যেসব সুবিধা মিলবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করলে

কর রেয়াতের পাশাপাশি বিলম্ব সুদও দেওয়া লাগবে না।

লাইফস্টাইল ডেস্ক
Published : 13 Nov 2022, 05:29 AM
Updated : 13 Nov 2022, 05:29 AM

কর দিবস অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে ৫০ শতাংশ হারে কর রেয়াত কম পাবেন।

যে কারণে আপনার করের অঙ্ক অনেক বেড়ে যাবে।

আপনি যদি এখনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকেন এবং ভাবছেন সময় নিয়ে পরে রিটার্ন দাখিল করে দেবেন তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। না হলে বড় অঙ্কের কর রেয়াত সুবিধা হারাবেন।

প্রধানত দুই কারণে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

৫০ শতাংশ হারে কর রেয়াত সুবিধ থেকে বঞ্চিত হবেন

এই বছর অর্থ আইন ২০২২-এ নতুন নিয়মটি সংযোজন করা হয়েছে। একজন করদাতা সাধারণত বিনিয়োগ ভাতার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন।

একজন ব্যক্তি করদাতার জন্য এই কর রেয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইনগতভাবে করদায় কমানোর উপায় হল কর রেয়াত।

তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি করদাতা যদি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি তার করযোগ্য আয়ের ওপর যে করদায় নির্ণয় করেছেন তা থেকে ৭.৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত বাদ দিতে পারবেন।

অর্থাৎ কর রেয়াত ১৫ শতাংশের স্থলে হয়ে যাবে ৭.৫ শতাংশ।

ধরা যাক, আপনার বিনিয়োগ ভাতা ২,০০,০০০ টাকা। তাহলে আপনি যেহেতু ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাই আপনি এই ২,০০,০০০ টাকার ওপর কর রেয়াত পাবেন ৭.৫ শতাংশ হিসাবে ১৫,০০০ টাকা।

কিন্তু আপনি যদি কর দিবসের আগে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতেন তাহলে ১৫ শতাংশ হিসাবেই ৩০,০০০ টাকা কর রেয়াত পেতেন।

ভেবে দেখুন, শুধুমাত্র সময়মত রিটার্ন দাখিল না করার জন্য আপনি ১৫,০০০ টাকা কর রেয়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এখন আপনি ভাবতে পারেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করতে পারলে বর্ধিত সময়ের জন্য আবেদন করবেন।

আপনি উপকর কমিশনারের কাছ থেকে বাড়তি সময়ের অনুমোদন পেলেও কর রেয়াত ১৫ শতাংশ পাবেন না। আপনার কর রেয়াত ৭.৫ শতাংশই হবে।

তাছাড়া এই বর্ধিত সময়ের জন্যও কিন্তু আপনাকে বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ দিতে হবে

সম্পূর্ণ কর রেয়াত সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আপনি যে সময় বৃদ্ধি করেছেন সেই বর্ধিত সময়ের জন্য আপনাকে মাসিক ২ শতাংশ হিসাবে বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

এই বিলম্ব সুদ আপনার নীট করদায়ের ওপর গণনা করতে হবে। এরপর অবশিষ্ট টাকার ওপর আপনাকে ২ শতাংশ হারে মাসিক ভিত্তিতে বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

ধরুন, আপনার মোট করদায় এসেছে ৫০,০০০ টাকা। আপনি যেহতু ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেননি তাই আপনি কর রেয়াত পেয়েছেন ১৫,০০০ টাকা।

আর উৎসে কর বা অগ্রিম কর দিয়েছেন ১৫,০০০ টাকা। কর রেয়াত এবং উৎসে কর বা অগ্রিম কর বাদ দেওয়ার পর বাকি থাকে ২০,০০০ টাকা।

এই টাকার ওপর আপনাকে ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

আপনি যদি দুই মাসের জন্য সময় চেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বিলম্ব সুদ দিতে হবে ৮০০ টাকা (২০,০০০X২%X২মাস)।

আর এই টাকা ২০,০০০ টাকার সঙ্গে যোগ করে মোট ২০,৮০০ টাকা রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

তবে আপনি যদি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেন তাহলে ১৫,০০০ টাকার স্থলে ৩০,০০০ টাকা কর রেয়াত পাবেন এবং ৮০০ টাকা বিলম্ব সুদ দিতে হবে না।

তখন আপনি রিটার্নের সঙ্গে ৫,০০০ টাকা জমা দিলেই হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনি বড় একটি অঙ্কের সুবিধা হারাচ্ছেন।

আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আপনাকে সময় বৃদ্ধির আবেদন ফরম পূরণ করে তা উপকর কমিশানারের অফিসে গিয়ে অনুমোদন নিতে হবে। এজন্য আপনার সময়ও নষ্ট হচ্ছে।

তাই সময় থাকতেই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করার চেষ্টা করা উচিত।

লেখক: জসীম উদ্দিন রাসেল। কর পরামর্শক এবং প্রশিক্ষক, ট্যাক্সপার্ট

আরও পড়ুন

Also Read: আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগে অবশ্যই ৫টি বিষয় নিশ্চিত হয়ে নিন

Also Read: ট্যাক্স রিটার্ন ২০২২: জেনে নিন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন