথবা আওয়ামী লীগের দয়ায় কোনমতে বেঁচে আছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিও আজ জাসদ, মুসলিম লীগ বা ভাসানী ন্যাপের মত বিলুপ্তির পথে। রাজনৈতিক হাসপাতালে বিএনপি আজ ক্লিনিক্যালি ডেড। এখন তার রাজনৈতিক কবর সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখনো তার গৌরব দীপ্ত বিজয়ের মুকুট ধারন করে হিমালয়ের মত সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের জলন্ত সাক্ষী হয়ে।
বর্তমান বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র আনপ্যারালাল রাজনৈতিক দল। এত অত্যচার জুলুম নির্যাতনের পরেও আওয়ামী লীগ কোন শক্তি বলে টিকে আছে? যেখানে আওয়ামী লীগের পূর্বে জন্ম নেওয়া কংগ্রেস আজ ভারতের মাটিতে হাঁটু ভেঙে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আর মুসলিম লীগ পাকিস্তানের মাটিতে কোমড় ভেঙে উপর হয়ে পড়ে আছে। তা বুঝতে হলে আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস দেখতে হবে।
আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস
আওয়ামী লীগের জন্ম সাম্রাজ্যেবাদী ব্রিটিশের পৃষ্ঠপোষকতায় কংগ্রেস, মুসলিম লীগের মত নবাব, নাইট, জমিদারদের বা ভূস্বামীদের হাতে নয়। তাদের মতো আলিশান প্রাসাদেও নয়। সামরিক জান্তার পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের ভুট্টোর পিপির মত অথবা বিএনপি, জাতীয় পার্টির মত ক্ষমতার মধুচাকে নয়। আইউব, জিয়া, এরশাদের মতো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বন্দুকের নলেও আওয়ামী লীগের জন্ম নয়।
আওয়ামী লীগের জন্ম বাংলার মাটিতে স্বদেশী ভূমিপুত্রদের হাতে। আওয়ামী লীগের বিকাশ ও প্রসার বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিপুত্র শেখ মুজিবের হাতে। এর শিকড় বাংলার পলি মাটির গভীরে প্রোথিত। বাংলা ও বাঙালির নাড়ির বন্ধন আওয়ামী লীগ। বিশুদ্ধ বাঙালির রক্তে,হাড্ডি মজ্জায় মিশে আছে আওয়ামী লীগ। বাংলার ষড়ঋতুতে, সংস্কৃতিতে, সঙ্গীতে মিশে আছে আওয়ামী লীগ। বাঙালির মসজিদে, মন্দিরে, গির্জায়, প্যাগোডায় সবখানে আছে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব।
রবীন্দ্র সংগীতে, নজরুল গীতিতে, লালন সঙ্গীতে, হাসন রাজার গানে, ভাটিয়ালি, পল্লী গীতিতে আছে আওয়ামী লীগের অনুরণন। কানপেতে শুনলে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, সুরমার কলতানে শোনা যায় আওয়ামী লীগের রণধ্বনী 'জয়বাংলা'। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিতে, নজরুলের অগ্নিবীণায়, জীবনানন্দের রূপসী বাংলায়, জসিমউদদীনের নক্সী কাঁথার মাঠে একাকার হয়ে আছে আওয়ামী লীগ। তাই দেখা যায়, সরাসরি আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন না বা রাজনীতি করেন না, এরকম এক বিশাল সাধারণ বাঙালির অবচেতন মনেও আওয়ামী লীগ বিরাজমান। এখানেই আওয়ামী লীগের আদর্শের যথার্থতা ও সার্থকতা।
বাংলা বর্ণমালা থেকে, বিশুদ্ধ বাঙালির হৃদয় ও রক্ত থেকে আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হয়, তাহলে বাঙালি তার আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয় হারাবে। বাংলাদেশ পরিণত হবে গৃহযুদ্ধ কবলিত জঙ্গি ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে। ফলে নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ভারত/বার্মা বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে।