পেটের মেদ বাড়লে, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস-সহ নানান জটিল রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।
Published : 18 Sep 2022, 04:50 PM
খাদ্যাভ্যাস ও অভ্যাসের কারণে বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকে পেটের মেদ।
তবে সব মেদ একরকম নয়। পেট সামনের দিকে বের হয়ে ঝুলে পড়া বা পশ্চাতের চাইতে কোমরের মাপ বেশি হওয়াকে বলা হয় ‘বিয়ার বেলি’। নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের দেহ গঠনকে ‘আপেলের মতো’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়।
সাধারণত ‘বিয়ার’ বা যেসব খাবারে সরল শর্করা বেশি থাকে সেগুলো গ্রহণের কারণে এই ভুঁড়ি দেখা দেয়।
পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ গ্রহণ, সাত ঘণ্টা ঠিক মতো ঘুমানোর মতো নানান বিষয় মেনে চললে বয়সের সঙ্গে এই মেদ বৃদ্ধি এড়ানো যায়।
এই ‘বিয়ার বেলি’ স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও কারণ হয়।
ইনসাইডার ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক’য়ের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’য়ের ‘ব্যারিয়াট্রিাক অ্যান্ড মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি’ বিভাগের পরিচালক ডা. জন অ্যাঙ্সট্যাট বলেন, “বিয়ার বেলি’র আসলেই বিপজ্জনক। এই অবস্থার সঙ্গে হূদ-ঘটিত বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক রয়েছে।”
মেদভুঁড়ি হওয়ার কারণ
ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘প্রভিডেন্স সেন্ট. জাড ওয়েলনেস সেন্টার’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ মেগান রোয়ি বলেন, “পেটের ভেতর অন্ত্রের ওপরের আস্তরে চর্বি জমতে থাকলে এই ‘বিয়ার বেলি’ তৈরি হয়। চামড়া নিচে নয় বরং অন্ত্রের আশপাশ ঘিরে এই চর্বি বাড়তে থাকে।”
বেশি মাত্রায় ক্যালরি গ্রহণ করলে এরকম হতে থাকে। সেটা হতে পারে ‘বিয়ার’ কিংবা পিৎজ্জা। এমনকি এসব না খেলেও এই মেদ বাড়তে পারে।
সরল শর্করা রয়েছে এরকম খাবার- সেটা হতে পারে মুখরোচক নাস্তা বা ‘স্ন্যাক্স’, মিষ্টান্ন এবং কোমল পানীয় মেদভুঁড়ি তৈরি করে।
এই ধরনের খাবার রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়ায় ফলে আরও খাওয়ার ইচ্ছে যাগে। খাওয়া অতিরিক্ত হতে থাকে। আর ফলাফল হল মেদ বৃদ্ধি।
বয়সের সঙ্গে এই পেটের মেদ বাড়ার ফলে হরমোন ও বিপাক কার্যক্রম পরিবর্তন হয়।
কতটা বিপজ্জনক?
অনেকেই মজা করে বলেন, “আমরা খাওয়াইন্না বংশের লোকজন, আমাদের ভুঁড়ি থাকবোই।”
ডা. অ্যাঙ্সট্যাট বলেন, “এই বিষয় নিয়ে যতই মজা করা হোক না কোনো, মনে রাখতে হবে কোমরের মাপ বাড়ার সঙ্গে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্মৃতিভ্রংশ, হাঁপানিসহ ‘ব্রেস্ট, প্রোস্টেট’ ও পায়ূপথে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।”
তাই সাবধান হওয়া জরুরি।
পরিত্রাণের উপায়
সোজা কথায় জীবনযাত্রার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। আর দ্রুত কোনো সমাধান নেই। ধরতে হবে ধৈর্য্য।
ডা. অ্যাঙ্সট্যাট বলেন, “বিয়ার বেলি’ হয়ে থাকলে খাবার ও পানীয় পানের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।”
অ্যালকোহল নয়: পুষ্টিবিদ রোয়ি বলেন, “শুধু ক্যালোরির পরিমাণই বাড়ায় না, সঙ্গে অনেক অপকর্মও চালায় অ্যালকোহল।”
যেমন- চর্বি হজমে বাধা তৈরি করে। কারণ শরীর অ্যালকোহল হজমে বেশি ব্যস্ত থাকে। খিদার পরিমাণ বাড়ায়। সারাক্ষণ কিছু চিবাতে ইচ্ছে করে। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার ওপর বাজে প্রভাব ফেলে।
পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া: পেশাদার পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলাপ করে প্রতিদিনের খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টির গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
আর এই ক্ষেত্রে পূর্ণ শষ্যের খাবার- যা খেলে পেট ভরা থাকে, আঁশ সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
পাশাপাশি বাদ দিতে হবে সরল শর্করা, প্রক্রিয়াজাত ও ভাজাপোড়া খাবার। আর এসবই মেদ বাড়াতে ভূমিকা রাখে বেশি।
আঁশ বেশি গ্রহণ করা: সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, নারীদের ২৫ গ্রাম ও পুরুষদের ৩৮ গ্রাম আঁশ দৈনিক গ্রহণ করা উচিত।
আঁশ শুধু মেদ গড়তেই বাধা দেয় না, পাশাপাশি বাড়তি মেদের সঙ্গে যুক্ত হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ হওয়ার ঝুঁকিও কমায়।
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রচুর কঠিন ব্যায়াম করতে হবে না। হালকা ধরনের শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে।
সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়ামের লক্ষ্য স্থির করতে পারলেই হল। এই ক্ষেত্রে সহজ হবে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা।
৩০ মিনিট হাঁটার পর অল্প বিরতি নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলে কাজে দেবে বেশি।
সাত ঘণ্টা ঘুমানো: রাত জাগলেই খাওয়ার ইচ্ছে জাগে। তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের ‘কার্ডিও ভাস্কুলার মেডিসিন’ বিভাগের করা ২০২২ সালের এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমায় এমন মানুষের তুলনার যারা ঠিক মতো ঘুমায় না তদের মধ্যে ১১ শতাংশরই পেটে মেদ রয়েছে।
আরও পড়ুন