Published : 16 Oct 2023, 03:38 PM
রক্তশূন্যতায় ভোগা এখন নারীদের একটি নিত্য স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠছে। অনেকেই জানেন না, এই অসুস্থতা নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনায় বড় বিপত্তি তৈরি করতে পারে।
অনেক নারী মাসের পর মাস, এমনকি কয়েক বছর ধরে গর্ভধারণের চেষ্টা করে যান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে সারা বিশ্বের লাখ লাখ নারীকে।
শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা অথবা হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিলে তাকে বলা হয় রক্তস্বল্পতা। কিন্তু এই অসুস্থতাকে অনেকেই হেলাফেলা করেন।
রক্তশূন্যতা দেখা দিলে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে। মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। ডিম্বস্ফোটন, অর্থ্যাৎ ওভুলেশনে সমস্যা দেখা দেয়।
তাছাড়া রক্তস্বল্পতা রয়েছে এমন গর্ভবতীর বেলায় গর্ভকালে ও প্রসবকালে ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আগেই শরীরে রক্তস্বল্পতা নিয়ে ভাবতে হবে।
মানব শরীরে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ইত্যাদি অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তশূন্যতা থাকলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে অক্সিজেন গেলেও প্রজননতন্ত্রে কম অক্সিজেন পৌঁছায়। আর তাতে ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে না। সে কারণে নারীর গর্ভধারণ অনিশ্চিত হয়ে ওঠে।
তাছাড়া রক্তের ঘাটতি থাকলে গর্ভপাত অথবা অকাল প্রসবও হতে পারে। রক্তস্বল্পতার কারণে শরীরে অক্সিজের ঘাটতি থেকে ভ্রুণের বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক ভাবে হয় না। এতে করেও গর্ভকালে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।
তবে শরীর রক্তের এই ঘাটতি চিকিৎসার মাধ্যমে মেটানো সম্ভব। প্রথমত, প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। লোহা, ফলিড এসিড, ভিটামিন বি১২ রয়েছে এমন খাবার খেতে হবে।
লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে লোহা খুব জরুরি ভূমিকা রাখে। ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি১২ ভ্রুণের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
মাংস, মুরগি, সামুদ্রিক খাবার, শিম জাতীয় সবজি, পালং শাক এবং ফর্টিফায়েড দানাশস্যে অনেক বেশি লোহা পাওয়া যায়।
পাতা জাতীয় সবজি, সাইট্রাস ফল এবং ফর্টিফায়েড শস্যে রয়েছে ফলিক এসিড। মাংস, মাছ এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবারে রয়েছে ভিটামিন বি১২।
রক্তস্বল্পতা সারাতে প্রয়োজনে সম্পূরক বা সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। যদি প্রতিদিনের খাবার থেকে শরীরের ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় লোহা, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি১২ না মেলে, তাহলে চিকিৎসক হয়ত সাপ্লিমেন্ট খাবার পরামর্শ দিতে পারেন। ওষুধ বা ইনজেকশন হিসেবে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
দীর্ঘদিন রক্তস্বল্পতায় ভুগলে শরীরে আরও জটিলতা বাসা বাঁধতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত, অটোইমিউন ডিসঅর্ডার এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন মাফিক চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
রক্তস্বল্পতা থাকা ব্যক্তির জন্য বিশ্রাম আবশ্যক। মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে হবে। ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।
যদি রক্তস্বল্পতার কারণে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসার মাধ্যমে ডিম্বস্ফোটন করা যায়।
কৃত্রিমভাবে গর্ভাধানের চিকিৎসা পদ্ধতি ইনট্রাইউটেরিন ইনসেমিনেশন (আইইউআই) অথবা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) করিয়েও গর্ভধারণ করা সম্ভব।
[এনডিটিভি ডটকমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন ভারতের বাঙ্গালুরুতে মিলান ফার্টিলিটি অ্যান্ড বার্থিং হসপিটালের জ্যেষ্ঠ প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যোতি পাতিলের মতামত]