সব প্রসাধনী সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
Published : 22 Jun 2023, 01:02 PM
চোখের নিচের ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল তাই এখানে কোনো পণ্য ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে।
সবারই ত্বক পরিচর্যার রুটিন আলাদা। অনেকেই বাড়তি যত্নের জন্য বিশেষ কিছু পণ্য ব্যবহার করেন। অনেকে আবার কেবল তিন চারটা প্রসাধনী ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার, তৈলাক্ত ত্বকে তেল নিয়ন্ত্রণকারী প্রসাধনী ব্যবহার করার পাশাপাশি পণ্য তৈরিতে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে তার তালিকাও দেখে নিতে হয়।
কারণ মুখের ত্বকে ব্যবহৃত প্রসাধনীর অনেক উপকরণ চোখের নিচের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
যে কারণে চোখের নিচের ত্বক সংবেদনশীল
হেল্থ শটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মুম্বাই ভিত্তিক কসমেটোলজিন্সট ডা.. মনিকা কাপুর বলেন, “চুলের নিচের দিকের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না এমন উপকরণ সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় চোখের নিচের ত্বক বেশি সংবেদনশীল। কারণ এই অংশ অনেক বেশি পাতলা এবং এতে তেল গ্রন্থি কম থাকায় তা কম আর্দ্র ও সুরক্ষিত থাকে।”
এছাড়াও চোখের পেশি অনবরত গতিশীল। তাই এতে সহজেই বলিরেখা ও ভাঁজ দেখা যায়। পারিবেশিক নানান অবস্থা যেমন- সূর্যালোক, দূষণ, মানসিক চাপ ইত্যাদি এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
চোখের নিচের ত্বক অনেক বেশি পাতলা ও সংবেদনশীল হওয়াতে জ্বলুনি বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো পণ্য ব্যবহার করা ঠিক নয়।
রেটিনয়েড: ‘অ্যান্টি এইজিং’ উপাদান সাধারণত এমন পণ্যে পাওয়া যায় যা সূক্ষ্ম ভাঁজ ও বলিরেখার মোকাবিলা করে। তবে অনেক সময় তা ত্বকের জন্য বিশেষত চোখের চারপাশের ত্বকে জ্বলুনি সৃষ্টি করতে পারে।
চোখের চারপাশে রেটিনয়েড ব্যবহার লালচেভাব, শুষ্কতা এবং খসখসেভাব দেখা দিতে পারে বলে জানান ডা. কাপুর।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড: ব্রণের বিরুদ্ধে কাজ করতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড চমৎকার কাজ করে। এটা ত্বক এক্সফলিয়েট করে লোমকূপ উন্মুক্ত রাখে।
চোখের নিচের ত্বক সংবেদনশীল হওয়াতে এর ব্যবহারে অনেক বেশি জ্বলুনি ও শুষ্কতার সমস্যা দেখা দেয়।
হাইড্রোজেন পারক্সাইড: এটা শক্তিশালী ‘অক্সিডাইজিং এজেন্ট’ যা প্রায়শ চুল উজ্জ্বল করা থেকে শুরু করে ক্ষত জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। চোখের চারপাশের ত্বকের জন্য এটা খুব বেশি কড়া হতে পারে। ফলে লালচেভাব, ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সুগন্ধি: সুঘ্রাণ সবারই পছন্দ। ত্বকের প্রসাধনীতে সুগন্ধির ব্যবহার স্বাভাবিক। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটা বিরক্তিকর হতে পারে।
চোখের নিচের ত্বকে সুগন্ধির কারণে জ্বালাপোড়া, ব্যথা, চুলকানি ও লালভাব হয়।
এসেনশল অয়েল: ত্বক পরিচর্যায় এসেনশল অয়েল ব্যবহৃত হয়। তবে তা চোখের নিচের ত্বকের জন্য উপযোগী নয়। পেপারমিন্ট ও ইউক্যালিপটাস তেল জ্বলুনি ও অস্বস্থি সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে লেবু ও লাইম আলোক সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে রোদে গেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
দারুচিনি: অনেকেই ব্রণের প্রকোপ কমাতে দারুচিনি ব্যবহার করে থাকেন। চোখের নিচের ত্বকে দারুচিনি ব্যবহারে সংবেদনশীলতা ও জ্বলুনি হতে পারে।
তাই চোখের নিচের ত্বকে দারুচিনি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন ডা. কাপুর।
অ্যালকোহল: অ্যা্লকোহল ভিত্তিক পণ্য যেমন- টোনার বা ‘অ্যাস্ট্রিজেন্টস’ চোখের নিচের ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে এবং জ্বলুনি সৃষ্টি করে।
অ্যালকোহল ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা শুষে নেয়। ফলে সংবেদনশীলতা ও শুষ্কতা বাড়ে।
শক্তিশালী এক্সফলিয়েন্টস: কড়া এক্সফলিয়েন্ট যেমন- আখরোটের খোসা বা বড় দানার চিনি চোখের নিচের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এসব উপাদান দিয়ে এক্সফলিয়েট করা সূক্ষ্ম ছেদ, লালচে দাগ ও সুরক্ষার স্তরের ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে।
চোখের নিচের ত্বকের যত্ন
চোখের নিচের ত্বকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড ও সেরামাইডের মতো মৃদু, আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও নতুন কোনো পণ্য ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
মৃদু ক্লেঞ্জার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা উচিত যেন প্রাকৃতিক তেল বজায় থাকে।
হালকা, চিটচিটে হয় না বিশেষ করে চোখের নিচের ত্বকের জন্য তৈরি করা হয়েছে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
রোদ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলাভাব কমাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
চোখের চারপাশের ত্বকে চাপ প্রয়োগ বা ঘষা মাজা করা যাবে না। না হলে বলিরেখা ও ভাঁজ দেখা দেবে।
প্রদাহ ও ফোলাভাব কমাতে চোখে ঠাণ্ডা চাপ প্রয়োগ বা আই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
মনে রাখতে হবে
প্রত্যেকের ত্বকই আলাদা এবং কিছু নির্দিষ্ট পণ্যে অসহনশীল হতে পারে। তাই প্রসাধনী সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে, ব্যবহারের আগে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
ছবির মডেল: আরিয়ানা জামান এলমা। মেইকআপ: আরিফ। ফটোগ্রাফার: তানভির খান। ছবি সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফি স্টুডিও।
আরও পড়ুন