যে কারণে শরতের সময় উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা রাজধানীবাসীর কাছে হয়ে ওঠে অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য।
অবশ্য এখন মেট্রোরেলের কারণে এই এলাকায় মানুষজনের যাতায়াতের পরিমাণও বেড়েছে। তবে আরও একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার সেখানে কয়েকমাস ধরে ঘটছে। সেটা হল রুয়াপ ফুড কোর্ট।
উত্তরার পনের নম্বর সেক্টরের রুয়াপ বাজার এলাকায় গড়ে ওঠা এই ফুড কোর্টে কী নেই!
সেখানে গিয়ে দেখা গেল, খোলা মাঠের চারপাশ জুড়ে বসেছে ছোট ছোট খাবারের দোকান। রয়েছে ফুচকা, চটপটি, পানিপুরি, মাছ ও মাংসের নানান ধরনের বার্বিকিউ ও কাবাব, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, গরুর দুধের চা, চপ, শিঙাড়া, পেঁয়াজু, চাপড়ি ও চিতই পিঠা, হালিমসহ নানান মুখরোচক পদ।
আর সেসসব খাবার কিনে মাঠের মাঝে রাখা সারিসারি টেবিল-চেয়ার ও বেঞ্চে বসে আরামে উদরপূর্তি করছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ভোজন রসিকরা।
চাপড়ি ও চিতই পিঠার সমাহার নিয়ে বসেছেন কাজল। দোকানের নাম দিয়েছেন ‘পিঠা গরম’।
ডিম চাপড়ি তৈরি করতে করতে তিনি বললেন, “দুই মাস হইল এই জায়গায় বসা শুরু করছি। আগে বসতাম পঞ্চবটিতে। সেখান থেকে উঠায় দিছে।”
দাম কত? জানতে চাইলে কাজল হেসে উত্তর দিলেন, “শুধু চাপড়ি নিলে ১০ টাকা। আর ডিম দিলে ২০।”
আরও আছে হাঁসের মাংস ফুল ২০০ আর হাফ ১২০ টাকা, তেলের পিঠা ১০ টাকা, ভাপা পিঠা ২০ টাকা।
চাপড়ি খে্য়ে পেট ভরালে চলবে না। কারণ এই দোকানের একটু পাশেই রয়েছে হালিমের দোকান।
গরুর মাথা দিয়ে তৈরি এই হালিমের দোকানের কর্ণধার খায়ের জানালেন, দুই মাস হল শুরু হয়েছে এই রুয়াপ ফুড কোর্ট। তিনিও আগে পঞ্চবটি্ এলাকায় হালিম বিক্রি করতেন। বাটি প্রতি দাম ৬০ টাকা।
চোখে পড়লো স্যুট পরা একজনকে। কাছে গিয়ে জানা গেল নাম তার স্বরূপ জাহিদ। বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা। বন্ধু অভিনেতা সুমন পাটওয়ারীকে নিয়ে হালিম খাচ্ছিলেন।
জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “হালিমের মান খারাপ না।”
আপনারা কি দূর থেকে এসেছেন? জাহিদের উত্তর, “আরে আমাদের দুজনের বাসা উত্তরায়। অফিস থেকে ফেরার পথে ঢুঁ মারলাম আজ। কাছে থেকেও এতদিন আসা হয়নি। এসে তো বেশ ভালো লাগছে! তবে সামনে বৃষ্টির দিনে বা ঝড়ের সময় কী হবে সেটাই বুঝতে পারছি না। ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে এদের কোনো ব্যবস্থা আছে বলে মনে হচ্ছে না।”
হালিমের পাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি বার্বিকিউয়ের দোকান। সেখানে নানান ধরনের কাবাব তো আছেই। এছাড়া কয়লায় পোড়ানো মাছও পাওয়া যাচ্ছে। মাঝারি আকারের বিভিন্ন মাছের বার্বিকিউ খেতে খরচ করতে হবে ১ হাজার ৩শ’ টাকার মতো।
পানিপুরির কার্টের সামনে ভীড় কম না। ছয়-সাত রকম হাঁড়িতে রাখা আছে নানান ধরনের টক। লেবুর টক, ধনিয়া পাতার টক, তেঁতুলের টক, কাঁচা আমের টক। ঝাল বেশি খেতে চাইলে রয়েছে নাগা মরিচের টক।
থালায় সাজিয়ে দেবে পানিপুরি; এরপর নিজের পছন্দ মতো টকে ভিজিয়ে মজা করে মুখে পুড়তে থাকুন একেকটি।
রুয়াপ ফুড কোর্টে যাওয়াটা তেমন কোনো কঠিন বিষয় নয়। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দেবে এলাকাটা। মেট্রোরেলের উত্তরার উত্তর স্টেশন থেকে বেশি দূরে নয়। গুগল ম্যাপে খুঁজলেও পাওয়া যাবে রুয়াপ ফুড কোর্টের ঠিকানা।
তবে যেতে হবে বিকালে। কারণ খাবারের দোকানগুলোর কাজ কারবার শুরুই হয় দুপুরের পর থেকে। চলে রাত পর্যন্ত।