২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্তবাসে ধর্ষণের শিকার প্যারামেডিকেলের ছাত্রীর নাম প্রকাশ করেছেন তার মা।
Published : 17 Dec 2015, 10:57 AM
বিবিসি বলছে, বুধবার আশা সিং সমবেতদের উদ্দেশ্যে বলেন, তিনি তার মেয়ের নাম প্রকাশ করতে কোনো লজ্জা বোধ করছেন না। “তার নাম জ্যোতি সিং।”
ভারতীয় আইন অনুযায়ী ধর্ষিতার নাম প্রকাশ করা হয় না।
“আমি আপনাদের সবার সামনে বলছি, তার নাম ছিল জ্যোতি সিং”। দিল্লিতে ওই ধর্ষণকাণ্ডের তিনবছরপূর্তিতে জড়ো হওয়া মানুষের সামনে আশা সিং এই কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লজ্জা কিংবা অপমান বোধ করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং যারা এই জঘন্য অপরাধ ঘটিয়েছে তারা নিজেদের জন্য এটা বোধ করুক।”
জ্যোতির বাবা অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ধর্ষককে সংশোধনাগারে পাঠিয়ে তিনবছর পর মুক্তির যে রায় দেয়া হয়েছে তার সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমরা খবরে পড়ছি ছোট্ট বালিকাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধী যদি ছাড়া পেয়ে যায় তবে সমাজের কি অবস্থা দাঁড়াবে- সেই আশঙ্কাই জাগে।”
২০১৪ সালে ভারতে রেকর্ড ৩৬ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর শুধুমাত্র দিল্লিতেই ২০৯৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তবে এ শুধু জানা পরিসংখ্যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হন ২৩ বছর বয়সী প্যারামেডিকেলের ওই ছাত্রী। পরবর্তী সময়ে তিনি ‘নির্ভয়া’ নামে পরিচিতি পান।
দু’সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ‘নির্ভয়ার’।
এ ঘটনায় এক নাবালক-সহ পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
বিচার চলাকালে তিহার জেলেই মৃত্যু হয় ধর্ষকদের একজন বাসচালক রাম সিংহের।
পুলিশ দাবি করেছে, রাম সিং আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু রাম সিং-এর পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনায় অভিযুক্ত নাবালকের তিন বছর সংশোধনাগারে থাকার সাজা হয়।
ওই গণধর্ষণের এ ঘটনাটি ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়েই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বেশির ভাগ আইনজীবীই আসামিদের পক্ষ হয়ে মামলা লড়তেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইন প্রণয়ন ও পুলিশ প্রশাসনের পুনর্গঠনের দাবিও উঠে ভারতে। এরই জেরে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধানসহ কঠোর ধর্ষণবিরোধী আইন অনুমোদিত হয়।
বিচারে চার ধর্ষকের ফাঁসির আদেশ হয় ২০১৩ সালের ১১ মার্চ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ১১ মার্চ দিল্লির উচ্চ আদালত আসামীদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে।
আসামীরা সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত এখনো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি।