দিল্লিতে নির্ভয়ার চার ধর্ষক ফাঁসিতে ঝুললো

আট বছর আগে দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক প্যারামেডিকেল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছে ভারত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2020, 03:22 AM
Updated : 20 March 2020, 04:21 AM

আসামি অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন  গুপ্ত ও মুকেশ সিংকে ২০১৩ সালে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ভারতের একটি দ্রুত বিচার আদালত। ছয় বছর পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও তাদের সেই দণ্ড বহাল থাকে। 

শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় তিহার জেলে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ওই চার ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।  

বিবিসি লিখেছে, ২০১৫ সালের পর এই প্রথম কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল ভারতে।

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে ফেরার সময় চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হন ওই প্যারামেডিকেল ছাত্রী। ছয় পাষণ্ড ধর্ষণের আগে তার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। পরে তাদের দুজনকেই চলন্ত বাস থেকে ফেলা দেওয়া হয়।

এর দুই সপ্তাহ পর মারাত্মক আহত ওই ছাত্রী সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্র-জনতা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মেয়েটির নাম দেয় ‘নির্ভয়া’।

ভারতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন। ছবি: রয়টার্স

মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে মারা যান; পরে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। দোষী সাব্যস্ত আরেক অপরাধী সে সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর অপরাধীদের জন্য প্রযোজ্য আইনে ২০১৫ সালে তাকে তিন বছরের জন্য সংশোধনাগারে পাঠায় আদালত। আইন অনুযায়ী সেটাই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সর্বোচ্চ সাজা।

শাস্তির মেয়াদ কাটিয়ে ২০১৫ সালে সেই তরুণ মুক্তি পেলে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ বিবেচনা করে বিচারের আইন হয় ভারতে।

ভারতের একটি দ্রুত বিচার আদালত ২০১৩ সালে বাকি চার আসামির ফাঁসির রায় দেয়। পরের বছর হাই কোর্ট এবং গতবছর আপিল ওই সাজাই বহাল রাখে। 

তাদের মধ্যে আসামি মুকেশ, পবন ও বিনয়ের রিভিউ আবেদন ২০১৮ সালের ‍জুলাই মাসে খারিজ হয়ে যায়। আর অক্ষয়ের আবেদন খারিজ হয় গতবছর ১০ ডিসেম্বরে। ফলে তাদের ভাগ্যে ফাঁসিকাষ্ঠ নিশ্চিত হয়ে যায়।

এরপরও দণ্ডিত চার আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাসহ নানাভাবে দণ্ড কমানোর আবেদন করেন বারবার। তাদের সব আবেদনই খারিজ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার শেষ আবেদনটিও আদালত খারিজ করে দিলে শুক্রবার ভোরেই চার আসামিকে ঝোলানো হয় ফাঁসিতে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নির্ভয়ার মা কান্নাভেজা কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আমার মেয়ের ছবি জড়িয়ে ধরে বলেছি, মা, শেষ পর্যন্ত বিচার পেয়েছি আমরা।”

আর নির্ভয়ার বাবা বলেছেন, ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়ায় বিচার ব্যবস্থার ওপর তার আস্থা ফিরে এসেছে।