মেনোপজের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এমন নারীর বেলায় কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
Published : 25 Oct 2023, 10:44 AM
চল্লিশে পা রাখা নারীকে অবশ্যই তার চিকিৎসকের উচিৎ মেনোপজ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া। এই দাবি এসেছে যুক্তরাজ্যের অধিকারকর্মী ও সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে।
৪০ থেকে ৭৪ বছর বয়সী নারীদের জন্য প্রতি পাঁচ বছর পর পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা তালিকা ধরে সেবা দেয় ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস।
‘দ্য মেনোপজ অল পার্টি পারলিয়ামেন্টারি গ্রুপ’ এর দাবি, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওই তালিকায় মেনোপজ স্বাস্থ্য পরীক্ষাও যুক্ত হোক এবার।
এ সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, ৪০ পার করা অনেক নারী নানা সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান; কিন্তু এসব যে মেনোপজের লক্ষণ হতে পারে, তা নিয়ে তাদের কোনো ধারণাই নেই।
মেনোপজ ম্যানডেট ক্যাম্পেইনের প্রধান ম্যারিয়েলা ফ্রসট্রাপ বলেন, “স্বাস্থ্য পরীক্ষার তালিকায় মেনোপজের তথ্য না থাকাটা তো একেবারেই হাস্যকর।”
‘এনএইচএস হেলথ চেক’ নামে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের এই নিখরচার সেবাটি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগের দিকে নজর দিয়েছে।
এনএইচএসের স্বাস্থ্য পরীক্ষার এই তালিকায় মেনোপজের তথ্য ও সেবা অবশ্যই যোগ করা দরকার বলে বিবিসির কাছে মন্তব্য করেন ফ্রসট্রাপ।
এই লেখক ও সাংবাদিক বলেন, ”চল্লিশ ছোঁয়ার ঠিক আগে আগে একজন নারী স্বাস্থ্য পরীক্ষার সেবা নিতে যাবে, ঠিক ওই বয়সে পেরিমেনোপজ শুরু হয়।
“আগামী এক দশক যা আপনাকে ভোগাবে, ঠিক তার সেবাই এখানে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ তো খুবই হাস্যকর পরিস্থিতি।”
যুক্তরাজ্যে দুই হাজার নারীর ওপর এক জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ নারীর নিজের মেনোপজ বেলা নিজেকেই বুঝে নিতে হয়েছে। মাত্র ১২ শতাংশ চিকিৎসকের কাছ থেকে এ নিয়ে জানতে পেরেছেন।
ফ্রসট্রাপ বলেন, “একবিংশ শতাব্দীতে এই পরিস্থিতি তো কোনোভাবেই ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছে না।”
আন্দোলনকারীরা বলছেন, চিকিৎসকরা যেন সব ধরনের হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নিয়ে পরামর্শ দিতে সক্ষম হন, সেই পরিবেশ গড়ে তুলতে আরও অনেক কাজ করতে হবে।
সময় মত নিলে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি বা এইচআরটি অনেক ধরনের মেনোপজ উপসর্গ থেকে রেহাই দিতে পারে।
লেবার পার্টির এমপি ক্যারোলিন হ্যারিস বলেন, “মেনোপজের সমস্যায় ভুগছেন এমন নারীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্য। তাদের কষ্ট কমিয়ে সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতে এখনও অনেক রকম সংকট পেরিয়ে যেতে হবে আমাদের।
”দিনের শুরুতে, দিনের শেষে, চিকিৎসকের থেকে সেবা না পাওয়া নারীদের গল্প শুনি। তারা এইচআরটি পাচ্ছে না, মজুদ নেই বলে। সহযোগিতার অভাবে এই নারীরা চাকরিও ছেড়ে দিচ্ছেন। অথবা তাদের কোনো ধারণাই নেই কোথায় গেলে একটু সহায়তা মিলবে।”
মেনোপজ কী?
সহজ কথায় মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি হচ্ছে একটি বয়সের পর প্রাকৃতিকভাবে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত ৫১ বছরে নারীর মেনোপজ হলেও এর নানা উপসর্গ দেখা দেয় চল্লিশের মাঝামাঝি থেকেই।
মাসিক অনিয়মিত হতে শুরু করলে ওই সময়কে পেরিমেনোপজ বলে। সাধারণত বয়স ৪৬ বছর হলে এমন হতে পারে। শরীরে এই পরিবর্তনকে পেরিমেনোপজ বলে।
এই সময় নারীর মনে হতে পারে তাদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে গেছে, অতিরিক্ত রক্তপাত হচ্ছে অথবা শরীরে এমন অনেক সমস্যা বোধ হচ্ছে যা তারা আগে কখনও অনুভব করেননি।
যদি টানা ১২ মাস ধরে মাসিক না হয়ে থাকে, তাহলে শেষ মাসিকের পর মেনোপজ হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
কারো কারো বেলায় অবশ্য আগেভাগেই মেনোপজ হতে পারে। এটি স্বাভাবিকভাবেই হতে পারে অথবা যে কোনো চিকিৎসার প্রভাবেও হতে পারে।
ইউসি সান ডিয়েগো স্কুল অফ মেডিসিন পরিচালিত এক গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল মেনোপজ সোসাইটি।
সেখানে বলা হয়েছে, মেনোপজের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এমন নারীর বেলায় কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট মেডিকেল ডিরেক্টর সোনিয়া বাবু-নারায়ণ বলেন, “মেনোপজের সময় নারীর শরীরে পরিবর্তন আসে। যেমন ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। এই অবস্থা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করে।”
“মেনোপজ হয়ে গেলে নারীর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ভয়াবহ রকমের বেড়ে যায়। যদিও প্রায়ই দেখা যায়, নারী তার স্বাস্থ্যকে প্রাধ্যান্য দেয় না। নারী যতই মেনোপজের দিকে এগোতে থাকতে, ওই সময়টা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। তারপর হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।”
স্বাস্থ্যের যত্নে ধূমপান ছেড়ে নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও সঠিক ওজন ধরে রাখার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই চিকিৎসক।