Published : 26 Aug 2016, 04:55 PM
বর্তমান বিশ্বের প্রধান সমস্যা জঙ্গিবাদ। আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে কোনো না কোনোভাবে জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। এ তালিকায় আছে বাংলাদেশও।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার গুলশান এবং শোলাকিয়ার দুটি জঙ্গি হামলা চালিয়েছে উগ্রপন্থী ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা। গুলশান ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। শোলাকিয়ার হামলার দায় কোনো গোষ্ঠী স্বীকার করেনি।
এরপর ফ্রান্সের নিস শহরে এক তিউনিশীয় বংশোদ্ভূত ফরাসি বাস্তিল উৎসবের দিন জনতার ওপর ট্রাক চালিয়ে হত্যা করে ৮৪ জনকে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে জার্মানিতে ঘটে পর পর দুটি হামলা। এ পাঁচটি ঘটনাই ঘটেছে গত জুলাই মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালের আগেও বেশ কয়েকটি বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এসবের অন্যতম রমনা বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা (২০০১), বিরোধী দলের জনসভায় গ্রেনেড হামলা (২০০৪) এবং ২০০৫ সালে একসঙ্গে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত যতগুলো জঙ্গি হামলা হয়েছে তার সবগুলোই ছিল নিশানা করে হত্যার ঘটনা। এসব হামলায় নিহত ৪৯ জনের তালিকায় রয়েছে মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক, শিক্ষক, সুফিপন্থী ইসলামিক নেতা এবং খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরোহিত। হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে আরও অনেক পুরোহিত, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীকে।
অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বে ফ্রান্স আগেও কয়েকবার জঙ্গিবাদী হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। ফ্রান্স ছাড়াও জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের 'টুইন টাওয়ার' এবং পেন্টাগনে চালানো হামলা এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ও ভয়াবহ। আল-কায়দা পরিচালিত এ হামলা '৯/১১' নামে পরিচিত।
উগ্র ইসলামী জঙ্গিরা বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও নিয়মিত হামলা করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হচ্ছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া ও মিসর। ইরাক ও সিরিয়ায় তারা রীতিমতো সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এসব দেশে যুদ্ধরত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম আইএস, আল-কায়েদা ও আল-নুসরা ফ্রন্ট। আফগানিস্থান ও পাকিস্তানের জঙ্গিদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী তালেবান। উপমহাদেশে তালেবান ছাড়াও রয়েছে আল-কায়দার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।
জঙ্গিবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে দেশে-বিদেশে। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান সম্পর্কে ডানপন্থীদের ধারণা হল মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানেই জঙ্গিবাদী। এরা অন্য ধর্মের অনুসারীদের হত্যা করে বিশ্বজুড়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে এর প্রতিফলন দেখা যায়। ডানপন্থীদের এ রকম ধারণার প্রতিফলন দেখা যায় ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের চলাফেরার ওপর বিভিন্ন রকমের কড়াকড়ি আরোপের মধ্যে।
বাংলাদেশের ডান এবং বামপন্থীরা বলে বেড়ান, দেশে গণতন্ত্রের চর্চা নেই বলে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে; সরকার জঙ্গিবাদ লালন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়। মধ্যপন্থীরা মনে করেন, সৌদি ওয়াহাবী ধারার অনুসারী মওদুদীবাদী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলাম জঙ্গিবাদের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সেক্যুলার শাসনতন্ত্র বাতিল করে, উগ্র ইসলামী ধ্যান-ধারণায় ইসলামিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।
ঠিক কী কী কারণে পৃথিবীময় জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ঘটছে আর কী করলে তা নির্মূল হবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে বিশ্বনেতা ও রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ধর্মীয় নেতা, আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে।
আন্তর্জাতিক সমস্যা জঙ্গিবাদকে বুঝতে হলে যেতে হবে এর গোড়ায়।
যেসব দেশে জঙ্গি হামলা হচ্ছে তাদের দুভাগে ভাগ করা যায়–
১. ইউরোপ ও আমেরিকার শিল্পোন্নত দেশসমূহ যারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইরাক এবং সিরিয়ায় যুদ্ধ করছে;
২. মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহ যেখানে শরীয়া আইনানুসারে রাষ্ট্র গঠনের বা পরিচালনার জন্য উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি বিদ্যমান।
পশ্চিমা দেশগুলোতে জঙ্গি হামলার কারণ–
ক. মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে জঙ্গি দমনের নামে নির্বিচারে বোমাবর্ষণের ফলে জঙ্গিদের এবং সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। এতে জঙ্গিদের টিকে থাকা কষ্টকর হচ্ছে;
খ. ৯/১১-পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উপর নেমে আসা বিভিন্ন রকমের হয়রানি এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালনের স্বাধীনতা কমে যাওয়া।
এসব কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাসরত কট্টর ও উগ্র মুসলিম পরিবারগুলো মানসিক চাপে ভুগছে প্রায় দেড় দশক ধরে। দীর্ঘদিনের নিগ্রহের ফলে এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা প্রতিবাদী হয়ে পরিবার ছেড়ে আইএসে যোগ দিতে ঘর ছাড়ছে। কেউ কেউ নিজ দেশে থেকেই প্রতিবাদ করেছে ধ্বংসাত্মক উপায়ে।
লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিনের কয়েক শ তরুণ আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য ঘর ছেড়েছে। অরল্যান্ডোর সমকামী নাইট ক্লাবে হামলায় আফগান বংশোদ্ভূত আমেরিকান, মিউনিখ শপিংমলে ইরানী বংশোদ্ভূত জার্মান এবং নিস শহরের তিউনেসিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এর আগে প্যারিসের স্টেডিয়ামে ও ক্যাফেতে এবং বেলজিয়ামে যারা হামলা চালিয়েছে তারা সবাই ইউরোপের নাগরিক।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে জঙ্গিবাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশে স্যেকুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে ধর্মীয় রাজনীতি চালু রয়েছে– সেসব দেশে উগ্র ধর্মীয় রাজনীতিবিদেরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার বা ইসলাম বিপন্নের নামে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উপায় হিসেবে জঙ্গিবাদকে বেছে নিয়েছে। তারা মনে করে, জঙ্গি হামলা ঘটালে একদিকে ধর্মান্ধ মানুষদের মধ্যে ধর্মের প্রতি আগ্রহ-আনুগত্য বৃদ্ধি পাবে এবং একই সঙ্গে জিহাদি জোশ সৃষ্টি হবে।
এই বাড়তি জিহাদি জোশ কাজে লাগিয়ে আরও বেশি জঙ্গি জোগাড় করা যাবে এবং আরও বেশি হামলা ঘটানো যাবে। এর মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে স্যেকুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার ধ্বংসস্তূপের উপর শরীয়াভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করে গণতন্ত্রমুক্ত পরিবেশে অনেক কাল ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ করা যাবে।
ধর্মের নামে ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা করা বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে ধর্মের বাণী অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও রাষ্ট্রক্ষমতায় ভাগ বসানোর আশায় অ-সন্ত্রাসী ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলো ধর্মের নামে চালিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে না; জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে না।
জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলো সৃষ্টির পেছনে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের হাত রয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক সঙ্কট জঙ্গিবাদের বিকাশ হয় আফগানিস্তানে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ চলাকালে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ এবং ওআইসি সরাসরি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধ না করে গোপনে পাকিস্তানের মাধ্যমে আফগান মুজাহিদদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়েছে। এই মুজাহিদরা পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় এবং সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। পরবর্তীকালে ১৯৯৪ সালে পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে 'তালেবান' গড়ে তোলেন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর।
কীভাবে পাকিস্তানের জঙ্গিরা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আমেরিকা পরিচালিত প্রক্সি যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তা ইউএস হাউসের আপ্রেপ্রিয়েশন কমিটির এক সাব-কমিটির শুনানিতে সম্প্রতি ব্যখ্যা করেন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেন–
"আজ আমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, তাদের আমরা ২০ বছর আগে অর্থায়ন করেছি। আমরা তা করেছি কারণ, তখন আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম।"
তালেবান দর্শন গড়ে উঠেছে সালাফি জিহাদি মতবাদ, ভারতের দেওবন্দী মতবাদ, জঙ্গি ইসলামিক মতবাদ এবং পশতুনের স্থানীয় রীতিনীতি নিয়ে। ১৯৯৬ সালে তালেবান মুজাহিদদের হটিয়ে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। সে সময় তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল মাত্র তিনটি দেশ: পাকিস্তান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিনিরা হামলা করে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে। তালেবানের সঙ্গে মতাদর্শগত যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক ঐক্য রয়েছে পাকিস্তানের এবং বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী শ্লোগান দিয়েছে–
"আমরা হব তালেবান/বাংলা হবে আফগান।"
সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে সৌদি আরব এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের হয়ে অংশ নেওয়া আরেক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হল সৌদি আরবভিত্তিক ও সালাফি মতাদর্শী আল-কায়দা। তালেবান ও আল-কায়েদার মধ্যে রয়েছে অনেক মতাদর্শগত মিল। সম্পর্ক রয়েছে কাশ্মীর, উজবেকিস্তান, ফিলিপাইন এবং আলজেরিয়ার বিভিন্ন উগ্রবাদী ধর্মীয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার ৩০-৪০টি দেশে বিস্তৃত রয়েছে এদের নেটওয়ার্ক। লন্ডন, হামবুর্গ, মিলান ও মাদ্রিদে এদের উপস্থিতি রয়েছে।
কমিউনিজমের হাত থেকে ইসলাম রক্ষার জন্য সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে মার্কিন এবং সৌদি সাহায্যে মুজাহিদদের পক্ষে অংশ নেওয়া বহু আরব স্বেচ্ছাসেবী পরবর্তী সময়ে ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে ১৯৮৯ সালে 'আল-কায়দা' গঠন করে।
অনেক পশ্চিমা পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিন লাদেন আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর কাছ থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা, সৌদি ধনকুবের বিন লাদেনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের ব্যবসায়-সংক্রান্ত সম্পর্ক ছিল বলে গল্প চালু আছে আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে।
বেশির ভাগ আমেরিকান বিশ্বাস করে, ৯/১১ হামলায় শুধু তালেবানই নয়, যুক্ত ছিল সৌদি সরকার তথা রাজপরিবার। সৌদি আরব এবং আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সৃষ্ট তালেবান এবং আল-কায়দা পরবর্তী সময়ে আমেরিকার শত্রুতে পরিণত হয়।
২০০১ সালে আল-কায়দা আমেরিকা আক্রমণ করলে আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করে আল-কায়দা সমর্থিত তালেবান সরকার ক্ষমতাচ্যুত করে ১৫ বছর ধরে তাদের সঙ্গে সম্মুখ সমর চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান পৃথিবীর প্রধান আতঙ্ক আইএস। এই আইএসের জন্ম কীভাবে?
২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রাখার অভিযোগে আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা সহযোগীরা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আক্রমণ করে ইরাক। পরবর্তী সময়ে ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্র রাখার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আল-কায়দা ঘনিষ্ঠ উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী জামায়াত আল-তাওহিদ আল-জিহাদ অন্যান্য বিদ্রোহীদের সঙ্গে যৌথভাবে মুজাহেদিন সুরা কাউন্সিল গঠন করে পশ্চিমাদের ইরাক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এরাই ২০০৬ সালে 'ইসলামিক স্টেট অব ইরাক' (আইএসআই) গঠন করে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সেখানে আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে নিজেদের যোদ্ধা পাঠিয়ে সেখানকার আল-নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ২০১৩ সালে গঠন করে 'ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত' (আইএসআইএল বা আইসিল)।
আল-নুসরা ফ্রন্টের নেতা আল-জুলানি এবং আল-কায়দা নেতা জাওয়াহিরি পরবর্তীতে এই ঐক্য অস্বীকার করেন। ২০১৪ সালে আল-কায়দা আইসিলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে। পরবর্তীতে আল-বাগদাদি তাঁর অনুগত অংশকে 'ইসলামিক স্টেট' (আইএস) নাম দিয়ে 'খেলাফত' প্রতিষ্ঠা এবং নিজেকে 'খলিফা' ঘোষণা করেন।
মূলধারার ইসলামিক চিন্তাবিদেরা এই খেলাফত অস্বীকার করেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আমেরিকার ইরাক দখলের এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পশ্চিমাদের অনধিকার প্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় গড়ে উঠেছে আইএস।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মিধ্যে বিবাদ দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের সহায়ক শক্তি ইজরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বাগদাদিকে প্রশিক্ষিত করে আইএস সৃষ্টি করেছে।
তালেবান, আল-কায়দা, আইএস, আল-নুসারা ফ্রন্ট, জামায়াতে ইসলামী– এদের মধ্যে বেশ কিছু মিল আছে। এরা সবাই সুন্নিপন্থী এবং অবধারিতভাবে শিয়াবিরোধী। আরও মিল হচ্ছে, এরা সবাই সৌদি রাজতন্ত্র গৃহীত ইসলামের ওয়াহাবী মতবাদ এবং তা থেকে উদ্ভূত সালাফি বা মওদুদী মতবাদের অনুসারী। এরা নিজেদের মৌলিক ইসলামের অনুসারী বলে মনে করে এবং ওয়াহাবী, সালাফি ও মওদুদী ব্যতিত ইসালামের অন্য যে কোনো মতবাদ এরা সহ্য করে না। এরা অন্যান্য ইসলামী মাজহাবের ঘোর বিরোধী। এরা জিহাদি। এরা ভিন্ন মতের মানুষকে হত্যা করা উচিৎ বলে মনে করে। এরা বিভিন্ন সময়ে সৌদি, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। জমায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন এরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যও পেয়েছে।
ওয়াহাবী এবং সালাফি মতবাদের জঙ্গিরা বিভিন্নভাবে সৌদি আরবের আর্থিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন পায়। সৌদি রাজতন্ত্র বিশ্বব্যাপী ওয়াহাবিজম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। সৌদি আরব প্রকাশ্যে এসব জঙ্গিদের সংস্পর্শ এবং সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে না। যেমন করে না সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের বন্ধু আমেরিকা।
সৌদি স্বার্থ রক্ষার্থে আমেরিকা ও তাদের মিত্ররা শিয়াবিরোধী অবস্থান নিয়ে ইরানের সঙ্গে বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ, লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেন কেউই সৌদিপন্থী নন বা ছিলেন না বলে আমেরিকার রোষানলে পতিত হয়ে তাঁদের জীবন দিতে হয়েছে। একমাত্র ব্যাতিক্রম বাশার আল-আসাদ।
আরব বসন্তের ধোঁয়াশায় যখন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ আসাদের উপর খড়্গ নামাচ্ছে তখন রাশিয়া অনেকটাই শক্তি অর্জন করে বিশ্ব রাজনীতিতে ফিরে এসেছে। রাশিয়ার সমর্থনের কারণেই এখনও প্রাণ যায়নি আসাদের।
সৌদি আরব, আমেরিকা এবং তাদের মিত্রদের দ্বারা সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে মুজাহিদদের অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য দিয়ে সৃষ্টি করা দুটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন; ৯/১১-এর প্রতিক্রিয়ায় আফগানিস্তানে চালানো আগ্রাসন; মিথ্যা গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাতে ইরাকে কয়েক লাখ নিরীহ মানুষ হত্যা; একটি সেক্যুলার সরকারের প্রধান সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা; এবং সিরিয়া ও লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদের অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট জঙ্গিবাদ আজ পৃথিবীর এক নম্বর সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
৯/১১ এবং অন্যান্য জঙ্গি হামলার মাধামে এবং 'অশেষ' আফগান যুদ্ধে তার খেসারত দিচ্ছে সৌদি আরবসহ ইসলামী বিশ্ব এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ। প্রায় প্রতি সপ্তাহে পৃথিবীর কোনো না কোনো শহর আক্রান্ত হচ্ছে জঙ্গি হামলায়; প্রাণ দিচ্ছে শত শত নিরীহ মানুষ।
কমিউনিজম ঠেকাতে ইসলামী জঙ্গিবাদের ব্যবহার আজ ফ্রাংকেন্সটাইন হয়ে শুধু পশ্চিমেই নয় ফিরে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যে, এশিয়ায়, আফ্রিকায়। একে আর দুধ কলা দিয়ে পুষে রাখা সম্ভব নয় পরাশক্তিদের পক্ষে। তাদের এখন 'জঙ্গি রাজনীতি' বন্ধ করতে হবে।
সৌদি ওয়াহাবিজম, সালাফিজম এবং পাকিস্তানি মওদুদীবাদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে তাদের সরে আসা শুরু হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এর ফলাফল দৃশ্যমান হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে এখন আর শুধু পশ্চিমাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ নেই। চীনের সমর্থন নিয়ে এখানে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে রাশিয়া। পশ্চিম এবং রাশিয়ার সহাবস্থানে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এশিয়ার অন্যান্য দেশেও। বাংলাদেশও এই প্রভাব-বলয়ের বাইরে নয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে আমেরিকা বিভিন্ন অজুহাতে একে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি ঠেকাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি টেলিফোনে চাপ দিয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। আমেরিকার আরেক দোসর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছিল জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য।
সৌদি স্বার্থ রক্ষায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশেও ওয়াহাবী রাজনীতির বাস্তবায়ন চায় আমেরিকা। ওয়াহাবী রাজনীতি বাস্তবায়িত হলে তারা ছলে-বলে-কৌশলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বাংলাদেশেও স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়ন করতে পারবে; নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর তথা প্রশান্ত মহাসাগর; রোধ করতে পারবে প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের জয়যাত্রা।
সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণ বদলে দিয়েছে হিসেব-নিকেশ। মুক্তিযুদ্ধের মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলেছিলেন গভীর বন্ধুত্ব। সোভিয়েত রাষ্ট্রের অনুসরণে তিনি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন 'বাকশাল'। ২০১০ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া সফর করেন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন দুদেশের মৈত্রী। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের পক্ষে থাকা চীন এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চললেও আমেরিকার ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।
২০১৩ সালের রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে চীন, রাশিয়া ও ভারত। এই তিন বৃহৎ শক্তির প্রভাবে বাংলাদেশ রাজনীতিতে আমেরিকা এখন অনেকটাই কোণঠাসা; তবে নিষ্ক্রিয় নয়। কোণঠাসা অবস্থাতেই তারা চেষ্টা করছে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি এগিয়ে নিতে। জঙ্গিবাদ দমনে জঙ্গিবাদী জামায়াত-বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে 'জাতীয় ঐক্য' গঠনের জন্য বিএনপির মুখ দিয়ে আমেরিকা এখন চাপ দিচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
জঙ্গিবাদী জামায়াতের রাজনৈতিক সহচর বিএনপি গুলশান হামলা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করতে তাদের নিয়ে 'জাতীয় ঐক্য' গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে সরকারের প্রতি। এর জবাবে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আসার শর্ত দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির একজন শীর্ষনেতা জামায়াতকে বিএনপি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। এর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় দালালেরা। জামায়াত-বিএনপি পরিচালিত ২০১৫ সালের পেট্রোলবোমা-সন্ত্রাস চলাকালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি আবারও ঘোলাজলে মাছ শিকারে নেমেছেন! বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনিও জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন। ড. কামাল ছাড়া অন্য যারা জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে 'জাতীয় ঐক্য' গঠনের কথা বলছেন তারা সবাই এ দেশে স্বঘোষিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। রাজনীতি সচেতন মানুষের কাছে এরা সবাই 'আমেরিকার দালাল' হিসেবে পরিচিত।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক আজন্ম। '৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং আমেরিকার মধ্যস্থতায় জামায়াতের ঔরসে জন্ম নেওয়া বিএনপির পক্ষে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তদুপরি বিএনপির সাংগঠিক শক্তি এখন তলানিতে। বিএনপির অভ্যন্তরে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও কলহ দিন দিন বেড়েই চলছে। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া বিএনপি এখন আশির দশকের মুসলিম লীগের সঙ্গে তুলনীয়। এমতাবস্থায় জামায়াতকে ছেড়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকা বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়।
রাজনীতির শক্ত জমিন– প্রতিশীলদের হতাশ করে কোনো কারণেই জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে 'জাতীয় ঐক্য' করতে পারে না আওয়ামী লীগ। জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে 'জাতীয় ঐক্যে' গঠনের প্রস্তাব তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। এই প্রস্তাবের ফলে মার্কিন দালালেরা আরেকবার পরাস্ত হল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে জামায়াত-বিএনপি যৌথভাবে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছে। তারা এই কল্পিত রাষ্ট্রের নাম দিয়েছে 'বাংলাস্তান'।
২০১৩ সালের ২৬ মার্চ মতিঝিলে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের এক মিছিলে কল্পিত 'বাংলাস্তানের' পতাকা ওড়ানো হয়। তারেক রহমানের জঙ্গি রাজনীতির উদ্দেশ্য 'বাংলাস্তান'। এ উদ্দেশ্য পূরণ হলে থাকবে না বছর বছর নির্বাচনের বালাই। জামায়াত ও হেফাজতের লোকদের সঙ্গে নিয়ে 'মজলিশে শূরা' গঠন করে ক্ষমতা ভোগ করা যাবে অনেক অনেক দিন।
'বাংলাস্তান' বানানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে জামায়াত ও হেফাজতের সঙ্গে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে দ্বিধা করেনি বিএনপি। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করার জন্য সংগঠিত সন্ত্রাস এবং হরতালে সমর্থন দিয়ে গেছে বিএনপি; ২০১৫ সালে অবরোধ ডেকে তাণ্ডব চালিয়েছে সারা দেশে। এ অধ্যায়ে পরাজিত হয়ে বেছে নিয়েছে গুপ্ত হত্যা বা টার্গেট কিলিং।
জঙ্গি হিসেবে এযাবৎ যতজনকে সরকার গ্রেপ্তার করেছে তাদের অধিকাংশই তিনটি সংগঠনের। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলো হচ্ছে: জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ওরফে আনসার আল ইসলাম ও হিযবুত তাহরীর।
জেএমবি গঠিত হয়েছে জামায়াতের প্রাক্তন সদস্যদের নিয়ে। আল-কায়েদার অনুসারী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে শিবিরের লোক। হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সরাসরি জামায়াতের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া না গেলেও দল দুটির মধ্যে মতাদর্শগত মিল রয়েছে; এরা ওয়াহাবী ধারার জিহাদি।
অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত জানিয়েছেন, বিদেশি অর্থ ছাড়াও জামায়াতী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর বিনিয়োগ হচ্ছে জঙ্গি চাষাবাদে। সুতরাং এখনই নিষিদ্ধ করতে হবে জামায়াত-শিবির। এরা নিষিদ্ধ হলে নির্মূল হলে বন্ধ হবে জঙ্গিবাদ।
গুলশান হামলার পর বহু দেশ বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করেছে; সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত বাংলাদেশ একা নয়। বিশ্বের শুভবুদ্ধির মানুষেরা আছে বাংলাদেশের সঙ্গে। সরকার এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বেশ ভালোভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। শহরে-গ্রামে তৈরি হচ্ছে নাগরিক প্রতিরোধ কমিটি। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই নয়, জঙ্গি দমনে মাঠে নেমেছে আনসার, ভিডিপি ও ছাত্রদের সংগঠন বিএনসিসি। সামাজিক সচেতনতা তৈরি হয়েছে। জঙ্গি চিহ্নিত করতে যার কাছে যে তথ্য আছে তা নিয়ে এগিয়ে আসছে সাধারণ মানুষ।
জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে যাওয়া জঙ্গিদের দমনে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সচেতন। মধ্যেপ্রাচ্যে জঙ্গি সৃষ্টি করার দায়ে তারা বিশ্ববাসীর কাছে নিন্দিত। অন্যায় ইরাক যুদ্ধের কারণে বুশ-ব্লেয়ার এখন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। পশ্চিমের সাধারণ মানুষ এখন এদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের দাবিতে সোচ্চার। এ রকম পরিস্থিতে ইসলামের নাম ভাঙানো জঙ্গিদের সমর্থন দেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে তাদের।
জঙ্গিবাদের বিলোপের মাধ্যমে নিশ্চিত হবেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিজয়।