ওজন কমালেই হবে না, হালকা পাতলা গড়ন ধরে রাখতেও হবে।
Published : 20 Oct 2022, 09:43 PM
ওজন কমানো কঠিন। তারচেয়েও বেশি কঠিন সেটা ধরে রাখা।
আর ওজন কামনো এবং ধরে রাখার ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা হতে পারে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের পুষ্টিবিদ ব্লাঙ্কা গার্সিয়া বলেন, “ওজন কমানোর পর সেটা ধরে রাখতে পারেন না অনেকে। কারণ বেশিরভাগই ফিরে যান আগের খাদ্যাভ্যাসে।”
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাই তিনি পরামর্শ দেন, “খাবারে কড়াকড়ি আরোপ না করে বরং ওজন যাতে না বাড়ে সেজন্য দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাস পালটে ফেলতে হবে। তবেই ধরে রাখা যাবে কাঙ্ক্ষিত ওজন।”
আঁশ-জাতীয় খাবার বাড়ানো
সবজি, ফল, শুঁটি ও পূর্ণ শষ্য থেকে মিলবে আঁশ।
ফিটনেসক্লোন ডটকম’য়ের পুষ্টিবিদ জুলিয়ানা তামায়ো একই প্রতিবেদনে বলেন, “আঁশ শুধু হজমপ্রাণালীকেই ঠিক রাখে না রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।”
শুধু তাই না পেটভরা অনুভূতি অনেকক্ষণ দিতে পারে আঁশ। তাই বাড়তি খাবার খাওয়ার ঝুঁকিও কমে।
নারী হলে দৈনিক ২১ থেকে ২৫ গ্রাম এবং পুরুষের প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৮ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা উচিত।
উচ্চ আঁশ যুক্ত খাবারের মধ্যে আছে- বিভিন্ন ধরনের জাম বা বেরি ধরনের ফল, আপেল, ব্রকলি, বাঁধাকপি, বাদামি চাল, ওটস, ডাল ইত্যাদি।
খাবার খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো
ভাবছেন ওজন ধরে রাখার সঙ্গে খাবারের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টা উল্টো হয়ে যাচ্ছে। মোটেই সেটা নয়।
ব্যালেন্সওয়ানসাপ্লিমেন্ট ডটকম’য়ের পুষ্টিবিদ ট্রিস্টা বেস্ট ব্যাখ্যা করেন, “এটা একটা নতুন ধারণা, যেখানে কম ক্যালরির খাবার বেশি খাওয়ার পরমর্শ দেওয়া হয়। ফলে খিদা লাগার পরিমাণ কমে।”
যে কোনো খাবার যেটাতে ক্যালরি কম সেটা বেশি করে খাওয়ার নাম হচ্ছে ‘ভলিউম ইটিং’।
আর এই পদ্ধতিতে ক্যালরি গুনে খাওয়ার কিছু নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে খিদা লাগলে বেশি করে খেতে হবে কম ক্যালরির খাবার। এরমধ্যে রয়েছে- সবজি, বীজ ও শুঁটি ধরনের খাবার।
প্রতিবেলার খাবারে প্রোটিন যোগ করা
“পেশি গড়ার পাশাপাশি পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয় প্রোটিন”, বলেন নিউ জিল্যান্ডের স্পোর্টস পুষ্টিবিদ ক্রুটিকা নানাভাটি।
তবে এই ক্ষেত্রে তিনি চর্বিহীন প্রোটিনের দিকে নজর দিতে বলেন।
সকালের নাস্তায়- দই, সাথে ডিমের ঝুরি ভাজা। বা কাঠবাদামের মাখনের সঙ্গে কলা।
দুপুরে- স্যান্ডুইচে মুরগির মাংস, সিদ্ধ ডিম বা ছোলা দিয়ে সালাদ বা বেশ খানিকটা পনির।
রাতে- ডালের সুপের সঙ্গে টফু বা চিংড়ি হালকা ভাজা অথবা গ্রিল্ড করা মুরগির মাংস দিয়ে শষ্য।
নাস্তা কম খাওয়া
অফিস কিংবা বাসায় নাস্তা খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি খাওয়া হয়ে না যায়।
এজন্য নানাভাটি নাস্তার পরিমাণের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “বেশি পরিমাণে নাস্তা চোখের সামনে থাকলেই বেশি খেতে ইচ্ছে হবে। তাই অফিসে কিংবা বাসায় নাস্তার পরিমাণ কম নিয়ে বসতে হবে।”
এক্ষেত্রে বাদাম বা বীজ-জাতীয় খাবার থাকলে নিতে হবে চামচ গুনে। সবচেয়ে ভালো হয় মেজারিং কাপ ব্যাবহার করলে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়া
ওজন কমানোর পাশাপাশি সেটা ধরে রাখতে অবশ্যই প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া কমাতে হবে। বাড়াতে হবে পুষ্টিকর খাবারের মাত্রা।
নানাভাটি বলেন, “প্রক্রিয়াজাত খাবারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ মাত্রায় চর্বি ও ক্যালরি থাকে। যা কিনা ওজন কমানো ও ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। তাই পূর্ণ শষ্য ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে।”
* সিরিয়াল ধরনের খাবারে পরিবর্তে এক বাটি ওটসে বাদাম মিশিয়ে খাওয়া।
* দোকানের চিপস খাওয়ার পরিবর্তে মিষ্টি আলু ও কপি এয়ার ফ্রায়ারে ভেজে খাওয়া।
* ফলের রসের পরিবর্তে আস্ত ফল খাওয়ার অভ্যাস করা।
* স্যান্ডুইচে মেয়োনেইজ না মাখানো।
প্রতি খাবারে ‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ যোগ করা
সব ফ্যাট বা চর্বি খারাপ নয়।
তাই নানাভাটি’র পরামর্শ হল হৃদযন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর ‘মনোআনস্যাচুরেইটেড’ ও ‘পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিড’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
এই ক্ষেত্রে স্টেক, বেকন অর্থাৎ এই ধরনের মাংসের পরিবর্তে বাদাম, বীজ ও অলিভ অয়েল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
অর্ধেক প্লেট সবজি দিয়ে ভরা
ক্যালরির পরিমাণ কম আর আঁশের পরিমাণ বেশি। তাই সবজি হচ্ছে ওজন কমানো ও ধরে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো পছন্দ।
যুক্তারাষ্টের ‘হেল্থ কানাল’য়ের পুষ্টিবিদ ইভা ডি অ্যাঞ্জেলিস বলেন, “দুপুর ও রাতের খাবারে প্লেটের অর্ধেক বিভিন্ন ধরনের সবজি রাখতে চেষ্টা করুন।”
এই ক্ষেত্রে রান্না ও কাঁচা দুই ধরনের সবজির মিশ্রণ হবে বেশি কার্যকর। হতে পারে সেটা গাজর, শসা, সেদ্ধ কপি ও শাক।
যত ডাল খাওয়া যায়
শরীর ছিপছিপে রাখতে একই সঙ্গে প্রোটিন ও আঁশের উপযুক্ত যোগান দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের ডাল।
ডি অ্যাঞ্জেলিস বলেন, “সালাদ কিংবা তরকারিতে ডাল যোগ করাই হবে ভালো পন্থা। সেটা হতে পারে মশুর, ছোলা কিংবা যে কোনো ডাল।”
আরও পড়ুন
স্বাস্থ্যকর চর্বি যোগায় যেসব খাবার