Published : 18 Jul 2013, 09:21 PM
মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে দুটি রায়, মানুষের সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৫ জুলাই, ২০১৩ জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমকে ফাঁসির রায় না দেওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষ ভীষণরকম ক্ষুব্ধ হয়েছে।
ব্লগ, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ক্ষোভের ঝড় বয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে 'আঁতাতের' অভিযোগও তোলা হচ্ছে এখন। হতাশ-ক্ষুব্ধ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা পর্যন্ত সরকারকে 'রাজাকারের পাহারাদার' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে রায় বাতিল করার দাবিতে হরতালের ডাকও দেওয়া হল।
এমন একটি বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতেই ১৭ জুলাই ঘোষণা করা হয় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের 'ফাঁসি'র রায়। এ রায়ে দৃশ্যপট একেবারেই বদলে গেছে। গোলাম আযমের ফাঁসি না হওয়ায় যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তারা এবার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও তারা বলছেন, গোলাম আযমের রায়টির ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল করতে, যাতে আপিল বিভাগ রায় পুনর্বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে।
এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে কটি রায় ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব রায়ের মেরিট নিয়ে কোনো মন্তব্য না করেও বলা যায়, রায়গুলো আমাদের রাজনীতির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি পরিবর্তনের ধারা সূচিত করবে। একটি বৈধ ও স্বীকৃত আদালত থেকে একের পর এক জামায়াতের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা– এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের দেশের রাজনীতিতে ধর্মের নোংরা ব্যবহারের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র ও উগ্র মৌলবাদী রাজনীতিচর্চার 'প্রাণভোমরা' হল জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও রায় কার্যকর করার মাধ্যমে দলটির 'আদর্শিক' মৃত্যু নিশ্চিত হবে বলেই বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
এরপরও হয়তো এ দলের নেতা-কর্মী-শুভানুধ্যায়ীরা থাকবেন। কিন্তু সেটা হবে বর্তমান জামায়াতের কায়া মাত্র! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত দলগুলোর তিলে তিলে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়াটাই অনিবার্য পরিণতি হয়েছে।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, তাদের ফাঁসির রায় হবে, যাবজ্জীবন কিংবা ৯০ বছরের কারাদণ্ড হবে– এটা বছর দুই আগেও কেউ বিশ্বাস করেননি। আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাজাকার-ঘাতক দালালদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়গুলো প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছিল। উনিশশ একাত্তরে যারা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, বছর ছয় আগেও সে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যখন পতাকাশোভিত গাড়িতে করে দেশের অহংকারী মন্ত্রী হয়েছেন, তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি কেবলই দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন।
মাত্র ছয় বছরের মাথায় এই পরাক্রমশালী মন্ত্রী বাহাদুর যুদ্ধাপরাধের কারণে ফাঁসির দণ্ড পাবেন, এটা কেউ কখনও ভেবেছিল? না তাই ভাবা সম্ভব ছিল? এজন্য সত্যিই বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন জানাতে হয়।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজটি মোটেও সহজ বিষয় নয়। প্রচলিত আইনে বিচার করাটা আরও কঠিন কাজ। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার করতেও তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দুইবার ক্ষমতায় আসতে হয়েছিল। মাঝে এক টার্ম ক্ষমতায় আসতে না পারায় বিচারকার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। সে অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে এখন পর্যন্ত যতটুকু যা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে আশাপ্রদ।
মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল আজ থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিই বেশিরভাগ সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছে। এ দীর্ঘ সময়ে তারা নিজেদের পাপ ধুয়েমুছে ফেলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করার এবং নিজেদের নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। নতুন প্রজন্ম তাদের হিংস্র রূপের পরিচয় তেমনভাবে পায়নি। এই দীর্ঘ সময়ে তারা সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এমন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বিচারের পেছনে আওয়ামী লীগের যে 'মতলব'ই থাকুক না কেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে নিঃসন্দেহে একটি শ্রেষ্ঠ ঘটনা, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। বাংলাদেশের মতো মীরজাফর-কবলিত দেশে গোলাম আযম-সাঈদী-নিজামী-মুজাহিদ-কাদের মোল্লাদের টিকি কেউ স্পর্শ করতে পারবে– এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল।
বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে বা এ বিচার বানচাল করতে চেষ্টা কিছু কম হয়নি। জামায়াত এবং তাদের সমর্থকরা বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগবিরোধী প্রগতিশীলদের পক্ষ থেকেও আওয়ামী লীগকে জব্দ করতে ধর্মান্ধ দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ বিচারপ্রক্রিয়ার সমালোচনা করা হয়েছে, ছোটখাট ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে অনেক বড় করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এর পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠোকানোর লক্ষ্য তো ছিলই, ছিল আওয়ামী লীগকে কোনঠাসা ও অজনপ্রিয় করে মৌলবাদী গোষ্ঠীকেই বিজয়ী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। এ জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থও ব্যয় করা হয়। কথায় আছে, টাকা যখন কথা বলে ঈশ্বরও তখন চুপ করে থাকেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশসমূহে জামায়াতের টাকা কথা বলতে শুরু করে। প্রায় সাড়ে তিন দশকের অর্জিত অর্থ-সম্পদ তারা বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত নিজেদের নেতাদের রক্ষা করতে।
এতে তারা যে ব্যর্থ নয় তার প্রমাণ দি ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদন, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির স্কাইপে আড়িপাতা এবং তা তাদের সমর্থিত একটি পত্রিকায় প্রকাশ করা। যে বিতর্কে শেষ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেছেন। শুধু ইকোনোমিস্ট নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিটি গণমাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। ঘাতকদের ফাঁসির দাবি ও শ্লোগানকে উল্লেখ করা হয়েছে ''সভ্যতা ও মানবতাবিরোধী ফ্যাসিবাদী'' আাচরণ হিসেবে!
এমন পরিস্থিতিতে সব সীমাবদ্ধতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি, ষড়যন্ত্র ও সমালোচনা অগ্রাহ্য করে যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়াটা অবশ্যই একটা বড় কাজ। এখন রায় বাস্তবায়ন করাই হবে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না হওয়া, গোলাম আযমকে বয়স বিবেচনায় মৃতুদণ্ড থেকে রেহাই দেওয়াকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন। কাদের মোল্লা এবং সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না হয়ে দীর্ঘসূত্রতা চলছে।
বিচারপ্রক্রিয়ার এ ধীরগতির কারণেই শংকা জাগছে যে, বর্তমান সরকার তার মেয়াদকালে বুঝি এ বহুলআলোচিত বিচারকাজটি আর শেষ করতে পারছে না অথবা শেষ করতে চাচ্ছে না। ভেতরে ভেতরে কোনো সমঝোতার চেষ্টা চলছে কিনা তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
যদিও এমন সন্দেহের কোনো ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। কারণ গত এক বছরে জামায়াত-শিবিরের উন্মত্ত সন্ত্রাসীদের হাতে যে সংখ্যক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী ৩৩ বছরে সে সংখ্যক আওয়ামী লীগ কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে কিনা সন্দেহে। আর যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করাটাই ছিল জামায়াতের 'টুটি টিপে ধরা'। এ অনিবার্য 'মৃত্যু' থেকে বাঁচতে তাই তো জামায়াত রাজপথে যা কিছু করার তার সবটুকুই করেছে। এমন পরস্পর চরম বৈরী দুটি পক্ষের মধ্যে 'রাজনৈতিক আঁতাতের' গন্ধ খোঁজাটা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
তবে একথা ঠিক যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো জটিল ও কঠিন কাজটি বিতর্কমুক্ত ও সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যতটা সতর্কতার সঙ্গে সরকারের অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন ছিল, সরকার সেভাবে অগ্রসর হয়নি। জামায়াতের অর্থনৈতিক শক্তি এবং বিদেশি কানেকশন সম্পর্কেও সম্ভবত সরকারের সঠিক ধারণা ছিল না। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দেশের ভেতর রাজনীতিতে কী ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেটা যেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে এবং কাদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে সরকারের কৌশল কী হবে- তার কিছুই ভাবনার মধ্যে ছিল বলে মনে হয় না।
বিচারকাজ শুরু হওয়ার পরপরই এটা বোঝা যাচ্ছিল যে, জামায়াত একাই কেবল যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নয়, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও বিচার প্রশ্নে অত্যন্ত কৌশলে জামায়াতের অবস্থানকেই সমর্থন করছে। জামায়াত ও বিএনপির সম্মিলন একাত্তরের পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির অবস্থা যে এখন আর একাত্তরের জায়গায় নেই, সেটাও ভেবে দেখা হয়নি।
একাত্তরের বিজয়ী শক্তির ত্রুটি-দুর্বলতা-বিভেদ-অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে পরাজিত শক্তি বছরের পর বছর নানা কৌশল অবলম্বন করে যে তাদের চেয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অধিক শক্তিধর হয়ে উঠেছে, এ বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ার জন্যই সরকারকে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়েছে এবং এবং এখনও হোঁচট খেতে হচ্ছে। রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার স্পর্ধা জামায়াত-শিবির অর্জন করেছে এবং এখন তারা আর একা নয়, বিএনপি-হেফাজতসহ অনেক মিত্র তাদের আছে।
তবে এখন সরকারের আর পিছু হঠার অবকাশ নেই। যুদ্ধাপরাধের বিচার যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে এবং রায় কার্যকর হলে জনসমর্থন কমে যেতে পারে, জামায়াত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, বিএনপি তার সুযোগ নিয়ে বিশেষ মহলের সহযোগিতায় সব কিছু দখলে নিয়ে নিতে পারে, কাজেই যা হচ্ছে ধীরে হোক, কোনোরকমে চলুক– সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে এমন ভাবনা আছে বলে শোনা যায়। এ ধরনের ভাবনা যদি আওয়ামী লীগ ও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের থেকেই থাকে তবে তাকে অবশ্যই আত্মঘাতী বলতে হবে।
জামায়াত-শিবিরকে কনসেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। কোনো বিবেচনাতেই এ শক্তি আওয়ামী লীগের জন্য বাড়তি সুবিধার কারণ হবে না। ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠন যে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য সহায়ক হতে পারে না সেটা স্পষ্ট হয়েছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলেও। হেফাজতের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা করেছেন। কিন্তু তার ফল ভালো হয়নি।
বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে গড়িমসি না দেখালে সিটি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার গরজ বোধ করতেন; বাস্তবে যেটা তারা করেননি।
আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি অনুসরণের কারণেই তারা ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছেন। এটা ঠিক নয়। বরং তারা এক্ষেত্রে ছাড় দিতে গিয়েই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন। অন্যের রাজনীতি ধার করে আওয়ামী লীগ কখনওই ভালো করতে পারবে না– এ বিষয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব তথা দলের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে।
সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করে আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থন পাওয়ার আশা করলে সেটা হবে ভুল। গত সাড়ে চার বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ তার মিত্রসংখ্যা বাড়াতে না পারলেও শত্রু বাড়িয়েছে। আদর্শচ্যুত হলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল ও বিতর্কিত হয়, আর তার বেনিফিট যায় আওয়ামীবিরোধীদের ঘরে। সে জন্যই সব ধরনের পিছুটান বা দ্বিধাদ্বদ্ব পরিহার করে আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থাৎ গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাকেই এগিয়ে নিতে হবে।
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যে জাগরণ তৈরি হবে, তাতেই বরং আওয়ামী লীগের খারাপ শাসনের অপবাদ কিছুটা চাপা পড়তে পারে। আর এভাবেই তাদের পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব হলেও হতে পারে।
চিররঞ্জন সরকার : কলামিস্ট ও উন্নয়নকর্মী।