কর রেয়াত পেতে বিনিয়োগ করেছেন কি?

সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, জীবন বীমা ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পাওয়া যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 12:19 PM
Updated : 22 March 2023, 12:19 PM

ব্যক্তি করদাতার কর দায় হ্রাস করার বৈধ উপায় হল বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত সুবিধা।

কর রেয়াত একজন ব্যক্তি করদাতার করের পরিমাণ বহুলাংশে কমাতে পারে। তাই কর রেয়াত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এই কর রেয়াত সুবিধা পেতে হলে আপনাকে আয়কর আইনে উল্লেখিত খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন কর প্রশিক্ষক ও ‘স্মার্ট মানি হ্যাকস: সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সেরা প্ল্যান’ বইয়ের লেখক জসীম উদ্দিন রাসেল।

আপনি হয়ত বিনিয়োগ করেছেন কিন্তু নিশ্চিত হয়ে নিন আয়কর আইনে উল্লেখিত খাতগুলোতে করেছেন কিনা। যদি উল্লেখিত খাতের মধ্যে আপনার বিনিয়োগ না পড়ে তাহলে যতই বিনিয়োগ করেন না কেনো ও বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত দাবী করতে পারবেন না।

আবার আপনি যদি একেবারেই কোনো বিনিয়োগ না করে থাকেন তাহলে কোনো কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন না।

ইতোমধ্যেই আট মাস চলে গেছে। চলতি মাস নিয়ে বাকি আছে আর মাত্র চার মাস। আগামী ৩০ জুন ২০২৩ শেষ হচ্ছে ২০২২-২৩ আয় বছর।

এই বছর আপনি যে আয় করেছেন তার ওপর আপনাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে ৩০ নভেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে। এবং এই ৩০ জুন ২০২৩ এর মধ্যেই আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে।

শেষ দিকে তাড়াহুড়া না করে এখন থেকেই বিনিয়োগ শুরু করুন। একসাথে বিনিয়োগ করতে গেলে চাপ পড়ে যেতে পারে তাই এই চার মাসে আপনি বিনিয়োগ করুন।

বিনিয়োগের আগে হিসাব করে দেখুন আপনার করযোগ্য আয় কত, আর এজন্য কত বিনিয়োগ ভাতা দাবী করতে পারবেন।

নিচে আয়কর আইনে উল্লেখিত কিছু উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ খাত আলোচনা করা হল।

সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্র অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিনিয়োগ খাত। একদিকে মুনাফার হার বেশি এবং অন্যদিকে যেহেতু বাংলাদেশ সরকার এটা ইস্যু করে, তাই মেয়াদান্তে মুনাফা এবং বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।

যে বছর বিনিয়োগ করবেন শুধুমাত্র ওই বছরেই তার উপর কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন।

উল্লেখ্য আপনি যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তা মেয়াদপূর্তির সময় পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে।

যেমন- আপনি যদি পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন তাহলে পাঁচ বছরের আগে ভাঙানো যাবে না। যদি কোনো কারণে এর আগে নগদায়ন করে ফেলেন তাহলে যে টাকার কর রেয়াত সুবিধা নিয়েছিলেন তা বাতিল হয়ে যাবে।

ট্রেজারি বন্ড

আপনি ব্যাংক বা শেয়ার বাজার থেকে বাংলাদেশ সরকার ইস্যুকৃত এই ট্রেজারি বন্ড কিনতে পারবেন। বন্ড থেকেও তুলনামূলকভাবে বেশি হারে মুনাফা পাওয়া যায় এবং নিরাপদ। সুবিধামতো বিনিয়োগ করা যায়।

ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের আগে মুনাফা কেমন পাবেন তা দেখে নিন। যদি ব্যাংক থেকে ট্রেজারি বন্ড কিনেন তাহলে যে ব্যাংক থেকে কিনেছেন ওই ব্যাংক থেকেই নগদায়ন করতে পারবেন।

আর যদি শেয়ার বাজার থেকে কেনেন তাহলে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মতোই কেনা-বেচা করতে পারবেন।

জীবন বীমা

ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমা সুরক্ষা দেয়। যদিও জীবন বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আছে তারপরেও নিজের এবং পরিবারের জন্য জীবন বীমা করা ভালো।

প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যদি পলিসি নেওয়া হয় তাহলে মেয়াদান্তে টাকা পাওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না।

সারা বছর নিজের, স্বামী/স্ত্রী’র, ছেলেমেয়ের জন্য যে প্রিমিয়াম দিয়েছেন তা বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে দেখাতে পারবেন এবং এর ওপর কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন।

শেয়ার

যদিও বর্তমানে শেয়ার বাজারের অবস্থা ভালো না তারপরেও যদি এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী থাকেন বা এই খাতে যদি বিনিয়োগ ইতোমধ্যেই করা থাকে তাহলে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারেন।

তবে এখন যদি বিনিয়োগ করেন তাহলে দীর্ঘ মেয়াদের কথা চিন্তা করে করতে হবে।

শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থাকে, গত বছরের শেয়ার বিক্রয় করে আবার নতুন করে শেয়ার কিনলে কি তার ওপর কর রেয়াত পাওয়া যাবে?

উত্তর হলো, গত বছরের তুলনায় এ বছর যদি অতিরিক্ত কোনো টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন তাহলে আপনি ওই নতুন বিনিয়োগকৃত টাকার ওপর কর রেয়াত সুবিধা পাবেন।

ডিপিএস

ডিপিএস আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। প্রতি মাসে অল্প অল্প করে জমিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ভালো একটা অংক পাওয়া যায়। আর এই টাকা দিয়ে বড় কোনো কাজ করা যায়।

যে কোনো ব্যাংকে এই ডিপিএস করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, মাসে পাঁচ হাজার টাকা বা বছরে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর রেয়াত দাবী করা যায়।

এই পাঁচটি বিনিয়োগ খাত সম্পর্কে আয়কর আইনে উল্লেখ রয়েছে। এবার পছন্দ মতো খাতে বিনিয়োগ করে, সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ভাতার ওপর কর রেয়াত সুবিধা ভোগ করার জন্য চেষ্টা করতে পারেন।

এতে করে আপনার করের পরিমাণ অনেকাংশে কমে যাবে।

আরও পড়ুন

Also Read: ‘ইমার্জেন্সি ফান্ড’য়ের জন্য কত জমাবেন?

Also Read: সঞ্চয়ের সরল পন্থা