ধন্যবাদ জানানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এমনকি খাওয়ার সময়েও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ভুলে যাওয়া যাবে না।
Published : 16 Jan 2023, 04:41 PM
ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে তোমারে করেছে রানি- এই ভালোবাসার কারণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিঃস্ব হওয়ার মতো বহু ঘটনা আছে।
মানুষ হিসেবে আমরা ভালোবাসার খোঁজ করি। যে কারণে এই সময়ে সামাজিক মাধ্যম, ‘ডেটিং অ্যাপ’ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই ঢুঁ মেরে যাই।
তবে বাইরে খোঁজার চাইতে, নিজের ভেতরের ভালোবাসার খোঁজ করলে কেমন হয়? যদি আত্মপরিচর্যা আত্মস্ত করা যায়, তবে নিজেকেই গড়ে নেওয়া যায় ভালোবাসার উৎস হিসেবে।
ভালোবাসা হচ্ছে নিজের যত্ন নেওয়া, নিজে যা হতে চান সেভাবে গড়ে নেওয়া।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুরু, ধ্যান প্রশিক্ষক ও ‘হলিস্টিক ওয়েলনেস’ বিশেষজ্ঞ কিম্বার্লি স্নাইডার বলেন, “আত্মপরিচর্যার মাধ্যমে নিজের পাশাপাশি অন্যের প্রতিও কোমল হওয়া যায়। বিনিময়ে পাওয়া যা গ্রহণযোগ্যতা আর সদয় অনুভূতি।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও লেখেন, “এই শক্তির অধিকারী হলে যে কোনো সম্পর্কে যেমন ইতিবাচক প্রভাব রাখে তেমনি অন্যের সঙ্গে জীবনের ছন্দ মেলাতেও সমস্যা হয় না।”
এই ধরনের দয়ালুভাব ভাগাভাগি করাও এক ধরনের আত্মপরিচর্যা। যা কিনা অন্যের ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। উল্টাভাবে চিন্তা করলে, নিজের প্রতি বিরূপ আচরণে যে ধরনের মানসিক চাপে ভোগা হবে তার প্রভার অন্যের ওপরেও পড়বে। ফলে ভালোবাসা পাওয়ার পরিবর্তে মিলবে বিরক্তি আর দূরে সরে যাওয়া।
নিউ ইয়র্ক টাইমস’য়ের তালিকায় পর পর তিনবার সেরা লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই পুষ্টিবিদ আত্মপরির্যার জন্য প্রতিদিন একটি করে অভ্যাস রপ্ত করার পরামর্শ দেন।
যে কোনো একটি ভালোবাসার কাজ করা
অন্যের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই দিনের শুরু হতে পারে বন্ধুদের বার্তা পাঠিয়ে- যেখানে লেখা থাকতে পারে আজ তোমার কথা বেশ মনে পড়ছে, পোষা প্রাণী থাকলে সেটাকে নিয়ে জড়িয়ে ধরা যেতে পারে। অথবা পথে হেঁটে যেতে সাধারণভাবেই অন্যদের সঙ্গে হাসি বিনিময় করুন।
আর এভাবে সাধারণ ভালোবাসা যখন অন্যের প্রতি দিতে থাকবেন, তখনই বুঝতে পারবেন অন্যের ভালোবাসাও ফিরে আসছে আপনার প্রতি, ঠিক যেমন করে আগুন আকর্ষণ করে পতঙ্গকে।
বন্ধুর সংখ্যা বাড়ানো
স্কুল, কলেজ, বা কর্মক্ষেত্রে গড়ে ওঠা নির্দিষ্ট কয়েকজন বন্ধু নিয়েই হয়ত জীবন কেটে যাচ্ছে। ভাবছেন এর বেশি আর দরকার কী?
বিষয় হল- নির্দিষ্ট কয়েকজন মানুষের সাথে মিশলে মনের পরিধি বাড়বে না। মানুষের সঙ্গে মেশার পরিমাণ বাড়ালে হূদয় বড় হতে থাকে। আর ভালোবাসা বিনিময়ের নতুন মাধ্যম সম্পর্কেও অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়, যা কি-না আত্মপরিচর্যারই একটা অংশ।
‘ডেটিং অ্যাপ’, ফেইসবুক এসব ছাড়াও আশপাশের মানুষ থেকেই নতুন বন্ধু গড়ে তোলার চেষ্টা করা যায়। সেটা হতে পারে ‘জিম’য়ে কোনো সদস্যের সঙ্গে কথা বলে, ছোটখাট চায়ের সঙ্গে আড্ডায়, কিংবা বন্ধুর বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগা বাড়ানো।
নতুন বন্ধু তৈরি করাই হবে এক্ষেত্রে একমাত্র উদ্দেশ্য। অন্য কিছু নয়।
সহিংস আলাপ না করার প্রতিজ্ঞা
মুখের বুলি শক্তিশালী একটা অস্ত্র। অন্যদের সাথে কিংবা নিজের সাথে যদি বাজে, রূঢ় অনুভূতি নিয়ে কথা বলা হয় তবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। কারও সম্পর্কে ‘জাজমেন্টাল’ হওয়ার আগে বরং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করুন, আপনার ক্ষেত্রে সেরকম হলে কীরকম লাগতো।
তাই মন খারাপ, রাগ এরকম সময়ে- শব্দ বাছাই, কথা বলার সময় খেয়াল করার চেষ্টা করতে হবে কোনো কর্কশ কথা বলা না হয়।
এই অভ্যাস গড়তে পারলে ধীরে ধীরে সব কিছুতেই ইতিবাচক মনোভাব ফুটে উঠতে থাকবে।
একই বিষয় নিয়ে কথা বলার লোক খোঁজা
বন্ধু, সহকর্মী বা আত্মীয় কারও সাথে আলাপ আলোচনা করার সময়, ভিন্ন ভিন্ন বিষয় না খুঁজে দুজনের একই বিষয়ে আগ্রহ আছে সেটা নিয়ে কথা বলুন সপ্তাহের একটি দিন।
এই পদ্ধতিতে কথাবার্তায় আরও বেশি ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। আর মনেও এক ধরনের শান্তি কাজ করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকা
ডিজিটাল জগতে বুঁদ হয়ে থাকলে, আসল মানুষের সঙ্গে মেশা হবে কম। যদিও এই সময়ে ফেইসবুকের নানান নোটিফিকেশন এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে সারা দিনের জন্য না হলেও, অন্তত কয়েক ঘণ্টা ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম- এই ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ছুটি নিন।
তারপর নিজের মতো করে সময় কাটান, খোলামেলা পরিবেশে মানুষের সঙ্গে সরাসরি মেশার চেষ্টা করুন।
এর ফলে জীবনের মানে নতুন ভাবে ধরা দেবে।
‘মোটামুটি’ ভাবের ক্ষেত্রে না বলা
নিজের ইচ্ছের বিরূদ্ধে কাজ করা বা খুব একটা পছন্দ না তারপরও অন্যের অনুরোধে হ্যাঁ করার মতো বিষয়গুলো ত্যাগ করতে হবে। নিজের মতো একটা গণ্ডি তৈরি করা মানে এই নয়, অন্যকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। বরং এর থেকে আপনি আরও ভালো সঙ্গী হয়ে উঠবেন।
তাই এখন থেকে নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করুন, যাতে অপছন্দনীয় কোনো বিষয়ে ‘না’ করা সহজ হয়। কেনো রাজি হচ্ছেন না, সেটাও সরাসরি বলতে হবে নমনীয়ভাবে।
আর এই ফাঁকে নিজের সঙ্গে, নিজের মতো সময় দিন। নিজের সাথে সময় কাটান একাকী। নিজেকে যত উপলব্ধি করা যাবে, তত বেশি অন্যের জন্য ভালো মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
খাওয়ার সময় ধন্যবাদ দেওয়ার অভ্যাস করা
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মানসিক চাপ কমে, ব্যক্তিত্বের সুন্দর প্রকাশ বাড়তে থাকে। এমনকি নিজের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে একাকী বোধ কম হয়।
তবে এই ব্যস্ত জীবনে সঙ্গী বন্ধুদের ধন্যবাদ দিতে আমরা ভুলে যাই। তাই এই অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রত্যেকবার খাবার সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে কিংবা যে খাওয়ারটা খাচ্ছেন সেটার জন্য প্রকৃতির প্রতি একবার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
রাতে পরিবারের সবাই মিলে খাওয়ার আগে, কিছুক্ষণ সময় নিন ধন্যবাদ জানানো জন্য। সেটা যে রান্না করেছে, তার থেকে শুরু করে যারা খেতে বসছে তাদেরকে-সহ।
এই অভ্যাস ‘রুমমেটস’ আর সঙ্গীর সঙ্গেও গড়ে তুলতে হয়। আর এর ফলে আরও ভালো অনুভূতি গড়ে উঠবে মনে।
আরও পড়ুন: