যারা বেশিরভাগ সময় গরু বা খাসি খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন তারা সাবধান।
Published : 13 Oct 2022, 11:20 AM
গরু, খাসি বা এই ধরনের মাংস বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
‘ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড’ জানাচ্ছে, সপ্তাহে তিনবার রান্না করা ১২ থেকে ১৮ আউন্সের বেশি মাংস খাওয়া ঠিক নয়। এতে দেহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
হৃদপিণ্ডের ওপর প্রভাব রাখে
এই ধরনের মাংস খাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ প্রভাব হল হৃদপিণ্ডের ক্ষতি সাধন, যা ‘ফাইনালি ফুল, ফাইনালি স্লিম অ্যান্ড দ্যা পোর্শন টেলার প্ল্যান’ বইয়ের লেখক লিসা ইয়ং সমর্থন করেন।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের এই পুষ্টিবিদ বলেন, “লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস হৃদরোগের সৃষ্টি করে।”
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে ১.১ পরিবেশন রেডমিট- গরু, খাসী, বাইসন বা ভেড়া ইত্যাদি খাওয়ার ফলে ধমনীতে চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ জমে ‘ব্লক’ সৃষ্টি করার ঝুঁকি বাড়ায় ২২ শতাংশ।
স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বেশি মাত্রায় গ্রহণ
বেশিরভাগ লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেইটেড ফ্যাট থাকে।
“তিন আউন্স ‘রিব আই স্টেক’য়ের টুকরায় প্রায় আট গ্রাম স্যাচুরেইটেড চর্বি থাকে যা দৈনিক চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করে,” বলেন নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ সিডনি গ্রিন।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া ‘এলডিএল’ বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায় যা হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ।
ডা. ইয়ং বলেন, “স্যাচুরেটেইড ফ্যাট ধমনীতে বন্ধকতা সৃষ্টির মাত্রা বাড়ায় “
মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে “ধমনীর দেয়ালে কোলেস্টেরলের ‘প্লাক’ জমায় এবং রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।”
ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি
ডা. ইয়ং’য়ের মতে, “স্যাচুরেইটেড ফ্যাট কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। এটা ক্যালরিও যোগ করে ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।”
তার মতে, “প্রাণিজ উপাদান বিশেষ করে লাল মাংস স্থূলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। যা থেকে হৃদরোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।”
৮ আউন্স স্টেকে ৬১৪ ক্যালোরি থাকে, এর মধ্যে মোট চর্বির পরিমাণ হয় ৪৬ গ্রাম। যা কিনা দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের ২০০০ ক্যালরির মধ্যে ৬৬ শতাংশ।
অন্ত্রে প্রভাব
‘রেড মিট’য়ের স্যাচুরেইটেড ফ্যাট হৃদপিণ্ডের পাশাপাশি অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োম’য়ে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, জ্ঞানীয় দক্ষতা, হজমের গোলমালসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।
পুষ্টিবিদ গ্রিনে মতে, “স্যাচুরেইটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং এর ব্যাক্টেরিয়া অন্ত্রে প্রভাব ফেলে।”
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “হজম ও শোষণের সময় অন্ত্রের মাইক্রোবস বিপাকীয় উপাদান কার্ডিওভাস্কুলার রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
প্রদাহ
“লাল মাংস খাওয়া প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি বাড়ে”, বলেন গ্রিন।
দ্যা ক্লিভ ল্যান্ড ক্লিনিক অনুযায়ী, লাল মাংসে থাকা স্যাচুরেইটেড ফ্যাট প্রদাহ বাড়ায়।
ডা. ইয়ং বলেন, “লাল মাংস কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় যা প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
‘দ্যা জার্নাল অব অ্যামেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
হজমে জটিলতা
“প্রতিদিন লাল মাংস খাওয়া প্রোটিন সরবারহ করে যা হজমতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে আছে চর্বিবহুল প্রোটিন যা অনেকের হজম করতে সমস্যা হয়”, বলেন পুষ্টিবিদ গ্রিন।
এই কারণে চর্বি বহুল খাবারের পরে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হলেও যাদের পাকস্থলীর সমস্যা আছে, প্রতিদিন মাংস খান তাদের ক্ষেত্রে এমন জটিলতা বেশি দেখা দেয়।
সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা বাড়ে
ডা. ইয়ং বলেন, “প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস যেমন- বেকন বা সসেজে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা দেহে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে।“
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ দৈনিক ২৩০০ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেয়।
সসেজে ৫৬৯ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম থাকে যা দৈনিক চাহিদার এক চতুর্থাংশ। এতে খাবার মজাদার হলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় যেমন- কিডনির সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি ও উচ্চ রক্তচাপ।
অন্য প্রোটিনের উৎস
এই ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে খাবার থেকে লাল মাংস বাদ দিতে হবে। প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে অন্যান্য উপকরণ যেমন- বাদাম, টফু ইত্যাদি খাবারে যোগ করা যেতে পারে।
গ্রিনের মতে, “চর্বিহীন মাংস যেমন- মুরগি, টার্কি ও মাছ ইত্যাদি খাওয়া দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি কমায়। কারণ এসবের প্রোটিনে স্যাচুরেইটেইড ফ্যাটি অ্যাসিড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কম।”
এছাড়া নানান ধরনের মাছ ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
আরও পড়ুন